আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

মহামিলনের ইলিশ

মহামিলনের ইলিশ

কত কিছুরই তো কত নাম হয়। নানা নামে পরিচিতি পায়। কাজেই জলের মহারাজের নানা নাম হবে, তাতে আর আশ্চর্য কি। এই যেমন আমরাই ডাকি কত নামে। ইলিশ, চন্দনা, জাটকা, খয়রা; চট্টগ্রামের দিকে বলে চিটা। কুমিল্লা, নোয়াখালীতে আবার বিল্লি, খাল্লিশ, বাম, পাইটে, সকড়ি। নদী থেকে বিলে এসে কুল হারানো ইলিশ হয়ে যায় বিলিশ।

ওডিশার মানুষ বলে ইলিশি। আসামে সেটা আবার হিলসা। বিহারে ইলসা। মারাঠিদের কাছে পাল্লো। গুজরাটে স্ত্রী আর পুরুষ ইলিশকে পৃথক নামে ডাকা হয়। স্ত্রী মাছ মদেন আর পুরুষ মাছ পালওয়া। এই গুজরাটি ইলিশকে সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন বলেছেন ঘাসের মতো। কোনো স্বাদ নেই।  

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সিন্ধিদের কাছে ইলিশ পরম পছন্দের। ওরা বলে পাল্লা। পাকিস্তানে এই পাল্লা ধরার জন্য আছে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা। করাচিতে একটা পল্লিই আছে। কিন্তু তারা যাপন করছে মানবেতর জীবন। নেই তাদের কোনো নাগরিক অধিকার।

উড়িয়াদের কাছে মাছ মানে ইলিশ। চাকরি মানে পুলিশ। তাই তো উড়িয়ারা ছড়া কাটে: মাছ খাইবি ইলিশি, চাকরি করিবি পোলিসি। এই প্রসঙ্গে আরও একটি ছড়ার কথা মনে আসে। এটাও সত্যেন বাবুর; তবে দত্ত নয়, ঠাকুর। এক সত্যেন বাবু ছড়া লিখতে পারলে আরেক সত্যেনবাবুই–বা বাদ যাবেন কেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছড়া ইলশেগুঁড়ির কথা উল্লেখ করেছি। তবে এই সত্যেন্দ্রনাথ আবার ঠাকুর পরিবারের। রবিঠাকুরের বড় দাদা। বাংলার প্রথম আইসিএস। তিনি বোম্বে (হালের মুম্বাই) থাকতেন চাকরিসূত্রে। সিন্ধিদের ইলিশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে তিনি লেখেন: যব পাল্লা মাছলি খানা, তব সিন্ধ ছোড়কে নাহি জানা। সিন্ধিদের কাছে ইলিশ এতটাই প্রিয় যে জামাই এলে পাল্লা দিয়েই আপ্যায়ন করতে হবে। তারা মাছ টুকরা করে না। আস্ত রান্না করে। তবে ইলিশের চমৎকার আরও কিছু নাম আছে: জলতাপী, কাজলগৌরী, মুখপ্রিয়া ইত্যাদি।

জীমূতবাহন থেকে হ্যামিলটন সাহেব

ইলিশের বৈজ্ঞানিক নাম প্রথম দেন হ্যামিলটন বুকানন সাহেব। ১৮২২ সালে। তখন তিনি বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁর দেওয়া নাম হিলসা ইলিশা। তবে ইলিশ নিয়ে কম ঘাঁটাঘাঁটি করেননি ওপার বাংলার লেখক দিগেন বর্মণ। তাঁর ছোট্ট একটি বইতে (ইলিশ পুরাণ) ধরা আছে আদ্যোপান্ত। সেখানে তিনি জানাচ্ছেন, দ্বাদশ শতাব্দীকে ইলিশ নাম দেন পণ্ডিত জীমূতবাহন। আবার সর্বানন্দের ‘টীকাসর্বস্ব’ গ্রন্থে রয়েছে ইল্লিষ-এর উল্লেখ। কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র বলেছেন ‘পাঙ্গাস ইলিশা’। পাঙ্গাস শব্দটি বৃহৎ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
আবার মোট পাঁচটি মাছকে নিরামিষ আখ্যায়িত করে নিরামিষভোজীদের সুবিধা করে দেন সেই সময়ের শাস্ত্রকারেরা। এই তালিকায় আছে ইলিশ, খলশে, ভেটকি, মাগুর আর রুই।

যত পদ

ইলিশের মাথা দিয়া সরিষা শাক কখনো কি খেয়ে দেখেছেন? দেখা যেতেই পারে। লখিন্দরকে কিন্তু এই পদ রান্না করে খাইয়েছিরেন তাঁর স্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ তারকা। আবার এই বেহুলা-লখিন্দরের বিয়েতে কনেপক্ষ (বেহুলার বাবা) পাত্রপক্ষকে অন্ততপক্ষে পনেরো পদের মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এই তালিকাতেও ছিল ইলিশ। পরিবেশিত হয়েছিল ভাজা ইলিশ।

ইলিশ কতভাবে যে রান্না করা যায়, তার ইয়ত্তা নেই। অন্তত পাঁচ শ পদ আছে ইলিশের। তবে যে যা–ই বলুক, সোয়াদ করে ইলিশের ঝোল রাঁধতে পারলে সেই বউও কিন্তু সোনাবউ হয়ে যায়। বিশ্বাস না হলে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ছড়াটা পড়ে নিতে পারেন: সোনা নাচে কোনা/ বলদ বাজায় ঢোল/ সোনার বউ রেঁধে রেখেছে/ ইলিশ মাছের ঝোল।
আহা ইলিশ!

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

ইলিশ নিয়ে লিখতে বসলে আমার আব্দুল মাঝির কাল্পনিক চেহারাটা চোখে ভাসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আব্দুল মাঝি। রবীন্দ্রনাথ অনেক কিছু নিয়ে অনেক লিখেছেন। তবে ইলিশ নিয়ে তেমন নয়। যদিও ইলিশ তাঁর প্রিয়। খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসতেন। ছেলেবেলার স্মৃতিচারণায় তিনি আব্দুল মাঝির অনবদ্য বর্ণনা দিয়েছেন: হালের কাছে আবদুল মাঝি, ছুঁচলো তার দাড়ি, গোঁফ তার কামানো, মাথা তার নেড়া। তাকে চিনি, সে দাদাকে এনে দিত পদ্মা থেকে ইলিশ মাছ আর কচ্ছপের ডিম।

রবীন্দ্রনাথ ও ইলিশ নিয়ে নাহয় পরে আরেক দফা আসা যাবে। আপাতত সেই অনামী বাঙালি কবির কথা বলি; যিনি ইলিশ নিয়ে সংস্কৃত প্রশস্তি গেয়েছিলেন কোনো এক কালে: ‘বায়ু বিশ্বকে ধারণ করে আছে, তার উপরে আছে কচ্ছপ, তার উপরে শেষনাগ, তার উপরে পৃথিবী, তার উপরে কৈলাস শৃঙ্গ, তার উপরে গঙ্গা আর তার উপরে “ইল্লিশ”। এই ইলিশ মৎস্যরাজ। এর মাহাত্ম্য সর্বজনবিদিত। এই ইলিশ ভক্ষণে সকল দুঃখ থেকে মুক্তি।’

কোনো সন্দেহ নেই, শত দুঃখে থাকা বাঙালির, ইলিশের নাম শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়। আর খেতে পারলে তো কথাই নেই। অথচ এই ইলিশ বাদ দিয়ে রোহিত মৎস্য শাস্ত্রকারদের কাছে হয় কিনা মীনশ্রেষ্ঠ! এ জন্য তেমন উল্লেখ কোথাও সেভাবে দেখা যায় না ইলিশের। ১৭১১ সালে রামেশ্বর চক্রবর্তীর ‘শিবায়ন’-এ ইলিশের উল্লেখ যেন বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়া। এরও এক শ দশ বছর বাদে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে কাশীর গঙ্গায় ইলিশ পাওয়ার কথা জানা যায়।

আরও সাত দশকের বেশি সময় পার করে, ১৮৯৭ সালের ‘কষ্টিপাথর’ নাটকে মেলে ইলিশের উল্লেখ। এরপর ব্রহ্মদেশ থেকে পারস্য উপসাগর—পানি কম গড়ায়নি। সেই থেকে এই ২০২০ পর্যন্ত প্রায় সোয়া শ বছরে ইলিশ মৎস্য মহারাজাধিরাজ হিসেবে মসনদে আসীন রয়েছে। স্থান পেয়েছে কবিতা, ছড়া, গল্প, লোকগান, প্রবাদ, প্রবচনে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, বুদ্ধদেব গুহর গল্প সংকলন, বুদ্ধদেব বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মোহাম্মদ রফিকের কবিতা তো আছেই। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীই–বা বাদ যাবেন কেন। তিনি ইলিশের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন: সুলক্ষণ ইলিশ। মানে যে ইলিশের পেটে সদ্য ডিমের ছড় পড়েছে। আর সাহিত্যিক শংকর তো আবার ইলিশকে ব্রাহ্মণ বলেছেন। ইলিশের পিঠে যে দাগ থাকে, তাকে তিনি উপবীত বা পৈতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তবে যা–ই বলি, প্রমথনাথ বিশীর ‘গঙ্গার ইলিশ’ গল্পটি কিন্তু সরস। ট্রামে উঠে ইলিশের সঠিক দাম না বলে বাজারে মারামারি বাধিয়ে দেওয়া আর গিন্নির কাছে ভালো সাজতে গিয়ে প্রতিবেশিনীদের ইলিশ কিনে দিয়ে নিজের পকেট থেকে গচ্চা দেওয়ার কাহিনিটা বেশ। তবে গুলজারের গল্প ‘ইলিশ’ অন্যতর দ্যোতনাবহ। কেন যেন পদ্মা নদীর মাঝির বর্ণনার আবেশ মেলে। ‘ইলিশ মাছেরা এবং বাবা’ যুক্তরাজ্যের সারের এক অভিবাসী বাঙালি পরিবারের গল্প। পরিযায়ী লেখক সালেহা চৌধুরীর লেখা। ছুঁয়ে যায়। ইলিশ মাছ নিয়ে সংকলন করেছেন মঈনুল হাসান ও মোজাফফর হোসেন ‘কল্পে গল্পে ইলিশ’। উল্লেখ্য, গল্প তিনটি সেখানেই পেয়েছি।

রসরাজ অমৃতলাল বসু গানও লিখেছেন। সেখানে তিনি ইলিশের তেলকে কড লিভার অয়েলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখন কিন্তু সেটা প্রমাণিতও হচ্ছে।
আবার রবীন্দ্রনাথে ফেরা যাক। ছাড়া লিখেছেন ইলিশ নিয়ে। উপমা হিসেবেও ব্যবহার করেছেন। একবার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে এক ভোজ আসর আয়োজনের কথাও জানা যায়।

জনৈক বিদেশিনী তাঁর লেখা ‘আ ম্যারেজ টু ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে বাঙালি নারীর হাতের ইলিশ খেয়ে তাকে ‘আনপ্যারালালড হিলশা ফিশ কারি’ আখ্যা দিতে কুণ্ঠিত হননি।
১২৯২ সালে শ্রী বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় প্রণীত ‘পাক প্রণালী’ গ্রন্থে মাত্র ইলিশের চারটি পদের উল্লেখ মেলে। এর একটি ইলিশ ভাতে (ভাপে নয়)।

বাজার করার ব্যাপারে নিজেকে আনাড়ি মনে করতেন বুদ্ধদেব বসু। দু–একবার যেতে হলেও ঠিকঠাক কিছুই আসত না। ফলে তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসুই সব সামলাতেন। তবে ৬৫ বছরে এসে সেই বুদ্ধদেব বসু কিনা রান্নাবান্না নিয়ে আস্ত একখানা বই-ই লিখে ফেললেন। ‘ভোজন শিল্পী বাঙালী’। এই বইয়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে তিনি ইলিশকে বিশেষায়িত করেছেন মীনসত্তম হিসেবে। চিতলের প্রসঙ্গ ধরে তিনি ইলিশে আসেন। চিতল মাছেন ‘মুঠিয়া’ তাঁর ভাষায়: বঙ্গসংস্কৃতির আনন্দ মেলায় পুব বাংলার এক বিশিষ্ট অবদান। এরপরেই তিনি লিখেছেন: আর সেই রজতবর্ণ মনোহরদর্শন মৎস্যকুলরাজ মহান ইলিশ।

তিনি মনে করতেন, সে এক দেহে এতটা প্রতিভা ধারণ করে যে শুধু তাকে দিয়েই তৈরি হতে পারে একটি পঞ্চপদী নানা স্বাদযুক্ত ভোজনের মতো ভোজন। আর পাঁচপদ কী এবং কীভাবে রেঁধে মধ্যাহ্নভোজ সারা যাবে, সেটাও যেমন বলেছেন, তেমনি দিয়েছেন কীভাবে কাটলে ইলিশ রান্না জমবে, সে পরামর্শও। তবে হ্যাঁ, ইলিশের ত্রিসীমানায় পেঁয়াজ আর আদাকে ঘেঁষতে দিতে তিনি নারাজ। আদায় যেমন কাঁচকলা নয়, তেমনি বুদ্ধদেব বাবুর কাছে আদায় ইলিশ নয়। এমনকি আলুও নৈব নৈব চ। তাঁর কথায়, ইলিশে আলু যোগ করা মহাপাতকের কাজ। তবে বুদ্ধবাবুকে প্রণিধান মেনে আমরাও তাঁর পঞ্চপদের চারটি আপনাদের জন্য আগেই পরিবেশন করেছি। পরখ করে দেখতে পারেন তাঁর ইলিশীয় মুনশিয়ানা।

আবার পর্তুগিজদের কল্যাণে এ দেশে আসা পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন বাজার গরম। এই পেঁয়াজেই কিন্তু তফাত পূর্ব বাংলার কথাশিল্পী বুদ্ধদেব বসু আর ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরীর। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি আবার ইলিশের স্বাদ খোলতাই করতে আদা আর পেঁয়াজ সঙ্গতে এক পায়ে খাড়া। ইলিশ মাছের ঝোল রান্নার যে প্রণালি প্রজ্ঞাদেবী বাতলেছেন, তাঁর আমিষ নিরামিষ গ্রন্থে, তাতে রয়েছে বিলাতি বেগুন বা তেমতি (টমেটো), সঙ্গে পেঁয়াজ, দুখানা তেজপাতা, ছয় গ্রাম আদা এবং ধনেশাক। বুদ্ধদেব বসু দেখলে নির্ঘাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতেন। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর ভাষায় ইলিশেররক্তই এর তেল। তাই মাছ ভালো করে ধুয়ে তবেই কাটতে হবে।

ইলিশ হবে অথচ বাবুদের কথা হবে না, তা কি হয়। কলকাতার বাবুরা বাইজি বাড়ি ঠেঙিয়ে ভোররাতে এসে ঘুমোতেন। তাই উঠতে উঠতে সূর্য হেলে যেত পশ্চিমে। আর তখন হতো তাদের নাশতা (প্রাতরাশ হয়ে যেত অপরাহ্নরাশ) ; কম করে পঁচিশ পদ দিয়ে। সেই তালিকায় থাকত ভাপা ইলিশ। এই গল্প বাংলা টপ্পার শেষ সলতে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com