আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

রবির কিরণ এখনও পাই সমান উজ্জ্বলতায়

আজ আমরা যে কথা ভাবছি, শত বছর আগে সেই একই কথা ভেবেছেন রবীন্দ্রনাথ। তার একেকটি চিন্তার কাছে গেলে মনে হয়, তিনি এই যুগটাকেও ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন। সেই যুগেও দেখতে পেয়েছিলেন একবিংশ শতকের সময়গুলো। এই তো সেদিনের কথা। গিয়েছিলাম ছাদকৃষির ধারণ কাজে।  বেশ কয়েক বছরে ছাদকৃষি তো ব্যাপকভাবেই সম্প্রসারিত হয়েছে।  ভালো লাগে শহর নগরের মানুষ তাদের বাসার ছাদে তো বটেই এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় ছাদকৃষি করছেন। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর ও স্কুলের ছাদে ছাদকৃষি সম্প্রসারিত হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের ছাদে ছাদকৃষি গড়ে তুলেছেন স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক শ্রীকান্ত চন্দ্র নন্দী।  কাজ করতে করতেই জানতে পেলাম, ওই স্কুলের সঙ্গে বিশাল গর্বের স্মৃতি রয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, এই স্কুলে রবীন্দ্রনাথ একটি বক্তব্যও রেখেছিলেন। ওই বক্তব্য সংগ্রহ করে স্কুলে রাখা আছে। জেনেই মন ভালো হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্পর্শ রয়েছে যে প্রতিষ্ঠানে, সন্দেহ নেই সে প্রতিষ্ঠানটিতে পৃথক এক আলো জ্বলছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ছাদে এমন সবুজের আয়োজন।  এই আয়োজনও যদি রবীন্দ্রনাথ দেখতেন তাহলে, এর অপরিহার্যতা নিয়েও নিশ্চয়ই প্রশংসাসূচক ও ইতিবাচক মন্তব্য তিনি করতেন!

যা হোক, প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি আমাকে স্কুলের লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলেন। সেখানে রবীন্দ্রনাথের সেই ছোট্ট ভাষণটি বড় করে টানানো। মনে হলো, যে সব কিশোর শিক্ষার্থী রবীন্দ্রনাথের এই ভাষণটি পড়ে আত্মস্থ করতে পারছে, তার জীবন তো এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে পারে এক ধাপ। আমি টানানো ভাষণটি দেখার পর আর অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরাতে পারিনি। এক নিঃশ্বাসেই পড়ে নিলাম। ভাষণের কিছুটা এখানে উল্লেখ করতে চাই।

“নারায়ণগঞ্জের প্রবেশদ্বার দিয়ে আমি পূর্ববঙ্গে প্রবেশ করেছিলাম। ফেরার পথে আবার এখানে এসেছি।  পূর্ববঙ্গের যেখানে গিয়েছি, আমার বলবার কথা বলেছি; কিন্তু বলার দ্বারা ফল হয় বলে আমি বিশ্বাস করিনে। কর্মের মধ্যদিয়েই আমাদের দেশের বিচিত্র সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে চাকুরিই ছিল শিক্ষার উদ্দেশ্য। লোকে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেকে শিক্ষিত করতে স্কুল-কলেজে পড়তে যায়। সৌভাগ্যক্রমে চাকুরির পথ সংকীর্ণ হয়েছে। তাই শিক্ষিত যুবকগণ স্বাধীন উপায়ে জীবিকার্জনে সচেষ্ট হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও কাজকর্মে এক পরিবর্তন এসেছে। এমন একটি সময় ছিল, যখন লোকে ভাবতেন বক্তৃতা দিয়েই তাঁরা তাঁদের কাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। তাঁরা পুরাতন অভ্যাসবশতঃ এখনও ঐরূপ কাজ করে বসেন। কিন্তু বর্তমানে যুবসমাজ বাস্তব ও আসল কাজের দিকে তাকায়। বর্তমান আন্দোলনকালে যে উদ্দীপনা এসেছে, তাকে যেন তারা স্থায়ী করে। কবি বলেন- শান্তিনিকেতনে পূর্ববঙ্গের বহু ছেলে পড়ে। তাদরে মধ্যে চরিত্রের দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও শ্রদ্ধার ভাব দেখেছি।  আমি পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করে দেখলাম, এটা একটা ভাল কর্মী সংগ্রহের স্থান। এখানকার ছেলেদের যে কাজেই লাগানো যাবে, তারা তাদের একাগ্রতা ও নিষ্ঠার দ্বারা কৃতকার্য হবেই। আমি যদি এখনও যুবক থাকতাম, তাহলে এখানে বক্তৃতা না করে হাত-নাতে কাজে লেগে যেতাম। এখানকার উর্বরা মাটির মতই এখানকার মানুষের উদ্যম আগ্রহও প্রবল।  কিন্তু আজ আমার বয়স এবং স্বাস্থ্য দুই-ই নেই। আমার কর্মক্ষেত্র পশ্চিমবাংলার এক সীমান্তে অবস্থিত। সেখানকার মাটি উর্বরা নয় এবং মানুষও অনেকটা উদাসীন।  পূর্ববঙ্গের এ অঞ্চলে উপযুক্ত পরিবেশে লোকে যদি তাদের কাজ আরম্ভ করে তাহলে তারা অতি সহজেই সফলকাম হবে। রাজনৈতিক নেতারা গ্রাম থেকে দূর শহরে শহরে খুব ভাল বক্তৃতা দিয়ে থাকে। এই উপায়ে গ্রামের কোন উপকার করাই সম্ভব নয়। পূর্ববঙ্গে পল্লী উন্নয়ন নিঃসন্দেহে সম্ভবপর।”

ভাষণটিতে আরো কয়েকটি পংক্তি রয়েছে। কিন্তু এটুকুর মধ্যেই বহু কথা তিনি বলে দিয়েছেন। আমি নতুন করে বিস্মিত হয়েছি তার বাস্তবতা দর্শন ও গভীরতা সন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। আমি বরাবরই রবীন্দ্রনাথের উন্নয়নমনষ্ক দিকগুলো জানতে ও দেখতে পছন্দ করি। সে কারণেই বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের বড় বড় স্মৃতিক্ষেত্রগুলি ঘুরেছি, শান্তি নিকেতন ও তার স্বপ্নের শ্রীনিকেতনের নানা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছি। ইংল্যান্ডের ডেভনে অবস্থিত ডার্টিংটন হলেও গিয়েছি উন্নয়কামী রবীন্দ্রনাথের ধ্যান-ধারণা বুঝতে। যত এগিয়েছি ততই অবাক হয়েছি। যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা কবি, গীতিকার, নাট্যকার হিসেবে দেখি, সেই রবীন্দ্রনাথের উন্নয়নচিন্তা, সমবায় ভাবনা আর গণ মানুষের জীবনধারা পরিবর্তনের কাজগুলো কত শক্তিশালী।

রবীন্দ্রনাথ সেসময় তরুণদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলো বলতে চেয়েছিলেন, আজও সেই কথাগুলোই প্রযোজ্য। আজ উন্নত বিশ্বের ধ্যান-ধারনায় যেখানে ‘অনট্রপনারশীপ’ বা নিজস্ব উদ্যোগকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা হয়। রবীন্দ্রনাথ সেসময়ে একথাও বলেছিলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্র নয়, নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্র।

যেখানে চাকরির জন্য ধর্না না দিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার মধ্যে যে দর্শন শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বাতলে দিয়েছেন তা আজকের তরুণরা বাস্তবায়নও করছে। সবচেয়ে আশান্বিত হই যখন দেখি সারাদেশেই কৃষিতে, প্রযুক্তিতে, উৎপাদনমুখি কার্যক্রমে তরুণ প্রজন্মের নতুন নতুন উদ্যোগ সাফল্যমণ্ডিত হচ্ছে।  আজ দেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়েছে আমাদের দেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তারা। যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করে চাকরির জন্য ধন্যা না দিয়ে একেকটি কৃষি উদ্যোগ নিয়ে বিস্ময়কর সাফল্যের নজির গড়ছেন। নাটোরের আতিক, ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়ার আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স, সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজী, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান মনির, সাভারের কোব্বাত হোসাইন অভি, রাজিয়া সালতানা, কুষ্টিয়ার শাহিনুর রহমানের মতো হাজারো তরুণ এখন দেশের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার আলো জালাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ সে সময়েই পূর্ববঙ্গের তরুণদের মধ্যে বেশি সম্ভাবনা দেখেছিলেন। পূর্ববঙ্গের উর্বরা মাটির মতোই তরুণরাও যে সোনাফলা তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।

আমি রবীন্দ্রনাথের কৃষি ও উন্নয়নচিন্তা এবং সমবায় ভাবনার কাজগুলো প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করেছি।  রবীন্দ্রনাথের কৃষি, পরিবেশ, সমাজ তথা মানবিক উন্নয়ন চিন্তার পরীক্ষাক্ষেত্র ছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আর নওগাঁর পতিসর। বাস্তবায়ন ক্ষেত্র ছিল পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে শান্তিনিকেতন সংলগ্ন শ্রীনিকেতন। যেখানে তিনি পল্লীর জীবন কাঠামোর একটি মডেল উপস্থাপন করেছিলেন। এই কাজে তার সহযোগী ছিল তারই ব্যক্তিগত সহকারি কৃষি অর্থনীতিবিদ লিওনার্দ এল্মহার্টস। সেখানে রবীন্দ্রনাথের অনেক প্রয়াসেরই স্মৃতিচিহ্ন রয়ে গেছে। তবে রবীন্দ্রনাথ যে আঙ্গিকে চিন্তা করেছিলেন তা প্রাণ পায়নি। রবীন্দ্রনাথ যে পূর্ববঙ্গের প্রতি বেশি আশাবাদী ছিলেন, এখানকার তরুণদেরকে বেশি কর্মঠ ভেবেছিলেন, এখানে একটি বীজ পুঁতলে তা নিশ্চিতভাবেই যে ফলবান গাছে পরিণত হবে, সে বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের হিসেবের মধ্যে ছিল। ১৯২৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে এসে সে বিষয়টিই তিনি তুলে ধরেন বক্তৃতায়।

যাহোক রবীন্দ্রনাথ তার জীবনে চেষ্টার কমতি করেননি। তিনি চেয়েছেন তৎকালীন সময়ে গোটা পৃথিবীতেই উৎপাদনমুখি জীবন ব্যবস্থার এক বিপ্লবের সূচনা হোক। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি তখন থেকেই বাণিজ্যমুখি, চাকুরিমুখি ও সমাজের নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ সবকিছু ভোগ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে। রবীন্দ্রনাথের উন্নয়নমুখি কর্মতৎপরতা খুঁজতে আমি গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডের ডেভনে অবস্থিত ডার্টিংটন হলে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এল্মহার্স্ট। এল্মহার্স্ট যখন শ্রীনিকেতনের কাজ শেষ করে দেশে ফিরে গেলেন তখন রবীন্দ্রনাথের উন্নয়নচিন্তাকে কাজে লাগাতেই তার স্ত্রীর ডরথির বিশাল ভূ-সম্পত্তিতে গড়ে তোলেন ডার্টিংটন হল। বাংলার উদ্যোগগুলোর সঙ্গে কৃষি সবচেয়ে আগে থাকলেও ডাটিংটন হলে ছিল শিক্ষা, মানবিক বোধ ও পরিবেশ উন্নয়নের বিষয়গুলো।  রবীন্দ্রস্মৃতির জলন্ত এক কেন্দ্র হিসেবে ডার্টিংটন হল আজও মানুষকে উজ্জীবীত করে। এখনও বছরের বিভিন্ন সময় ডার্টিংটন হলে তারুণ্যেও শক্তি জাগানিয়ে নানা অনুষ্ঠান হয়, যেগুলো বহুবছর আগে রবীন্দ্রনাথই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

নারায়ণঞ্জ হাইস্কুলের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এই স্মৃতি-সম্পর্ক দেখে, বক্তৃতাটি পড়ে যারপরনাই অভিভুত হলাম। জানলাম ভাষণটি নারায়ণঞ্জের দুবৃর্ত্তদের হাতে নিহত সংস্কৃতিবান কিশোর ত্বকির বাবা রফিউর রাব্বি সংগ্রহ করে দিয়েছেন। তার বাসাতেও গিয়ে হাজির হই এ বিষয়ে জানতে।

তিনি জানান, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ভূইয়া ইকবাল-এর ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংবর্ধনা’ গ্রন্থে কবিকে নারায়ণগঞ্জের সংবর্ধনাতে প্রদানকৃত মানপত্র ও কবির পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি তুলে ধরা হয়েছে। সেখান থেকেই তিনি ভাষণটি সংগ্রহ করেন। ওই বইতে উল্লেখ রয়েছে, ১৯২৬ সনের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা নাগাদ তিনি নারায়ণগঞ্জ এসে পৌঁছান। স্থানীয় ছাত্র সংস্থা স্টিমার ঘাটে কবিকে এবং তাঁর দলের সকলকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। ছাত্ররা সেখান থেকে শোভাযাত্রাসহ কবিকে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে নিয়ে আসেন। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল প্রাঙ্গণে এক সভায় কবিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের ব্যবস্থাও করা হয়। রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী’তে তা সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন।

কবি দীনেশ দাশ বলেছেন, ‘তামার পায়ের পাতা সবখানে পাতা’। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন সভ্যতার সব সংকটে রবীন্দ্রনাথ এক বিশাল সমাধান। রবীন্দ্রনাথ এই বাংলাদেশকে যে সম্ভাবনাময় পথে অগ্রসর হতে দেখেছিলেন, সে সম্ভাবনার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি অগ্রসর আমাদের কৃষি অনুরাগী ও উদ্যোগী তরুণরা। এখনও যারা চাকরিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে ধরে অনেকটা জীবনকে নিরূপায় এক স্তরে নিয়ে আছে, তাদের সামনে এখনও এক বাস্তবমুখি ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com