আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বিশ্ব

সালতামামি ২০২০: করোনা, যুদ্ধ, বিক্ষোভ নিয়ে বছরের সাড়া ফেলা ঘটনাগুলো

সুরক্ষা পোশাকে চিকিৎসক এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তারের একটি গ্রাফিক চিত্র
ছবির ক্যাপশান,বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষকে সারা বছর আতঙ্কে রেখেছে

শেষ হচ্ছে ২০২০ সাল- রীতিমত ঘটনাবহুল একটি বছর। যে বছর জুড়ে ছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির খবর – যা সারা পৃথিবী তছনছ করে দিয়েছে, এবং বহু মানুষের জন্য বিপুল যন্ত্রণার কারণ হয়েছে।

চীনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চীনের হুবেই প্রদেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯য়ে, এবং হুবেই প্রদেশে উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুপাখির বাজারের সাথে প্রথম সংক্রমণগুলোর সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়।

কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যান্সেট চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় এবছরের গোড়ার দিকে, তাতে বলা হয় কোভিড নাইনটিন ভাইরাসের উপসর্গ দেশটিতে প্রথম পাওয়া যায় ২০১৯য়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে।

নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ব্যাখ্যা করা হলেও ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১ই মার্চ ২০২০ কোভিড-১৯ প্রার্দুভাবকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করে।

শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুস আক্রমণকারী এই ভাইরাস পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কেড়ে নিয়েছে বহু জীবন, বহু মানুষ দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতার শিকার হয়ে এখনও এই রোগের সাথে যুদ্ধ করছে।

জন্স হপকিন্সের ২১শে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংকলিত তথ্য অনুযায়ী পৃথিবী ব্যাপী এই ভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা ৭ কোটি ৬৮ লক্ষ আর মৃতের সংখ্যা ১৭ লক্ষ।

উহানে বন্য প্রাণী ও সামুদ্রিক মাছের বাজার
ছবির ক্যাপশান,বন্য প্রাণী বিক্রি হয়, উহানের এমন একটি বাজার থেকে এই ভাইরসটি সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ।

বলা হচ্ছে, ঊনিশশো তিরিশের দশকে যে বিশ্ব মহামন্দা পরিস্থিতি (যা গ্রেট ডিপ্রেশন নামে পরিচিত) তৈরি হয়েছিল, তার পর এই প্রথম করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আবার বড় রকমের ধ্স নেমেছে। অনেকের ধারণা, মহামারি হয়তো নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির যে মারাত্মক ক্ষতি এর মধ্যে হয়ে গেছে, তা কাটাতে বহু বছর লেগে যাবে।

এই রোগের উৎস কোথায়, কখন চীন প্রথম এই রোগ সম্পর্কে জেনেছিল, এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে কতটা সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, এই ভাইরাস মানুষের তৈরি নাকি গবেষণাগার থেকে দুর্ঘটনাক্রমে তা বাইরে চলে এসেছে, এসব নিয়ে সারা বছর ধরে চলেছে নানা জল্পনা, তথ্যানুসন্ধানের প্রক্রিয়া। এসব প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্কের।

Presentational grey line

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে কোভিড-১৯ এর উৎস খুঁজে বের করতে ১০ জন বিজ্ঞানীর একটি আন্তর্জাতিক দল আগামী মাসে (জানুয়ারিতে) চীনের উহান শহর সফর করবেন।

তদন্তকারী দলের একজন জীববিজ্ঞানী সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কারো উপর দোষ চাপানোর উদ্দেশ্যে এই তদন্ত পরিচালনা করছে না, বরং ভবিষ্যত সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করাই তাদের অনুসন্ধানের মূল লক্ষ্য।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, চীনের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর এ পর্যন্ত এটি অন্তত ১৭ বার মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। অতি সম্প্রতি ভাইরাসটির নতুন এবং আরও বেশি সংক্রামক আরেকটি জাত আত্মপ্রকাশ করার পর নতুন করে দেশে দেশে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

বৈরুত বিস্ফোরণ

বৈরুত বন্দর যেখানে বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ঘটেছিল

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে চৌঠা অগাস্ট রাসায়নিক পদার্থের এক গুদামে বিস্ফোরণ ছিল এ শতাব্দীর ভয়াবহতম ‘অ-পারমাণবিক’ বিস্ফোরণ।

বৈরুতের বন্দর এলাকায় বহু বছর ধরে মজুত রাখা প্রায় ২,৭৫০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণে নিহত হন দুশয়ের বেশি মানুষ, আহত হন ৬ হাজারেরও বেশি লোক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায় বিধ্বংসী বিস্ফোরণের ঠিক আগে বন্দরে বিশাল এক শস্যের গুদামে আগুন লাগে। তার ৩০ সেকেন্ড পরেই এক বিশাল ও ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে প্রথম সৃষ্টি হয় বিশাল আগুনের গোলা, তার পর বাতাসের ঝাপটায় তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো আকারের পানি ও বাষ্পের সাদা মেঘ -তার মুহূর্ত পরই পাক খেয়ে উঠতে থাকে লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি। সেইসঙ্গে শহরের সর্বত্র বিস্ফোরণের ভয়ানক কান ফাটানো তীব্র শব্দ। পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র চার সেকেণ্ডের মধ্যে।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল বলে, ওই বিস্ফোরণের আনুমানিক শক্তি ছিল কমপক্ষে ৫০০ টন টিএনটি বিস্ফোরকের সমান। টিএনটি হচ্ছে যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমায় যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয় – তার সংক্ষিপ্ত নাম।

গবেষক দলের ড. স্যাম রিগবি বিবিসিকে বলেন, “ওই বিস্ফোরণ ছিল যুদ্ধে ব্যবহৃত ‘কনভেনশনাল’ বা প্রচলিত অস্ত্রের মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে বড় – তার চাইতেও ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী।”

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন

আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজেতে এক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জের ধরে ২০২০য়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন।

পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় মারা যান ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক মি ফ্লয়েড।

অনলাইনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রায় আট মিনিট ধরে মি. ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে তাকে চেপে ধরে রেখেছেন ৪৪ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন। জর্জ ফ্লয়েড দম নিতে না পেরে হাঁপাচ্ছেন, আর কাতর কণ্ঠে বারবার অনুনয় করছেন, “প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ”।

জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুর আগে যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, তা তার মৃত্যু পর হয়ে ওঠে বিশ্বজোড়া এক আন্দোলনের মূলমন্ত্র “আই কান্ট ব্রিদ”-“আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না”।

ভিডিওতে গোটা ঘটনার ছবি তোলেন পথচারী ১৭ বছরের তরুণী ডারনেলা ফ্রেজিয়ার।

জর্জ ফ্লয়েড ও আই কান্ট ব্রিদ ব্যানার জার্মানির বার্লিনে
ছবির ক্যাপশান,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে নি:শ্বাস না নিতে পারা জর্জ ফ্লয়েডের উচ্চারিত শেষ তিনটি শব্দ- আই কান্ট ব্রিদ

হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন। তাকে আদালতে নেয়ার পর ১ মিলিয়ন ডলারের জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। আগামী বছর মার্চে বিচারের শুনানি হবার কথা।

ওই সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকা আরো তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। করোনা ভাইরাস আতঙ্ক উপেক্ষা করে মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভে পথে নামে।

বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে জারি করা হয় কারফিউ। যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষিত সামরিক বাহিনী, ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েনের ঘটনাও ঘটে।

আমেরিকায় ব্যাপক বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর নানা প্রান্তে পৌঁছয় এই প্রতিবাদের ঢেউ। জন্ম নেয় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন – ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার।

সমাজ ব্যবস্থা থেকে বর্ণবাদসহ সব ধরণের বৈষম্যের অবসানের দাবি তুলতে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। এর অনুষঙ্গ হিসাবে বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক ঐতিহাসিক নেতা বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে কিংবা সেগুলো উপড়ে ফেলে।

মিনেসোটার সেন্ট পল থেকে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তি সরিয়ে ফেলে বিক্ষোভকারীরা
ছবির ক্যাপশান,মিনেসোটার সেন্ট পল থেকে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তি সরিয়ে ফেলে বিক্ষোভকারীরা
Presentational grey line

আমেরিকার নির্বাচন

সারা বছর ধরে বিশ্বের নজর ছিল আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে, যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চৌঠা নভেম্বর।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে ছিল নজিরবিহীন সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিভাজন, তিক্ততা ও নোংরামি।

ফলাফল ঘোষণার পর্বও ছিল চরম নাটকীয়। ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন যখন দাবি করেন তিনি জয়ের পথে রয়েছেন, তখন রিপাবলিকান মি. ট্রাম্প ভোট জালিয়াতি এবং ব্যালট চুরির অভিযোগ এনে দাবি করেন নির্বাচনে তিনিই জয়ী হয়েছেন।

প্রচারণার সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, নির্বাচনী ফলের ব্যবধান যদি খুব কম হয়, তিনি তার বিজয় ছিনিয়ে নেবার লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনবেন। কয়েক লাখ বৈধ ব্যালট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তার ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ জো বাইডেনও বলেন “প্রতিটি ভোট গোণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত” এই নির্বাচন শেষ হবে না। তিনিও জোর দিয়ে বলেন “ডেমোক্র্যাটরা জয়ের পথে রয়েছে।”

ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে জো বাইডেনের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয় ১৫ই ডিসেম্বর। মি. বাইডেন পান ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট আর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পান ২৩২টি।

নির্বাচনের পর থেকেই মি. ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে ফল নিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন, আইনি পদক্ষেপসহ নানাভাবে ফল পাল্টানোর চেষ্টা করেন মামলা করার মাধ্যমে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনে ছবি- টেনেসিতে সবশেষ প্রেসিডেন্ট বিতর্কের সময় ২২শে অক্টোবর ২০২০
ছবির ক্যাপশান,এবারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে ছিল নজিরবিহীন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন ও তিক্ততা

তবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের পর এখনো চুপ করে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তিনি এখনো পরাজয় স্বীকার করেননি, বরং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু তার মামলাগুলো একের পর এক বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে খারিজ হয়ে গেছে।

ট্রাম্প শিবির বলছে তাদের আইনি লড়াই চলতে থাকবে, এবং তারা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবেন – যদিও সুপ্রিম কোর্টে এরকম কোন আপিল শোনা হবে কিনা এবং তা নির্বাচনী ফল উল্টে দিতে পারবে কিনা – তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

ভোটের ফল এখন ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হবে এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে আগামী ৬ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক গণনা হবে।

এটাই আগামী বিশে জানুয়ারি মিস্টার বাইডেনের শপথ নেয়ার পথ তৈরি করবে।

আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন একজন নারী। শুধু নারী হিসাবেই নয় কমালা হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভুত ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েও ইতিহাস তৈরি করেছেন।

ভিডিওর ক্যাপশান,যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী, অশ্বেতাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট- কে এই কমালা হ্যারিস

ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে নতুন মোড়

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৩ই অগাস্ট ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণা ছিল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিখ্যাত কলামিস্ট টমাস এল ফ্রিডম্যান এই ঘোষণাকে ব্যাখ্যা করেন “মধ্যপ্রাচ্যের একটি ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকম্প” বলে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। পুরো আলোচনাটি চলেছিল এতটাই গোপনে যে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত নাকি এ বিষয়ে কিছু জানতেন না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এই ঘোষণা দেয়ার পরপরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হিব্রুতে টুইট করেন, “এক ঐতিহাসিক দিন‍।”

এক যুক্ত বিবৃতিতে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত জানায়, “এই ঐতিহাসিক অগ্রগতি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির অগ্রযাত্রায় সাহায্য করবে” বলে তারা আশা করেন।

তারা জানায়, দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের বিনিময়ে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের বিশাল ফিলিস্তিনি এলাকা ইসরায়েলের অংশ করে নেয়ার কাজ আপাতত স্থগিত রাখবে।

এর এক মাস পরেই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণা দেয় বাহরাইনও।

ইসরায়েলের জন্য এই দুটি আরব রাষ্ট্রের সাথে হাত মেলানো ছিল সত্যিকার অর্থেই এক বিরাট অর্জন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ আল নাহিয়ান
ছবির ক্যাপশান,ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ আল নাহিয়ান

তবে, গত অর্ধ শতাব্দী ধরে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতি পুরো আরব বিশ্বের যে ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ছিল, এই ঘোষণা আসে তার প্রতি একটা বড় আঘাত হিসাবে।

ফিলিস্তিনিরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই পদক্ষেপকে “বিশ্বাসঘাতকতা” বলে মন্তব্য করেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এর নিন্দা করে বলেন, “এটি জেরুসালেম, আল-আকসা এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”

এই দুই আরব রাষ্ট্রের ঘোষণার পর সৌদি আরবও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে ছিল ব্যাপক জল্পনা।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর বাহরাইন ও আরব আমিরাত তৃতীয় ও চতুর্থ উপসাগরীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিল। এর আগে মিশর ১৯৭৯ সালে এবং জর্ডান ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

Presentational grey line
নার্গোনো কারাবাখে লড়াই
ছবির ক্যাপশান,নার্গোনো কারাবাখে ৯০এর দশকের পর আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা তীব্র লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে দুপক্ষের ৫ হাজারের বেশি সৈন্য

যুদ্ধের দামামা

নাগোর্নো-কারাবাখ- পূর্ব ইউরোপে দক্ষিণ ককেশাসের বিরোধপূর্ণ এলাকাটিকে কেন্দ্র করে ২৭শে সেপ্টেম্বর আবার যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে। এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধ ১৯৯৪ সালে থেমে গেলেও তাদের মধ্যে কখনও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত হলেও, আর্মেনিয়ার সরকারের সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয়রা এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দুটো দেশই এলাকাটিকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় নভেম্বরে একটা শান্তি চুক্তি হলেও তা কার্যকর হয়নি।

ছয় সপ্তাহের বেশি চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দু পক্ষের ৫ হাজারের বেশি সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে।

ইথিওপিয়া- দেশটির সরকারি বাহিনীর সাথে উত্তরে টিগ্রে’র ক্ষমতাসীন দল টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)এর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয় নভেম্বর মাসে।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ টিগ্রের আঞ্চলিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন টিগ্রেতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সেনা ঘাঁটিতে টিপিএলএফের হামলার জবাবে তিনি সামরিক আগ্রাসনের নির্দেশ দিয়েছেন।

টিপিএলএফ-এর নেতাদের সাথে মি. আহমেদের তিক্ত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে শত শত মানুষ মারা গেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ ঘড়ছাড়া হয়েছেন। সরকারি বাহিনী টিগ্রের ওপর স্থল ও বিমান আক্রমণ চালিয়েছে।

তাওয়েরঘা শহর যেখানে মিলিশিয়াদের হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ঘরবাড়ি।
ছবির ক্যাপশান,লিবিয়ার যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়েছে লাখো লাখো মানুষ, মিসরাতা বন্দরের কাছে এই তাওয়েরঘা শহর ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে শহরটির ৪০ হাজার বাসিন্দা

লিবিয়া- এই দেশটিতেও দীর্ঘদিন ধরে চলা অশান্তির আগুনে ভাঁটা পড়েনি। বর্তমানে লিবিয়ায় জাতিসংঘের সমর্থন পুষ্ট সরকার, বিদ্রোহী নেতা জেনারেল খালিফা হাফতারের বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে লড়ছে। লিবিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ এই মুহূর্তে খালিফা হাফতারের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

লিবিয়া নিয়ে নেটো জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ এবং লিবিয়ার বিবদমান দু’পক্ষের পেছনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

জেনারেল হাফতারের বাহিনীকে সহায়তা করছে রাশিয়া, মিশর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে ত্রিপলি সরকারের পেছনে রয়েছে তুরস্ক ও তার মিত্র দেশ কাতার।

লিবিয়ার যুদ্ধেও প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ, বাস্তুহারা হয়েছে কয়েক লাখ।

দুই বিবদমান পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এখনও চলছে এবং লিবিয়া বিষয়ে জাতিসংঘের দূত নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ জানিয়েছেন দুই পক্ষ একটা নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে।

Presentational grey line

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আগুন

পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ ২০২০ সালে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • হংকং– হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের অব্যাহত চীন বিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে কর্তৃপক্ষ নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন আনার প্রস্তাব করলে হংকং-য়ে এর বিরোধিতা করে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলে প্রতিবাদকারীদের। গ্রেপ্তার হয় শত শত মানুষ। এরপর ৩০শে জুন চীন দেশদ্রোহিতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, নাশকতা নিষিদ্ধ করে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাশ করে। সমালোচকরা বলছেন হংকংয়ের সংক্ষিপ্ত সংবিধানে দেশটিকে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে এই আইন তা খর্ব করবে।
  • থাইল্যান্ড– জুলাই মাস থেকে হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটানোর দাবিতে। থাইল্যান্ডের রাজার অসীম ক্ষমতা খর্ব করার দাবি জানাচ্ছে তারা, রাজার জন্য জনগণের অর্থ ব্যয়েরও সীমা বেঁধে দিতে চায় তারা। থাইল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসে রাজাকে এরকম প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করার উদাহারণ আর নেই। বিক্ষোভ দমনে সরকার সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জারি করেছে জরুরি অবস্থা। তরুণ প্রজন্ম যেভাবে রাজতন্ত্র এবং এর প্রতিনিধিত্বকারী সবকিছুকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছে তাতে এটি এক দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শুরু বলেই অনেকে মনে করছে।
  • বেলারুস- বেলারুশে নয়ই অগাস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধীরা। ২৬ বছর একনাগাড়ে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভে যেভাবে দেশটির মানুষ অংশ নেয় তা ছিল অভূতপূর্ব। বহু নগরী, শহর এবং গ্রামে পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে লাখো লাখো মানুষ পথে নামে। তারা নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী স্ভেৎলানা তিখানোভস্কায়াকেই বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভে আটক হয় হাজার হাজার মানুষ। বেলারুশে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি নির্মমতার ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। সাত ঘন্টা আটক অবস্থায় থাকার পর মুক্তি পেয়েই মিস তিখানোভস্কায়া পালিয়ে যান লিথুয়ানিয়ায়। নভেম্বরের শেষে মি. লুকাশেঙ্কো প্রথমবারের মত ইঙ্গিত দেন তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। তবে কবে তা তিনি বলেননি।
  • লেবানন- লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলাকে দায়ী করে সরকারের বিচারের দাবিতে পথে নামে বৈরুতবাসী। বিস্ফোরণ পরবর্তী সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভ ছিল নজিরবিহীন। নিহতের সংখ্যা বাড়ার পটভূমিতে গণ অসেন্তোষের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। ইতোমধ্যেই দেশের রুগ্ন অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, দুর্নীতির অবসান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে দেশে বিক্ষোভ চলমান ছিল। ধর্মের ভিত্তিতে ক্ষমতার ভাগাভাগির ব্যবস্থারও পরিবর্তন চাইছিল দেশের মানুষ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণীর বলি হিসেবে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। জিডিপি ও বৈদেশিক ঋণের অনুপাতের হিসাবে লেবানন এই মূহুর্তে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশ।

করোনার টিকা- আশার আলো

বছরের শুরুতে অচেনা এক জীবাণু সারা বিশ্বে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল, তার দাপট চলেছে সারা বছর ধরে। সংক্রমণ ঠেকাতে সারা বছর ধরে হিমশিম খেয়েছে দেশগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন একমাত্র একটা কার্যকর টিকাই পারে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে।

করোনাভাইরাসের টিকার ভায়াল

তবে মহামারির শুরুতে এটাও সতর্ক করা হয়েছিল যে টিকা তৈরি করতে অনেক বছর সময় লেগে যায় – তাই খুব দ্রুত কিছু পাওয়ার আশা যেন মানুষ না করে।

কিন্তু নভেম্বরের ৯ তারিখে আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োনটেক যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবনে তাদের সাফল্য ঘোষণা করে জানায় তাদের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রমাণ হয়েছে করোনার আক্রমণ থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে তাদের টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। তারা বলে “বিজ্ঞান ও মানবতার জন্যে এটি অনেক বড় একটি দিন।”

ছয়টি দেশে ৪৩,৫০০ জনের শরীরে এই টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে এতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দেখা যায়নি বলে তারা জানায়।

ডিসেম্বরের গোড়ায় বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ফাইজার/বায়োনটেকের করোনাভাইরাস টিকার অনুমোদন দেয় ব্রিটেন এবং শুরু হয় তাদের টিকাদান কার্যক্রম।

টিকা তৈরির যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে মাত্র ১০ মাসে এই টিকা আবিস্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা নজিরবিহীন অর্জন।

আমেরিকাও ডিসেম্বরে ফাইজার/বায়োনটেক এবং দ্বিতীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠান মডার্নার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে সে দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে।

তবে যে টিকাটির দিকে বিশ্বের অনেক দেশ তাকিয়ে আছে সেটি হল ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রা জেনেকার ভ্যাকসিন। তাদের টিকাটি আরও সহজলভ্য, দামে কম এবং বিতরণ ও মজুদ সহজ। এই টিকাটি খুব শিগগিরই অনুমোদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া রাশিয়া গত অগাস্ট মাসে স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য স্পুটনিক ভি নামের তাদের টিকাকে লাইসেন্স দিয়েছে এবং এখন সেটির ব্যবহারও শুরু হয়েছে। এই টিকা ৯২% নিরাপদ বলে বলা হচ্ছে। এবং তাদের ট্রায়ালের ফলাফলও অল্প দিনের মধ্যেই প্রকাশ করার কথা।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরও অনেক কোম্পানিই এখন করোনার টিকা তৈরির কাজ করছে এবং তাদের ট্রায়াল বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

মানুষ আশা করছে সফল ও কার্যকর টিকাই একমাত্র এই ভয়াবহ রোগের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে মানুষকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারবে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@theagronews.com, theagronewsbd@gmail.com