আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

মৎস্য

হালদার ডিম নিয়ে ‘রেকর্ডবাজি’, জেলেরা বলছেন ভিন্ন কথা

শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

দেশের একমাত্র কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ মা–মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে। বিকেল ৩টার কিছু পরই চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, গত ১৪ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহ হয়েছে। যদিও সেদিন এর পরও প্রায় আরও তিন ঘণ্টা ধরে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন জেলেরা।

গত শুক্রবার বিকেলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী স্বাক্ষরিত সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ডিম পাওয়া গেছে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। ২৮০টি নৌকা নিয়ে ৬১৬ সংগ্রহকারী এ ডিম সংগ্রহ করেন। যেখানে গত বছর ডিম সংগ্রহ হয়েছিল মাত্র সাত হাজার ৮০০ কেজি।’

বছরের ব্যবধানে হঠাৎ কোন জাদুতে হালদা নদীতে তিনগুণেরও বেশি ডিম মিলল— সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে জাগো নিউজ। সেই খোঁজে অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে সাপ দেখতে পাওয়ার মতোই চমকে দেয়া তথ্য আসে এ প্রতিবেদকের হাতে।

শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিফতর এবং ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) যৌথভাবে হালদা থেকে প্রাপ্ত ডিমের যে পরিমাণ নির্ধারণ করেছে তার সঙ্গে বিস্তার ফাঁরাক মাঠের তথ্যের। ডিম আহরণকারী জেলেরাও বলছেন ভিন্ন কথা। আয়নাবাজির আয়নাতে যেমন সবকিছু উল্টো উল্টো দেখায় তেমনি এবার হালদার ডিমের পরিমাণ নির্ধারণে সোজা হিসাব উল্টে দিয়ে ঘটানো হয়েছে ‘রেকর্ডবাজি’!

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার হালদা নদীতে ৬১৬ জন সংগ্রহকারী ২৮০টি নৌকা নিয়ে এ ডিম সংগ্রহ করেন। ডিমের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। অংকের হিসাবে এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি নৌকাকে গড়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে ৯১ দশমিক ২ শতাংশ কেজি ডিম।

অথচ মাঠ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহকারী জেলেরা গড়ে ৫ থেকে ৬ বালতির (এক বালতি = ১০ কেজি ডিম) বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি পুরোদিনে। এ অবস্থায় বিকেল ৩টার মধ্যেই জেলা মৎস্য কর্মকর্তার ১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙা ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিমের হিসাব মিলছে না কোনোভাবেই।

শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

শুক্রবার হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহ করেছেন এমন ১৪০টি নৌকার ডিম সংগ্রহের তথ্য এসেছে জাগো নিউজের হাতে। এর মধ্যে হাটহাজারী এলাকার শাহ মাদারি হ্যাচারি, মাছুয়া ঘোনা হ্যাচারি ও মদুনাঘাট প্রাকৃতিক রেনু উৎপাদন কেন্দ্রের ৬৬ জন জেলে তাদের সহযোগীদের নিয়ে ১৪০টি নৌকায় দিনভর ডিম সংগ্রহ করেছেন। তাদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই ১৪০টি নৌকা মোট সংগ্রহ করেছে পাঁচ হাজার ২২০ কেজি ডিম।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জেলা মৎস্য বিভাগের দেয়া ২৮০টি নৌকার অর্ধেক অর্থাৎ ১৪০টি নৌকা যদি সারাদিনে পাঁচ হাজার ২২০ কেজি ডিম সংগ্রহ করে, বাকি ১৪০টি নৌকা ২০ হাজার ৩১৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে— এমন তথ্য অনেকটাই শুভঙ্করের ফাঁকি।

পুরো বিষয়টি নিখুঁতভাবে জানার জন্য একমাত্র হ্যাচারি থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করতে চায়নি জাগো নিউজ। সরাসরি কথা বলেছে ডিম সংগ্রহকারী জেলে এবং শুক্রবার সরেজমিন হালদায় পরিদর্শন করা বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর সঙ্গেও।

শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকার বাবুল জলদাশ হালদায় ডিম সংগ্রহ করছেন গত ৪০ বছর ধরে। তিনি জানান, শুক্রবার মোটামুটি উল্লেখ করার মতো ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি। তবে মোট হিসাবে যা বলা হচ্ছে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি পাঁচটি নৌকায় ১০ জন লোক খাটিয়ে সারাদিনে ২০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। আমার দেখা এটাই সর্বোচ্চ। আজিমের ঘাট থেকে পোড়াকোয়াইল্লা এলাকা পর্যন্ত প্রচুর ডিম পাওয়া গেছে।

তবে উত্তর মাদার্শা এলাকার জেলে সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘তিনটি নৌকায় সাতজনের পরিশ্রমে মোট আট বালতি অর্থাৎ ৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন।’ এ সময় তিনি চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কেউ যদি বলেন, তিনি ২০ বালতি ডিম পেয়েছেন, আমি তাঁকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করব। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ ওইদিন চলে গেছে আরও ৪০ বছর আগে, আমাদের বাপ-দাদার সময়।’

শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

আঙ্কুরিঘোনার জেলে সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘তিনি দুই নৌকা ব্যবহার করে পাঁচ বালতি অর্থাৎ ৫০ কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’

শাহ মাদারী হ্যাচারিতে ডিম দিয়েছেন রামদাশহাটের ইলিয়াস। এবার রেকর্ড ডিমপ্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সত্যটা বললে অনেকে নারাজ হবেন। এসব কথা কীভাবে বলি? সত্য বলার লোক কোথায়? আমি দুটি নৌকা নিয়ে ৬০ কেজির মতো ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। এছাড়া আমাদের হ্যাচারির ৪০টি নৌকায় ৮০ জন মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে ১২০০ কেজির কাছাকাছি (প্রকৃত সংখ্যায় ১১৩০ কেজি) ডিম সংগ্রহ করেছেন।’

তবে জেলেদের এসব পরিসংখ্যান মানতে রাজি নন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী। তার দাবি, মোট হিসাবে ডিম সংগ্রহের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ নদীতে মাছ সংগ্রহকারী ২৮০ নৌকার হিসাব দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে নৌকার উপস্থিতি ছিল ৩০০-এর বেশি। যদিও জেলা মৎস্য বিভাগ নিজেদের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন মাত্র ৬০টি নৌকার।

হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে
হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

ফারহানা লাভলী বলেন, আমরা সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত যৌথভাবে তিনটি দলে ভাগ হয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে জেলা মৎস্য অফিস ৬০টি নৌকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। অনেকের কাছে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, অনেক জেলে এ সময় বিরক্ত হন। পাওয়া তথ্য থেকে আমরা কম-ই বলেছি।’

জেলেদের দেয়া তথ্য এ সময় জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন?’

শুক্রবার হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে বেড়িয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার পার্থ প্রতিম বিশ্বাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য একেবারে সকাল থেকেই হালদায় অবস্থান করছিলাম। বেলা ১২টা পর্যন্ত নদীতে ডিম পাওয়ার পরিমাণ ছিল কম। দুপুরের দিকে পরিমাণ বাড়তে থাকে। সে সময় জেলেরা ভালোই ডিম পান। তবে বিকেলে ডিম সংগ্রহের যে হিসাব দেয়া হলো সেটা কেমন যেন মেলে না। এ হিসাবটা বড়জোর ১৫ হাজার কেজি হতে পারে। এছাড়া তাদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ছিল পুরোটাই মৌখিক। কোনো নৌকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল কত বালতি? জবাবে কেউ পাঁচ আবার কেউ সাত বালতি বলছিল।’

সাংবাদিক পার্থ প্রতিমের দেয়া তথ্যের আরও জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যায় হালদা গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজাদীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাস থেকে। শুক্রবার (২২ মে) দুপুর ১টা ২২ মিনিটে দেয়া সেই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘বহু প্রতীক্ষার পর ২১ মে ২০২০ দিবাগত রাত ২টার দিকে আজিমের ঘাট এলাকায় মা মাছ হালদায় ডিম ছেড়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনার চেয়ে কিছু বেশি পরিমাণ ডিম ধরতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে। ভাটার শেষে জোয়ার শুরু হয়, মাঝ জোয়ারেও ডিম সংগ্রহ হয়। ২৫০-৩০০ মতো নৌকা ডিম সংগ্রহে থাকলেও সব এলাকার সব নৌকা ভালো পরিমাণে ডিম পায়নি। তবে এখনও সময় আছে। বেলা শেষে বোঝা যাবে ডিমের প্রাপ্তির পরিমাণ।’

হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে
হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

বিষয়টি সামনে এনে নিজেদের দেয়া তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তথ্য সংগ্রহকারীর দলের সঙ্গে থাকা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) কর্মকর্তা রাশেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে কী বলব, বুঝতে পারছি না। আইডিএফ ৮০টি নৌকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আমাদের তথ্যের সঙ্গে হালদা রিভার রিচার্স ইনস্টিটিউট ও মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মিলে যাওয়ায় আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই তথ্য দিয়েছি।’

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়ার দাবি, তার নিজস্ব উদ্ভাবিত ম্যাথডলজি’ ১৪ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহের বিষয়টিকে সমর্থন করে। তারা এ সংক্রান্ত তথ্য জেলেদের সঙ্গে কথা বলেই সংগ্রহ করেছেন। এ সংক্রান্ত সকল ডাটা তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, মাত্র দুই বছর আগেও মৎস্য বিভাগের তথ্যের সঙ্গে হালদায় ডিম সংগ্রহ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা যেত। বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনাও হতো নিয়ম মাফিক।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

হঠাৎ কেন তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ধরনের তথ্য পেল, জেলেরা-ইবা কেন ভিন্ন কথা বলছে— এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল এই হালদা গবেষকের কাছে। জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্যাঁ একসময় এ নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের তথ্যের ফাঁরাক থাকত। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ডিম সংগ্রহের পর আমি আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে হিসাব করে একটি তথ্য গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করতাম। অন্যদিকে মৎস্য বিভাগ নিজেরাই একটি হিসাব করত ডিমের, যা কোথাও প্রকাশ হতো না। আমাদের প্রাপ্ত তথ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য থাকত, এ নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তর্কও হতো।’

তিনি বলেন, ‘মৎস্য কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ছিল ত্রুটিযুক্ত। এমনকি ২০১৬ সালে হালদায় মা মাছ ডিম না ছাড়লেও ওই বছর মৎস্য বিভাগ তাদের নথিতে ২০১৫ ও ২০১৭ সালের চাইতে বেশি ডিম সংগ্রহের তথ্য লিপিবদ্ধ করে। পরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ নিয়ে কথা ওঠার পর তারা আমার পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং গত বছর একযোগে সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নেয়।’

এই হালদা গবেষক বলেন, ‘তিনটা দলের ১৫ জন তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তথ্য সমন্বয় করে এই রেজুলেশনে সাইন করেছি আমরা। নিশ্চিত হয়েই এমনটা করা হয়েছে।’

তবে অধ্যাপক কিবরিয়ার নিজের দেয়া তথ্য সামনে এনে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে ডিমপ্রাপ্তির শূন্য হিসাবকে সর্বোচ্চ দেখাতে পারে, আজ সেই প্রতিষ্ঠানের দেয়া ১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙা হিসাব কেন মেনে নেবে জাতি? এছাড়া তিনটি প্রতিষ্ঠান বেলা ৩টা পর্যন্ত যে তথ্য সংগ্রহ করল, সেসব জটিল তথ্য আধাঘণ্টার ব্যবধানে সমন্বয় করে গণ্যমাধ্যমে কীভাবে পাঠান সম্ভব হলো?

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমনটা কেন হচ্ছে জানি না।’

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজাদী, নিভৃতচারী এক গবেষক। ১৯৭৭ সাল থেকে হালদা নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের ক্ষেত্র হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে তার পূর্বাভাসই প্রতি বছর সত্য প্রমাণিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ৪ এপ্রিল একটি দৈনিকে লেখা কলামে তিনি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিল ও মে মাসের মোট চারটি সময়ে ডিম ছাড়ার সম্ভাব্য পূর্বাভাস দেন। এর মধ্যে মে মাসের ২১-২৬ তারিখের মধ্যে ডিম ছাড়ার যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সেই পূর্বাভাস সঠিকভাবে মিলে গেছে। অর্থাৎ ২১ মে দিবাগত রাতে ডিম ছেড়েছে এবং ২২ মে দিনেও ডিম ধরা চলছে। তার সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০০৭ সালে হালদাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছিল সরকার।

হালদায় ডিম পাওয়া নিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মৎস্য বিভাগ বলছে হালদায় ডিম সংগ্রহ করেছেন ৬১৬ জন জেলে। ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পেতে হলে প্রতি নৌকাকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ বা ৯ বালতি করে। কিন্তু প্রতি নৌকায় যদি আমরা দুজন করে জেলে ধরে নেই তাহলে নৌকা-পিছু সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ হতে হবে ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

নিজের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, শুক্রবারের যে হিসাব আমার হাতে, সে অনুযায়ী ওইদিন ২৫০টি নৌকা ডিম সংগ্রহ করেছে। এছাড়া নদীতে থাকা সব নৌকা ডিম সংগ্রহ করে না। নৌকায় থাকা সব মানুষও ডিম সংগ্রহ করেন না। পুরো চিত্রটা বিশ্লেষণ করে ১২ থেকে ১৫ হাজারের বেশি ডিমপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই।

হালদার ডিম নিয়ে ‘রেকর্ডবাজি’

হালদার দূষণ ঠেকাতে এশিয়ান পেপার মিল- হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করা, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, হালদার উজানে মানিকছড়ি পাহাড়ে তামাকচাষ বন্ধ করা, বছরব্যাপী চোরাশিকারী ও বালু উত্তোলনকারীদের তৎপরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকায় হালদায় এ বছর অপেক্ষাকৃত বেশি ডিম পাওয়ার ইঙ্গিত শুরু থেকেই পাওয়া গিয়েছিল।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

তবে প্রশ্ন উঠছে, আধাঘণ্টার হিসাবে তিনটি সংস্থার সম্মিলিত রিপোর্টে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিমপ্রাপ্তির রেকর্ডের দাবি নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তড়িঘড়ি করে মৎস্য বিভাগের দেয়া ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিমপ্রাপ্তির হিসাব মূলত ক্রেডিট ছিনতাইয়ের কৌশল। সারাবছর জেলা ও হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন হালদায় মা মাছ রক্ষায় অভিযানসহ নানা তৎপরতা চালালেও শুক্রবার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী এ বিষয়ে জেলা, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত না করেই গণমাধ্যম, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগে ‘১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙা হিসাব’ পাঠিয়ে দেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাটহাজারী থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেদিন বিকেলেই নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘হালদায় গত এক বছরের সব কাজের সফলতা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলি মহোদয়ের। উনি চার মাস আগে যোগদান করেছেন। উনি উনার সফলতার গল্পের অনুলিপি জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসনকে দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি, কারণ জেলা আর উপজেলা প্রশাসন শুধু বছরের ৩৬৪ দিন কাজ করবেন আর কিছু তাদের জানার দরকার নাই। এমনকি হালদা নিয়ে দুটা কমিটির সভাপতি মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কেও এই সফলতার কপি দেন নাই। অভিনন্দন তাকে।’

হালদাপাড়ের ছেলে ও চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর ফটো করেসপন্ডেন্ট আমিন মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছরই হালদায় পাওয়া ডিমের হিসাব নিয়ে মতপার্থক্য থাকে। আমরা চোখে যা দেখি আর পরে যে হিসাব হয়, সেই পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন পদ্ধতির কথা সামনে আনা হয়।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হালদায় ১০ হাজার কেজি ডিমপ্রাপ্তির কথা বলা হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সেবার তার দাবি ছিল, হালদায় সাত হাজার কেজির কিছু বেশি ডিম মিলেছে। তবে এবার হালদা রিভার রিচার্স ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদফতর ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) যৌথভাবে তথ্য প্রকাশের ক্রেডিট নিতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে এই ‘রেকর্ডবাজি’ ঘটিয়েছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়ার কাছে জাগো নিউজের প্রশ্ন ছিল, প্রতি বছর জেলেরা ডিম পাওয়ার পর রাতে বা পরের দিন সুচিন্তিতভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হতো, কিন্তু এবার জেলেরা নদীতে থাকতেই কেন ফলাফল ঘোষণা করা হলো?

জবাবে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘তাড়াহুড়া নয়, আমরা বেলা ৩টায় মাঠের কাজ শেষ করে বিকেল ৪টায় এ তথ্য প্রকাশ করেছি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

কিন্তু এ সময় জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ৪টা নয়, বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যেই মৎস্য বিভাগ প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছে বলে জানানো হলে, সঙ্গে সঙ্গে মত পাল্টে এই অধ্যাপক বলেন ‘হ্যাঁ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আসলে সবাই হয়তো তথ্য জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করছিল, তাই দ্রুত তা প্রকাশ করা হয়েছে।’

তবে তাড়াহুড়া করে জাতীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। হালদা গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, ‘হালদা থেকে পাওয়া ডিমের হিসাব কিন্তু আমাদের সম্পদপ্রাপ্তির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না। কারণ সংগৃহীত সব ডিম নিষিক্ত নয়। ফাঙাসের আক্রমণে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ডিমের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়। জেলেদের হিসাবে এক বালতি ডিম সংগ্রহ করা গেলে হিসাব করা হয় ১০ কেজি ডিমের। আর ৪০ কেজি ডিম নিষিক্ত করা গেলে রেনু মেলে এক কেজির। তাই রেনুর হিসাবটাই এখানে প্রধান। কিন্তু একটি অসাধু গোষ্ঠী পুরো বিষয়টাকে অংকে বেশি দেখানোর জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

আসলেই কি এবার ১৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে

হালদা থেকে গত বছর ১০ হাজার ২০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল (অনেকের মতে ৭ হাজার)। এর আগে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

এ বছর মৎস্য বিভাগ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিমপ্রাপ্তির হিসাব দিয়ে গত ১৪ বছরের রেকর্ড ভঙের দাবি করছে। কিন্তু এ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজাদী। তিনি বলেন, একে তো ২৫ হাজারের বেশি ডিম পাওয়ার তথ্য সঠিক নয়। তার ওপর ১৪ বছরের রেকর্ডের যে দাবি করা হচ্ছে তাও ভুল।

তিনি বলেন, ‘এর আগে হালদা থেকে পাওয়া ডিম নয়, বরং একেবারে চূড়ান্তভাবে প্রাপ্ত রেনুর হিসাব প্রকাশ করা হতো। ২০১২ সালে হালদা থেকে পাওয়া ডিম হতে ১ হাজার ৫৬৮ কেজি রেনু উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে সেবার প্রাপ্ত ডিমের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৭২০ কেজি (১৫৬৮ গুণন ৪০)। এমন পরিসংখ্যান সামনে থাকার পরও ১৪ বছরের রেকর্ড ভঙের দাবি চালবাজি ছাড়া কিছু নয়।’

‘ভুল’ তথ্য পৌঁছাবে ভিন্ন বার্তা, ‘ঐতিহ্য’ হারাবে হালদা

হালদা নদীপাড়ের সন্তান ও দৈনিক আজাদীর ফটো করেসপন্ডেন্ট আমিন মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি অসাধুচক্র হালদায় পাওয়া ডিমের প্রকৃত সংখ্যার চাইতে বাড়িয়ে বলার চেষ্টা করে। মূলত গোষ্ঠীটি হালদার পোনার সঙ্গে স্থানীয় হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা মিশিয়ে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এমনটা করে থাকে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হালদার পোনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হালদার পোনার ঐতিহ্য সংকটে পড়ছে।’

জেলেরা বলছেন, এবার মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ডিমপ্রাপ্তির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে প্রতি কেজি পোনার দাম হওয়ার কথা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অত ডিম তো নেই, তাই দামও হবে বেশি। এ কারণে দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হতে পারেন।

  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

    জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

    জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

    জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

    জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়

  • হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

    হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

  • হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

    হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে

  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

    শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

    শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

    শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

    শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

    শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব

  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পাঠানো সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শুক্রবার হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়ার দাবি করা হয়
  • হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে
  • হালদাপাড়ের সরকারি হ্যাচারিগুলোতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চলছে
  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
  • শুক্রবার হালদায় ডিম সংগ্রহে নেমেছিল কয়েকশ জেলে। সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহের নৈসর্গিক এ ছবি আবারও প্রমাণ করেছে হালদার শ্রেষ্ঠত্ব
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে কাকিলা মাছ।
ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে কাকিলা মাছ।

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কিছু ছোট মাছের প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়লেও এসব মাছের মোট উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে।

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা উন্মুক্ত জলাশয়ের এরকম ৩১টি মাছকে বিলুপ্ত হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করছেন। শুধু তাই নয়, এর ফলে পুষ্টিসমৃদ্ধ এসব মাছ এখন সহজে পুকুরেও চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশে স্বাদু পানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ১৪৩টি মাছই ছোট মাছ। যেসব মাছ আকারে নয় সেন্টিমিটারের ছোট সেগুলোকে ছোট মাছ বা স্মল ইন্ডিজেনাস স্পেসিস কিম্বা এসআইএস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে যে আন্তর্জাতিক সংগঠন আইইউসিএন, তারা বাংলাদেশের ৬৪টি প্রজাতির মাছকে ইতোমধ্যে বিপন্ন বলে উল্লেখ করেছে।

এসব মাছের মধ্যে রয়েছে মহাশোল, খরকি, পিপলা শোল, কালা পাবদা, বাঘ মাছ ইত্যাদি।

এ কারণে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে অস্তিত্বের হুমকির মধ্যে পড়া এসব মাছের বেশ কয়েকটিকে রক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে ৩০টি মাছকে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে।

এসব মাছের মধ্যে রয়েছে শিং, মাগুর, পুঁটি, বাইম, টেংরা, ফলি, বাতাসি, ঢেলা, বৈরালি, গুতুম, খলিসা ইত্যাদি।

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক দশকে ছোট মাছের উৎপাদন চারগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে এই মাছের উৎপাদনের পরিমাণ যেখানে ছিল ৬৭,০০০ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৮ সালের উৎপাদন ছিল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ

বাজারে ইলিশের চাহিদা প্রচুর
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে

বাংলাদেশের মত মিয়ানমারেও প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন বহু জেলে।

কিন্তু বিবিসি বার্মিজ বিভাগের কো কো অং তার এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলছেন, নিয়ন্ত্রণহীন মাছ শিকার এবং সরু জালের ব্যবহারে হুমকিতে পড়েছে ইরাবতী নদীর ইলিশ।

বহুদিন ধরে ইরাবতী নদীতে ইলিশ মাছ ধরে জীবনধারণ করেন ৬৫ বছরের উ কাওক টিন। বিবিসিকে তিনি বলেন, “আমার বাবা ইলিশ ধরতো, আমিও ধরি। সেসময় অনেক মাছ পেতাম, বড় বড় ইলিশ পেতাম।”

“এখনো আমি এবং আমার ছেলেরা ইলিশ ধরতে যাই। কিন্তু মাছ খুব কম। আর যাও বা পাই সেগুলো ছোটো ছোটো।”

এফএও’র এক হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ ভাগ ধরা পড়ে বাংলাদেশে। আর মিয়ানমারে ১৫-২০ ভাগ।

এক সময় ইলিশ ছিলো মিয়ানমারের মাছ রপ্তানির শীর্ষে। কিন্তু এখন তা ইতিহাস।

কারেন্ট জালের যথেচ্ছ ব্যবহারে ইলিশ হুমকিতে পড়ছে
কারেন্ট জালের যথেচ্ছ ব্যবহারে ইলিশ হুমকিতে পড়ছে

সাগর থেকে ডিম পাড়তে নদীতে ঢোকে ইলিশ।

কিন্তু বাণিজ্যিক মাছ ধরার ট্রলারগুলো যেভাবে নতুন ধরনের সব জাল দিয়ে সাগরের একেবারে তল থেকে মাছ ছেঁকে আনছে তাতে ছোটবড় সব মাছ উঠে আসছে।

গবেষকরা বলছেন, আড়াই সেন্টিমিটারের ছোট ছিদ্রের জাল ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে, যদিও আইন অনুযায়ী সেই ছিদ্র অন্তত ১০ সেমি হতে হবে।

আর এ কারণে ইলিশ মাছ সাগর থেকে নদীতে ঢোকারই সুযোগ পাচেছনা।

এখন যা পাওয়া যায় তার গড় ওজন ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম, অথচ একসময় দুই-তিন কেজি ওজনেরও মাছ হরহামেশা ধরা পড়তো।

দারিদ্রের কথা বিবেচনা করে ডিম পাড়ার মৌসুমে মাছ ধরার বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেনা মিয়ানমার সরকার
দারিদ্রের কথা বিবেচনা করে ডিম পাড়ার মৌসুমে মাছ ধরার বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেনা মিয়ানমার সরকার

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের মাইকেল আকেসটার বলছেন, “কত ছোটো মাছ ধরা যাবে সে ব্যাপারে (মিয়ানমারে) কোনো বিধিনিষেধ নেই।” তার ফলে বাচ্চা ইলিশও ধরা হচ্ছে।

বাংলাদেশের মত মিয়ানমারেও ডিম পাড়ার সময় (মে থেকে জুলাই) নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে, দারিদ্রের কথা বিবেচনা মিয়ানমার সরকার তা প্রয়োগ করেনা।

কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মৎস্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলছেন নদী ও সাগরে এখনও প্রচুর ইলিশ। “এখনো প্রচুর ধরা পড়ছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে সাগরে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ গত বছর বেড়েছে। কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ছোটো সাইজের। যত বড় হওয়ার কথা, তার অর্ধেক।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ

ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, বেশ কিছু ইলিশ আর কখনওই সাগরে ফেরার টান অনুভব করছে না
ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, বেশ কিছু ইলিশ আর কখনওই সাগরে ফেরার টান অনুভব করছে না

ভারতের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে মিঠা পানির নদীতে ঢুকে বহু ইলিশই আর কখনও সাগরে ফিরে যাচ্ছে না।

ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ঠিক এই কারণেই এখন গঙ্গার মোহনা থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার উজানেও সারা বছর ধরে ইলিশ মিলছে – এবং স্বাদে-গন্ধেও সেগুলো দারুণ ভাল।

মোহনায় পাতা মাছধরা জালের ভয়েই ইলিশের ঝাঁক মিষ্টি পানিতে রয়ে যাচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের ইলিশ কেন আর কীভাবে মিঠাপানির স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হচ্ছে?

ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা নদীতে ঢোকে – আবহমান কাল থেকে ইলিশ-প্রিয় বাঙালি সেটাই জেনে এসেছে।

কিন্তু ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের অর্থায়নে করা এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বহু ইলিশ ডিম পাড়তে গঙ্গায় ঢুকলেও আর কখনও বঙ্গোপসাগরে ফিরছে না।

ওই গবেষক দলের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী, অধ্যাপক অসীম কুমার নাথ বলছিলেন, ইলিশের ‘অটোলিথে’ বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাণে তারতম্য দেখে তারা এর প্রমাণ পেয়েছেন।

বাজারে ইলিশের চাহিদা প্রচুর
বাজারে ইলিশের চাহিদা প্রচুর

তিনি বলছিলেন, “অটোলিথ মাছের একটা অর্গ্যান, যা ইলিশের ক্ষেত্রে মাথায় থাকে, কোনও কোনও মাছের ফ্যারিঞ্জিয়াল রিজিওনেও থাকে। এই অটোলিথ বিশ্লেষণ করে একটা মাছের মাইগ্রেটরি রুট সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

“আমরা এখন ইলিশের অটোলিথ কেটে দেখতে পাচ্ছি সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিকের অনুপাত এমন যা থেকে স্পষ্ট অনেক ইলিশই আর সাগরে ফিরছে না। মিঠা জলে এগুলোর বেশ ওজনও হয়ে গেছে – পাঁচশো বা সাড়ে পাঁচশো গ্রাম – আবার ওদিকে ক্ষুদে সাইজের পাঁচ-দশ গ্রাম ওজনের ইলিশও মিলছে।”

আসলে সাগরে না-ফেরাটা এই ইলিশগুলোর এক ধরনের বেঁচে থাকার চেষ্টা বা ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ বলেই মনে করছেন ভারতের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ এডুকেশনের মুখ্য বিজ্ঞানী বি কে মহাপাত্র।

“গলদা চিংড়ি হরিদ্বারেও দেখা যায়, সেখান থেকে ডিম পাড়তে তারা চলে আসে সুন্দরবনের মোহনাও। এই জাতীয় মাছকে বলে ক্যাটাড্রোমাস। কিন্তু ইলিশ হল অ্যানাড্রোমাস মাছ, তারা সাগর থেকে ডিম পাড়তে যায় নদীর ভেতর।”

“কিন্তু কেন এখন তারা আর ফিরতে চাইছে না? চাইছে না, কারণ গঙ্গার এসচুয়ারি জুড়ে বিছানো আছে চোদ্দ হাজারেরও বেশি জাল – তাই প্রাণে বাঁচতেই তারা রয়ে যাচ্ছে মিষ্টি জলে। এটাকে বিবর্তনবাদ বা ন্যাচারাল সিলেকশন হিসেবেই দেখা যায়,” বলছিলেন বি কে মহাপাত্র।

বহু বছর আগে গুজরাটে দেখা গিয়েছিল, তাপ্তী নদী বেয়ে ইলিশের ঝাঁক উকাই জলাধারে ঢুকে সেখানেই থাকতে শুরু করে, ডিম পাড়ে ও তাদের বাচ্চাও হয়।

এখন অনেকটা একই ধাঁচের জিনিস দেখা যাচ্ছে গঙ্গাতেও – জানাচ্ছেন অধ্যাপক অসীম কুমার নাথ।

“গঙ্গায় কাকদ্বীপের নিচে নিশ্চিন্দাপুরে যেখানে মিঠা পানি শুরু, সেখান থেকে ওপরে আপনি যদি দুশো কিলোমিটারেরও বেশি ওপরে বলাগড় অবধি যান, সেখানে ক্যালেন্ডার করে আমরা দেখতে পাচ্ছি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ-প্রাক মনসুন-মনসুন কিংবা পোস্ট-মনসুন … সারা বছরই কিন্তু এই পুরো এলাকা জুড়ে ইলিশ মিলছে।”

ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা নদীতে ঢোকে - আবহমান কাল থেকে ইলিশ-প্রিয় বাঙালি সেটাই জেনে এসেছে
ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা নদীতে ঢোকে – আবহমান কাল থেকে ইলিশ-প্রিয় বাঙালি সেটাই জেনে এসেছে

তবে অধ্যাপক নাথ সেই সঙ্গে বলছিলেন, বিশেষত বর্ষার পর কৃষিক্ষেতের কীটনাশক-যুক্ত জল যখন এসে নদীগুলোতে মেশে, তখন এই মিঠা পানির ইলিশগুলোর বিরাট ক্ষতিও হয়ে যাচ্ছে।

মিঠা জলের নদীতে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য এই ইলিশদের বেশি দূষণের শিকার হতে হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পরেও স্বাদে-গন্ধে সেগুলো কিন্তু অন্য ইলিশের চেয়েও ভাল, বলছিলেন ড: মহাপাত্র।

তার কথায়, “মিঠা পানিতেই কিন্তু ইলিশের স্বাদ বাড়ে – কারণ নদীতে ঢোকার পরই তাদের শরীরে ফ্যাট বাড়ে, সেগুলো খেতেও অনেক ভাল হয়। গভীর সমুদ্রে ধরা ইলিশের স্বাদ কখনওই তেমন হয় না। ফলে এগুলোর স্বাদ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই!”

ইলিশ কখনও সাগরে না সাঁতরালে তাকে আদৌ সত্যিকারের ইলিশ বলা যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মৎস্য বিজ্ঞানী আর খাদ্য-রসিকদের মধ্যে দু’রকম মত আছে।

কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, বেশ কিছু ইলিশ আর কখনওই সাগরে ফেরার টান অনুভব করছে না – আর জেলেরা গঙ্গায় সেই ইলিশ পাচ্ছেন বছর জুড়েই!

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ

চান্দা মাছ এখন আর দেখাই যায় না।

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কয়েক প্রজাতির পরিচিত দেশীয় মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নেই’ হয়ে গেছে।

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন বলছে, এর মধ্যে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ হবার পথে বাঘাইর, পিপলা শোল বা বাক্কা মাছ, মহাশোল, নান্দিলা মাছ, চান্দা, ভাঙ্গান বাটা, খরকি মাছ, কালো পাবদা, চেনুয়া মাছসহ বেশ কিছু মাছ রয়েছে।

ময়মনসিংহে বাংলাদেশের একমাত্র মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফা আলী রেজা হোসেন জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে দেশের ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

“আইইউসিএন বাংলাদেশের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা করার জন্য দুটি জরিপ চালিয়েছিল, ২০০০ সালে প্রথম জরিপে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে সর্বশেষ জরিপে তাতে আরো ৬৪ প্রজাতির মাছ যুক্ত হয়।”

“এই তালিকায় সেই সব মাছকেই চিহ্নিত করা হয়েছিল যেগুলো গত ১০ বা ২০ বছরে দেখা যায়নি।”

বিলুপ্ত মাছ নেই

বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে ১০০র বেশি দেশীয় মাছ থাকলেও এখনো কোন মাছকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি।

 কুইচ্চা মাছ
কুইচ্চা মাছ

আইইউসিএনের এ সংক্রান্ত নিয়মটি হচ্ছে, সর্বশেষ কোন একটি প্রজাতির মাছের দেখা পাবার পর পরবর্তী ২৫ বছরে যদি সেই প্রজাতির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন বলছিলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে নান্দিল নামে এক সময় একটি মাছ দেখা যেত, কিন্তু গত ২০ বছরে সেটির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ দেখা যায়নি।

আবার সিলেট অঞ্চলের পিপলা শোল নামে একটি মাছ দেখা যেত, যা এখন আর দেখা যায় না। গত ১০ বছরে দেখা যায়নি এই মাছ।

“দেখা যায়নি, কিন্তু তবু বিলুপ্ত ঘোষণা করার আগে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।”

“যদি এর মধ্যে বিপন্ন মাছেদের অস্তিত্বের ব্যপারে কোন তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে হয়ত আইইউসিএনের পরবর্তী জরিপে এগুলোর ব্যপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকতে পারে।”

বাণিজ্যিকভাবে বাইম মাছেরও চাষ হচ্ছে।
বাণিজ্যিকভাবে বাইম মাছেরও চাষ হচ্ছে।

প্রায় বিলুপ্ত কোন কোন প্রজাতি?

আইইউসিএনের ২০১৫ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণীতে মোট ৬৪ প্রজাতির মাছকে রেড লিস্ট বা লাল তালিকাভুক্ত করেছে, এর মানে হচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ হয় প্রায় বিলুপ্ত, মহাবিপন্ন ও বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বাঘাইর মাছ
বাঘাইর মাছ

২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘আপডেটিং স্পেসিস রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের অধীনে এই তালিকা করা হয়।

এ সংক্রান্ত প্রথম জরিপটি হয়েছিল ২০০০ সালে, সে সময় ৫৪টি প্রজাতিকে রেড লিস্টভুক্ত করা হয়েছিল।

জরিপে মূলত স্বাদু পানির এবং আধা লোনা পানির মাছকেই গণনায় ধরা হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ঐ ‘রেড লিস্ট’ তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন।

কী কী মাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না?

বাংলাদেশে দেশীয় মাছের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০০।

মেনি মাছ
মেনি মাছ

এর মধ্যে ২০১৫ সালে আইইউসিএন এর সর্বশেষ মূল্যায়নে ২৫৩ প্রজাতির মাছের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল।

তাতে দেখা গেছে সময়ের বিবর্তনে যেসব মাছ বিলুপ্তপ্রায় তার বেশির ভাগই নদীর মাছ মানে স্বাদু পানির মাছ।

তবে, ৩০০ প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্তত ৪০ প্রজাতির মাছের ব্যাপারে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার কাছে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই।

আইইউসিএন কয়েকটি ভাগে মাছের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছিল।

এর মধ্যে কিছু মাছ ক্রিটিক্যালি এনডেঞ্জারড বা প্রায় বিলুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ এগুলো সন্ধান ও সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে সেগুলো অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এর বাইরে মহা বিপন্ন, বিপন্ন এবং সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বহু প্রজাতি।

চাষের টেংরা মাছ চাহিদা আছে বাজারে
চাষের টেংরা মাছ চাহিদা আছে বাজারে

বাংলাদেশে বিপন্ন মাছের মধ্যে রয়েছে—পাঙ্গাস, দারি, ককসা, টিলা বা হিরালু, টিলা ককসা, রানি বা বউ মাছ, বেতাঙ্গি, বেটি বা পুতুল মাছ, কালা বাটা, ঘর পোয়া, ঘর পইয়া, ঘোড়া মাছ, এলানগা, কচুয়া পুটি, বোল, চিতল, গজার, টেংরা, রিটা, গাঙ্গিনা বা চাকা মাছ, বট শিং, ঘাউড়া, সাল বাইম।

এছাড়া সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে বাও বাইম, চাপিলা, গুতুম, পুঁইয়া, পিয়াসি, জারুয়া বা উট্টি, ছেপ চেলা, গোফি চেলা, বাটা মাছ, নারু মাছ বা গনিয়া, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা, বেলে, শিং, আইড়, বোয়াল, তেলি, কুইচ্চা মাছ, বামোস মাছ।

কেন এই অবস্থা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা বলছেন, মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে তিনি প্রথমেই জলাশয় কমে যাওয়াকে দায়ী করেন।

“শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও।”

মলা মাছ
মলা মাছ

“কেবল দেশী জাত ও স্বাদের মাছই নয়, এর সঙ্গে কচ্ছপসহ নানা ধরণের জলজ প্রাণী ও সরীসৃপের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।”

সেই সঙ্গে রয়েছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি, যা বৃষ্টিতে ধুয়ে খাল বিলসহ জলাশয়গুলোতে পড়ে।

এর ফলে মাছের মৃত্যু ও প্রজনন হার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আছে কলকারখানার বর্জ্য নিকটস্থ জলাশয়ে ফেলা হয়, তার ফলেও মাছ মরে যায়, বলেন মিজ ফাতেমা।

এর সঙ্গে অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন-সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে, বাংলাদেশ মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশী মাছের চাষের কারণেও দেশী প্রজাতির মাছ কমে গেছে।

বাজারে এক সময় দেশীয় চাষের মাছের আধিক্য দেখা যেতো
বাজারে এক সময় দেশীয় চাষের মাছের আধিক্য দেখা যেতো

“ধরুন এখানে তেলাপিয়া, কার্পজাতীয় মাছ আনা হয়েছে, আবার এক সময় আফ্রিকান মাগুর আনা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে আনা হলো পিরানহা–এগুলো দেশী মাছের খাবার ও বাসস্থল দখল করতো। অনেক সময় দেশী মাছ খেয়ে ফেলতো কোন কোন বিদেশী প্রজাতি।”

যদিও পরে আফ্রিকান মাগুরের চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তারপরেও বিদেশী মাছের প্রজাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেক মাছ কমে গেছে।

কৃত্রিম প্রজনন ও চাষ কি সমাধান?

বাংলাদেশে দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছের হার কমে যাবার প্রেক্ষাপটে গত দুই দশকে কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে মাছের সরবারহ বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর সাড়ে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।

মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক মানুষ
মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক মানুষ

এর মধ্যে নদী, বিল ও হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ২৫ শতাংশ, পুকুর, ডোবার মত বদ্ধ জলাশয় থেকে ৫৭ শতাংশ এবং বাকি অংশ সমুদ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে।

দেশে ৮ লাখ হেক্টর বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ হয়।

বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের কর্মকর্তা বলরাম মহালদার জানিয়েছেন, কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে বাজারে চাহিদা আছে এমন মাছই বেড়েছে।

“কিন্তু বাজারে চাহিদা কম এমন মাছ তো চাষ করছে না কেউ, ফলে সেগুলোর অস্তিত্ব সংকট আগের মতই থাকছে। যেমন খলিশা, চাপিলা, মেনি, ফলি, বাও বাইম, গুতুম, কুইচ্চা মাছ, বামোস ইত্যাদি ধরণের মাছ দেখতে পাবেন না।”

“এখন বাজারে পাবদা বা গুলশা মাছ বা পাঙ্গাস পাবেন আপনি, সেগুলোর চাহিদা আছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হলে, বিপন্ন মাছের ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”

তবে ফসলি জমি নষ্ট করে দেশে মাছ চাষ করা নিয়ে পরিবেশবাদীদের এক ধরণের বিরোধিতাও রয়েছে।

তাদের পরামর্শ বিদ্যমান নদী ও পুকুরগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হবে।

তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যদিও এখন কৈ, শিং, পাবদা, মাগুর, সর পুটি, চিতলসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ সহজলভ্য হয়েছে, কিন্তু সেই সব মাছের স্বাদ আগের মত নয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com