কৃষকের পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন স্থায়ী কৃষি মূল্য কমিশন
করোনাকালে কৃষি খাতের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর কিছু ধারণা পাওয়া গেছে ব্র্যাকের একটি সমীক্ষা থেকে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানা যায়, করোনাকালের দেড় মাসে কৃষি খাতের ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। উল্লিখিত সময়ে শস্য খাতের ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মৎস্য খাতের ৩৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, পোলট্রি খাতের এক হাজার ৭৬৯ কোটি এবং প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতি হয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা। এই দেড় মাসে প্রতিটি কৃষক পরিবার গড়ে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা গচ্চা দিয়েছে। এ পরিমাণ ক্ষতির হিসাব উঠে এসেছে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপরও প্রায় এক মাস এ ক্ষতি অব্যাহত ছিল। ফলে ক্ষতির মোট পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা যায়। এ ক্ষেত্রে করোনার সঙ্গে আম্পান ও সাম্প্রতিক বন্যার অভিঘাতও বিবেচনায় থাকা উচিত।
করোনা, আম্পান ও বন্যার অভিঘাতে এবার দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। তাদের নগদ অর্থপ্রাপ্তি হ্রাস পেয়েছে। তাতে তারা সামর্থ্য ও উৎসাহ হারিয়েছেন পরবর্তী উৎপাদনের জন্য। এ সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হচ্ছে নগদ সহায়তা প্রদান। কিন্তু এর রেওয়াজ আমাদের দেশে খুবই কম।
দেশের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, ব্যক্তি উদ্যোক্তা আছে; যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করে থাকে। প্রদত্ত সাহায্যের মধ্যে থাকে চাল, ডাল, শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি। নগদ সহায়তার কথা অনেকেরই বিবেচনায় থাকে না। ফলে গরিব ও অসহায় মানুষকে চড়া সুদে মহাজনের ঋণ নেওয়া এবং জমি কিংবা ভিটেমাটি বন্ধক দেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকে না। এরা যাতে এরূপ ঋণের জালে জড়িয়ে না পড়ে এবং দ্রুত পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য নগদ সহায়তা খুবই প্রয়োজন। এ নাগাদ কৃষকদের জন্য আলাদাভাবে কোনো নগদ সহায়তার ঘোষণা দেওয়া না হলেও উদার কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবার প্রণোদনা হিসেবে কৃষককে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ছোট ও প্রান্তিক কৃষকের জন্য ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। তা ছাড়া নিয়মিত কৃষিঋণের আওতায় আছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর পরও কৃষকদের অর্থায়নের সমস্যা আছে, থাকবে। কারণ, কৃষকদের জন্য কৃষিঋণের শিকে ছিঁড়ে না। এ ঋণ কেউ পায়, কেউ পায় না। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য বড় উপকার হতে পারে নগদ সহায়তা। এর পরিমাণ যদি প্রতি কৃষক দুই হাজার টাকা হয়, তাতে মোট টাকা লাগে প্রায় তিন হাজার ৩০০ কোটি। যদি চার হাজার টাকা হয়, তাহলে ছয় হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়ে। এ টাকার পরিমাণ আমাদের মোট বাজেটের তুলনায় খুবই সামান্য। মাত্র ১ দশমিক ১৬ শতাংশ।
একজন কৃষকের কোনো উৎপাদন মৌসুমে সার্বিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে তার কিয়দাংশ নগদ সহায়তা হিসেবে কৃষকদের দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এ ধরনের কোনো ঘোষণার পক্ষে যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। মহামারি ও দুর্যোগকালে কৃষি ভর্তুকি কৃষি উৎপাদনের জন্য খুবই সহায়ক। এবারের বাজেটে এ খাতে রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ টাকা খরচ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়। গত সাত বছরের কোনো বছরই কৃষি ভর্তুকির টাকা পুরোটা ব্যবহার করা হয়নি। কোনো বছর তিন হাজার, কোনো বছর দুই হাজার, আবার কোনো বছর এক হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে কৃষি ভর্তুকি। উদাহরণস্বরূপ, সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত মোট ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকির মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খরচ করা হয়েছে সাত হাজার কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছয় হাজার কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে আট হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এটা দেশের কৃষকদের বড় ক্ষতি। এর প্রতিকার দরকার। এর জন্য বছরের শুরুতেই কৃষি ভর্তুকি পুরোটা ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
করোনা ও বন্যায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান করতে হবে গ্রামীণ এলাকায়। এ লক্ষ্যে বেশি করে ‘রুরাল ওয়ার্কস প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে। বন্যায় ভেসে যাওয়া রাস্তাঘাট, বাঁধ পুনর্নির্মাণ করতে হবে। পুকুর, খাল-বিল ও নদী পুনর্খনন করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তা ছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে গ্রামীণ এলাকায়। ছোট ব্যবসা, দোকানদারি, গ্রামীণ যানবাহন পরিচালনা এবং কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবসায়িক ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে। গ্রামীণ যন্ত্রপাতি মেরামত ও পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে বেকার যুবকদের। তাতে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
বন্যা-উত্তর কৃষি পুনর্বাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্গত এলাকায় বীজ-সার অতিদ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। উপকরণ ভর্তুকি বাড়াতে হবে। দেশের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় বীজতলা তৈরি করে দুর্গত এলাকায় তা পাঠাতে হবে। মূল জমি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সংস্থান করতে হবে। শীতকালীন সবজি চাষ ও আগামী বোরো চাষের জন্য এখনই উৎপাদন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলের জন্য। সম্প্রতি অনুমোদিত তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের কৃষি যন্ত্রায়ন প্রকল্পের অধীনে ভর্তুকি মূল্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যাতে যিনি কৃষক, তিনি প্রয়োজনবোধে যন্ত্র কিনে নিতে পারেন এবং যিনি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কৃষিযন্ত্র পরিচালনা করবেন, তিনিও যন্ত্র কিনে নিতে পারেন। তাতে কৃষিযন্ত্রের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে গ্রামীণ অঞ্চলে। জমি চাষ কিংবা ফসল কাটার জন্য যন্ত্রের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হবে না কৃষককে।
করোনাকালীন লোকসান পুষিয়ে দেওয়ার আরেকটি পন্থা হলো কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। এর জন্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যের সমর্থন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। ভারতে বর্তমানে ২৩টি কৃষিপণ্যের সমর্থন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বাজারদর যাতে নির্ধারিত মূল্যের নিচে নেমে না যায়, সে জন্য কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রয় করে নেয় সরকার। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের ওপর শতকরা ৫০ শতাংশ মুনাফা হিসাব করে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণের দৃষ্টান্ত আছে। ভারতে মোট উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ১৫ শতাংশ ক্রয় করা হয় এরূপ পূর্বনির্ধারিত মূল্যে। বাংলাদেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের নূ্যনতম সমর্থন মূল্য নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে প্রচলন আছে ধান-চাল ও গমের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণের। এটা সাধারণত উৎপাদন খরচের ওপর ৬ থেকে ১০ শতাংশ মুনাফা দেখিয়ে নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে প্রতিনিয়তই কৃষক বঞ্চিত হন। এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়, প্রতিবাদ হয়; কিন্তু এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ কৃষিবিদ। তারও বোধকরি অনেক চিন্তাভাবনা আছে কৃষিপণ্যের ন্যায়সংগত মূল্য নিশ্চিত করার জন্য। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হলো একটি ইতিবাচক কৃষি মূল্যনীতি প্রণয়ন করা। এ লক্ষ্যে গঠন করা দরকার একটি স্থায়ী কৃষি মূল্য কমিশন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে এটি আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় কৃষি মূল্য কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যাবলি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে এরূপ একটি মূল্য কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। আমাদের জাতীয় কৃষিনীতিতেও একটি মূল্য কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে; কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন। গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।
সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’
তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন