বিশ্ব
নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন যে মুসলিম প্রিন্সেস
লেখক
আর টিভি অনলাইন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন এবং শেষপর্যন্ত নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ১৮ শতকে মহীশুরের মুসলিম শাসক টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়াত খান কয়েক দশক ধরে অজানাই রয়ে গিয়েছিলেন।
তবে ২০০৬ সালে লেখক শ্রাবণী বসু নূরের জীবনী ‘স্পাই প্রিন্সেস’ লেখার পর যুদ্ধে তার অবদানের বিষয়টি সামনে আসে।
ফ্রান্সে স্পেশাল অপারেশন্স এক্সিকিউটিভ (এসওই) হিসেবে তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন এজন্য প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে চলতি বছর তাকে ব্লু প্লাক সম্মানে ভূষিত করে ব্রিটেন। নাৎসি জার্মানির আনুষ্ঠানিক গুপ্ত পুলিশ গেস্টাপোর হাতে তিনি প্যারিসে ধরা পড়েন এবং তাকে জার্মানিতে নিয়ে গিয়ে ১৯৪৪ সালে হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালে তার সম্মানে একটি স্ট্যাম্প ইস্যু করা হয়। এমনকি খুব শিগগিরেই ব্রিটিশ মুদ্রায় তার চেহারা অঙ্কিত হতে পারে এমন খবরও সামনে আসে।
তার বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার জন্য নূরকে ১৯৪৯ সালে মরণোত্তর যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার জর্জ ক্রস এবং ১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের দেয়া সামরিক সম্মান ফ্রেঞ্চ ক্রিক্স ডি গুয়েরে ভূষিত করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনজন নারী ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২ অক্টোবর আ কল টু স্পাই নামে একটি বায়োপিক মুক্তি পায়। ওই বায়োপিকে নূরের জীবনও তুলে ধরা হয়, যিনি একাধারে শিশু গল্প লেখক এবং শান্তিবাদী ছিলেন।
ওই ফিল্মে নূরের চিত্রে অভিনয় করেছেন রাধিকা আপ্তে। লন্ডন থেকে তিনি আল জাজিরাকে বলেন, আমি মনে করি যে নূর ইনায়েত খান আমার জানাশোনা লোকদের মধ্যে অন্যতম অসাধারণ মানুষ।

নেট ফ্লিক্স সিরিজ লাস্ট স্টোরিজ নামে জনপ্রিয় একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করা, যেটির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অ্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছেন রাধিকা, বলেন, তিনি শান্তবাদী হওয়ার মতো ইন্টারেস্টিং এক মুহূর্তে ছিলেন এবং কিছু না করে তার নিষ্ক্রিয় থাকার চেষ্টা যুদ্ধের পরিণতির জন্য হতে পারে।
২০১২ সালে নূরের নামে একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা করেন শ্রাবণী। তিনি লন্ডন থেকে আল জাজিরাকে বলেন, নূরকে যুদ্ধে লড়াই না করলেও হতো তবে তিনি ‘অহিংসা, ধর্মের সার্বিকতা, ফ্যাসিবাদ এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে’ লড়াইয়ের মূল নীতিগুলোর জন্য এটি করেছিলেন।
যুদ্ধের আগে নূর সাধারণত শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতেন এবং বড় হয়ে শিশুদের গল্পের লেখক হয়ে ওঠেন। তিনি স্থানীয় ফরাসি রেডিও এবং ম্যাগাজিনে নিয়মিতভাবে কন্ট্রিবিউটিং করে যাচ্ছিলেন।
তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- বুদ্ধের পুনর্জন্ম নিয়ে ইংরেজি অনুবাদ গল্প সংকলন ‘টুয়েন্টি জাতকা টেলস’।
‘অন্তর্নিহিত নিঃস্বার্থ’
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নূর। তার বাবা ছিলেন ইনায়েত খান, একজন সংগীতশিল্পী এবং সুফি প্রচারক এবং মা আমিনা বেগম (আগে নাম ছিল- ওরা রে বাকের)। ওই বছর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের পরিবার ইংল্যান্ডে চলে যায়।
ভারতপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ব্রিটিশদের অব্যাহত নজরদারি মধ্যে ১৯২০ সালে পরিবারকে প্যারিসে পাড়ি জমান ইনায়েত। সেখানে তার তিন ছোট ভাইবোনের সঙ্গে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত বেড়ে ওঠেন নূর। তার পরদাদা টিপু সুলতান ১৭৯৯ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিহত হন।
১৯৪০ সালে নাৎসিরা ফ্রান্স দখল করার পর হঠাৎই থমকে যায় নূরের জীবন। তখন অন্যান্য হাজার হাজার ফরাসি বাসিন্দার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি ব্রিটেন পালিয়ে যান।
ব্রিটেন পৌঁছেই যুদ্ধ প্রচেষ্টা যোগ দেন নূর। যুক্তরাজ্যের রয়েল এয়ার ফোর্সের নারী সহায়ক উইং উইমেন্স অক্সিলারি এয়ার ফোর্সে একজন ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে যোগ দেন তিনি। শ্রাবণীর ভাষায় এ কাজে বেশ সিদ্ধহস্ত ছিলেন নূর।
স্পাই প্রিন্সেসে শ্রাবণী লিখেন, ইহুদিদের বিরুদ্ধে নাৎসিদের মতাদর্শ এবং তাদের কর্মকাণ্ড নূর তার বাবার কাছ থেকে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও নীতির শিক্ষা পেয়েছিলেন সেগুলোর বিরোধী ছিল। তিনি জন্মগতভাবে মুসলিম ছিলেন কিন্তু ভালোবেসেছিলেন একজন ইহুদি পুরুষকে। কিন্তু যুদ্ধে কিছু একটা করার তাগিদ বোধ করেছিলেন নূর।

নূরের বাবা ইনায়েত একজন সুপরিচিত সুফি প্রচারক। এটি ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ধারা।
শ্রাবণীর ভাষায় ইনায়েত অহিংসা এবং সব ধর্মের একত্বের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন, আর বড় হতে হতে এই শিক্ষাই পেয়েছেন নূর। ১৯২৭ সালে এক ভ্রমণের সময় ভারতে মারা যান ইনায়েত। পরে ১৩ বছর বয়সী নূরকে তার ছোট ভাইবোনকে মায়ের সঙ্গে মিলে দেখভালের দায়িত্ব কাঁদে তুলে নিতে হয়।
নূরের ভাতিজা এবং ইনায়েতি অর্ডারের নেতা পীর জিয়া ইনায়েত খান আল জাজিরাকে বলেছেন, খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি অত্যন্ত স্বার্থহীন এবং আত্মত্যাগী হয়ে উঠেছিলেন। তার পরিচয় যাই হোক না কেন নূর সবসময়ে নিপীড়িতের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন পীর জিয়া।
তিনি বলেন, নূর নিপীড়িতদের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ না হয়েও তাদের পক্ষে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতার পক্ষেও দাঁড়াতেন।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অবসানের জন্য ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা মহাত্মা গান্ধীর সংগ্রামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন নূর। স্পাই প্রিন্সেসের মতে, যুক্তরাজ্যের সেনা নিয়োগকারীদের নূর বলেছিলেন যে- যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে তিনি ব্রিটেনের উপর ভারতকে সমর্থন করতে পারেন।
‘কাজের জন্য যোগ্য ছিলেন’
ইউরোপে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনে সহায়তা করতে গুপ্তচর পাঠায় ব্রিটিশ একটি গুপ্ত সংস্থা। ওই গুপ্ত সংস্থা স্পেশাল অপারেশন্স এক্সিকিউটিভ (এসওই) দ্বারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ফরাসি ভাষায় সাবলীল নূর।
কাজ যে কতটা বিপজ্জনক এবং এজন্য ক্ষতিপূরণ যৎসামান্য পাবেন জেনেও তাৎক্ষণিক এসওই-র প্রস্তাব গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৪৩ সালের জুন মাসে ‘মেডেলিন’ কোড নামে নূরকে ফ্রান্সে পাঠায় ব্রিটেন। তিনিই প্রথম নারী ওয়্যারলেস অপারেটর যাকে ফ্রান্সে মোতায়েন করেছিল ব্রিটেন। লে ম্যান্স শহরে প্রবেশের পর সেখানে থেকে প্যারিস যান নূর। সেখানে গিয়ে ফ্রেঞ্চ প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক ‘প্রোসপার’র সঙ্গে কাজ করেন তিনি।
তাকে মোতায়েনের কয়েকদিন মধ্যেই প্রোসপারের সব উচ্চ পদস্থ এজেন্ট নাৎসিদের হাতে ধরা পড়ে। নাৎসিরা তাদের ওয়্যারলেস জব্দ করে। ফলে পরবর্তী কয়েক মাস ফিল্ডে তিনি একমাত্র অপারেটর হিসেবে থেকে যান।
আপাতদৃষ্টিতে তার এক সহকর্মীর বিশ্বাসঘাতকতার পর একই বছরের অক্টোবরে গেস্টাপো তাকে বন্দি করে এবং এক মাস পরে জার্মানি নিয়ে যায়।
বইয়ে বলা হয়েছে, গেস্টাপো নূরকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বন্দি হিসাবে বিবেচনা করতো, কেননা তিনি জার্মানদের কাছে কোনও তথ্য দেননি এবং তাদের নজরদারির থেকে দুইবার পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন।

তার প্রায় এক বছরের বন্দিদশায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে তাকে কার্লসরুহে দাচাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আরও তিন এসওই এজেন্টের সঙ্গে নূরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
স্পাই প্রিন্সেসের মতে, ১৯৫২ সালে নূরের জীবনী লেখক ও বন্ধু জ্যঁ ওভারটন ফুলারকে প্যারিসে নূরকে জিজ্ঞাসাবাদকারী আর্নস্ট ভোগট্ বলেছিলেন, তিনি কখনও নূরের মতো কাউকে দেখেননি এবং ‘তার সাহস, সাহসিতকা ও দয়া’ প্রশংসা করেছেন।
তিনি (ভোগট্) একবার নূরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে তিনি তার জীবন নষ্ট এবং ত্যাগ বৃথা যাচ্ছে কিনা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি তার দেশের সেবা করেছেন এবং এটাই তার প্রতিদান।
ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পাচ্ছেন
রাধিকা আল জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধে নারীর অবদান সম্পর্কে খুব একটা আলোচনা হয় না এজন্য তিনি আ কল টু স্পাইয়ের জন্য সাইন আপ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি যখন আমরা যুদ্ধের বিষয়ে কথা বলি, তখন আমরা প্রায়ই পুরুষদের নিয়ে কথা বলি এবং নারীদের লড়াই এবং প্রচেষ্টা নিয়ে কিছু বলি না।
নূরের কাজের স্বীকৃতি ছাড়াই এতগুলো দশক পার হয়ে গেছে। তবে এখন তার গল্প নিয়ে মানুষজনের আগ্রহ বাড়ছে।
শ্রাবণীর নেতৃত্বে একটি প্রচারণার জেরে গত আগস্টে প্রথম দক্ষিণ এশীয় নারী হিসেবে ব্লুমসবারিতে যেখানে থাকতেন নূর, সেখানে মর্যাদাপূর্ণ ব্লু প্লাক তার ফলক লাগানো হয়। সম্মানটি হলো একটি লন্ডন প্রকল্প যেখানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির ফলক ওই ব্যক্তি কাজ বা বাস করতেন এমন ভবনের কাছে লাগানো হয়।
শ্রাবণী বলেন, সাহসিকতার এবং নিজের নীতির পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তিনি এই সম্মানের অধিকারী। তিনি কখনই চাপের মুখে নতি স্বীকার করেননি। ২০১২ সালে লন্ডনে নূরের একটি স্ট্যাচু উন্মোচন করেন প্রিন্সেস অ্যান। যুদ্ধের বীরদের সম্মানে তিনি এমনটা করেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই লেখক বলেন, নূর এবং ব্রিটিশ উপনিবেশের লাখ লাখ মিত্রের সাহায্য ছাড়া এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব হতো না এটা উপলব্ধি করা জরুরি, যদিও প্রায়ই এটা এড়িয়ে যাওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ এবং কালো বর্ণের মানুষদের অবদানকে খুব কমই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু যখন ডানপন্থী সরকারের অধীনে জাতিগত সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তখন এটা জরুরি।
শ্রাবণী বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে ব্রিটেন একাই এই যুদ্ধ জিতেছে, চার্চিল তাদের জয় এনে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের জানা দরকার যে ভারতীয় উপমহাদেশের ২৫ লাখ মানুষ এই যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হয়ে এগিয়ে এসেছিল।
ভিক্টোরিয়া এবং আবদুল নামে আরেকটি বই লেখা শ্রাবণী, যে গল্পের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র হয়েছিল, বলেন, এসব ভারতীয়দের পিঠে চড়েই জয় অর্জিত হয়েছিল এবং নূরও তাদের অংশ ছিলেন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কোটি ডলার ব্যয়ে প্রচারণা, নতুন জাতের এই আপেল কি বিশ্ব বাজার দখল নিতে পারে?
-
খুনি হ্রদ, যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না
-
নভেম্বরে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চন্দ্রগ্রহণ
-
‘দশ বছরের মধ্যে বিশ্বে খাদ্যের দাম সর্বোচ্চ’
-
মাত্র ১৪ মাসেই সম্পূর্ণ কোরআনের ক্যালিগ্রাফি
-
দেশে পাওয়া যাচ্ছে উইন্ডোজ ১১
-
এক কুমড়ার ওজন ৩১ মণ!
-
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিষ্টি কুমড়া ইতালির
-
মহাকাশচারী হতে কাজ করছেন জোনাক
-
তালেবান শাসনে বিপুলহারে বেড়েছে গাঁজার চাষ


চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন