বিশ্ব
যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: কৃষ্ণাঙ্গদের যেভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়
লেখক
বিবিসি বাংলা
সেলমা, অ্যালাবামা, ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৬৫। ডালাস কাউন্টির কোর্টহাউসে ভোটার হিসেবে নাম লেখাতে এসেছেন অ্যানি লী কুপার।
শুধু তিনি নন, লাইনে দাঁড়িয়ে আরও বহু কালো মানুষ। তারা সবাই ভোটার হতে চান।
অ্যালাবামা রাজ্যে ভোটার হওয়ার জন্য এটিই অ্যানি লী কুপারের প্রথম চেষ্টা নয়। এর আগেও তিনি বহু বার এই কাউন্টি অফিসে এসেছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন।
“একদিন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও নাম লেখাতে পারিনি,” জানিয়েছিলেন তিনি।
সেলমা শহরের প্রায় অর্ধেক লোক ছিল কৃষ্ণাঙ্গ, কিন্তু তাদের মধ্যে তখন ভোটার হতে পেরেছিল মাত্র এক শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন তখন তুঙ্গে, মার্টিন লুথার কিং সারাদেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তার অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে।
তাদের মনোযোগ এবার নিবদ্ধ সেলমায়। সেখানে কালোদের সংগঠিত করতে কাজ করছে কয়েকটি সংগঠন। লোকজনকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করছে তারা।
উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের ২৫শে জানুয়ারি সকালে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বহু কালো মানুষ গিয়ে লাইন দিলেন ডালাস কাউন্টির অফিসে।
কিন্তু আগের বহুবারের মতো, এবারো অ্যানি লী কুপার এবং তার সঙ্গীদের ব্যর্থ হতে হলো। শহরের শেরিফ জিম ক্লার্ক তাদের নির্দেশ দিলেন সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। শেরিফ ক্লার্ক তার হাতের লাঠি দিয়ে গুতো দিলেন অ্যানি লী কুপারের ঘাড়ে।
এবার যেন অ্যানি লী কুপারের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। মূহুর্তের ঘুরে কষে ঘুষি মারলেন শেরিফের চোয়ালে। সেই ঘুষিতেই মাটিতে পড়ে গেলেন জিম ক্লার্ক।
এরপর সেদিন এই কোর্ট হাউসে যা ঘটেছিল, তা ইতিহাস হয়ে আছে। মার্টিন লুথার কিং এর জীবনকাহিনী নিয়ে তৈরি অস্কার বিজয়ী বিখ্যাত ছবি সেলমা-তে এই দৃশ্যে অ্যানি লী কুপারের ভূমিকায় অভিনয় করেন মার্কিন শো বিজ তারকা অপ্রা উইনফ্রে।
অ্যানি লী কুপারকে এরপর সেদিন মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়। তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাউন্টি শেরিফের অফিসে কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা আনতে চেয়েছিল।
আর এসব কিছুই ঘটেছিল অ্যানি লী কুপার ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে চেয়েছিলেন বলে। এটি ঘটছিল এমন এক দেশে, যে দেশটি তখনো এবং এখনো পরিচিত গণতান্ত্রিক বিশ্বের একনম্বর দেশ হিসেবে।
‘দ্য ব্লাডি সানডে’

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সেলমা এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে আছে।
ভোটার হওয়ার জন্য জানুয়ারির ব্যর্থ চেষ্টার পর সেখানে এক গণমিছিলের কর্মসূচি নেয়া হয়। এই মিছিল যাবে সেলমা থেকে অ্যালাবামা রাজ্যের রাজধানী মন্টোগোমারি। পথের দূরত্ব ৫৪ মাইল।
উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের ৭ই মার্চ মিছিল শুরু হলো সেলমার এক চার্চ থেকে। ছয়শোর মতো কৃষ্ণাঙ্গ নারী-পুরুষ সেই মিছিলে।
অ্যালাবামার গভর্নর জর্জ ওয়ালেস এরই মধ্যে এই মিছিলকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে মিছিলে বাধা দেয়ার জন্য।
পঁচিশ বছর-বয়সী জন লুইসের নেতৃত্বে মিছিল পৌঁছালো একটি ব্রীজের ওপর। ব্রিজের অপর পাশে পুলিশ প্রস্তুত। সঙ্গে আছে ঘোড় সওয়ার বাহিনীও।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের এটি এক যুগান্তকারী মূহুর্ত। সেদিন এই ব্রীজের ওপর যা ঘটেছিল, তা স্মরণীয় হয়ে আছে ব্লাডি সানডে নামে।
জন লুইসের নেতৃত্বে ব্রীজের ওপর দিয়ে মিছিল যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ব্যাটন হাতে দ্রুত ধেয়ে এলো রাজ্য পুলিশ। তাদের ওপর চালিয়ে দেয়া হলো ঘোড়া। আহত হলো বহু নারী-পুরুষ। তাদের রক্তাক্ত আহত মুখের ছবি দেখলো গোটা দেশের মানুষ।
পুরো ঘটনাটি ঘটেছিল সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে। টেলিভিশনের পর্দায় গোটা পৃথিবী দেখলো, আমেরিকায় ভোটের দাবিতে মিছিল করা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর কিভাবে নিষ্ঠুরভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশ।
কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকারের দাবি যেন এবার জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হলো।

যেভাবে বাদ দেয়া হতো ভোটার তালিকা থেকে
ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে কেউ ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে গেছেন। রাজ্য নির্বাচন অফিসের কেরানি তাকে বললেন, “সংবিধানের এই ধারাটির ওপর একটি রচনা লিখে আনুন। তারপরই আপনাকে ভোটার করা হবে।”
এই ব্যক্তির ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? নেই বললেই চলে।
কোন দেশের ভোটাররাই দেশের সংবিধান মুখস্থ রাখেন না। সংবিধান যে ভাষায় লেখা হয়, তার মর্ম সাধারণের পক্ষে উপলব্ধি করাও কঠিন। এর অনেক রকম ব্যাখ্যা থাকে। সেই ব্যাখ্যা দিতে পারেন ঝানু সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে এমন নানা রকম নিয়মই চালু করা হয়েছিল। এসব নিয়মের লক্ষ্য ছিল মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী তার এরকম এক অভিজ্ঞতার কথা রেকর্ড করে গেছেন ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন মিসিসিপির সেন্টার ফর ওরাল হিস্ট্রি এন্ড কালচারাল হেরিটেজে।
উনিশশো বাষট্টি সালে ফ্যানি লো হেমার গিয়েছিলেন মিসিসিপির ইন্ডিয়ানোলা শহরের কাউন্টি ক্লার্কের অফিসে ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে। তাকে রাজ্যের সংবিধানের একটি অংশের ওপর প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়েছিল।
“সেটা ছিল অসম্ভব। এই সংবিধান কি, সেটাই তো আমি বুঝি না। আর আমাকে বলা হচ্ছে সেটা ব্যাখ্যা করতে,” বলেছিলেন তিনি।
সেদিন বাড়ি ফেরার পর ফ্যানি লো হেমার নানা রকমের হুমকির মুখে পড়লেন। ভোটার হওয়ার আবেদন প্রত্যাহারের জন্য তার ওপর চাপ দিলেন বাড়িওয়ালা। নইলে তাকে বাড়ি ছাড়তে হবে।
সেই রাতেই বাড়ি ছাড়লেন তিনি।
ভোটার হতে গেলে এরকম নানা বাধা-বিপত্তি আর হুমকির মুখে পড়তে হতো কৃষ্ণাঙ্গদের। যেসব নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল দিয়ে তাদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখা হতো সেগুলো মূলত তৈরি করতো প্রতিটি রাজ্য নিজের মতো করে। এই আইনগুলো পরিচিত ‘জিম ক্রো’ আইন নামে।

জিম ক্রো আইন মানে কী?
কেন এসব আইনকে জিম ক্রো আইন বলা হয়, তারও একটা ইতিহাস আছে। এক শ্বেতাঙ্গ কমেডিয়ান এক কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের চরিত্র নিয়ে বানিয়েছিল একটি কমেডি। কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে তৈরি সেই কমেডির চরিত্রটির নাম ‘জিম ক্রো।’ শ্বেতাঙ্গদের কাছে এই ‘জিম ক্রো’ হয়ে উঠলো কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের প্রতীক।
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের পর দাস প্রথা যখন বিলুপ্ত হলো, তখন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিত্য নতুন আইন-কানুন জারি করতে লাগলো কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার হরণের জন্য।
ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে গেলে ফ্যানি লো হেমারকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ওপর প্রবন্ধ লিখে আনতে। কাউকে দিতে হতো স্বাক্ষরতার পরীক্ষা। ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা। কোন কোন রাজ্যে বসানো হয়েছিল ‘পোল ট্যাক্স’ বা ‘ভোট কর’। এসব নিয়ম যেন করাই হয়েছিল কালোদের বাদ দেয়ার জন্য।
জিম ক্রো যুগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের অনেকের অভিজ্ঞতাই এরকম।
রাজ্য কর্তৃপক্ষের সক্রিয় সহযোগিতায় এসব কাজ চলতো। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের ভয়ভীতি, সহিংসতা এবং সামাজিক চাপ দিয়ে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো। আর নির্বাচনের দিন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপ ক্লু ক্লাক্স ক্লানের সদস্যরা ঘুরে বেড়াতো, যাতে কৃষ্ণাঙ্গরা ভোট দিতে না পারে।
উনিশশো বাষট্টি সালে মিসিসিপিতে যত কালো মানুষ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত, তাদের মাত্র পাঁচ শতাংশ ছিল ভোটার। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের একটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মিসিসিপির ১১টি কালো সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্টিতে একজনও কালো ভোটার নেই। একই চিত্র ছিল দক্ষিণের বেশিরভাগ রাজ্যে।

মার্কিন সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের হিসেবে, ১৯৪০-এর দশকে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে মাত্র তিন শতাংশ কালো লোক ভোটার ছিল।
মার্কিন সংবিধানের দুর্বলতা
যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টির ইতিহাস অনেক পুরোনো।
দেশটির ক্ষমতাবানরা শুরু থেকেই ভোটাধিকার কেবল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বাকীদের এ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা গণতন্ত্রে তাদের আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তারা ভোটাধিকারের ওপর মারাত্মক সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কে ভোট দিতে পারবে আর কে পারবে না, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব মার্কিন সংবিধানে ছেড়ে দেয়া হয় রাজ্যগুলোর ওপর। এটিকে মার্কিন সংবিধান এবং গণতন্ত্রের একটি বড় দুর্বলতা মনে করা হতো।
অষ্টাদশ শতকের শেষে যখন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নিরীক্ষা শুরু করে, তখন সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশকেই কেবল ভোটাধিকার দেয়া হয় – শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভুস্বামীদের।
অনেক রাজ্যে আইন করা হয়, কেবল খ্রিষ্টানরাই ভোটার হতে পারবে, অন্য ধর্মের লোক নয়। এজন্যে ধর্মীয় পরীক্ষাও চালু করা হয়।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে, বিভিন্ন রাজ্যে যে নতুন নিয়ম করা হতে থাকে, সেখানে ভোটার হওয়ার পূর্ব শর্ত হিসেবে জমির মালিক হতেই হবে বলে যে নিয়ম, সেটা তুলে দেয়া হয়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পর্যন্ত মেয়েরা ভোট দিতে পারতো যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটা রাজ্যে। বহু বছর ধরে আন্দোলনের পর ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৯তম সংশোধনীর মাধ্যমে সব রাজ্যে মেয়েদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলো।
কিন্তু এত কিছুর পরও কৃষ্ণাঙ্গরা হয়ে রইলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও যেন সবচেয়ে বড় এক নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।

১৯৬৫: ভোটিং রাইটস এ্যাক্ট
সেলমার আন্দোলন যেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাধিকার আন্দোলনে নতুন গতি আনলো। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ১৯৬৪ সালেই পাশ হয়ে গেছে সিভিল লিবার্টিজ এ্যাক্ট। কিন্তু মার্টিন লুথার কিং এবং আন্দোলনের অন্যান্য নেতাদের উপলব্ধি হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন অধিকারেরই সুরক্ষা আসলে নেই।
প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসনের প্রশাসন প্রচন্ড চাপের মুখে পড়লেন দ্রুত কংগ্রেসে বিল আনার জন্য।
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ১৯৬৫ সালে ভোটিং রাইটস আইন পাশ করলো। এই ভোটে উভয় দলই সমর্থন দিয়েছিল।
সেনেটে বিলটির পক্ষে ৭৯ জন এবং বিপক্ষে ১৮ জন ভোট দেয়। হাউসে ৩২৮ জন পক্ষে এবং ৭৪ জন বিপক্ষে ভোট দেয়।
প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ৬ই আগস্ট আইনটিতে স্বাক্ষর করেন। তার পাশে ছিলেন মার্টিন লুথার কিং এবং রোজা পার্কসের মতো সিভিল রাইটস আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা ।
আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো যেসব আইন-কানুন বিধি বিধান দিয়ে, কংগ্রেসের এই আইন শুধু সেগুলোই বাতিল করে দিল না, একই সঙ্গে এই সংবিধানে বলা হলো, ভবিষ্যতে যদি রাজ্যগুলো ভোটাধিকার সীমিত করতে কোন আইন করতে চায়, সেটি তাদের আগে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে (ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস) পূর্বানুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। এই বিধানটি খুবই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
ভোটিং রাইটস এ্যাক্টের পর আফ্রিকান-আমেরিকানদের সামনে যেন এক বন্ধ দরোজা খুলে গেল। কেবল ১৯৬৫ সালেই দশ লাখ আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটার তালিকায় নাম লেখালেন।
ষাটের দশক শেষ হওয়ার আগে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে উপযুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৬৫ শতাংশ ভোটার তালিকাভুক্ত হলেন।
জিম ক্রো আইনের ছায়া
কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তৈরি এই আইনের ওপর আঘাত আসে ২০১৩ সালে।
অ্যালাবামার শেলবি কাউন্টি সে বছর ভোটিং রাইটস এ্যাক্টের দুটি বিধান আদালতে চ্যালেঞ্জ করে। এই বিধান দুটির একটিতে ছিল, কোন রাজ্য বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যদি ভোট সম্পর্কিত স্থানীয় আইনে কোন পরিবর্তন আনতে হয়, সেটিতে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায় শেলবি কাউন্টির পক্ষে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এর ফলে নতুন করে বিভিন্ন রাজ্যে এমন সব বিধি-বিধান তৈরি হচ্ছে, যার কারণে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে।
যেদিন সুপ্রিম কোর্ট রায়টি দিল, সেদিনই কয়েক ঘন্টার মধ্যে টেক্সাস রাজ্যে ভোটার পরিচয় শনাক্ত করার এক কঠিন বিল আনা হয়, যেটি এর আগে ভোটিং রাইটস এ্যাক্টের কারণে করার কোন উপায় ছিল না। সমালোচকরা বলে থাকেন, টেক্সাসের এই আইনের লক্ষ্য নিম্ন আয়ের এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভোট দানে নিরুৎসাহিত করা।
দু’হাজার তের সালের ১১ই আগষ্ট নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের গভর্নর এক ভোটার শনাক্তকরণ আইনে সই করেন, যেটি অনেকের মতে আসলে অশ্বেতাঙ্গদের ভোট থেকে বঞ্চিত করার একটা কালাকানুন।
একটি নাগরিক অধিকার গোষ্ঠি এর বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর একজন ফেডারেল বিচারক আইনটিকে অন্যায্য বলে বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, আইনটির একমাত্র টার্গেট যেন ছিল আফ্রিকান-আমেরিকানরা।
-
সেলমা থেকে মন্টোগোমারির পথে সেই ঐতিহাসিক মিছিল
-
ডালাস কাউন্টরি শেরিফের অফিসের সামনে মার্টিন লুথার কিং। শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটার হওয়ার জন্য। ডালাস কাউন্টরি শেরিফের অফিসের সামনে মার্টিন লুথার কিং। শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটার হওয়ার জন্য।
-
সেলমার আন্দোলন উত্তাল করে তুলেছিল আমেরিকা। সেলমার সমর্থনে নিউ ইয়র্কে মিছিল।
-
'জিম ক্রো' আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ভোটাধিকার হরণের ক্ষেত্রে এসব আইন প্রয়োগ করা হতো।
-
প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের মুখোমুখি মার্টিন লুথার কিং। আন্দোলনের চাপে ভোটিং রাইটস বিল আনেন প্রেসিডেন্ট জনসন।
-
নিউ অরলিন্স, ১৮৬৭: এই এনগ্রেভ করা চিত্রে দেখা যাচ্ছে দাসত্ব থেকে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি ধানের চাষে কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক, কী লাভ এই চাল উৎপাদন বাড়লে?
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন
-
যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি আপেলের চাষ শুরু হয়েছে যা ‘এক বছর সতেজ থাকবে’


চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

পাবনায় পাঁচ মাসে ৫ কোটি টাকার শামুক বিক্রি
শীর্ষ সংবাদ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের
-
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
-
ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন