আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্য মানুষের অধিকার। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য প্রধান। জীবন ধারণের জন্য যেমন খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই, তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। যদিও আমাদের দেশের বাস্তবতায় নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাদ্য ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবখানে ভেজালের এত বেশি ছড়াছড়ি যে, বহু চেষ্টার পরেও মানুষের বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্যতা আজ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর জেনেও এক একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী খাবারে মেশাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। আবার অনেক কৃষক যথাযথ জ্ঞানের অভাবে না জেনেই ব্যবহার করছে মাত্রারিক্ত নানা ধরনের কীটনাশক ও বৃদ্ধি হরমোন, যার প্রভাবে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে।


শাকসবজি উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতের প্রতিটা পরতে পরতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর এবং মাত্রারিক্ত সব রাসায়নিক পদার্থ। দেশের অধিকাংশ কৃষক, অধিক ফলন এবং দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার আশায় কোন রকম মাত্রা নির্ধারণ ছাড়াই ফসল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে হরমোন ব্যবহার করে। এছাড়া পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার কীটনাশক অহরহ ব্যবহার করা হয়। কৃষকদের এসব হরমোন ও কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক মাত্রা ও সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় উৎপাদিত ফসল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করার সময়ও আরেক দফায় সেখানে মেশানো হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। শাকসবজিকে টাটকা ও সতেজ দেখানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ কপার সালফেটের পানিতে (তুঁতে) ডুবিয়ে রেখে তারপরে বাজারে ওঠানো হয়। ফলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। মৌসুমি ফল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে ফলে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান। তরমুজের ভেতর লাল রঙ তৈরির জন্য ভিতরে সিরিঞ্জ দিয়ে দেওয়া হয় তরল পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট। বিভিন্ন ফল পাকানোর সময় ব্যবহৃত হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড। আর দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের জন্য দেওয়া হয় ফরমালিন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শাকসবজি ও ফলমূলের জুড়ি নেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এগুলোতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়েই না উপরন্তু এগুলো খাওয়ার মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে মারাত্মক সব রোগ।

দুধ সুষম খাদ্য তালিকার অন্যতম একটি উপাদান। কিন্তু বর্তমানে এই সুষম খাবারটি ও বিষে পরিণত হয়ে গেছে। পূর্বে দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রির কথা প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে দুধে ভেজালের পরিমান বহুগুনে বেড়ে গেছে। যেমন গরুর শরীরে পিটুইটারি ইনজেকশন দিয়ে দুধের পরিমাণ কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। যেটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের ঝুঁকি। বেশিদিন সংরক্ষণের জন্য দুধে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। কয়েক বছর আগে শোনা গিয়েছিল পাস্তুরিকৃত দুধে মলের জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব ক্ষতিকারক দুধ দিয়েই আবার বানানো হচ্ছে বিভিন্ন লোভনীয় খাবার বা মিষ্টি জাতীয় পণ্য। কিন্তু সেখানেও ভেজালের কমতি নেই। মাঝেমধ্যে দেখা যায় টিস্যু পেপার দিয়েও ছানা, রসগোল্লা বানানো হয়েছে। চিনি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তার উপর মিষ্টি বানানোর সময়ে ভেজাল দুধ ব্যবহার ও তার সাথে নানান অপদ্রব্য মেশানোর পাশাপাশি চিনির পরিবর্তে নিষিদ্ধ ঘন চিনি ব্যবহৃত হচ্ছে। সোডিয়াম সাইক্লামেট নামের মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থটি ঘন চিনির প্রধান উপাদান, যা নির্দ্বিধায় ব্যবহৃত হচ্ছে, মিষ্টি, বেকারি আইটেম, আইসক্রিম, বেভারেজ, জুস, চকোলেট, কন্ডেন্সড মিল্ক প্রভৃতি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য দ্রব্যে। চিনির চেয়ে প্রায় পঞ্চাশ গুণ বেশি মিষ্টি এই ঘন চিনি পৃথিবীর অনেক দেশেই নিষিদ্ধ হলেও আমাদের দেশের আসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলো বিক্রী করছে। আবার ভেজাল ঘন চিনির সাথে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার মেশানো হচ্ছে। স্বাদহীন এই রাসায়নিক পদার্থটি দামে স্বস্তা এবং দেখতে হুবহু চিনির মতো হওয়ায় ঘন চিনির সাথে মেশালে কোনোভাবেই এর অস্তিত্ব বোঝার উপায় থাকছে না। যেটা বিষের সাথে বিষ মেশানোরই শামিল। দাম কম হওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা কোনরকম আগে পরে চিন্তা না করে এই ভেজাল মিশ্রিত ঘন চিনিই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

দ্রুত বর্ধনশীল অনেক মাছ চাষের সময় সেগুলো বিভিন্ন আবর্জনা খাইয়ে দ্রুত বড় করা হয়। উক্ত আবর্জনার সাথে মিশ্রিত বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাছের শরীরের সাথে মানব দেহে প্রবেশ করছে। যেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। মাছ পচার হাত থেকে রক্ষা করতে খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবহৃত করছে ফরমালিন। মাংসের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দেশের নিন্ম আয়ের মানুষের ফার্মের মুরগি একটি নিত্ত নৈমত্তিক খাবার। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে দেশের সব বিভাগীয় পর্যায় এমন কি গ্রামে বসবাসকারী মানুষের কাছেও দামে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হওয়ায় ফার্মের মুরগি বেশ আগে থেকেই সবার জনপ্রিয়। কিন্তু গবেষণায় উঠে এসেছে, ফার্মের মুরগির শরীরে ক্ষতিকর অনেক জীবাণু এবং রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি। দ্রুত বাড়ার জন্য মুরগির দেহে হিউম্যান অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এর ফলে মুরগির দ্রুত বাড়তে খুব বেশি খাবার দেয়ার দরকার হয় না। এছাড়া দানাদার যেসব খাবার মুরগিকে দেয়া হয়, তাতেও মিশ্রণ করা হয় নানারকম রাসায়নিক উপাদান। চামড়ার ট্যানারিগুলোতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর চামড়ার উচ্ছিষ্টগুলো দিয়েই খাবার প্রস্তুত করে চলেছে মুরগির খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। তাতে পাওয়া গেছে ভয়াবহ মাত্রার ক্রোমিয়াম। এই ক্রোমিয়াম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মানুষের শরীরের কোষগুলো নষ্ট করে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। মুরগির শরীরে ব্যবহৃত নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন ও ওষুধে লুকিয়ে আছে মরণঘাতী ব্যাকটেরিয়াসহ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর মারাত্মক জীবাণু। গরুর মাংসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পদ্ধতি দেখা যায়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গরুর শরীরে দেওয়া হয় বিভিন্ন গ্রোথ হরমোন। ঈদের সময় কিছু গরুর গোশত বৃদ্ধির জন্য এমন কিছু হরমোন ব্যবহার করা হয়, যাতে ঈদের চার-পাঁচ দিনের মধ্যে গরুটি বিক্রি না হলে সেটি মারা যায়। এ ধরনের গোশত মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। কিন্তু চাল প্রক্রিয়াজাতকরণে আছে ভেজালের দীর্ঘ ইতিহাস। ক্রেতাদের কাছে চাল অধিক আকর্ষণীয় করতে কয়েকবার সিদ্ধ করে এবং বিভিন্নভাবে চাল ছাঁটাই করা হয়। ফলে চালে থাকা ভিটামিন-বি নষ্ট হয়ে যায়। চাল আকর্ষণীয় করতে রঙের সাথে মেশানো হয় নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য যেমন: সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যারারুট ও পুরানো নষ্ট ময়দা। এছাড়া ও গুঁড়া পাথর, কাঁকর, ইটের গুঁড়া মিশিয়ে চালের ওজন বাড়ানো হয়।

বেকারির অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী পানির বোতলে দূষিত পানি, মুড়িতে ইউরিয়া, বিষাক্ত এনার্জি ড্রিংক ও জুস, শিশুখাদ্যে ও ভয়াবহ এবং ক্ষতিকর কেমিক্যাল পণ্য মেশানো হয়। মেশানো হয় মসলায় ইটের গুঁড়া এবং হলুদে লেড ক্রোমেট বা লেড আইয়োডাইড। ভেজালের এই তালিকা এত দীর্ঘ যে, বলে শেষ করা যাবেনা। ক্রেতা এখন খাঁটি জিনিস চড়া মূল্য দিয়েও বাজারে কিনতে পায়না।

পচা বাসি খাবারের চিত্র প্রায় সব রেস্তোরাঁতেই চোখে পড়ে। বাদ যায়না নামীদামী অনেক রেস্তোরাঁও। শিশুদের জন্য তৈরি কৃত বিভিন্ন কোম্পানির জুস, চকলেট, চানাচুর ইত্যাদি উৎপাদনে কোম্পানিগুলো কোনরকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে দেদারসে বানিয়ে বাজারজাত করে যাচ্ছে। এছাড়াও রাস্তার পাশে, বিভিন্ন পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশে গড়ে ওটা রেস্তোরাঁ বা খোলা খাবারের দোকানগুলোর কতটা স্বাস্থ্য সম্মত সেটার প্রশ্ন থেকেই যায়। এসবের কিছু কিছু মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় আসে আবার অধিকাংশ চাপা পড়ে যায়। মানুষ জেনে অথবা না জেনে খাবারের পরিবর্তে এসব বিষ গ্রহণ করে নিজেদের আরও একধাপ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ফরমালিন ব্যবহৃত হয় মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ সেটাকে খাদ্যে ব্যবহার করছে। টেক্সটাইল কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ডাই বা রঞ্জক (রঙ) পদার্থ মানব দেহে প্রবেশের পরে দেহের প্রতিটা অঙ্গকে ক্ষতি করে। গলবিলে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করা হয়। ডাই বা রঞ্জক (রঙ) পদার্থ মানব দেহের লিভার, কিডনি, হৃদপিন্ড, অস্থিমজ্জা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। তরুণদের বেলায় এসব প্রভাব ধীরে দেখা গেলেও শিশু ও বৃদ্ধদের বেলায় দ্রুতই দেখা দেয়। খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশের মানুষের বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি সহ আরও জটিল রোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রোগীদের লাইন লম্বা থেকে লম্বাতর হচ্ছে। শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এছাড়াও মাতৃ স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলে দেখা যায় একজন গর্ভবতী মা ভেজাল মুক্ত খাবার পায়না। যার ফলে তাঁর গর্ভের শিশুটিও বেড়ে ওঠার আশানুরূপ পরিবেশ পায়না। এসব কারনে গর্ভপাত এবং বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম এখন অনেকটা নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশে চাষযোগ্য কৃষি জমির তুলনায় জনসংখ্যার চাপ অধিক। আর বাড়তি এই জনগণের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হাইব্রিড সবজি চাষ, মাংস উৎপাদন অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বে ও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বহির্বিশ্বে হাইব্রিড সবজি, ফলমূল, মাস, মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় যথাযথ হরমোন ব্যবহার করা হয়। সেখানে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। উপরন্তু দেশের বাজারে এসব হরমোনের বেশ সহজলভ্যতাও রয়েছে। যার ফলে কৃষক সেগুলো সহজে হাতের নাগালে পেয়ে ইচ্ছামত ব্যবহার করছে। কীটনাশকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এথেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে। যেমন: হাইব্রিড সবজি, মাংস উৎপাদনে কৃষকদের যথাযথ প্রশিক্ষন থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের গ্রোথ হরমোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। নীতিমালা থাকতে হবে ফসল উৎপাদনে নিয়ন্ত্রিত মাত্রার কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। উপজেলা পর্যায়ে কৃষি অফিসগুলো নিয়মিতভাবে তদারকি করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। এছাড়া উৎপাদিত খাবারের মান যাচাইয়ের জন্য দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনসমূহ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি আধুনিক না হওয়ায় রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে সবজি বা ফলমূল পরিবহণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয় এবং পথিমধ্যে অনেক নষ্ট হওয়ার ভয়ে কৃষক বা মধ্য স্বত্বভোগীরা নানা রকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি পূর্বক সেই সাথে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ তদারকিই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

জনগণের স্বদিচ্ছা ছাড়া সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, এর সঙ্গে অনেক বিষয়াদি জড়িত। তারপরেও কিছু নিয়ম কানুন এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার লাগাম এখনি টেনে ধরতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সামনে খুবই খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে সেটা সহজেই অনুমেয়।

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com