আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

দৈনন্দিন

ফিরে চল মাটির টানে

কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই যে কোভিড-১৯ মহামারিকালে পুরো পৃথিবীতে হাহাকার পড়ে গেল, দুর্ভিক্ষ আসবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হলো তখন কৃষকই আমাদের বাঁচিয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েছে। ঘরে ধান-চাল থাকলে ডাল-ভাত খেয়েও দিনাতিপাত করা যায়। ফলে মহামারিকালে উন্নত বিশ্বের নেতানেত্রীদের কপাল যখন দুশ্চিন্তার ঘামে ভিজেছে তখন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি এই কৃষিকে কেন্দ্র করেই। গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু তো আমাদের ঐতিহ্য, আদি সমৃদ্ধির গল্প। মুক্তবাজার অর্থনীতির নানা মারপ্যাঁচে জাতীয়ভাবে কৃষির অবদান কম দেখানো হলেও কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশকে কৃষি অর্থনীতির ওপরই দাঁড়াতে হবে এ কথা বিশ্লেষক মাত্রই বিশ্বাস করেন। রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়ে বলতে হয়, ফিরে চল মাটির টানে- যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে।

দুই.

 কৃষক বাঁচলে বাঁচবে কৃষি, বাঁচবে দেশ। এজন্য কৃষিপণ্যের উৎপাদনে কৃষককে সবধরনের সহযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া কৃষক যেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। দেখা যায় কৃষক সস্তা দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে সেটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা এখানে সুবিধা পায়। মধ্যস্বত্বভোগীরাও অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু উৎপাদিত মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের সাথে বিস্তর ব্যবধান হলে তাতে ভোক্তার পকেট কাটা যায়। অন্যদিকে বঞ্চিত হয় উৎপাদক কৃষকও। এ কারণে কৃষিপণ্যের দামে একটি সমন্বয় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে। 

দিন পাল্টেছে। কৃষিতে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। নতুন নতুন উদ্ভাবন আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। সারা বছরই পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের সবজি, ফসল। মাছ-মাংস উৎপাদনেও ঘটেছে বিপ্লব। বিশেষ করে মাছ চাষ বদলে দিয়েছে চাষীদের ভাগ্য। এমনও বলা হচ্ছে মাছই বদলে দেবে বাংলাদেশকে। মাছ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন তা রফতানিও হচ্ছে। অ্যাকুরিয়ামের রঙিন মাছ চড়া দামে কিনে আনতে হতো সিঙ্গাপুর থেকে এখন তা দেশেই উৎপাদন হচ্ছে।

মাছ চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও নানা প্রতিকূলতায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো যাচ্ছে না। মাছ চাষ করতে হলে তো জল বা জলাশয়ের দরকার। জলই যদি না থাকে, তাহলে মাছ থাকবে কেমন করে? জলের আধার হচ্ছে নদী-নালা-খাল-বিল। দেশের নদ-নদীগুলো দখল-দূষণে হারিয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। দেশে এখন মাছ উৎপাদনে একটি বিপ্লব ঘটেছে। বাণিজ্যিকভাবে অনেকে লাভবান হচ্ছে। মাছের উৎপাদন বেড়েছে বটে, কিন্তু তাতে পুষ্টি চাহিদা মিটছে না। এজন্য দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রাকৃতিকভাবেই যেন দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মূলত মাছে-ভাতে বাঙালিকে প্রাকৃতিক মাছের অতুলনীয় স্বাদ ফিরিয়ে দিতে হলে দেশের নদী-নালা-খাল-বিলগুলো বাঁচাতে হবে সবার আগে।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশে ৫৪ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ প্রায় বিলুপ্ত, ২৮ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন এবং ১৪ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ এখন প্রায় খাল-বিল-নদী-নালাশূন্য। খাল-বিল ভরাট করে চলছে নানা স্থাপনা তৈরির মহোৎসব। যেসব নদী অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোয় দূষণের মাত্রা এত বেশি, মাছের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থা আরও সঙ্গীন। হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পর বুড়িগঙ্গা তার রূপ ফিরে পাচ্ছে, এটা আশার কথা। একইভাবে অন্য নদ-নদীগুলোও দূষণ থেকে রক্ষা করতে হবে।

পৃথিবীর আশ্চর্যতম এক নদীর নাম হালদা। চট্টগ্রামের ব্যতিক্রমী এই নদীতেই পূর্ণিমা-অমাবস্যার একটি বিশেষ সময়ে মাছ ডিম ছাড়ে। বহুসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয় এই নদীকে কেন্দ্র করেই। নদীর পানিও ভূ-উপরিস্থ জলের আধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শহরে এই নদী থেকেই পানি শোধন করে তা পানের জন্য সরবরাহ করা হয়। অথচ দখল-দূষণে এই নদীও মৃতপ্রায়। হালদা দখল করে হচ্ছে ইটভাটা, বসতবাড়ি। এটা এক আত্মঘাতী প্রবণতা। যেখান থেকে শত শত মণ মাছের ডিম উৎপাদন হয়, সেখানে এখন এক মণ ডিম পাওয়াও দুষ্কর। ফলে মাছের অভাব যেমন দেখা দিচ্ছে, তেমনি নদী-তীরবর্তী বহুসংখ্যক মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এটা মনে রাখা দরকার, হালদা নদী বাঁচলেই প্রাকৃতিক মাছের বিশাল এক ভাণ্ডার রক্ষা পাবে। হালদা একটি বিশেষ ধরনের নদী; একে রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। সুন্দরবন যেমন অনন্য, আমাদের দেশকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরছে এর রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে, তেমনি হালদাও। একটি সুন্দরবন যেমন কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়, তেমনি হালদাও। এই বিশিষ্টতার মূল্য দিতে জানতে হবে।

কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তা বৃষ্টির পানি বা সেচের মাধ্যমে বিল ও জলাশয়গুলোয় গিয়ে পড়ে এবং মাছের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। বর্তমানে মৎস্য চাষিরা এমন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন, যেগুলো অতি অল্প সময়ে দ্রুত বর্ধনশীল। শুধু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক এসব মাছ চাষের কারণে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশি মাছ চাষ করার ব্যাপারে অনীহার কারণেও আমরা হারিয়ে ফেলছি দেশীয় জাতের নানা মাছ। চাষের মাছে কোনো স্বাদ নেই। অথচ ছোট-বড় নানা জাতের দেশি মাছের স্বাদ, সে তো অতুলনীয়!

এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও জাটকা নিধনের কারণে রূপালি ইলিশও বিলুপ্তির পথে। ইলিশ রক্ষার বিষয়ে নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। ইলিশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগে ‘আন্তঃসীমান্ত সংলাপ’ ও হয়েছে ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, ভারতের কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া ইলিশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কারণ বাংলদেশ ও ভারতের বেশকিছু অভিন্ন নদী রয়েছে। পদ্মাসহ বেশকিছু নদী ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। দু-একটি নদীর উজানে বাঁধ দেয়ায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্রোত তো দূরের কথা, যদি পর্যাপ্ত পানি না থাকে, তবে ইলিশ বাঁচবে কীভাবে? ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের পদ্মাসহ কয়েকটি নদীর শীর্ণদশা। বর্ষা মৌসুম ছাড়া নদীতে পানি থাকে না। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে ইলিশের উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ শুরু হলে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এই বর্ষা মৌসুমে বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকার কথা থাকলেও সে তুলনায় নেই। কেউ কি কখনও ভেবেছিল, ইলিশের এমন দুর্দিন আসবে? আর তা হবেই না বা কেন! যে পদ্মা নদী ছিল ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র, সেই নদীই এখন মৃতপ্রায়।

এখানে-ওখানে বড় বড় চর পড়ে একদার প্রমত্তা পদ্মার মৃত্যুপ্রায় ঘনিয়ে এসেছে। শুধু বর্ষাকালের তিন-চার মাস ছাড়া সারা বছর নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। দেশের অন্য নদীগুলোরও একই অবস্থা। তাহলে আমাদের প্রিয় মাছ ইলিশ কোথায় যাবে? কোথায় অবাধে তার বংশবৃদ্ধি হবে, যেখানে ছোট জাটকা সহজেই বেড়ে একটি উপাদেয় ইলিশে পরিণত হবে? আসলে প্রায় দুই যুগ ধরে যেন ইলিশের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ইলিশ একদিন বিলুপ্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে এখনই ইলিশবান্ধব একটি প্রতিবেশ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

হারানো নদী পুনরুদ্ধার, নদীর নাব্য বৃদ্ধি, নদীদূষণ রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মৎস্য চাষিদের দেশীয় মাছ চাষের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

তিন.
বাংলাদেশকে এক সময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসতো পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন আর নেই। মাঝখানে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার এক চেষ্টা হয়েছিল। বিশেষ করে সরকার বন্ধ পাটকল চালুসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিল পাটখাতের উন্নয়নে। কিন্তু সেটিও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আবারও শুরু হয়েছে পাটখাতের দুর্দিন। ফলে পাট চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এবং পাটজাত পণ্যের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আবারও উদ্যোগী হতে হবে। দেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে ঐতিহ্যময় গৌরব।

সরকার পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করেছে। পাট উৎপাদন বিপণন ও রফতানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানেও দেয়া হবে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার ও সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে পণ্যের মোড়কীকরণে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়। ওই আইনে ২০ কেজির বেশি পণ্যের মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। পাটখাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই পাটকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে কৃষি অর্থনীতির ওপর ভর করেই দাঁড়াতে হবে। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

পাট এমন একটি ফসল যার সবকিছুই কাজে লাগে। পাটের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। ঔষধি পথ্য হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। পাটখড়ি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। ঘরের বেড়া বা আসবাবপত্র তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। পাটের আঁশের কথা তো বলাইবাহুল্য। উন্নত জাতের তোষা পাটের সুতা থেকে জামদানি পর্যন্ত তৈরি সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন। এছাড়া পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। ফলে পাট বলতে এখন বাংলাদেশকেই বোঝাবে। মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করা গেলে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তবে এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

এছাড়া বন্ধ হওয়া পাটকল চালু করা, যেগুলো চালু আছে সেগুলো যেন ঠিক মতো চলে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি। পাট উৎপাদনে কৃষি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পায় পাটের নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উন্মেষ ঘটাতে হবে দেশপ্রেমের। পাটের সুদিন ফিরে আসলে এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে।

চার.
দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের দরকার হয় তা আসে কৃষিজমি থেকেই। কিন্তু দিন দিন এই জমি কমে যাচ্ছে। কৃষিজমির পরিমাণ এতোটাই দ্রুত কমছে যে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিই কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঘর-বাড়ি। যার অধিকাংশ তৈরি হচ্ছে কৃষিজমিতে। এছাড়া জনসংখ্যা বাড়ার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য ক্ষেত্রে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ করতে হচ্ছে। বাড়ছে শিল্পকারখানা। এসবের জন্য কৃষিজমিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভাঙনের ফলেও কৃষিজমি কমছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষিজমি রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
সহযোগী একটি দৈনিকের এ সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রতি বছর দেশে কৃষিজমি কমছে ৮২ হাজার হেক্টর, যা মোট জমির ১ শতাংশ। কৃষিশুমারি ১৯৮৪ ও ২০০৮-এর মধ্যে তুলনা থেকে দেখা যায়, চাষকৃত এলাকার পরিমাণ কমেছে সাত লাখ ৩৩ হাজার একর, অর্থাৎ ২৪ বছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃষিজমি যে হারে কমছে তাকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর দেশের জনসংখ্যায় যোগ হওয়া নতুন মুখের জন্য সাড়ে তিন লাখ টন বাড়তি চালের দরকার হয়। একদিকে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যদিকে কৃষিজমি কমে যাওয়া রীতিমতো উদ্বেগজনক ব্যাপার। এ অবস্থায় জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
সীমিত আয়তনের বাংলাদেশে জমি খুবই মূল্যবান; এখানে ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতি ইঞ্চি জমি হিসাব করে ব্যবহার করতে হবে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণের কারণে দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আবাদি জমি কমে যাওয়ার কারণে বছরে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হচ্ছে। আবাদি জমি যেভাবে কমছে, তাতে দেশে আগামীতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই সারাদেশে জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা দরকার। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশে সংরক্ষিত কৃষিজমি ও বনভূমির পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে নগরায়ণ ও উন্নয়ন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

পাঁচ.
কৃষক বাঁচলে বাঁচবে কৃষি, বাঁচবে দেশ। এজন্য কৃষিপণ্যের উৎপাদনে কৃষককে সবধরনের সহযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া কৃষক যেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। দেখা যায় কৃষক সস্তা দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে সেটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা এখানে সুবিধা পায়। মধ্যস্বত্বভোগীরাও অর্থনীতিতে অবদান রাখে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু উৎপাদিত মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের সাথে বিস্তর ব্যবধান হলে তাতে ভোক্তার পকেট কাটা যায়। অন্যদিকে বঞ্চিত হয় কৃষকও। এ কারণে কৃষিপণ্যের দামে একটি সমন্বয় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি – দা এগ্রো নিউজ

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি
কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি

উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ – দা এগ্রো নিউজ

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ
ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ

উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।

প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

লাউ টাকি – দা এগ্রো নিউজ

লাউ-টাকি
লাউ-টাকি

উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।

প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি – দা এগ্রো নিউজ

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি
বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি

উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com