আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

ইলিশ ধরা থেকে বিক্রি সিন্ডিকেটের হাতে

এক লাখ টাকার ইলিশ ধরা হলে

  • অর্ধেক পাবেন জাল ও ট্রলারের মালিক।
  • ১৪ শতাংশ পাবেন সারেং বা মাঝি।
  • ট্রলারের সঙ্গে যুক্ত অন্যরা পাবেন ৪ শতাংশ।
  • জেলেরা পাবেন মাত্র ২ শতাংশ।
  • ৩০ শতাংশ ট্রলারের খরচ।

কারওয়ান বাজারের রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা পাইকারি মাছের বাজারে সামনের ফুটপাতে জনা বিশেক বিক্রেতা ডালায় ইলিশ সাজিয়ে বসে আছেন। রুপালি ইলিশের গায়ে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষি। বিক্রেতা ইলিশের দর হাঁকছেন প্রতি কেজি এক হাজার ৫০ টাকা। তা শুনে ক্রেতা ক্ষুব্ধ, ‘আরে ভাই, আল্লাহর দরিয়ার মাছের এত দাম!’

করোনাকালের প্রলম্বিত লকডাউনের সুফল দেশের নদ-নদীও পেয়েছে। ঘোলা পানির নদী এখন অনেকটা পরিষ্কার। শিল্পকারখানা কিছুদিন বন্ধ থাকার সুবাদে নদীর দূষণ কমেছে। তাই সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বুক ভরে অক্সিজেন নিতে নদীতে ঢুকেছে, জেলেদের জালে ধরাও পড়ে। বাজারে তাই ইলিশের সমারোহ। তবে একেক বাজারে একেক রকম দাম।

যে দামে বাজারে ইলিশ বিক্রি হয়, তার অর্ধেক দাম পেলে জেলেদের জীবন বদলে যেত।

ইলিশের দাম বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে মাফিয়া চক্রের হাত। এই চক্রের জাল বঙ্গোপসাগর থেকে কলকাতা পর্যন্ত ছড়ানো। জেলেদের জিম্মি করে বছরের পর বছর তারা ইলিশের দরদাম ঠিক করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইলিশ নিয়ে গবেষণার জন্য চাঁদপুরে ‘মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূল আবাস বঙ্গোপসাগরে হলেও দেশের ৪০টির বেশি নদীতে ইলিশ আসে। প্রতিবছর পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। ধরা পড়ার পরিমাণ অনুযায়ী উৎপাদনে হিসাব-নিকাশও ঠিক করা হয়। সেই হিসাবে গেল বছর ৫ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। আর এ বছরে তা সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। ইলিশের দাম ন্যূনতম পাঁচ শ টাকা কেজি হিসাব করা হলে উৎপাদিত ইলিশের বাজারমূল্য ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। দেশে মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ আর জিডিপিতে জাতীয় মাছের অবদান ১ শতাংশের বেশি।

দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৬৬ ভাগের জোগান দেয় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো। সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে ভোলা ও বরগুনায়। ইলিশের সবচেয়ে বড় মোকাম হলো চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, পাথরঘাটা। এসব মোকাম থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে ইলিশ যায় ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ইলিশ কেনাবেচার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রথম আলোকে বলেছেন, যে দামে বাজারে ইলিশ বিক্রি করা হয়, তার অর্ধেক দামও যদি জেলেরা পেতেন, তাহলে তাঁদের জীবন বদলে যেত।

সব ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগী

ইলিশ কেনাবেচার হদিস জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের জেলে, নৌকার মাঝি, ট্রলারমালিক, দাদনদাতা, আড়তদার ও ইলিশ রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। সবার কথায় যা বেরিয়ে আসে তা হলো, সাগরে ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ করে সুবিধাভোগীরা। রাতারাতি এই বাধা ভাঙা দুরূহ ব্যাপার। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার মৌসুমে সরকার জেলেদের যে সহায়তা দেয়, তা আসলে তাঁদের খুব একটা কাজে লাগে না। এই জেলেরা মূলত জাল-নৌকাবিহীন দিনমজুর। ‘লাভের গুড়ের পিঁপড়া’ হলেন তাঁরা, যাঁরা ইলিশ ধরা ও কেনার কাজে টাকা লগ্নি করেন।

ইলিশ ধরা থেকে বাজারজাতের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ ধরা জেলেদের সঙ্গে স্থানীয় আড়তের ব্যবসায়ীদের চুক্তি থাকে। সে অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা অমৌসুমে জেলেদের অর্থসহায়তা দেন। ইলিশ ধরার জাল ও খরচ দেন। শর্ত থাকে, ধরে আনা ইলিশ শুধু ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রি করতে হবে। এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার ঢাকার পাইকারি ইলিশ বিক্রেতাদের যোগাযোগ থাকে। অনেক সময় ঢাকার বড় পাইকারি বিক্রেতা ও রপ্তানিকারকেরা আড়তমালিকদের আগাম অর্থ দেন। পুরো প্রক্রিয়াটি যেহেতু আগাম অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে হয়, সে কারণে ইলিশ কেনাবেচাও বাজারের দামের চেয়ে কিছুটা কম হয়।

ইলিশ মাছ ধরায় খরচ কেমন, তা জানতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলারমালিকদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের একজন কক্সবাজারের নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, ইলিশ ধরার কাজে তাঁর পাঁচটি ট্রলার নিয়োজিত আছে। প্রতিটি ট্রলারের বিপরীতে বিনিয়োগ প্রায় কোটি টাকা। একটি ট্রলারে জেলে আছেন ১৮ থেকে ২২ জন। গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই মাসে তাঁর পাঁচটি ট্রলার গভীর সাগরে গিয়ে চার দফা ইলিশ ধরেছে। প্রতিটি ট্রিপে সময় লেগেছে ১০-১২ দিন। আহরিত ইলিশ বিক্রি থেকে তিনি আয় করেছেন তিন কোটি টাকা। মালিক হিসেবে তিনি পেয়েছেন দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা কীভাবে ভাগ হয়, তার হিসাবটাও জানা গেল তাঁর কাছ থেকেই। বললেন, যদি এক লাখ টাকার ইলিশ ধরা হয়, তাহলে অর্ধেক পাবেন জাল ও ট্রলারের মালিক। ১৪ শতাংশ টাকা পাবেন ট্রলারের সারেং বা মাঝি। ট্রলার চালানোর সঙ্গে যুক্ত অন্যরা পাবেন ৪ শতাংশ। আর জেলেরা পাবেন মাত্র ২ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ টাকা ট্রলারের খরচ হিসেবে ধরা হয়। ইলিশ ধরার কাজে দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

দাদনের চোরা ফাঁদ

বরগুনার একজন ট্রলারমালিক প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রগামী একটি ট্রলারকে সাগরে যাত্রা করতে জ্বালানি, বরফ, বাজার-সদাইসহ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। আবার মৌসুমের শুরুতে জাল, ট্রলার মেরামত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে ট্রলারমালিকদের তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে একটি ট্রলার সাগরে ভাসতে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা আগাম খরচ লাগে। এই পুরো টাকা লগ্নি করেন আড়তদারেরা। মূলত এটাই হলো দাদন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার বাবুরাম কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলারমালিক তাঁদের কাছ থেকে ট্রলারপ্রতি অন্তত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন নেন। যত দিন ট্রলারের ব্যবসা থাকবে, তত দিন ওই ট্রলার আড়তে মাছ দেবে। প্রতিবছর দাদনের টাকা বাড়ানো হয়। এই দাদনের বদলে অর্থ না দিয়ে মাছ দিতে হয়। যেসব ট্রলারমালিক দাদন নেন, তাঁরা আর কোনো দিনই জাল ছিঁড়ে বের হতে পারেন না। শর্ত থাকে, মাছ ধরার পর তা আড়তদারের কাছেই বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি করতে হবে। আড়তদার তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন কেটে নেন।

দাম ঠিক করে অদৃশ্য হাত

ভোলায় প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে মাছ কেনাবেচা হয়। একটি পদ্ধতি হচ্ছে জেলে তাঁর আহরিত মাছ আড়তদারের ডালা বা ঝুড়িতে ফেললে উপস্থিত ক্রেতারা দর হাঁকবেন নিলাম ডাকার মতো। যিনি বেশি দর হাঁকবেন, তিনি মাছ পাবেন। আরেকটি পদ্ধতি হলো আড়তদার ও ফড়িয়ারা সলাপরামর্শ করে একটি দর ঠিক করেন। তবে দর হয় গ্রেড অনুসারে। ওজন ও আকার অনুসারে ইলিশকে চারটি ভাগে ভাগ করে দাম ঠিক করা হয়।

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন ইলিশ নিয়ে নানা গবেষণা হলেও দাম নিয়ে কেউ মাথায় ঘামাননি। তবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হলে সাধারণ জেলেরা এর সুফল পাবেন। তাঁদের জীবনও বদলে যাবে।

ফোনেই বাজার নিয়ন্ত্রণ

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশের দাম ওঠানামা করে ঢাকার বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকায় ইলিশের দাম কমে গেলে ঘাটেও দাম কমে যায়। আবার ঢাকায় বাড়লে সেখানেও বাড়ে। সবই হয় মুঠোফোনে।

বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে ঢাকায় বিক্রি করেন, এমন একজন উদ্যোক্তা প্রবীর কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব স্থানে ইলিশ ধরা পড়ে, সেখানে একটা ‘সিন্ডিকেট’ আছে। এর বাইরে গিয়ে ইলিশ কেনাবেচা করা যায় না। ঢাকায় যেসব ইলিশ পাওয়া যায়, তার একটা বড় অংশ আসে কোল্ডস্টোরেজ থেকে, যেগুলো সাধারণত ঈদের সময় সস্তায় কিনে রাখা হয়।

উত্তর চট্টলা উপকূলীয় মৎস্যজীবী জলদাস সমবায় কল্যাণ ফেডারেশনের অধীনে প্রায় ৪০ হাজার জেলে রয়েছেন। পতেঙ্গা থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর পর্যন্ত এই জেলেদের বসবাস। এই সমিতির সভাপতি লিটন দাস প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমের শুরুতে জেলেরা দাদন নেন। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সাগরে যান। তাঁদের কাছে মাছ বিক্রি করতে হয়। আবার মাছ ধরে আসার পর ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। দুই হাত বদল হয়ে পরে তা ভোক্তার কাছে যায়। হাত ঘোরার কারণে দাম বাড়ে।

ভোলার আড়তদারেরা জানান, সরাসরি মাছ বিক্রি করলে দাম ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু চাঁদপুর ও বরিশাল মোকামে মাছ বিক্রি করলে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয়।

চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে ওপারে

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোরের মোকামে যেসব ইলিশ যায়, তা কি দেশের বাজারে বিক্রি হয়? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল দেশের বড় কোনো মাছের মোকাম নয়। তাহলে পাথরঘাটা, বরিশাল, পটুয়াখালীর মহীপুরের ইলিশ মোকামের আড়তদারেরা এই তিন মোকামে কেন ইলিশ পাঠাতে বেশি আগ্রহী।

জানা গেল, এই তিন মোকাম থেকেই চোরাই পথে একশ্রেণির ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইলিশ পাচার করেন। প্রথমে দেশের বড় মোকাম থেকে এই তিন এলাকায় ইলিশ নিয়ে সংরক্ষণ করার পর নিজেদের সুবিধামতো তা ধীরে ধীরে সীমান্ত পার করেন সেখানের ব্যবসায়ীরা। কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই অঞ্চলের দাদনদাতা ও আড়তদারদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। মূলত কলকাতার কিছু মাছ ব্যবসায়ী কয়েক হাত ঘুরে দেশীয় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম ঘিরে বিপুল অর্থ লগ্নি করেন।

বরিশাল পোর্ট রোড আড়তদার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী দাবি করেন, কলকাতায় কিছু মাছ যায় এখান থেকে। অবৈধ পথে যায় কি না, সেটা তাঁর জানা নেই।

জানতে চাইলে নৌ পুলিশের প্রধান আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ সিন্ডিকেট শুধু বাজারই নিয়ন্ত্রণ করে না, তারা কারেন্ট জাল তৈরি ও অবৈধভাবে মাছ ধরার সঙ্গেও যুক্ত। বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযানও হয়েছে। এই চক্র খুবই শক্তিশালী।

ইলিশ ব্যবসায়ী, ট্রলারমালিক, আড়তদার ও ফড়িয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জীবন বাজি রেখে সাধারণ জেলেরা সাগর ও নদ-নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরে আনলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে নেই। জেলেদের কষ্টের ফসলের নিয়ন্ত্রণ অদৃশ্য মহাজনদের হাতে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বললেন, এটা ঠিক যে ইলিশের বাজার সিন্ডিকেটের হাতে। কিন্তু সেই চক্র থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে, তার পথ তিনি খুঁজবেন। মন্ত্রী মনে করেন, বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত হলেই ইলিশের দাম কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com