পরিবেশ
ময়লা-বাণিজ্যে কাউন্সিলররা
লেখক
প্রথম আলো
রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহ করত এ টু জেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার। ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি এ কাজ করে। গত মার্চ মাসে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছোট ভাই ও শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি এই বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দখল করে নেয়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্বে আসেন। গত ১১ মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে আগের লোকজনকে হটিয়ে কাউন্সিলরের লোকজন ময়লা সংগ্রহের কাজ দখল করে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে প্রথম আলো।
যাঁদের হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কাউন্সিলর ও তাঁদের লোকজনের সঙ্গে ক্ষমতার দাপটে পেরে উঠছেন না তাঁরা।
২০০৯ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা আদতে কেউ মানছে না।
২০০৯ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা আদতে কেউ মানছে না। বর্তমানে বর্জ্য সংগ্রহে এলাকাভেদে বাসাপ্রতি মাসে ৮০-২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকাও আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার হোল্ডিংগুলোয় ফ্ল্যাট বা বাসার সংখ্যায় ভিন্নতা থাকে। তবে একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ৬ থেকে ৮টি করে ফ্ল্যাট বা বাসা রয়েছে বলে আমরা ধরে নিই।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, প্রতি খানায় গড়ে সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ২ জন। আর বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। সে হিসাবে ঢাকায় পরিবার রয়েছে ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪টি।
সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য সংগ্রহকারীদের তথ্য অনুযায়ী, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য পরিবহন সুবিধা নিচ্ছে রাজধানীর ৮০ শতাংশের মতো পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাট বা পরিবার থেকে ময়লা বাবদ গড়ে ১৫০ টাকা করে ধরলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে প্রায় ৫১ কোটি টাকা আদায় হয়, বছরে যা প্রায় ৬১২ কোটি টাকা।বিজ্ঞাপন
এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসেছিল দুই সিটিতে ৪৫০ কোটি টাকার মত ময়লা বাণিজ্য হয়। তখন দুই সিটির হিসাবে হোল্ডিং (স্থাপনা) ছিল প্রায় চার লাখের মতো। গত দেড় বছরে দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে নতুন অনেক হোল্ডিংকে করের আওতায় এনেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে হোল্ডিং সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার।
এর মধ্যে উত্তর সিটিতে হোল্ডিং রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার। একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ৬টি ফ্ল্যাট বা বাসা এবং মাসে প্রতিটি বাসা থেকে গড়ে ১৫০ টাকা করে আদায় ধরলে বছরে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকার বাণিজ্য করে ময়লা সংগ্রহকারীরা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর যে গৃহকর আদায় করে, তার চার ভাগের ১ ভাগ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে নগরবাসীর কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, উত্তর সিটিতে তিন হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুলশান–বনানীর মতো অভিজাত এলাকাগুলোয় চার হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গড়ে প্রতি রেস্তোরাঁয় এক হাজার টাকা ধরলে তিন হাজার রেস্তোরাঁ থেকে মাসে আদায় হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে উত্তর সিটিতে বছরে অন্তত ৩৪৪ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হচ্ছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর যে গৃহকর আদায় করে, তার চার ভাগের ১ ভাগ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে নগরবাসীর কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সিটি করপোরেশন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে না। তারা ময়লা নেয় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার–এসটিএস (বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য যেখানে জমা করা হয়) থেকে। আর বাসাবাড়ি থেকে এসটিএস পর্যন্ত ময়লা নেয় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, যা এখন মূলত কাউন্সিলরদের দখলে চলে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকরের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর বাবদ যে টাকা নেওয়া হয়, তা মূলত সড়ক ঝাড়ু দেওয়া এবং এসটিএস থেকে ল্যান্ডফিল্ডে ময়লা পরিবহনের ব্যয়। তাঁর দাবি, পরিচ্ছন্নতা বাবদ উত্তর সিটির বছরে ব্যয় প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর আদায় হয় ৫০ কোটির মতো।
অবশ্য চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। পাশের দেশ ভারতের কলকাতায় মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মীরা বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নিয়ে যান। সে জন্য বাসিন্দাদের আলাদা কোনো ফি দিতে হয় না।
জোর খাটিয়ে কাজ দখল
পশ্চিম আগারগাঁওয়ের এ টু জেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের মালিক নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চে তাঁর ময়লা নেওয়ার কাজ বেদখল হয়ে গেলে জুন মাসে তিনি থানায় জিডি করেন। সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দেন। আবেদন করেন মেয়র বরাবর। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ কে পেল, কে পেল না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণ সেবা পেল কি না, সেটা মুখ্য বিষয়।
আতিকুল ইসলাম, মেয়র. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
নাজমুল হকের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নাজমুল যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ভাই ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী। প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ময়লা সংগ্রহের কাজ করত। এলাকার বাড়ি মালিক সমিতি নিজেরা এই ময়লা সংগ্রহের কাজ করতে সিটি করপোরেশনে আবেদন করে। নাজমুলের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাড়ি মালিক সমিতি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছে।
আসাদুজ্জামানের ভাই ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন। এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু কেউ ধরেননি।
ঢাকা উত্তরের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের রানাভোলা, সিরাজ মার্কেট এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করতেন মো. শহীদ। সিটি নির্বাচনের পর স্থানীয় কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন তাঁর লোকজনকে দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করাচ্ছেন। শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। বললে এলাকায় থাকতে পারব না।’
কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ নামের লোকটিকে আমি চিনি না। আমার কাছে কখনো আসেনি।’ এলাকার লোকজন বর্জ্য নিয়ে তাঁর কাছেই অভিযোগ করে তাই আপাতত তাঁর (কাউন্সিলর) তত্ত্বাবধানেই বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।বিজ্ঞাপন

ক্ষমতার দাপটে পেরে ওঠেননি
ঢাকা উত্তরের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া এলাকার ১০ বছর ধরে বর্জ্য সংগ্রহ করত পরিবেশ বন্ধু ক্লিনিং সার্ভিস। সিটি নির্বাচনের পর লিটন সিকদার ও মো. নাসির নামের দুই ব্যক্তি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মারধর করে ময়লা সংগ্রহের কাজ দখল করে নেয়। লিটন ও নাসির কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে যুবরাজের লোক হিসেবে পরিচিত।
পরিবেশ বন্ধু ক্লিনিং সার্ভিসের সভাপতি নাগর আলী ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানালে তিনি বললেন, তোমরা অনেক দিন করছ। এখন আমার লোকজন করবে।’ এ বিষয়ে মেয়রের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন নাগর আলী।
অভিযোগের বিষয়ে লিটন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে এলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। এখন নতুন যে কাউন্সিলর হয়েছে, কাজ করতে তো তার অনুমতি লাগবে। আর যারা ময়লা নিত তারা ঠিকভাবে কাজ করত না।’ বর্তমানের পুরো ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য লিটন সিকদার সংগ্রহ করেন। দলীয় পদ না থাকলেও নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
নাগরিকদের ভোগান্তির মতো বিষয়গুলোতে সিটি করপোরেশনের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। ময়লা সংগ্রহের কাজটি করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তার কঠোর তদারকি প্রয়োজন।
আকতার মাহমুদ , সভাপতি ,বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স
কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিটন সিকদার ও মো. নাসির কেউই আমার লোক না। আমি কাউকে বলিনি ময়লার কাজ নিতে। নাগর যে অভিযোগ করেছে, সেটা মিথ্যা।’ তিনি বলেন, এখন ভ্যান সার্ভিসের জন্য টেন্ডার হচ্ছে। এতে যারা পাবে, তারাই ময়লা সংগ্রহের কাজ করবে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৬ থেকে ৮ এবং ১১ থেকে ২২ নম্বর সড়কের বর্জ্য সংগ্রহ করতেন আমীর আলী। তিনি ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তফাজ্জল হোসেন। নির্বাচনে আমীর আলী তফাজ্জল হোসেনের বিরোধী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। নির্বাচনের পরপরই আমীর আলীর কাছ থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজটি দখল করে নেয় কাউন্সিলরের লোকজন।
কাউন্সিলর তফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বা আমার লোকজন তার কাজ বন্ধ করে দেয়নি। এর মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগী কেউ আছে কি না, আমার জানা নেই।’
নারী কাউন্সিলরের কাজ দখলে নিলেন পুরুষ কাউন্সিলর
২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ময়লা সংগ্রহের কাজ করত দুস্থ মানুষের কথা (ভিওডি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি উত্তর সিটির সংরক্ষিত ২৯, ৩০ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর শাহীন আক্তারের। এই ওয়ার্ডটি মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, জয়েন্ট কোয়ার্টার (আজিজ মহল্লা), হাজি চিনু মিয়া রোড (টিক্কাপাড়া) ও জান্নাতবাগ (বিজলি মহল্লা) নিয়ে গঠিত।
গত নির্বাচনে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন সলিম উল্লাহ্ ওরফে সলু। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় ময়লা নেওয়ার কাজটি দখলে নেন তিনি। গত অক্টোবর থেকে কাউন্সিলরের প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থা (স্বমকস) ময়লা সংগ্রহের কাজ করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ্ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি। ওয়ার্ডের সচিব ইফতেখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ্ বড় ভাই এম এ ওয়াদুদ। ওয়াদুদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলরের উপদেষ্টা।

কেন দখল-বেদখল
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, যাঁরা বাসা থেকে প্রতিদিন ময়লা সংগ্রহ করেন তাঁদের মাসিক বেতন কমবেশি ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর আছে ভ্যান খরচ। যেমন কোনো কাউন্সিলর বা তাঁর লোকজন যদি ২ হাজার ফ্ল্যাটের ময়লা সংগ্রহ করেন আর ১৫০ টাকা করে মাসে আদায় করেন তাহলে তাঁর মাসিক আয় ৩ লাখ টাকা। এর জন্য ৪-৫টি ভ্যানগাড়ি আর ৮ জন কর্মী লাগবে। তাঁদের বেতন ও সামান্য ভ্যান খরচ বাদ দিলে বাকি টাকা লাভ। তিন ভাগের এক ভাগে খরচ ধরলেও মাসে লাভ ২ লাখ টাকা।
উত্তর সিটিতে ৩৪৪ কোটি টাকার যে বাণিজ্য, তা হয় মাত্র ৫৪টি ওয়ার্ডে। বছরে প্রতি ওয়ার্ডে ময়লার ব্যবসার পরিমাণ গড়ে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। ফলে ময়লা নিয়ে সামনে আরও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ
এ অবস্থায় নতুন নিয়মে দরপত্রের মাধ্যমে একটি ওয়ার্ডে একটি প্রতিষ্ঠানকে ময়লা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়ার পথে যাচ্ছে উত্তর সিটি। প্রতিটি বাসার মাসিক ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। উত্তর সিটির বোর্ড সভায় গত ২১ ডিসেম্বর এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ কে পেল, কে পেল না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণ সেবা পেল কি না, সেটা মুখ্য বিষয়। কিছু ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সফলতা পেলে অন্য ওয়ার্ডে তা চালু করা হবে। নির্ধারিত ফির বেশি নিলে জনগণ অ্যাপের মাধ্যমে জানাতে পারবে। বেশি টাকা নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত তাঁদের অভিযোগ, বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে দিতে সিটি করপোরেশন এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। দরপত্রে অংশ নিতে আবেদনপত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করার এমন সন্দেহ পোক্ত হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এই নিয়মে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চালু হয়েছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডে কাজ পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও কাউন্সিলরের লোকজন। এসব প্রতিষ্ঠানকে দোকানপ্রতি ৩০ টাকা এবং বাসাবাড়ি থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকায় ইচ্ছেমতো টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের ভোগান্তির মতো বিষয়গুলোতে সিটি করপোরেশনের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। ময়লা সংগ্রহের কাজটি করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তার কঠোর তদারকি প্রয়োজন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা


শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

বেদানা খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সব্বার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখের মধ্যে দিলেই, সুমিষ্ট রোষে মন উতলা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে অত্যন্ত বলবর্ধক এই ফল, রুগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। বাজারেও এর চাহিদা থাকায়, এই ফলের চাষ বহুল পরিমাণে আমাদের রাজ্যে হয়। তবে বাড়ির ছাদে এই ফলের চাষ নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সহজে, বুদ্ধিমত্ততার প্রয়োগে এই ফলের চাষ বাড়িতেও করা যায়। অনেকেই বাড়ির ছাদে ইদানিং এই ফলের চাষ নিয়ে মেতে উঠেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাড়ির ছাদে বেদনা চাষের সহজতম পদ্ধতি। যা শিখে আপনি আপনার পাড়া-পড়শীকেও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>ছাদে বেদানার চারা লাগানোর জন্য প্রথমে ভালো মানের টব সংগ্রহ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য টবের তলায় তিন থেকে চারটি ফুটো করে নিয়ে সেগুলি স্টোন চিপস দিয়ে ভালোভাবে বুজিয়ে দিতে হবে। ছাদে রোদ পড়ে এমন জায়গায় ডালিমের টবটিকে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি কালে বেলে দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে টবে জল দিয়ে প্রায় ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। পনেরটা দিন কাটলে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ এরকম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরেই লক্ষ্য করা যাবে টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে আসবে। ঠিক সেইসময় বেদানার কলমের চারা টবে পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, সোজা করে বসিয়ে যেন বেদানার চারা রোপণ করা হয়। সরু লাঠি দিয়ে চারাটিকে এরপর বেঁধে দেওয়া উচিত। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। পরবর্তী কালে জল দেওয়ার পরিমাণ চারাতে বাড়াতে হবে। গাছের গোড়ায় কখনোই যাতে জল না জমে তাতে নজর রাখা উচিত।
বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪-৫ মাস হয়ে গেলে, এক মাস অন্তর সরিষার খোল পচা জল গাছে দেওয়া উচিত। সরিষার খোল ১০ দিন ভালো রূপে জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেই পচা খোলের জল হালকা ভাবে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে নিতে হবে। টবের কিছুটা মাটি ১ বছর হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। মাটি যখন বদলাতে হবে সেই সময়কাল বর্ষার শেষ ও শীতের আগে যাতে হয় তাতে খেয়াল রাখা উচিত। মাঝে মধ্যেই টবের মাটি খুঁচিয়ে উল্টে পাল্টে দেওয়া উচিত।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>সার প্রয়োগ (Fertilizer)
বেদানার চারা বসানোর আগেই টবে দেওয়া মাটির গর্তে সার দিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই । গর্ত করার ৮-১০ র প্রয়োগ করা উচিত, এতে গাছের ফলনের মান উন্নত হবে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে বেদনা গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গর্ত
কম্পস্টের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ১০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ গ্রাম
১ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম এবং পটাশ সার ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। ওই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে মে- জুন মাসে এবং দ্বিতীয় বারে সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ: (Harvest)
৩-৪ বছর বয়স থেকেই বেদনা গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল পাকতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি বর্ণ নিলেই ফল পেড়ে নিতে হবে। ফল গাছে বেশিদিন থাকলেই তা ফেটে যেতে পারে। বেদনার খোসা অত্যন্ত শক্ত হওয়ার জন্য এই ফল অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।
ফলন:(Yield)
চার-পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই ডালিম গাছ ফল দিতে শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো প্রথম দিকে এই গাছ ভালো ফলন দেয় না। গাছের বয়স ৮ থেকে১০ বছর হয়ে গেলেই পরিপুষ্ট ডালিম গাছে আসতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ডালিম গাছের ফলনও বেড়ে যায়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটা বেদনা গাছ কম করে ২০০ টির মতন ফল দিতে পারে। কম করে ৩০ বছর বেদনা গাছ অত্যন্ত ভালো মানের ফলন দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন