আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

বড় রোজা ছোট রোজা

আজ আপনাদের এক নতুন কথা শোনাব। যদিও কথাটি আদতে নতুন নয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষা থেকেই নেওয়া। কোরআনই এ কথার ভিত্তি। তবুও কথাটি অনেকের জন্য নতুন ঠেকবে। যেহেতু নতুনের কদর বেশি এবং এটি মানবাত্মাকে কিছুটা হলেও জাগ্রত করে, তাই পুরোনোকেই নতুনভাবে বলা। নতুন সে বক্তব্যটি হলো: রোজা দুই ধরনের—বড় রোজা আর ছোট রোজা।

ছোট রোজাকে খাটো করছি না। এ প্রকরণ শুধুই কাল ও আয়তনের। ঋতুর তারতম্যে ছোট রোজাও লম্বা হয়। এ রোজা প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ফরজ হয়ে যায়। সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ রোজার সীমা। এ রোজার যাবতীয় নিয়মকানুন আপনাদের জানা আছে। এ সময় পানাহার নিষিদ্ধ। স্বাভাবিক সময়ের বৈধ জৈবিক বহু কার্যকলাপও হারাম। এটি ২৯ বা ৩০ দিনও হতে পারে। রমজানের এ রোজার কথা সবাই জানেন। মেনে চলেন এর নিয়মকানুনও। আমি চাইছি, আপনারা চিন্তা করুন, ভাবুন, রমজানের রোজা ছাড়া আর কোন রোজা রয়েছে যেটা সময়, কাল ও মর্যাদায় এর চেয়েও বড়। আমি কি শেষ ঈদের রোজার কথা বলতে চাইছি, নাকি ১৫ শাবানের রোজার কথা। কোন রোজার কথা বলতে চাইছি।
বড় রোজা: ইসলামের রোজা। ইসলাম নিজেই একটি রোজা। এই যে রোজা, ঈদ, নামাজ এমনকি জান্নাত পর্যন্ত যা আল্লাহ আমাদের দান করবেন, সবই এই বড় রোজার দান। প্রকৃত বড় রোজা ইসলামের রোজা। এটা কখন শুরু হয়ে কখন শেষ হয়, তা-ও জেনে নিন।

যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন এবং শুরু থেকেই কালেমার যাত্রী হোন, তাঁর ওপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ামাত্রই এই দীর্ঘ, ধারাবাহিক রোজাটি ফরজ হয়ে পড়ে। যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, কালেমার বক্তব্যকে মেনে নেন, তাঁর ওপর ইসলাম কবুল করার সঙ্গে সঙ্গে এ রোজা ফরজ হয়ে পড়ে।
এটাও জেনে নিন, এ রোজার শেষটা কখন হয়। রমজান ও অন্যান্য রোজা তো সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে খতম হয়ে যায়। কিন্তু ইসলামের রোজা শেষ হয় জীবনসূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে।

রমজান বা অন্যান্য নফল রোজায় ইফতার কী, উত্তম পানীয় ও মজাদার খাবারই তো? এবার শুনুন ইসলাম নামক রোজার ইফতারের ফিরিস্তি। বেশি খাদ্য ও পানীয়ের নাম নিলে জিবে জল এসে যাবে, মনে খাদ্যের প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়ে যেতে পারে তাই বেশি বলছি না। আপনারা জমজমের পানি দিয়ে রোজা ভেঙে থাকেন। ঠান্ডা পানীয় দিয়ে রোজা ভাঙেন। এক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে রোজা ভাঙেন। কিন্তু আজীবন রোজার ইফতার হবে পবিত্র কূপ হাউসে কাউছারের পানি দিয়ে। স্বয়ং সায়্যিদুল মুরসালিন, শ’ফিয়ুল মুসনিবিন, মাহবুবে খোদা, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে সে পানি পান করাবেন।বিজ্ঞাপন

যে রোজার আহ্বায়ক স্বয়ং খোদা এবং আমরা সে রোজার শর্তাদি পালন করেছি। আল্লাহর ফজলে কালিমার মাধ্যমে আমাদের বিদায় ঘটেছে। মুখে কালেমা জপরত অবস্থায় রুহটা বেরিয়েছে আমাদের দেহ থেকে। আমরা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু (একমাত্র আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী) জপছিলাম। অন্তরে আমাদের ইমানের নূর ছিল। আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রবল তামান্না ছিল। এমন অবস্থায় যে রোজার সমাপ্তি ঘটেছে। ভাবুন তো, সে রোজার ইফতারিটা কেমন হবে। ভাবুন তো একবার, কেমন হবে সেটা। হ্যাঁ, এটি তেমনই এক অসাধারণ নিমন্ত্রণ হবে, যা পাওয়ার জন্য মানুষ জান দিতেও রাজি। আল্লাহর বহু বান্দা জান কোরবান করেছেনও। রাসুলের দিদার লাভের প্রত্যাশায় অগুনতি মানুষ নির্দ্বিধায় প্রাণ দিয়েছেন। বিনিময়ে চেয়েছেন রাসুল খুশি হোন। সন্তুষ্ট হোন। যুদ্ধ-জেহাদের ঘটনাগুলো পড়ুন। সাহাবাগণ হাসতে হাসতে জীবন দান করে গেছেন।

এমনও ঘটেছে, বদরের যুদ্ধে এক কিশোর মহানবীর দরবারে হাজির হয়ে বলেছে, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকেও জেহাদের অনুমতি দিন।’ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তুমি এখনো ছোট।’ সে বলেছে, ‘না, আমি একেবারে ছোটটি নই। আমিও লড়তে জানি।’ সে ইজাজতের জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকল। তা দেখে কোনো কোনো সাহাবি সুপারিশও করলেন তার পক্ষে। মহানবী অনুমতি দিয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য আরও একজন এসে হাজির হলো মহানবীর সামনে। এও কিছুটা কমবয়সী ছিল। এ-ও বলল, ‘অমুককে ইজাজত দিয়েছেন যখন, আমাকেও অনুমতি দিন।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘তুমি তো এখনো বাচ্চা রয়ে গেছ।’ জবাবে কিশোরের উত্তর ছিল, ‘আপনি আমাদের দুজনের মধ্যে কুস্তি লাগিয়ে দিন, শক্তির পরীক্ষা নিন, আমি যদি ওকে ধরাশায়ী করতে পারি, তবে আমাকেও অনুমতি দিন।’ এদের প্রবল আগ্রহ ছিল। মনে বল ছিল। কুস্তি হলো।

বাস্তবেই সে ইজাজতপ্রাপ্ত কিশোরকে ধরাশায়ী করে ফেলল। মহানবী (সা.) দুজনকেই শেষ পর্যন্ত ইজাজত দিলেন। আখেরে দুজন শহীদও হলো। এরা ছিল দুই ভাই। আবদুর রহমান ইবনে আউফকে বললেন, ‘চাচা, আবু জাহেল লোকটাকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা শুনেছি আবু জাহেল নাকি রাসুলে খোদার শানে বেয়াদবি করেছে।’ আবু জাহেলকে দেখানোমাত্রই দুজনই ঝাঁপিয়ে পড়েন, খতম করে দেন চিরশত্রুকে।
ছোট রোজার হুকুম ও দায়বদ্ধতার কথা সবার জানা। সব রোজাদারই উপোস থাকেন। নিষিদ্ধ খাবারে ঠোঁট ছোঁয়ান না। কিন্তু এই বড় রোজার খবর খুব কম লোকই রাখেন।

অথচ এই রোজাগুলো বড় রোজার কৃপায়ই আমরা পেয়েছি। বড় রোজার বরকতেরই ফল এসব রোজা। মনে করুন, এসব রোজা বড় রোজার পুরস্কারস্বরূপ আমাদের কাছে এসেছে। ঈদও পেয়েছি বড় রোজার জন্যই। যদি ইসলাম না হতো, তবে নামাজ-রোজা কিছুই হতো না। দেখুন, যেখানে ইসলাম নেই সেখানে না নামাজ আছে, না আছে রোজা। সেখানে কালেমাও নাই, আল্লাহর ওপর বিশ্বাসও নাই। একত্ববাদ, হাশর, কেয়ামত বা পুনরুত্থান কিছুই নাই। এসবই ইসলামের বদৌলতে আমরা পেয়েছি। মনুষ্যত্ব, মানবতা, সম্মান, শক্তি, রুহানিয়্যাত সবই ইসলামের জন্য পেয়েছি। মৃত্যুর পর কেয়ামত শেষে এরই অছিলায় জান্নাত পাব। এমন জান্নাত যে জান্নাত কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, কোনো অন্তর তার যথাযথ ছবি আঁকতে পারেনি।

বড় রোজা ছোট রোজা

তো, এই দীর্ঘ আর ধারাবাহিক রোজার খবর রাখেন কজন। জানি না, আজকের পর আপনাদের সঙ্গে আর কবে দেখা হবে। আদৌ হবে কি না? হলেও কিছু বলার বা শোনার সুযোগ হবে কি না। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি আপনাদের বলে যেতে চাই। রমজান বা অন্যান্য নফল রোজায় পানাহার করলে ভেঙে যায়। একটি রোজার কাজা হিসেবে ৬০টি নতুন রোজা রাখতে হয়। কিন্তু সেই রোজা, যার ব্যাপারে মানুষ সজাগ নয়, ‘ইসলামের রোজার’ মধ্যে কী কী জিনিস নিষিদ্ধ, আমি আপনাদের বলে যেতে চাই। হারাম খাবার-দাবার এ রোজায় খাওয়া নিষিদ্ধ। এ রোজায় খোদার সঙ্গে শিরক করা মানা। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দের কর্মের নাম হলো শিরক। আল্লাহ বলেন:
আল্লাহ তাআলা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া যাকে ইচ্ছে মাফ করে দেবেন।বিজ্ঞাপন

শুনুন, শিরক কী জিনিস। এটিকে সবাই মন্দ মনে করেন। আপনারাও এটিকে খারাপ মনে করবেন। এ জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহ। তিনি এর পরিচালকও। এ সৃষ্টি তাঁরই কাজ। এসব পরিচালন করাও তাঁরই কর্ম। সবাই এ কথা মানেন, সবকিছুর স্রষ্টাই একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কিন্তু অনেক ভাই, মনে বা মগজে এ কথা ধারণ করতে পারেন না যে কুল-কায়েনাতের পরিচালকও তিনিই। এদের ধারণা, আল্লাহ তো স্রেফ কুন (হও) বলেছেন, ব্যস, অমনি (ফাইয়াকুন) সবকিছু হয়ে গেল। কিন্তু বিরাট এ পৃথিবীটার বিশাল যজ্ঞ পরিচালনায় অন্যান্য শক্তির হাত রয়েছে। রাজা-বাদশাহরা মরজিমাফিক কাউকে কোনো কাজ সোপর্দ করেন। খাদ্যভান্ডারের দায়িত্ব দেন কাউকে। কাউকে দেন খয়রাত বণ্টনের কাজ। কারও প্রতি নির্দেশ থাকে অসুস্থকে চিকিৎসাসেবা দানের। বিপদগ্রস্তের উদ্ধার, মামলা-মোকদ্দমায় হারজিত, একেক জনকে একেকটা কাজের ক্ষমতা দিয়ে রাখেন। একই ভাবে আল্লাহ তাআলাও যদি মকবুল বান্দাদের মধ্যে হরেক রকম কাজের ক্ষমতা ভাগ করে দেন, তাতে আল্লাহর অমর্যাদা হয় না। আল্লাহ কর্তৃক নৈকট্য লাভ এবং বুজুর্গির কারণে খোদা তাআলা নিজ ইচ্ছায় এ ক্ষমতা ওদেরকে দিয়েছেন। আবার যখন ইচ্ছা সব ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবেন।
কিন্তু আদতে এমনটি অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘সৃষ্টি করা আমার কাজ, সৃষ্টির পরিচালনও আমারই কাজ।’

পৃথিবীটা তাজমহল নয়। শাহজাহান বানালেন, আর চলে গেলেন। তারপর কারও মর্জি হলো তো দেয়ালে কিছু লাগিয়ে দিলেন। নতুনভাবে ভাঙা-গড়ার কাজ চালালেন। তিনি কিছুই করতে পারলেন না। তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই রইল না। অথচ শাহজাহান কত বড় বাদশাহ বা সম্রাট। কিন্তু এ বিশাল পৃথিবী পুরোপুরি আল্লাহর আয়ত্তাধীন। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ব দানকারী। তিনিই সম্রাট। সাদা-কালো, জীবন-মরণ, রুটি-রুজি, সন্তান-সন্তুষ্টির কেবল তিনিই একমাত্র দাতা।

সন্তান দেওয়া, রিজিক দেওয়া, ভাগ্যের ভালো-মন্দ, জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, বিপদাপদ থেকে মুক্তিদান, এ সবই আল্লাহর ক্ষমতাধীন আছে এবং থাকবে। দুনিয়ার একটি পাতা কিংবা দানাও তাঁর নির্দেশের বাইরে নড়তে পারে না। ক্ষমতার বাগডোর এবং চাবিকাঠি পুরোটাই তাঁর হাতে।

মনে রাখুন, তওহিদে পূর্ণ বিশ্বাসী হওয়া চাই, তওহিদ কামিল হওয়া চাই। সন্তান কেবল তিনিই দিতে পারেন। রুটি-রুজি একমাত্র তিনিই দেন। ইজ্জত-সম্মান, হায়াত-মউত তিনিই দিতে পারেন। কোনো অলি-কুতুব, গাউস-আবদাল সামান্য ক্ষমতার অধিকারীও নয়। ভাবুন, নিজের ইমানকে যাচাই করুন। আল্লাহকেই একক স্রষ্টা, রিজিকদাতা তথা মুসাব্বাবুল আসবাব মনে করেন তো?
তওহিদের পর কেয়ামত ও পরকাল, মহানবী (সা.)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, নবীদের নেতা, পাপীদের সুপারিশকারী এবং আল্লাহর প্রিয়জন মানতে হবে। এটাও মানতে হবে, শরিয়ত আজও সচল। কেয়ামত পর্যন্ত সচল থাকবে। কেয়ামত পর্যন্ত অন্য কারও শরিয়ত মানা যাবে না। এ শরিয়ত পরকালের কাজে লাগবে। যদি মহানবী (সা.)-এর পর নতুন কোনো শরিয়তের প্রবক্তা হাজির হন, তবে নিশ্চিত তিনি মিথ্যুক, দাজ্জাল, মুনাফেক এবং ধর্মদ্রোহী। তাকে কতল করা ওয়াজিব। শরিয়ত একমাত্র মুহাম্মদ (সা.)-এর শরিয়ত। কেয়ামত পর্যন্ত এটিই চলবে এবং সর্বত্র চলবে। যে এ শরিয়তের ওপর চলবে, সে-ই সফল হবে।
মহানবী (সা.) আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়। যে মহানবীকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসবেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ইমানদার বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে আমাকে তার পিতা, সন্তান তথা সব মানুষ থেকে অধিক ভালোবাসবে।’

এ মর্যাদা অন্য কোন বুজুর্গ বা অলি তো দূরের কথা, কোনো নবী-রাসুলেরও জোটেনি। এ মর্যাদা আল্লাহ তাআলা শুধুই মহানবী (সা.)-কে দিয়েছেন।

মহানবী (সা.)-এর ওপর ইমান বা বিশ্বাস রাখলেন। তাঁকে ভালোবাসলেন। তাঁর কাছে শাফায়াতের প্রত্যাশাও করলেন। যথাযথভাবে তাঁর শরিয়তও মেনে চললেন। যদি তা-ই হয়, তবে ইমানের দাবি হলো, আপনি এবার জানতে চাইবেন বিয়েশাদির শরিয়তের নিয়ম কী? মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে বিয়ে করেছেন। অর্থাৎ আনন্দ-বেদনার প্রকাশও শরিয়ত ও সুন্নতমতো হওয়া চাই। মাতম করা, গান-বাজনা, ধুমধামের সঙ্গে বিবাহ উদ্‌যাপন করতে গিয়ে প্রয়োজনে সুদের আশ্রয় নেওয়া, জমিজমা বিক্রি করতেও কুণ্ঠাবোধ না করা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লোকদেখানো পন্থাবলম্বন, ধুমধাম না করতে পারলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার যে সংস্কৃতি, এটা কোনাভাবেই রাসুলপ্রেম আর ইমানের সংস্কৃতি নয়। এ কাজ বড় ঘৃণ্য কাজ। এসবই শরিয়তবিরোধী কর্মকাণ্ড। আল্লাহ তাআলার চরম অপছন্দের কাজ এসব।

এসব কাজে শরিয়ত মেনে চলতে আমরা দায়বদ্ধ। স্রেফ নামাজ-রোজা পালনেই দায়মুক্তি নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা শরিয়তের কাছে দায়বদ্ধ। সব কর্মকাণ্ডে আমাদের আদর্শ মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘হে নবী! মানুষদের বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’

ইসলামি শরিয়তের ওপর আমল করুন। শরিয়তকে আপন ভাবুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন ঘটান। পুরো জীবনে এর ছায়া থাকা চাই। জীবন থাকবে শরিয়তের অধীন। এমন না যে শুধু নামাজ-রোজা শরিয়ত মোতাবেক হলো, ব্যস কেল্লা ফতে। এর জন্য মাসআলা-মাসায়িল জেনে নিন। বিয়ে-তালাক, ব্যবসা-বাণিজ্যে লাগামছাড়া স্বাধীনতা, টেলিভিশনও দিন-রাত চলছে (যা লাহওয়াল হাদিসের উত্তম দৃষ্টান্ত), বেহুদা খরচ, অপব্যয়ও চলছে, নামযশ ও বড়ত্ব প্রদর্শনীও জারি আছে। ভিন্ন জাতীয় সংস্কৃতিও জারি রাখবেন, চর্চা করবেন, এমনটি যেন না হয়।

সাধারণ রোজার মধ্যে যেভাবে পরনিন্দা করা মানা, তেমনি এ বড় রোজায়ও এটি করা হারাম। মিথ্যে বলা, অশ্লীল বকা, ঘুষ লেনদেন, সুদখোরি, অতিরিক্ত খরচ বা অপব্যয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা ধরে নিই, রোজার পর আমরা স্বাধীন। অসম্ভব। আমরা কখনো স্বাধীন নই। এ রোজা চলতেই থাকবে। এ রোজা এখনো জারি আছে। বরং এ রোজা তো বর্তমান রোজার সংরক্ষকও! রমজান মাসের রোজা এ বড় রোজারই অংশ মাত্র। যা আমরা রাখছি। এ রোজা চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা আমাদের ইমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করেন। ইমানের সঙ্গে মৃত্যুই আমাদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তু। যার জন্য জীবন বাজিও করা যেতে পারে। আমাদের স্বাধীনতা, দরিদ্রতা, ধনাঢ্যতা, বন্ধুত্ব, শত্রুতা, সফলতা কিংবা বিফলতা—সবকিছু ছাপিয়ে যেন ‘ইমান বিল খায়ের’ হয়। আল্লাহর অলিগণ এ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। তাঁদের জীবনী পড়ুন। এঁদের নাম মুখে নিলেও ইমান তাজা হয়। তাঁরা এ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। এমনকি শেষ ভালো হওয়ার জন্য এ অলিগণও অন্যদের দিয়ে নিজেদের জন্য দোয়া করাতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের শেষটাও ভালো করেছেন। তাঁদের আলোচনা আজও জারি রেখেছেন।

বড় রোজা ছোট রোজা

রমজান শেষ হয়ে গেলে মনে করবেন না ছুটি হয়ে গেছে। আমরা এখন মুক্ত। স্বাধীন। যা ইচ্ছা করব। আমরা কখনোই আজাদ নই। আপনার গলায় ইসলামের শৃঙ্খল-মালা ঝুলে আছে। আপনার ডায়েরি, আপনার আইডি কার্ডে লেখা আছে আপনি মুসলমান।

আল্লাহর কাছে আজকের দিনের হিসাব দিতে হবে। এ রোজারও হিসাব দিতে হবে। আমি আপনাদের সামনে যে আয়াত পড়েছি তার অনুবাদ হলো, ‘আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি।’ কেউ যদি এতে পরিবর্তন আনতে চায়, রাষ্ট্র যদি বলে, এটা করো ওটা করো, বড় থেকে বড় কোনো মুসলিম ব্যক্তি বা কোন পণ্ডিতও যদি বলেন, তবু কিছু যায়-আসে না।

যা হারাম তা কেয়ামত পর্যন্ত হারামই। দুনিয়ার কারও এখতিয়ার বা সুযোগ নেই একে হালাল করে। শরিয়তে কোনো ধরনের সম্পাদন বা পুনঃ পাঠের সুযোগ নেই। হারাম হারামই।

এখান থেকেই শপথ করুন, কারও সম্পত্তি-জমিজমা বা পুঁজি আপনার দখলে থাকলে ফেরত দেবেন। এ রোজার দাবিই হচ্ছে, আপনি অন্যের অধিকার ফেরত দেবেন। আল্লাহ তাআলা এতে অত্যন্ত খুশি হবেন। আল্লাহর ভয়েই এমনটা করুন। বলুন, এই নাও তোমার জমিজমা, তোমার বেদখল সম্পত্তি। আমরা এখন থেকে তওবা করেছি।

মিথ্যে বলা, মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়া, মনের পূজা, গালিগালাজ করা, নাজায়েজ ও হারাম কাজের সব মাধ্যম আমদানি করা, ঘুষ নেওয়া, সবই নাজায়েজ। সবাই হারাম। কেয়ামত পর্যন্ত হারামই থাকবে। এমনই ভাবে সুদও হারাম। আজকাল কিছু মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে এটি জায়েজ করতে নানান পথ আবিষ্কার করেছেন, আফসোসের বিষয়। যা কিছু দ্বীন ও শরিয়ত হারাম করে দিয়েছে, কেয়ামত এলেও তা হারামই থাকবে।

চেষ্টা করুন, আপনার রোজার যেন বিশুদ্ধভাবে ইফতার হয়। শাহ গোলাম আলি মুজাদ্দেদি দেহলভি (রহ.) নকশেবন্দিয়াহ মুজাদ্দেদিয়া ধারার বড় শায়খ ছিলেন। নবাব মীর খাঁ তাঁর মুরিদ ছিলেন। শায়খের ওখানে শত শত মানুষ থাকতেন। খায়-খরচ সবই শায়খ বহন করতেন। অথচ শায়খের সে মতে তেমন কোনো আয়ের পথ ছিল না। ছিল না পুঁজিপাট্টাও। নবাব এসব দেখে শায়খের কাছে বড় অঙ্কের হাদিয়া নিয়ে বললেন, হজরত এগুলো কবুল করে নিন। শায়েখ বললেন, এ ফকির রোজা রেখেছে। যখন সূর্য ডুবতে শুরু করেছে, তখন রোজা ভাঙা উচিত না। আমার জীবনসূর্য ডোবার সময় খুব নিকটে। এখন যে যতই বলুক না কেন, এটা নিন, ওটা খান, আমি কিছুতেই রোজা ভাঙব না। সারা দিন রোজা রেখে যখন ইফতারের সময় সন্নিকটে, তখন ভাঙব রোজা!
সবার বুঝতে হবে, এই হচ্ছে ইসলামের রোজা। আজীবন রোজা। কোনো বিরতি নেই। এখানে হারাম হারামই। এখানে গলদ গলদই। আকিদা বিশুদ্ধ হওয়া চাই। মনে রাখবেন, কেউ কারও ভাগ্য ভালো-মন্দ করে বদলে দিতে পারে না। কেউ এসে আপনাকে পতিত বিপদ থেকে টেনে তুলে ফেলতে পারবে না। কেউ সন্তানও দিতে পারবে না। কেউ চাকরি দিতে পারবে না। অন্যের কাছে কেন হাত পাতবেন। যা কিছু চাওয়ার, তাঁর কাছেই চান। তিনি শোনেন। সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা রাসুলকে বলছেন, ‘লোকেরা তোমার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলে দাও, আমি তাঁর নিকটেই আছি। যখন সে প্রার্থনা করে তখন আমি তা কবুল করি।’

আপনারা এখন থেকে এই রোজার ধারণা নিয়ে যান। আনন্দিত হোন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। রমজানের রোজা তো ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগামী রমজান পাওয়ার প্রার্থনা করুন। কিন্তু মনে রাখবেন, জীবনের কোনো ভরসা নেই। সুস্থতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হ্যাঁ, ধারাবাহিক ও দীর্ঘ এ রোজা তো থাকবেই। আপনার রোজা মোবারক হোক। এ রোজার খেয়াল রাখুন। এটি যেন ভেঙে না যায়। এ রোজা ভেঙে গেলে আপনার কিছুই আস্ত থাকবে না। সবকিছু অচল হয়ে পড়বে।

এই হলো দুই রোজা। এক রোজা হলো স্বল্প সময়ের রোজা। এ হলো রমজানের রোজা। সরা দিনের রোজা। আরেক রোজা হলো, আজীবন রোজা। মুসলমানদের জন্য যখন সে বালেগ হয়, তখন থেকে নিয়ে যতক্ষণ ধরে প্রাণ থাকে; নিশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ রোজার বিস্তৃতি। যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁর জন্যও শরীরে রুহ-প্রাণ থাকা পর্যন্ত এ রোজা বলবৎ থাকবে।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে তৌফিক দিন; আমরা যেন এ রোজার ওপর অবিচল থাকতে পারি। যেন এ রোজার হেফাজত করি, কদর করি এবং এ রোজার ওপরই বাঁচি। এ রোজার ওপর থেকেই মরি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com