উনিশশ’ চৌষট্টি সালের কথা। রজার পেনরোজ আর আইভর রবিনসন – দুই বন্ধু, দুই ইংরেজ বিজ্ঞানী – একজন পদার্থবিদ, আরেকজন মহাকাশবিজ্ঞানী।
সেপ্টেম্বর মাসের একদিন। রবিনসন তখন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের ডালাসে কাজ করতেন, সেখান থেকে ইংল্যান্ডে ফিরেছেন। তিনি রজার পেনরোজের সাথে দেখা করতে এলেন।
তাদের দু’জনের যখনই দেখা হতো তারা অনর্গল কথা বলতেন, বিষয়ের কোন অভাব হতো না।
সেদিনও কথা বলতে বলতে দুজন হাঁটছিলেন লন্ডনের বার্কবেক কলেজে রজার পেনরোজের অফিসের দিকে।
পথে তারা ফুটপাতের ওপর এক জায়গায় দাঁড়ালেন, রাস্তায় চলমান যানবাহনের স্রোতে একটা ফাঁক পাবার জন্য । রাস্তা পার হবার ওই সময়টুকুতে দু’জনেরই কথায় একটা বিরতি পড়লো।
আর ঠিক সেই নিরবতার মধ্যেই রজার পেনরোজের মনটা যেন আড়াইশ’ কোটি আলোকবর্ষ দূরের মহাশূন্যে কোথায় চলে গেল। সেখানে তিনি যেন দেখতে পেলেন একটা কোয়াসারের বস্তুকণা পাক খেতে খেতে ঘুরছে, মহাকর্ষের শক্তির টানে একটি পুরো ছায়াপথ যেন সংকুচিত হতে হতে তার নিজের কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, যতই সংকুচিত হচ্ছে – ততই তা আরো জোরে ঘুরছে।
পুরো ব্যাপারটা রজার পেনরোজ যেন স্পষ্ট দেখতে পেলেন ওই কয়েকটা মুহূর্তে।
সেখান থেকেই তার মনে একটা উপলব্ধির জন্ম হলো – যা ৫৬ বছর পর তাকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দেবে।
উনিশশ’ ষাটের দশকে রজার পেনরোজ ছিলেন রিলেটিভিস্ট ঘরানার একজন পদার্থবিদ।
তারা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বকে পরীক্ষা এবং অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে আরো সম্প্রসারিত করার কাজ করছিলেন।
বিশেষ করে পেনরোজ কাজ করছিলেন একটি বিশেষ দিক নিয়ে – যাকে বলে সিঙ্গুলারিটি প্রব্লেম।
‘সিঙ্গুলারিটি‘ আর ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণবিবর
এটা পদার্থবিদদের জন্য একটি অদ্ভূত এবং জটিল সমস্যা।
আইনস্টাইন তার জেনারেল থিওরি প্রকাশ করেছিলেন ১৯১৫ সালে, যা এতদিন বিজ্ঞানীরা স্থান, কাল, মহাকর্ষ, বস্তু এবং শক্তি – এই জিনিসগুলোকে যেভাবে বুঝতেন – তা বৈপ্লবিকভাবে পাল্টে দেয়।
উনিশশ’ সাল নাগাদ আইনস্টাইনের তত্ত্ব ছিল খুবই সফল, কিন্তু তার ভিত্তিতে যেসব পূর্বাভাস করা হচ্ছিল তার অনেকগুলোই ছিল অনিশ্চিত এবং সেগুলো পরীক্ষা করে দেখাও সম্ভব ছিল না।
যেমন, আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোতে দেখা যাচ্ছিল যে মহাকর্ষ শক্তি এমনভাবে ভেঙে পড়তে পারে যে তা বিপুল পরিমাণ বস্তুকে খুব ছোট একটা জায়গায় সংকুচিত করে ফেলতে পারে – যেখানে বস্তুকণাগুলো এত ‘ঘন’ হয়ে যাবে যে সবকিছু মিশে একাকার হয়ে ‘সিঙ্গুলারিটি’র অবস্থা তৈরি হবে – এমনকি আলোও তার হাত থেকে পালাতে পারবে না।
এটাই পরিচিত হয় ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণবিবর নামে।
ব্ল্যাক হোলে মহাকর্ষ শক্তি এত বেশি যে আলোও তা এড়াতে পারেনা (শিল্পীর চোখে)
কিন্তু সেই সিঙ্গুলারিটির মধ্যে পরিবেশটা এমন হবে যে পদার্থবিজ্ঞানের যেসব নিয়ম আমরা জানি – তার কোনটিই আর কাজ করবে না, এমনকি আইনস্টাইনের যে থিওরি অব রিলেটিভিটি দিয়ে এর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে – তাও না।
ব্ল্যাক হোলের কি সত্যি অস্তিত্ব আছে?
এই কারণেই সিঙ্গুলারিটি নিয়ে গাণিতিক পদার্থবিদদের এত আগ্রহ।
কিন্তু বেশির ভাগ পদার্থবিজ্ঞানীই মনে করতেন যে আমাদের এই মহাবিশ্ব এতটাই সুশঙ্খল এবং পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম দিয়ে বাঁধা – যে এর কোথাও সিঙ্গুলারিটির মতো কোন অবস্থা থাকতেই পারে না।
অনেকে বলতেন, সিঙ্গুলারিটি যদি থেকেও থাকে আমাদের পক্ষে তা দেখতে পাওয়াও সম্ভব নয়।
রজার পেনরোজ বলছেন, “এ নিয়ে বিরাট সংশয় ছিল। লোকে মনে করতো যে সিঙ্গুলারিটির মধ্যে কোন বস্তু পড়ে গেলে তা কোন দুর্বোধ্য উপাায়ে ঘুরতে থাকবে তার পর আবার সেটা হুশ করে বেরিয়ে আসবে।
আকাশে নতুন ধরণের কিছু বস্তু: খুব ছোট, কিন্তু খুব উজ্জ্বল
উনিশশ পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে যারা রেডিও এ্যাস্ট্রনমির জগতে কাজ করতেন তাদের কিছু পর্যবেক্ষণের ফলে পদার্থবিজ্ঞানীদের এসব চিন্তাভাবনায় নানা রকমের গোলমাল সৃষ্টি করলো।
এই বিজ্ঞানীরা মহাকাশে নতুন ধরণের কিছু বস্তু দেখতে পেলেন। এগুলো খুব উজ্জ্বল, খুব ছোট, এবং তাদের অবস্থানও বহু দূরে।
এদেরকে প্রথমে বলা হতো কোয়েজাই-স্টেলার অবজেক্টস সংক্ষেপে কোয়াসার। অর্থাৎ এগুলো প্রায় তারার মতোই কিছু জিনিস, কিন্তু ঠিক তারা নয়।
দেখা গেল এদের মধ্যে যেন অতিমাত্রায় শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে – কিন্তু খুব ছোট জায়গার মধ্যে।
বিজ্ঞানীদের কাছে ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হলো।
কিন্তু প্রতিটি নতুন পর্যবেক্ষণ থেকেই কেবল একটি সিদ্ধান্তেই পৌঁছানো যাচ্ছিল – আর তা হলো, এই কোয়াসারগুলো আসলে অতি প্রাচীন কিছু গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ যা ভেঙেচুরে যাচ্ছে এবং একটা সিঙ্গুলারিটিতে পরিণত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এবার নিজেদেরকে একটা প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন।
তাহলে কি সিঙ্গুলারিটি কোন দিনই দেখতে পাওয়া যাবে না বলে আগে যে ধারণা করা হতো – তা সঠিক নয়?
রিলেটিভিটির তত্ত্ব থেকে এই যে পূর্বাভাস জন্ম নিয়েছিল – এটা কি তাহলে শুধুই একটা গাণিতিক কল্পনামাত্র নয়?
অস্টিন, প্রিন্সটন, মস্কো, ক্যাম্ব্রিজ, আর অক্সফোর্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত নানা দেশের মহাকাশবিজ্ঞানী আর গণিতবিদরা একটা তত্ত্বের অনুসন্ধানে লেগে পড়লেন – যা দিয়ে এই কোয়াসারগুলোর প্রকৃতি আর আচরণকে ব্যাখ্যা করা যাবে।
বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই চেষ্টা করলেন: যে বিশেষ মহাজাগতিক পরিস্থিতিতে একটা সিঙ্গুলারিটি জন্ম নিতে পারে – সেই পরিস্থিতিটাকে চিহ্নিত করতে।
একটি তত্ত্বের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা
রজার পেনরোজ তখন লন্ডনের বার্কবেক কলেজের রিডার। তিনি এগুলেন ভিন্ন একটা পথে।
তার সব সময়ই লক্ষ্য ছিল কিভাবে এর অন্তর্নিহিত সূত্র এবং মূল গাণিতিক কাঠামোটা খুঁজে বের করা যায়।
রজার পেনরোজ বার্কবেকে একটা বিরাট বোর্ডে নানা রকম রেখা, অংক আর ডায়াগ্রাম নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা – নানা রকমের ডিজাইন আঁকতেন।
দেখা গেল এদের মধ্যে যেন অতিমাত্রায় শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে – কিন্তু খুব ছোট জায়গার মধ্যে।
বিজ্ঞানীদের কাছে ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হলো।
কিন্তু প্রতিটি নতুন পর্যবেক্ষণ থেকেই কেবল একটি সিদ্ধান্তেই পৌঁছানো যাচ্ছিল – আর তা হলো, এই কোয়াসারগুলো আসলে অতি প্রাচীন কিছু গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ যা ভেঙেচুরে যাচ্ছে এবং একটা সিঙ্গুলারিটিতে পরিণত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এবার নিজেদেরকে একটা প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন।
তাহলে কি সিঙ্গুলারিটি কোন দিনই দেখতে পাওয়া যাবে না বলে আগে যে ধারণা করা হতো – তা সঠিক নয়?
রিলেটিভিটির তত্ত্ব থেকে এই যে পূর্বাভাস জন্ম নিয়েছিল – এটা কি তাহলে শুধুই একটা গাণিতিক কল্পনামাত্র নয়?
অস্টিন, প্রিন্সটন, মস্কো, ক্যাম্ব্রিজ, আর অক্সফোর্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত নানা দেশের মহাকাশবিজ্ঞানী আর গণিতবিদরা একটা তত্ত্বের অনুসন্ধানে লেগে পড়লেন – যা দিয়ে এই কোয়াসারগুলোর প্রকৃতি আর আচরণকে ব্যাখ্যা করা যাবে।
বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই চেষ্টা করলেন: যে বিশেষ মহাজাগতিক পরিস্থিতিতে একটা সিঙ্গুলারিটি জন্ম নিতে পারে – সেই পরিস্থিতিটাকে চিহ্নিত করতে।
একটি তত্ত্বের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা
রজার পেনরোজ তখন লন্ডনের বার্কবেক কলেজের রিডার। তিনি এগুলেন ভিন্ন একটা পথে।
তার সব সময়ই লক্ষ্য ছিল কিভাবে এর অন্তর্নিহিত সূত্র এবং মূল গাণিতিক কাঠামোটা খুঁজে বের করা যায়।
রজার পেনরোজ বার্কবেকে একটা বিরাট বোর্ডে নানা রকম রেখা, অংক আর ডায়াগ্রাম নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা – নানা রকমের ডিজাইন আঁকতেন।
এর পর ১৯৬৩ সালে আইজাক খালাৎনিকভের নেতৃত্বাধীন এক দল রুশ তাত্ত্বিক একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন যা বিপুলভাবে প্রশংসিত হলো।
এর পর ১৯৬৩ সালে আইজাক খালাৎনিকভের নেতৃত্বাধীন এক দল রুশ তাত্ত্বিক একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন যা বিপুলভাবে প্রশংসিত হলো।
বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই যা ধারণা করতেন – তা এতে নিশ্চিত করা হলো।
ধারণাটা হলো – এই সিঙ্গুলারিটিগুলো আমরা মহাবিশ্বকে যেভাবে জানি তার অংশ নয়। মহাবিশ্বে কোন তারা ভেঙে পড়তে পড়তেও সিঙ্গুলারিটির অবস্থায় যাবার আগেই আবার সম্প্রসারিত হতে থাকবে। তাই কোয়াসারের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা আছে।
রুশ বিজ্ঞানীরা কি ঠিক বলেছেন?
রজার পেনরোজের মনে সন্দেহ রয়েই গেল।
“আমার সব সময়ই মনে হচ্ছিল যে তারা যে পদ্ধতি ব্যবহার করছে তাতে হয়তো কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। আমার মনে হচ্ছিল সমস্যাটাকে ভিন্ন ভাবে দেখতে হবে।”
কিন্তু তাদের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও পেনরোজ নিজে এই সিঙ্গুলারিটি সমস্যার কোন সমাধান বের করতে পারছিলেন না। সেই সময়ই তার সাথে রবিনসনের দেখা হয়।
রবিনসন নিজেও সিঙ্গুলারিটি সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কিন্তু ১৯৬৪ সালে লন্ডনে হেমন্তের সেই দিনে তারা কিন্তু এটা নিয়ে কোন আলোচনা করেননি ।
হঠাৎ আলোর ঝলকানি
কিন্তু রবিনসনের সাথে রাস্তা পার হবার সময় হঠাৎ পেনরোজের মাথায় একটা ভাবনা খেলে গেল। তিনি বুঝলেন, রুশ বিজ্ঞানীরা ভুল করেছেন।
যখন একটা তারা বা ছায়াপথ তার সকল শক্তি, গতি এবং ভর নিয়ে এক সঙ্গে সংকুচিত হতে থাকে – তখন এত উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হবে যে চারদিকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ ছড়িয়ে পড়বে। বস্তুকণার মেঘটা যত ছোট হতে থাকবে, ততই তা আরো বেশি উজ্জ্বল আভা ছড়াতে থাকবে।
এবার তিনি তার বোর্ডে করা ড্রইং আর জার্নালের স্কেচগুলো মনে মনে মিলিয়ে দেখে ভাবতে চেষ্টা করলেন, কোন্ বিন্দুতে পৌঁছার পর রুশ বিজ্ঞানীদের কথামতো সেটা আবার সম্প্রসারিত হতে শুরু করে।
পেনরোজ সেরকম কোন বিন্দু দেখতে পেলেন না।
তিনি তার মনের চোখ দিয়ে দেখতে পেলেন, তারাটি যে ভেঙে পড়ছে তা আসলে অব্যাহত থাকবে। এর অতি ঘন কেন্দ্রটির বাইরে যে আলো তৈরি হবে তা আমাদের ছায়াপথে যত তারা আছে তাদের মোট উজ্জ্বলতার চেয়েও বেশি হবে। আর কেন্দ্রের ভেতরে আলোর গতিপথ নাটকীয়ভাবে বেঁকে যেতে থাকবে, স্থান-কাল দুমড়ে-মুচড়ে যাবে। সব দিক এসে এক জায়গায় মিলে যাবে, এমন একটা মুহূর্ত আসবে যেখান থেকে আর পেছন ফেরা যাবে না। আলো, স্থান এবং কাল সবকিছু থেমে যাবে। তৈরি হবে এক ব্ল্যাক হোল – কৃষ্ণবিবর।
সেই মুহূর্তে পেনরোজ অনুভব করলেন – সিঙ্গুলারিটির কোন বিশেষ পরিস্থিতির দরকার নেই, আমাদের মহাবিশ্বে এটা অসম্ভব কিছু তো নয়ই, বরং অবধারিত একটা ব্যাপার।
সেই নিরব মুহূর্তগুলোতেই মাথায় খেলে গেল সমাধান
পেনরোজ আর রবিনসন রাস্তা পার হলেন, অন্য পারে গিয়ে আবার তাদের মধ্যে কথা শুরু হলো।
আর সাথে সাথেই, পেনরোজ যা চিন্তা করছিলেন – সব ভুলে গেলেন।
কিন্তু পরে বন্ধুকে বিদায় দিয়ে তার অফিস ঘরে ফিরে আবার বোর্ড আর কাগজের তাড়া নিয়ে বসলেন পেনরোজ।
'ব্ল্যাক হোল' যে সত্যিই আছে তা কীভাবে প্রমাণিত হলো
'ব্ল্যাক হোল' যে সত্যিই আছে তা কীভাবে প্রমাণিত হলো
'ব্ল্যাক হোল' যে সত্যিই আছে তা কীভাবে প্রমাণিত হলো
'ব্ল্যাক হোল' যে সত্যিই আছে তা কীভাবে প্রমাণিত হলো
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন