কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। আর এই ফলের সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। আর এই জাতীয় ফলের রকমও রয়েছে বেশ কয়েকটি। এদের মধ্যে বাংলাদেশে বেশিরভাগ পাওয়া যায় খাজা, আদারসা ও গালা জাতের কাঁঠাল। তবে উন্নত ফলনশীল ও বারোমাস কাঁঠাল পেতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি কাঁঠাল-১ ও বারি কাঁঠাল-২ জাত উদ্ভাবন করেছেন। আর এসব জাতের কাঁঠালের বাইরেও একটি জাত রয়েছে। যা কখনো আমাদের মাটিতে চাষ করা হয়নি। আর ওই জাতটি হলো ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল। দেখতে বেশ সুন্দর এই কাঁঠালের চাষ বাংলাদেশেও সম্ভব বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদপ্রেমী খান মোহাম্মদ সবুজ। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনামের জনপ্রিয় লাল কাঁঠালের চারা এনে রোপণ করে সফলও হয়েছেন তিনি। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খান মোহাম্মদ সবুজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, কৃষিতে একটু আন্তরিক হলে বাংলাদেশে অনেক কিছুই চাষ করা সম্ভব। ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল দেখতে অনেক সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু। লাল কাঁঠাল চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। এতে আয়ও হবে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউড (বারি) মহাপরিচালক ডক্টর নাজিরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি কাঁঠাল চাষের উপযোগী। আর এ কারণে যেকোনো দেশের জাত এখানে চাষ করা সম্ভব। কাঁঠালের অনেক জাত রয়েছে। জাত অনুযায়ী ফলন একেক রকম, স্বাদেও ভিন্নতা থাকে। তবে কাঁঠালর স্বাদ ঠিক রাখতে হলে জিন ঠিক রাখতে হয়। কাঁঠাল কোনো দেশের বা অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত নয়। এমনকি কোনো সময়ের জন্যও নির্দিষ্ট নয়। কাঁঠালের জাত ট্রান্সবাউন্ডারি হতে পারে। এক মহাদেশের জাত অন্য মহাদেশে আসা-যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বাইরের কোনো দেশের জার্মপ্লাজম এসে আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করলে সেটা ভালো। তবে জাত বা জার্মপ্লাজম আমদানি প্রপারলি না করা হলে অনেক সময় রোগব্যাধি ঢুকে পড়ে।তিনি বলেন, কিছু কিছু ফসল আছে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল বা নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কাঁঠালের ক্ষেত্রে তা হয় নয়। বাংলাদেশের ফসলও অনেক দেশে জনপ্রিয়। কিন্তু তা মিডিয়ায় তেমন প্রচারণা নেই। যেমন নেপালে আমাদের অনেক ফসলের জাত নিয়ে চাষাবাদ করছে। যা ওখানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে বর্তমানে দেশে উচ্চফলনশীল জাতের কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এ ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের কাঁঠালের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল। ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল সারা বছর ফল দিয়ে থাকে। বড় হলে কাঁঠালের উপরে ভিতরে সব জায়গাতেই লাল টকটকে রঙ হয় এবং ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। ভিয়েতনামী এই লাল কাঁঠাল দেখতে এতোটাই সুন্দর যে, শুধু খাওয়ার লোভ হয়। এর ইংরেজি নাম Gac Baby Jackfruit। এই কাঁঠালের আকারে কিছুটা ছোট হয়। লাল কাঁঠাল কেবল কোয়া বা কোষে ঠাসা থাকে। ফল অতি সুস্বাদু, মিষ্টি এবং রং-বেরঙের (গোলাপী, লাল) হয়। সাধারণ মানের কাঁঠালের চেয়ে দাম তিন থেকে চারগুণ বেশি। এর অন্যতম সুবিধা হলো এই জাতের কাঁঠালের বাগানে খরচ কম, লাভ বেশি। এর একটা বারোমাসি জাতও রয়েছে। তা লাগানো হলে বারোমাস ধরে ফল পাওয়া যায়।
ভিয়েতনামী লাল কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় এ কাঁঠাল খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। ১০০ গ্রাম লাল কাঁঠালে ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে। এ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন সি-ও রয়েছে। রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। যা আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ সক্ষম। এ কাঁঠালে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট। যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। বদহজম রোধ করে লাল কাঁঠাল। কাঁঠালে আছে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ। যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লাল কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে। লাল কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ভিয়েতনামী এই লাল কাঁঠাল ছাদেও চাষ করা সম্ভব। বর্ষায় বা বৃষ্টিতে পানি জমে না এমন উঁচু ও মাঝারি সুনিষ্কাষিত উর্বর জমি লাল কাঁঠালের জন্য উপযোগী। কাঁঠালের বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। তবে ছাদ বাগানের জন্য কলমের চারা উত্তম। এতে ফলন দ্রুত হয় এবং জমিতে চাষের জন্য কলম ও বীজের চারা দুটিই হতে পারে। ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল গাছে মুচি আসার পর কাঁঠাল পাকতে ১২০-১৫০ দিন সময় লাগে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউড (বারি) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফসল বা ফল নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছি। ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষের সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক।
বৃক্ষপ্রেমী খান মোহাম্মদ সবুজ বলেন, চীনের আমন্ত্রণে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে বনসাই বিষয়ক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দেশে ফেরার সময় মালয়েশিয়া যাই। আর ওই সময় মালয়েশিয়ায় লাল কাঁঠাল দেখে জাতটি দেশে আনার চিন্তা থেকেই জাত সংগ্রহ করি।
বর্তমানে খান মোহাম্মদ সবুজের বাগানে এখন দুই শতাধিক চারা রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, এ বছর ফলন হয়েছে। আর ওই ফলন দেখে একজন বৃক্ষপ্রেমী ১২ হাজার টাকায় ওই গাছটি কিনে নেন। সবুজের ওই ভিয়েতনামী লাল কাঁঠালের বাগান রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী আমবাগ এলাকায় অবস্থিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন