আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফল

আম, কাঁঠাল ও লিচুর ভালো ফলন পেতে যা করবেন

আম, কাঁঠাল ও লিচু সাধারণত উষ্ণ ও অব-উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের জন্মে। ধারণা করা হয় বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে আম, কাঁঠাল ও লিচু সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল, কারণ এ ফলগুলো পুষ্টিমান ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়।

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে আম, কাঁঠাল ও লিচু জন্মে কিন্তু দেশের উরাঞ্চলে এগুলোর বাণিজ্যিক আবাদ হয়ে থাকে। চাষিরা প্রতি বছর অনেক ক্ষতির শিকার হয়ে থাকেন সাধারণত দুই প্রকারের সমস্যার কারণে যথা-

১. প্রাকৃতিক কারণ (যেমন- ঝড়, শিলাবৃষ্টি, খরা প্রভৃতি) এবং
২. রোগ ও পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে।

সঠিক পরিচর্যা, রোগ ও পোকামাকড় দমন করে প্রথম ক্ষতি আংশিক এবং দ্বিতীয় ক্ষতি প্রায় সম্পূর্ণ রূপে সমাধান করা সম্ভব। আম, কাঁঠাল ও লিচুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ-পোকামাকড় দমনে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা যাক-

আমের গুটি ঝরা:

বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে আম ঝওে পড়া প্রকৃতির নিয়মেরই অংশ বিশেষ। মুকুলে প্রধানত: উভয়লিঙ্গ ফুলের অনুপাত বেশি হওয়া দরকার, কারণ এগুলিই পরাগায়িত হয়ে ফল ধারণ করতে সক্ষম। প্রাথমিক পর্যায়ে ফল ঝরার কারণসমূহ হচ্ছে পরাগায়ন না হওয়া, অপুষ্ট গর্ভমুন্ড, ত্রম্নটিযুক্ত ফুল, কোন কোন জাতে স্ব-অসঙ্গতিতা এবং বাড়ন্ত ফলের পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা।

অধিকন্তু আমের শুকনা ক্ষত বা অ্যানথ্র্র্রাকনোজ ও পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ, হপার বা ফুতকি পোকা ও মিলিবাগ বা দধে পোকার আক্রমণ, দীর্র্ঘ সময় অনাবৃষ্টি, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, জাতগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি কারণে আম ঝরে যায়।

প্রতিকার :

ফল বৃদ্ধির সময়ে নিয়মিত সেচ দেয়া। প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুবার ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক এসিড স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সমস্ত ফুল ফোটা অবস্থায় জিবরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমানো যায়।

আমের রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে আমের গুটি রক্ষা করতে গুটির আকার মটর দানার মতো হলে একটি কীটনাশক (রিপকর্ড/সিমবুস/ক্যারেটে এক লিটার পানিতে ১ মিলি. হারে) ও একটি ছত্রাকনাশক (ডায়থেন এম ৪৫/ইনডোফিল এম ৪৫ এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও আমের গুটি মটরদানার আকার হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমানো যায়।

আম, কাঁঠাল ও লিচু

আমের হপার বা ফুতকি :

পূর্ণ বয়স্ক ও নিম্ফ (বাচ্চা) উভয়েই আমের মুকুল ও কচি অংশ থেকে রস চুষে খায়। পোকার আক্রমণে মুকুলের ফুল শুকিয়ে যায়। মুকুলের রস চোষার সময় পোকা প্রচুর পরিমাণে মধুরস ছেড়ে দেয়। এর ফলে পাতায় সুটি মোল্ড ছত্রাক আক্রমণ করে পাতা কালো বর্ণ করে ফেলে। এতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যহৃত হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা :

আম বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মরা ডাল-পালা কেটে দিতে হবে। মুকুল আসার আগে এবং গুটি বাঁধার পর সেভিন প্রতি লিটারে ১ গ্রাম স্প্রে করা। মুকুল ২-৪ ইঞ্চি হলে ফুল ফোটার আগে রিপকর্ড/সিমবুস/কা্যরেটে এক লিটার পানিতে ১ মিলি. হারে স্প্রে করা।আম, কাঁঠাল ও লিচু
আমের শুকনা ক্ষত বা অ্যানথ্র্র্র্রাকনোজ রোগ :

আমের সর্বাধিক ক্ষতিকারক রোগ। পৃথিবীর সর্বত্রই আমের ক্ষতি করে। এক প্রকার ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়। প্রায় সব জাতে এ রোগ দেখা যায়। মাঠে এবং সংগ্রহের পর উভয় পর্যায়ে ক্ষতি করে। মুকুল, কচিপাতা, কুঁড়ি, কচি আম, বাড়ন্ত আম বা পাকা আমে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

মুকুল কালো রঙ ধারণ করে শুকিয়ে যায়। কচিপাতা ছোট বাদামি দাগ পড়ে। দাগ বাড়তে থাকে ও কোষ শুকিয়ে মারা যায়। কচি আমের গায়ে কালো দাগ পড়ে ও আম ঝরে যায়। বাড়ন্ত আমের গায়ে কালো দাগ পড়ে। আম পচে ঝরে পড়তে পারে। পাকা আমের গায়ে অসম আকৃতির বাদামি/কালো দাগ পড়ে এবং অনুকূল আবহাওয়ায় আম পচতে শুরু করে।

প্রতিকার :

আম বাগান পরিষ্কার রাখা। রোগাক্রান্ত ডাল ও পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলা। মুকুল ৪-৬ ইঞ্চি হলে, কচিপাতায়, আম মটর দানা অবস্থায় ও বাড়ন্ত আমে ১-২ বার মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ডায়থেন এম ৪৫/ইন্ডোফিল এম ৪৫/পেনকোজেব) এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা।

রোগ দেখা দিলে টিল্ট ২৫০ ইসি এক লিটার পানিতে ১ মিলি. হারে স্প্রে করা। পাকা আম গরম পানিতে ৫৫ সে. তাপমাত্রায় (যে তাপমাত্রায় হাত ডুবালে সহ্য করা যায়) ৫-৭ মিনিট ডুবিয়ে পরিশোধন করতে হবে।

আম ফেটে যাওয়া :

বিভিন্ন কারণে আম ফেটে যেতে পারে। কারণসমূহ হচ্ছে জাতগত বৈশিষ্ট্য (যেমন-আশ্বিনা), বোরণ সারের অভার, মাটিতে রসের হঠাৎ হ্রাস-বৃদ্ধি।

প্রতিকার :

মাটিতে জৈব সার (গোবর/সরিষার খৈল) প্রয়োগ করতে হবে। ফেটে যাওয়া প্রতিরোধী জাতের চাষাবাদ করা। গুটির আকার মটরদানার মতো হলে ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক এসিড স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

কাঁঠালের মুচি পচা রোগ :

এক ধরনের ছত্রাকের কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। জীবাণু পুরুষ ফুল ও ছোট ফলে আক্রমণ করে। ফলের ওপর কাল দাগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ফল বা মুচি পচে ঝরে যায়।

আম, কাঁঠাল ও লিচু
প্রতিকার :

আক্রান্ত মুচি বা ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। বোর্দো মিক্সচার (১% অর্থাৎ এক লিটার পানিতে ১০ গ্রাম তুঁতে ও ১০ গ্রাম চুন)) বা ডায়থেন এম ৪৫ এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে ১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।

কাঁঠালের ফল পচন রোগ :

এক ধরনের ছত্রাকের কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ফলের গায়ে কালো দাগের সৃষ্টি হয় দাগ ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে। আক্রান্ত স্থানের কোষ পচে যায়।

প্রতিকার :

বোর্দো মিক্সচার (২%) বা মেনকোজেব এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কাঁঠাল ফেটে যাওয়া :

দীর্ঘ খরার পর হঠাৎ বৃষ্টি, শুষ্ক ও গরম হাওয়া এবং রোগ-পোকার আক্রমণে ফল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া মাটিতে বোরন বা ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলেও ফল ফেটে যেতে পারে।

প্রতিকার :

মাটিতে জৈব সার ও নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। গাছের গোড়ায় পানি না জমে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। গাছের গোড়ায় ক্যালসিয়াম সার (ডলোচুন -২০০ গ্রাম) দিতে হবে। বোরাক্স এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে।

লিচু ঝরে পড়া :

ফল ঝরা লিচুর সাধারণ সমস্যা। আবহাওয়া শুষ্ক হলে বা গাছে হরমোনের অভাব থাকলে ফল ঝরে পড়তে পারে।

প্রতিকার :

ফল মটরদানা এবং মার্বেল আকার অবস্থায় লেবেলে নির্দেশিত মাত্রা অনুযায়ী পস্নানোফিক্স/মিরাকুলান স্প্রে করতে হবে। গুটি বাঁধার পর জিংক সালফেট এক লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে।

লিচু ফেটে যাওয়া :

দীর্ঘ খরার পর হঠাৎ বৃষ্টি, শুষ্ক ও গরম হাওয়া, রোগ ও পোকার আক্রমণে ফল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া মাটিতে বোরন বা ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে এবং আগাম জাতে এ সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে।

প্রতিকার :

মাটিতে জৈব সার ও নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। গাছের গোড়ায় ক্যালসিয়াম সার (ডলোচুন-১০০ গ্রাম) দিতে হবে। বোরিক এসিড এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে।

আম, কাঁঠাল ও লিচু
লিচু ফল পচা অ্যানথ্রাকনোজ রোগ :

সংগ্রহোত্তর লিচুর একটি প্রধান সমস্যা। এক ধরনের ছত্রাকের কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগের আক্রমণে ফলের ওপর বাদামি দাগের সৃষ্টি হয় যাতে ফলের বাজার দর কমে যায়। বেশি আক্রান্ত ফল নষ্ট হয়ে খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়।

প্রতিকার : ফল গাছে থাকা অবস্থায় নিয়মিত মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করলে সংগ্রহের পর এ রোগের আক্রমণ হয় না।

লেখক : কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম

পিএইচডি গবেষক (এনএটিপি), হাবিপ্রবি, দিনাজপুর ও অতিরিক্ত উপপরিচালক (এলআর), ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার
পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার

পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর‌্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’

সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।

কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।

সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস

জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’

কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ

কমলা

সার ব্যবস্থাপনা:  প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:  চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।

ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com