আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

কৃষিবান্ধব বাজেট: দুধের সর যেন বিড়ালে না খায়

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি খেয়াল রাখার পাশাপাশি খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকার কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষি খাতকে এবারের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রণোদনাও চালু থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষককে সুবিধা দিতে নতুন অর্থবছরে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ ধরলে এ প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জিডিপির ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ হিসাবে ১৬ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় শতকরা ২৫ দশমিক ৮৩ ভাগ বেশি। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, যা বিগত বাজেটের তুলনায় ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কৃষি হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত।’

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি খেয়াল রাখার পাশাপাশি খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকার কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষি খাতকে এবারের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রণোদনাও চালু থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষককে সুবিধা দিতে নতুন অর্থবছরে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ ধরলে এ প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জিডিপির ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ হিসাবে ১৬ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় শতকরা ২৫ দশমিক ৮৩ ভাগ বেশি। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, যা বিগত বাজেটের তুলনায় ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কৃষি হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, করোনাপরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যেন খাদ্যসংকট না হয়, সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না।’ সব মিলিয়ে সরকারের ভিশন ও মিশন এবং প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ সুস্পষ্ট। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে, রয়েছে বরাদ্দ প্রদানের বাস্তবমুখী উদাহরণ। সেভাবেই জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রয়েছে ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা ও পলিসি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁদের জন্য এত আয়োজন, তাঁদের কাছে এ সুবিধা পৌঁছাবে কি না? বাস্তবে কী কী বাধা কাজ করে মাঠেঘাটে।

কিছু চিত্র দেখা যাক
প্রথমত, কৃষিজমির দাম ও ইজারামূল্য বাড়ছে। বর্গা মূল্য ও সেচের মূল্য বাড়ছে। বীজের মূল্য ও সার-কীটনাশকের দাম বাড়ছে। মজুরির দামও বাড়ছে। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। শুধু কৃষকের ধানের দাম কমছে। সেই ২০ বছর আগের দামের মতো এখনো মণপ্রতি ৫০০! কৃষিপণ্যের দাম কম হওয়ার অনেক কারণ আছে এবং এ অশুভ চক্রে নানান ঘরানার লোক নানাভাবে কাজ করে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে অন্যান্য পণ্য যে হারে দাম বেড়েছে, সে হারে কৃষিপণ্যের দাম বাড়েনি। শহরে বাড়লেও কৃষক পর্যায়ে সে দর পান না। অস্ট্রেলিয়ায় চালের দাম ৮ হাজার টাকা মণ। জাপানে চালের দাম তারও অনেক বেশি। ঢাকায় চালের দাম ২ হাজার টাকা মণ। চাল আবার রপ্তানিও হয়। তবে যেসব দেশে রপ্তানি করলে বেশি দাম মিলবে, সেসব দেশে রপ্তানি হয় কি না। রপ্তানি যদি হবে বেশি মূল্যে, তবে কৃষক মূল্য পাবেন না কেন? খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক, রাইসমিলওয়ালা, পথে পথে ফড়িয়া ব্যাপারীরা মাত্রাতিরিক্ত লাভ করেন। ট্রাকওয়ালা বেশি ভাড়া নেন, পথে পথে চাঁদা দিতে হয়, গুদামমালিক ভাড়া বেশি নেন। তাঁদের এত লোভ কেন, তাঁরা কেন কীভাবে কী কী করেন—এ নিয়ে অনুসন্ধান দরকার।

তৃতীয়ত, কৃষকের ধানের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সরকারের একক কাজ নয়। প্রধান দায়িত্ব সরকারের নিশ্চয়ই। সরকারের করণীয় সরকার করবে। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রেণি–পেশার মানুষকেও ভাবতে হবে। কৃষককে নিজেও ভাবতে হবে। কৃষকের আশপাশের নেতাকেও ভাবতে হবে, রাস্তায় চাঁদা না নেওয়ার কথা। কৃষকের পাড়াতো ভাই পরিবহননেতাকে ভাবতে হবে একটু কম লাভ করার কথা। কৃষকের খালাতো ভাই চালকলের মালিককে ভাবতে হবে একটু কম মুনাফা করার কথা। কৃষকের প্রতিবেশী ভাই খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীকে ভাবতে হবে একটু কম কমিশন নেওয়ার কথা। রপ্তানিকারককে ভাবতে হবে মার্জিন কম নেওয়ার কথা। কৃষকের দূরের আত্মীয় ভোক্তাদেরও ভাবতে হবে সব দাম দিয়ে কিনতে পারলে চালও দাম দিয়ে কিনবে। সরকারের মাঠপর্যায়ের সংস্থাগুলো খেয়াল রাখতে হবে যেন সব অংশীজন সঠিক আচরণ করে।

চতুর্থত, সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সবাই নিজের আখের গোছাতে থাকে, সবাই নিজের হিস্যা বোঝে নেয়। শুধু কৃষক নিজেরটুকু আদায় করতে পারে না। অন্যদিকে, চালের দাম বাড়িয়ে দিলেও শ্রমিক, মজুর, রিকশাওয়ালা নিম্নমধ্যবিত্ত চাল কিনতে পারবেন না। এ কারণেই সরকার চালের মূল্য কমাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। যেমন প্রণোদনা দিচ্ছে, সারের দামে ভর্তুকি দিচ্ছে, সেচে ভর্তুকি দিচ্ছে, কৃষিঋণ দিচ্ছে, এমনকি কৃষিযন্ত্র ক্রয়েও শুল্ক মওকুফ করছে। ১০ টাকা দামে কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেছে, যাতে কৃষক সহজে ঋণ পান। কিন্তু অনেক সময় প্রান্তিক কৃষকদের সিংহভাগ এ ঋণের সুযোগ পান না। গ্রামের চতুর শ্রেণি নানা কারসাজির মাধ্যমে তা ভোগ করে।

মাঝেমধ্যে কৃষিঋণ সম্পূর্ণ মওকুফ করে সরকার, ভর্তুকি দিয়ে সরকার ধান কেনে। এ রকম আরও অনেক উদ্যোগ ও চেষ্টা সরকারের রয়েছে। কিন্তু সারের ভর্তুকিসুবিধা থেকে কৃষকের আশপাশে বাস করা সার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ফায়দা নেয়; সেচের ভর্তুকিতে কৃষকের পাড়াতো ভাই সেচ ব্যবসায়ীরা সুবিধা পায়; কৃষিঋণে কৃষকের তালাতো ভাইদের পেট মোটা হয়; ধান কেনার ভর্তুকিও এ রকম পরিচিত ভাইদের কারণেই হারিয়ে যায়, কৃষিযন্ত্র ক্রয়ের শুল্ক মওকুফও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বেশি মার্জিনের কারণে কৃষককে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। সরকারের এত আন্তরিক প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করে কিছু লোক। তারা কারা, কেন, কী কী কারণে, কীভাবে এসব করে, এ নিয়ে গবেষণা দরকার এবং করণীয় বের করা দরকার।

পঞ্চমত, ধর্ম, তত্ত্ব, মতবাদ নিয়ে রাজনীতি হয়, অঞ্চল নিয়ে রাজনীতি হয়, খনিজ সম্পদ ও বনজ সম্পদ নিয়ে রাজনীতি হয়, কিন্তু দেশের সিংহভাগ ভোটার কৃষকের স্বার্থ নিয়ে কৃষকেরা সংঘবদ্ধ নন, প্রান্তিক কৃষকদের সমিতি নেই, দু-একটা থাকলেও শক্ত নয়। কৃষকেরা নিজেরা শক্ত না হলে বিত্তবানরা তাঁদের সম্পদের তথা ধান-চালের প্রকৃত দাম দেবে না—এটাই বাস্তবতা। শক্তের ভক্ত নরমের যম—এ প্রবাদের মতোই বাস্তবতা। পেশা বা কাজভিত্তিক এ শ্রেণিবিভাজনের খেলায় প্রভাবশালী খেলোয়াড়েরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। এ কারণেই কৃষকদের হিস্যা পথে পথে, ঘাটে ঘাটে ইঁদুরেরা খেয়ে ফেলে। কৃষকের জমির ফসল খায় জমির ইঁদুর, আর ভর্তুকি, ঋণ, প্রণোদনার ভাগ প্রায়ই খায় অন্য ইঁদুরেরা। এভাবেই কৃষকের উন্নয়নে কৃষকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে করা সরকারের পরিকল্পনা যথাযথ ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগী ও সজাগ হতে হবে। উদ্যোগগুলো কার্যকর করার জন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে, যাতে সরকারের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হয় সঠিকভাবে, যাতে বরাদ্দগুলো যথাযথভাবে পৌঁছায় প্রকৃত কৃষকের হাতে। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী যেন এসবের ভাগ না পায়। দুধের সরের মতো ওপর থেকে সরটা যেন কেউ খেয়ে না ফেলে। করণীয় হতে পারে: এক. সরবরাহ চেইনগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দর করার মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে, মেকানিজম বের করতে হবে। দুই. কৃষকদের মূলধনসংকট দূর করার জন্য কৃষিঋণ যেন প্রান্তিক কৃষকের হাতেই পৌঁছায়, সে জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে এবং প্রকৃত কৃষক বাছাইয়ে বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম এবং ডিজিটালাইজড কায়দা বের করতে হবে। তিন. সেচে, সারে ও কৃষিযন্ত্র আমদানিতে ভর্তুকির সুফল যেন প্রান্তিক কৃষকেরা পান, সে জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করতে কার্যকর পন্থা নিতে হবে।

করোনাকাল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কৃষি, কৃষক ও ফসলের গুরুত্ব কত বেশি। সুতরাং, এ খাতকে পুঁজিবাদের আগ্রাসী থাবা থেকে রক্ষা করতে হবে। কৃষিবান্ধব সরকারের সব পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার সফল ও ফলপ্রসূ বাস্তবায়নে সব অংশীজনকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।

ড. সফিকুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়ার থেকে ‘পাবলিক ফান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ও রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নিয়ে পিএইচডি করেছেন।

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com