বিশ্ব
অস্ত্র ব্যবসা: ব্রিটেন সৌদি আরবের কাছে কী পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করে? কেন এই ব্যবসা নিয়ে বিতর্ক?
লেখক
বিবিসি বাংলা
ইয়েমেনে লড়াই চলছে পাঁচ বছর ধরে। এই যুদ্ধে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বেড়ে চলার পটভূমিতে সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানিতে ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে।
কেন সৌদিদের অস্ত্র জোগাতে এত আগ্রহী ব্রিটেন?
এ নিয়েই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।
এই তিনটি দেশের যোগাযোগের সূত্রগুলো কোথায়?
তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরব বিশ্বে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ। আরব দুনিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ প্রতিবেশী ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের দমনে বিমান হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব।
গত বছর এক রিপোর্টে ব্রিটেন নিজেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অস্ত্র বিক্রেতা বলে বর্ণনা করেছে। ব্রিটেন যত অস্ত্র রপ্তানি করে, তার ৪০ শতাংশই বিক্রি করে শুধু একটি দেশের কাছে – সেটি হল সৌদি আরব।
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদিদের পাশে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ সরকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারাও ব্রিটেনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে।
অস্ত্র ব্যবসার হিসাবে ব্রিটেনের তুলনায় এগিয়ে আছে একমাত্র আমেরিকা।
ইয়েমেনের অবস্থান কী?
ব্রিটেনের এই কোটি কোটি পাউন্ড মুনাফার অস্ত্র ব্যবসা ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে বিপন্ন করে তুলেছে এবং কী ধরনের ভয়ানক প্রভাব ফেলছে, ব্রিটেনের বিরোধী রাজনীতিক ও অস্ত্র ব্যবসার বিরোধীরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ একটা মানবিক সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।

জাতিসংঘ তাদের রিপোর্টে যাচাই করা তথ্য তুলে ধরে বলছে, ২০২০-র মার্চ পর্যন্ত ইয়েমেনে মূলত সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষ মারা গেছে অন্তত ৭,৭০০ জন।
অন্যান্য পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অবশ্য বলছে যে সেখানে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি সংস্থা এসিএলইডি-র (আমর্ড কনফ্লিক্ট লোকেশান অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট) নথিভুক্ত করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এক লাখ, যার মধ্যে সরাসরি হামলায় নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার।
ইয়েমেনের জনসংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষার প্রয়োজন।
আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে বিশ লাখ শিশু গুরুতর অপুষ্টির শিকার, যাদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুর বয়স পাঁচের নিচে।
ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য কী?
গত গ্রীষ্মে মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একটা বিজয় পেয়েছিল। তারা বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায়, এবং আদালতের নির্দেশে ব্রিটিশ সরকার সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
আদালত সরকারের এই অস্ত্র বিক্রির নীতি ইয়েমেনে আন্তর্জাতিক আইনের “গুরুতর লঙ্ঘন” কি-না, তা বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয়।

প্রায় এক বছর পর সরকার তার মূল্যায়ন শেষে ঘোষণা করে যে তারা অস্ত্র বিক্রি আবার শুরু করবে।
“সৌদি আরবের অভিপ্রায় সঠিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার ক্ষমতা দেশটি রাখে,” জানান ব্রিটেনের বাণিজ্য বিষয়কমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনি সরকারি বক্তব্য তুলে ধরে বলেন যে সেখানে আইন লঙ্ঘনের “বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা” ঘটেছে মাত্র।
এমপিদের কাছে এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি জানান, “যেসব ঘটনা আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন বলে সরকারকে বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তা ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এবং বিভিন্ন কারণে।”
সমালোচনা কেন?
ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমিলি থর্নবেরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে বিরোধী দলের মুখপাত্র। তিনি মনে করেন যে সরকার তার এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে “নৈতিক যুক্তি” দিতে পারবে না, এবং তিনি বলেছেন এর মাধ্যমে ব্রিটেনের “মানবাধিকারের পক্ষের ভাবমূর্তি” ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
গত বছর ব্রিটিশ সরকারকে আদালতে নিয়ে গিয়েছিল যে অস্ত্র ব্যবসা-বিরোধী সংগঠন, সেই ‘দ্যা ক্যাম্পেইন এগেনস্ট আমর্স ট্রেড বা ক্যাট’ বলছে এটি “নৈতিকভাবে দেউলিয়া” একটা সিদ্ধান্ত।

মধ্যপ্রাচ্যে বিমান হামলায় হতাহাতের বিষয়টি নজরদারি করে এমন একটি ব্রিটিশ-ভিত্তিক সংস্থা ‘এয়ারওয়ারস্’ বলছে, সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার প্রক্রিয়া সন্দেহজনক এবং অনির্ভরযোগ্য।
এই সংগঠনটির দাবি, মিত্র দেশ সৌদিদের কথা যদি ছেড়েও দেয়া হয়, তারপরেও ব্রিটেন নিজেই যে সংখ্যায় বিমান ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
“ব্রিটেন তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে, তাতে বেসামরিক মানুষের ক্ষতির বিষয়টা স্বীকার করে নেয়ার পথ অসম্ভব করে দেয়া হয়েছে,” বলছে এয়ারওয়ারস্।
সংগঠনটি তাদের যুক্তির সমর্থনে ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের পাঁচ বছর ব্যাপী লড়াইকে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরেছে।
ব্রিটিশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসাবে সিরিয়া ও ইরাকে ব্রিটেন “আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৪,৪০০ অস্ত্র” দিয়েছে।
কিন্তু ব্রিটেনের হিসাব বলে, এর মধ্যে ব্রিটিশ বিমান বাহিনী রয়াল এয়ার ফোর্সের হামলায় মারা গেছে মাত্র একজন বেসামরিক মানুষ।
এয়ারওয়ারস্-এর হিসাবে নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ছিল ৮,০০০ থেকে ১৩,০০০ এবং বেসামরিক মৃত্যু নথিভুক্ত করার ব্রিটিশ পদ্ধতি তাদের মতে “অবাস্তব, অযৌক্তিক”।
কী পরিমাণ অর্থ জড়িত?
ক্যাট বলছে, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রিটেন লাইসেন্স-এর অধীনে সৌদি আরবে ৫৩০ কোটি পাউন্ড অর্থমূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে।

সংগঠনটি বলছে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরবের মিত্র অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে আরও একশো’ কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স ব্রিটেন পেয়েছে।
তবে ক্যাটের হিসাবে এর বাইরে আরও রয়েছে লাইসেন্স মুক্ত অস্ত্রের বিক্রি – এবং সামরিক সরঞ্জামের দেখভাল, কারিগরি ও সরবরাহ বাবদ অস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত আরও নানা চুক্তি থেকে অর্জিত মুনাফা।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্য দেশগুলোর কাছে ব্রিটেনের বিক্রি করা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মূল্য “অন্তত ১৬ বিলিয়ন পাউন্ড” (দু’হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি)।
যেসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ব্রিটেন বিক্রি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে টাইফুন এবং টর্নেডো জঙ্গী বিমান, এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের বোমা।
সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াও ব্রিটেন সৌদি জোট বাহিনীকে সামরিক পরামর্শ দিয়েছে, যার মধ্যে আছে লক্ষ্যবস্তুর ওপর বোমাবর্ষণ এবং কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শ, এবং সৌদি সেনাদের ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ দান।
বিষয়টা কি শুধুই ব্রিটেনের অস্ত্র বিক্রির?
সৌদি আরব ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যে পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করেছে তার মধ্যে ৭৩ শতাংশ অস্ত্র্র এসেছে আমেরিকা থেকে – জানাচ্ছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশানাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন – তারা বিক্রি করেছে সৌদিতে মোট আমদানি করা অস্ত্রের ১৩ শতাংশ এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ফ্রান্স বিক্রি করেছে ৪.৩ শতাংশ।
সেই হিসাবে দেখলে, আমেরিকার তুলনায় ব্রিটিশ অস্ত্র চুক্তির পরিমাণ অনেকই কম।

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একজন গবেষক পিয়েটার ডি ওয়েজম্যান বলছেন, আমেরিকা গত পাঁচ বছরে যত অস্ত্র বিক্রি করেছে, তার অর্ধেক বিক্রি করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করা অস্ত্রের অর্ধেকই কিনেছে সৌদি আরব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব ও তার শরীক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বর্ণনা করেছেন “এলাকায় ইরান এবং তার দোসরদের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে একটা সুরক্ষা দেয়াল” হিসাবে।
ইরান ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন জোগাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে লড়ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী। তবে হুতিদের সমর্থন জোগানোর অভিযোগ তেহরান অস্বীকার করে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
ব্রিটেনের সংবাদপত্র ফাইনানশিয়াল টাইমস-এ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক নিবন্ধে লিখেছেন যে ব্রিটেন ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এবং মানবিক ত্রাণ ব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছে।
ইয়েমেনে দেশ জুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দেশটিতে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে সাহায্য করার জন্য ব্রিটেন, জার্মানি এবং সুইডেন যৌথভাবে অতিরিক্ত ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইয়েমেনে এ যাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক কলেরার প্রাদুর্ভাব ছাড়াও, দেশটি কোভিড-১৯এর প্রকোপ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার মাত্র অর্ধেক এ পর্যন্ত কাজ করছে।

এপ্রিল মাসে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরব একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।
কিন্তু হুতিরা এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। তারা দাবি করে রাজধানী সানা এবং বন্দরনগরী হুদাইদা থেকে আকাশপথে ও সমুদ্রপথে দেয়া সব রকম অবরোধ তুলে নিতে হবে।
ফলে অচলাবস্থার নিরসন এখনও হয়নি। জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে যুদ্ধে এ পর্যন্ত দেশটিতে যে ধ্বংসলীলা হয়েছে, তাকে হয়তো বহু গুণে ছাপিয়ে যাবে আগামীতে ধ্বংসের যে চিত্র আশংকা করা হচ্ছে, তা।
জাতিসংঘ বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইয়েমেনে মৃত্যুর সংখ্যা হয়ত “গত পাঁচ বছরে দেশটিতে যুদ্ধ, রোগব্যাধি ও অনাহারে মৃত্যুর মোট সংখ্যাকে অনেকাংশে ছাড়িয়ে যাবে”।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি ধানের চাষে কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক, কী লাভ এই চাল উৎপাদন বাড়লে?
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন


চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

পাবনায় পাঁচ মাসে ৫ কোটি টাকার শামুক বিক্রি
শীর্ষ সংবাদ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের
-
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
-
ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন