আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ
পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার সেই ভারত অল্প কিছু পেঁয়াজ রপ্তানি করবে, এই খবরে দাম কিছুটা কমেও যেতে দেখা গেছে।

গত বছরেও ভারত যখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল, বাংলাদেশে এই মসলাটির দাম রেকর্ড তিনশো টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার প্রায় ৫৭ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা বিদেশ থেকে, প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। এ কারণেই পেয়াঁজের ব্যাপারে ভারত কোন সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে।

এছাড়া মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন থেকেও বাংলাদেশে অল্প কিছু পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে।

কিন্তু কৃষি প্রধান একটি দেশ হয়েও বাংলাদেশ কেন পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়? দেশের পেঁয়াজের চাহিদা দেশেই কীভাবে মেটানো সম্ভব?

চাহিদা আর উৎপাদনের ফারাক

বাংলাদেশের কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।

২০২০ সালে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। তবে এই উৎপাদন থেকে গড়ে ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে দেশে মোট পেঁয়াজের উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ থেকে ১৯ লাখ টনে। অথচ দেশের বাকি চাহিদা পূরণ করতে প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

প্রতিবেশী দেশ, সড়ক পথে দ্রুত আনা, কম দাম বিবেচনায় প্রধানত ভারত থেকেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের চাহিদার পুরোটা পূরণ করতে হলে দেশেই অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন করতে হবে। তাহলে যেটুকু নষ্ট হবে, তা বাদ দিয়ে বাকি পেঁয়াজ দিয়ে দেশের পুরো চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।

কৃষকদের গ্রীষ্ককালীন পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ
কৃষকদের গ্রীষ্ককালীন পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ

যে কারণে চাহিদার পুরোটা পূরণ করা যায় না

কৃষি প্রধান একটি দেশ হয়েও পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে না পারার পেছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। মসলা গবেষণা কেন্দ্রে তিনি পেঁয়াজ চাষের বিষয়গুলো দেখেন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া আমাদের পক্ষে খুব সম্ভব। কৃষকদেরও আগ্রহ আছে। কিন্তু কিছু সমস্যা আছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান আগে করতে হবে।

বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশে পেঁয়াজের ঘাটতির পেছনে বেশ কিছু কারণ তিনি চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, এ নিয়ে তার কিছু পরামর্শ রয়েছে।

বীজের অভাব

বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য পেঁয়াজের ভালো ও উন্নত বীজের অভাব রয়েছে।

ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলছেন, “আমাদের দেশে প্রতিবছর মোট ১১০০ টন পেঁয়াজের বীজের দরকার হয়। সরকারিভাবে পাঁচ-ছয় টন, বেসরকারিভাবে ৫০-৬০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হয়। বাকিটা কৃষকরা উৎপাদন করেন।”

পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হলে এই বীজের উৎপাদন এবং সংরক্ষণও বাড়াতে হবে।

এক কেজি পেঁয়াজের বীজে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। একেক বিঘায় গড়ে ৪০ মণ দেশী পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়।

গত বছর এক কেজি পিয়াজের বীজের দাম আড়াই হাজার টাকা, অর্থাৎ এক মণ পেঁয়াজের দাম এক লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এই বছর দুই লক্ষ টাকা দিয়েও এক মণ পেঁয়াজের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সামনের বছরের উৎপাদনে।

পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ
পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

সমন্বিত চাষাবাদ

“ঘাটতি ১০ লাখ টন পূরণ করার জন্য আমাদের বাড়তি জমিরও দরকার হয় না। আমাদের যে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়, সেখানেই ভালো জাত আর উৎপাদন কলাকৌশলে পরিবর্তন আনলে, কৃষকদের একটু প্রশিক্ষণ দিতে পারলেই চার-পাঁচ লাখ টন উৎপাদন বাড়ানো যায়”, বলছেন ড. মজুমদার।

“সেই সঙ্গে আমাদের অন্যান্য ফসলের সঙ্গে, যেমন আখের ক্ষেতে, ভুট্টার ভেতর, আদা-হলুদের সঙ্গে পেঁয়াজ চাষ করা যায়। গরমের সময় কচুমুখীর ক্ষেতে চাষ করা যায়।”

তারা এখন পেঁয়াজ চাষের উপযোগী এলাকাগুলোর কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, তারা যেন অন্য ফসলের সঙ্গে পেঁয়াজও চাষ করেন।

দামের ওঠানামা

ড. মজুমদার বলছেন, পেঁয়াজ চাষাবাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর দামের ওঠানামা। কখনো কৃষক চাষাবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েন। আবার কখনো অতিরিক্ত দামের কারণে বীজ পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন।

গতবছর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ কৃষক অক্টোবর মাসে তাদের পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে অনেক কৃষক এই বছর বীজ খুঁজে পাচ্ছেন না।

আবার ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পেঁয়াজের মন ছিল ৪০০ টাকা, যেখানে একমণ উৎপাদন করতে তাদের খরচ হয়েছে সাড়ে ৬০০ টাকা। ফলে লোকসান হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক কৃষক আর পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হন না।

তিনি বলছেন, “গতবছর ডিসেম্বরে ফরিদপুর এবং পাবনার কৃষকদের সঙ্গে আমরা দুইটা কর্মশালা করেছিলাম। তারা বলেছেন, আমরা ৩৫ কেন, ৪০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেবো, আপনারা আমাদের দামটা ঠিক করে দেন।”

বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় একটি মসলা
বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় একটি মসলা

ড. মজুমদার মনে করেন, কৃষকের চাষাবাদের খরচ বিবেচনায় রেখে মিয়ানমারের মতোও পেঁয়াজের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত, যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। লাভজনক হলে প্রতিবছরই কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হবেন, ঘাটতিও কমে আসবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রুম্মান আরা বলছেন, পেঁয়াজের দামটা যাতে সহনীয় থাকে, সেজন্য দেশে একটা নীতি নেয়া দরকার, যাতে কৃষক এই ফসল উৎপাদন করে হতাশ হয়ে না পড়েন।

সংরক্ষণ ব্যবস্থা

বাংলাদেশে শুধুমাত্র পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য কোন কোল্ড স্টোরেজ নেই। কিন্তু সারা বছরের চাহিদা মেটানোর মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত করতে হলে সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বর্তমানে কৃষকরা নিজেদের বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু তাতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার হারটা বেশি হয়।

পেঁয়াজের জন্য ১২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের তাপমাত্রা দরকার। আর্দ্রতা থাকতে হবে ৩৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ীর মতো যেসব স্থানে পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়, সেখানে এরকম অনেকগুলো কোল্ড স্টোরেজ থাকলে কৃষকরা পেঁয়াজটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারতেন। ফলে তারা বেশি করে উৎপাদন করতেন।

এখন যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তাতে অনেক সময় পেঁয়াজে গাছ গজিয়ে যায়।

“ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে কৃষক দামও পেতেন, বাড়তি চাষাবাদে উৎসাহিত হতেন।” বলছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রুম্মান আরা।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত বিশেষ একটি কোল্ড স্টোরেজ এবং পরীক্ষামূলক গ্রিন হাউজ করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

পেঁয়াজের দাম বাড়লেই ক্রেতাদেরও উদ্বেগ বাড়ে।
পেঁয়াজের দাম বাড়লেই ক্রেতাদেরও উদ্বেগ বাড়ে।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র বর্তমানে পেঁয়াজের ছয়টি জাত অবমুক্ত করেছে। তার মধ্যে তিনটি জাত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত। সেগুলোর ভেতর বারি-৫ এর ওপর গবেষণাকারীরা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন।

মার্চ মাসে রোপণ করে জুন-জুলাই মাসে অথবা অগাস্ট মাসে রোপণ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এসব পেঁয়াজের ফসল পাওয়া যায়।

ড. রুম্মান আরা বলছেন, “এসব গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করলে সেটা চাহিদা বড় একটি অংশ যোগান দিতে পারে। কারণ এসব ফসল যখন উঠবে, তখন পেঁয়াজের দামও বেশি থাকে। ফলে কৃষকও লাভবান হবেন। আবার সারা বছর ধরেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন, যোগান অব্যাহত থাকবে।”

কিন্তু সংরক্ষণ ক্ষমতা কিছুটা কম হওয়ায় এসব পেঁয়াজের জাত এখনো কৃষকদের কাছে ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষাবাদ আস্তে আস্তে বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আরেকটা পেঁয়াজ হচ্ছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, যেটা অক্টোবরে লাগালে ডিসেম্বর নাগাদ ফসল পাওয়া যায়।

কিন্তু এই পেঁয়াজের এখনো অনেক অভাব রয়েছে।

সরকারিভাবে এই বছর সাতশো কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করা গেছে। কিন্তু কৃষকদের কাছে এই ধরণের বীজের চাহিদা রয়েছে এক লাখ কেজির বেশি।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা সবই বিক্রি করেন দেন, বীজের জন্য সংরক্ষণ করেন না। আবার সরকারি তরফেও এতো বেশি পেঁয়াজ বীজের চাষ করা সম্ভব হয় না।

“বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, সেই সঙ্গে কৃষকদেরও নিজেদের বীজ তৈরি করা শুরু করতে হবে।” কর্মকর্তারা বলছেন।

চরের জমি অন্তর্ভুক্ত করা

গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ চর এলাকা রয়েছে। সেসব জমি যদি পেঁয়াজ উৎপাদনে কাজে লাগানো যায়, তাহলেই পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদার ১০ লক্ষ টনের পুরোটা উৎপাদন করা সম্ভব।

“তবে সেজন্য পেঁয়াজ উৎপাদনের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। তাহলেই কৃষকরা পেঁয়াজ চাষাবাদে আগ্রহী হবেন।” বলছে ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।

সব সমস্যা দূর হলে ঘাটতি মেটাতে কতদিন লাগবে?

গবেষকরা বলছেন, পেঁয়াজ চাষাবাদে বীজের অভাব, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দাম নির্ধারণ- ইত্যাদির মাধ্যমে হয়তো একবছরেই রাতারাতি ঘাটতি পূরণ হবে না। কিন্তু সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা আর উদ্যোগ কয়েক বছরের মধ্যেই পেঁয়াজের ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে নিয়ে আসতে পারে।

ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলছেন, “দামটা যদি স্থিতিশীল রাখায়, অন্তত উৎপাদন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে রাখা যায়, সংরক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করা যায় আর শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বীজের পর্যাপ্ত যোগান দেয়া যায়, তাহলে আগামী পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারবো।”

  • দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।

    দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।

  • পেঁয়াজের দাম বাড়লেই ক্রেতাদেরও উদ্বেগ বাড়ে।

    পেঁয়াজের দাম বাড়লেই ক্রেতাদেরও উদ্বেগ বাড়ে।

  • বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় একটি মসলা

    বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় একটি মসলা

  • পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

    পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

  • কৃষকদের গ্রীষ্ককালীন পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ

    কৃষকদের গ্রীষ্ককালীন পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ

  • পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

    পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ

  • দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো।
  • পেঁয়াজের দাম বাড়লেই ক্রেতাদেরও উদ্বেগ বাড়ে।
  • বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় একটি মসলা
  • পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ
  • কৃষকদের গ্রীষ্ককালীন পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ
  • পেঁয়াজ: যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com