বাংলাদেশ
ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদনে বাকৃবি গবেষকদের সফলতা

লাইন ব্রিডিং কৌশলের মাধ্যমে দেশীয় সুস্বাদু ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন ও জাত উন্নয়নে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘ তিন বছরের গবেষণায় মাৎস্যজ্ঞিান অনুষদের বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.কে. শাকুর আহম্মদ এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান এ সফলতা অর্জন করেন।
কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও ন্যাশনাল এগ্রো টেকনোলজি ফেইজ-২ এর আর্থিক সহায়তায় গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদীয় চেম্বারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
লাইন ব্রিডিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একটি মাছকে তার বংশধরদের সঙ্গে ক্রস করানো হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একটি পুরুষ মাছকে অনেকগুলো মহিলা মাছের সঙ্গে প্রজনন ঘটানো হয়। লাইন ব্রিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টকের মধ্য থেকে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাগনা মাছ আবিষ্কার করে পরবর্তী জেনারেশনে বংশধরদের মাঝে তাদের জিনগত অবদান বাড়ানো যায়। যা ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে সহায়ক। পাশাপাশি বিভিন্ন লাইনের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্রতা রক্ষা করা যায়। ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে লাইন ব্রিডিং একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
ভাগনা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম (Labeo ariza, Hamilton 1807)। ছোট কার্প জাতীয় মাছগুলোর মধ্যে ভাগনা একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশের আত্রাই, যমুনা, কংস, ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে এই মাছটি পাওয়া যায়।
ভাগনা মাছটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন ভাংগন বাটা, ভাগনা, ভাংগন, ভাগনা বাটা ইত্যাদি। মাছটি আকারে ৩০ সেমি এবং ওজনে প্রায় ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এরা পুকুরের তলার খাদক। কম বয়সে এরা জুওপ্ল্যাংটন এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব খাবারই খায়। বর্তমান মাছটির বাজারমূল্য ৫০০টাকা কেজি।

ভাগনা মাছটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট রয়েছে। তাই এরা খেতে অনেক সুস্বাদু। অতীতকাল থেকেই ভাগনা মাছটি বাংলার মানুষের কাছে একটি স্বাদের মাছ হিসেবেই পরিচিত।
বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ভাগনা মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে অধিক পরিমাণে আহরণ, বাসস্থান ধ্বংস এবং ইকোলজিক্যাল পরিবর্তনের কারণে এই মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভাগনা মাছ ৬০ দিন চাষের পর মাত্র ৩ গ্রাম ওজন লাভ করে। ভাগনার গ্রোথ প্যাটার্ন খুব ধীর প্রকৃতির। প্রাকৃতিক উৎসের ভাগনা মাছের গ্রোথ বদ্ধ উৎসের মাছের চেয়ে ভালো।
এই গবেষণায় বাংলাদেশের তিনটি নদী আত্রাই (দিনাজপুর), কংস (ময়মনসিংহ) এবং যমুনা (সিরাজগঞ্জ) থেকে প্রাকৃতিক ভাগনা মাছের পোনা জেলেদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদেরকে লালন পালন করে গোনাডাল ম্যাচুরেশনকে ত্বরান্বিত করা হয়। এরপর লাইন ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ভাগনা মাছের উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা হয়। গবেষণায় ৬টি লাইন তৈরি করা হয়। এরমধ্যে লাইন-৪ (কংস ও আত্রাই) এর দৈর্ঘ্য ও ওজন সবচেয়ে বেশি পাওযা যায়। বর্তমানে লাইন-৪ থেকেই উন্নতজাতের মা মাছ তৈরি করা হচ্ছে।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ.কে. শাকুর আহম্মদ বলেন, লাইন ব্রিডিং কৌশলে ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন এটিই বাংলাদেশে প্রথম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভাগনা মাছকে সংরক্ষণ ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উচ্চ গুণসম্পন্ন পোনা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই মাছটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভবিষতে অধিক সংখ্যক পোনা উৎপাদন করে দেশের উন্মুক্ত জলাশয় বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া এই চলমান গবেষণা সম্পন্ন হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারিতে এ মাছ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এগ্রোবিজ
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
এগ্রোবিজ
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
জৈব
জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
এগ্রোবিজ
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছাদকৃষি
সহজ পদ্ধতিতে টবে করুন কদবেল চাষ

ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন