আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফসল

বিলপারের কৃষক, কিশোরী আর পানকৌড়ি

বিলপারের কৃষক, কিশোরী আর পানকৌড়ি

মাটিতে উবু হয়ে বসে যে মানুষটা একমনে কাজ করে যান, তাঁকে আমরা কৃষক বলি। সড়ক দিয়ে যেতে যেতে দূর থেকে তাঁদের দেখা হয়। শহরের মানুষের তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার অবসর কিংবা সুযোগই–বা কই। তবু মাঝেমধ্যে দেখা হয়ে যায়।

ঢাকার বছিলার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু পেরিয়ে কলাতিয়া বাজারের দিকে যাচ্ছি। আগে বছিলা পেরোলেই কৃষিজমি ও জলাশয় দেখা যেত, এখন দেখা যায় বালু ভরাট করা খণ্ড খণ্ড প্লট। বছরের পর বছর পড়ে থাকা এসব জমিতে এখনো না হয়েছে ঘরবাড়ি, না হতে পারছে কৃষিকাজ। কলাতিয়া সড়ক ধরে গেলে দুপাশে কিছু খেতখামার চোখে পড়ে। তবে কলাতিয়া বাজার পেরোলে তবেই দেখা পাওয়া যায় নিখাদ গ্রাম। সেদিকেই চলছিলাম। হঠাৎ সাইরেন শুনে গাড়ির আয়নায় দেখি পুলিশের গাড়ি। খবরের সন্ধানে পিছু নিলাম। সাধারণত পুলিশ ধাওয়া করে অপরাধীদের। এ–যাত্রায় সাংবাদিক ছুটছেন পুলিশের পেছনে। আঁকাবাঁকা পথে ছুটতে ছুটতে একসময় দেখি পুলিশের গাড়িটি হাওয়া, আর আমরা এসে পড়েছি এক বিলের পাশে।

পথের দুদিকেই সবজির খেত। জায়গাটার নাম সিরাজনগর। রাস্তার ডান পাশে বিরাট বিল। শীতের কারণে পানি নেমে গেছে মাঝের গভীর জায়গাটায়। সেই জলরাশির চতুর্দিকে জেগে ওঠা জমিতে শর্ষে, ফুলকপি, পাতাকপি, ডাঁটাশাক, লালশাক, মরিচ—এসবের আবাদ। পুলিশের পিছু ছুটে খবরের খোঁজ না পেলে কী হবে, বাংলার এক আদি কৃষকের দেখা পেলাম!

এই যে সুন্দর গ্রাম, সরল কৃষক পরিবার, তার পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এই বিপদ। হাসপাতালটির ক্যানসার এপিডেমিওলজি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, ক্যানসার শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষকের হারও এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।

শুকাতে দেওয়া সাদা শাড়ির মতো কুয়াশার মেঘ বিলের ওপর ভেসে আছে। একঝাঁক কালো পানকৌড়ি উড়ে গিয়ে বসছে কচুরিতে। তাদের হইচইয়ে বিরক্ত কতিপয় বক উড়ে যাচ্ছে বিলের পূর্ব দিকে অন্ধকার হয়ে থাকা বাঁশঝাড়ের দিকে। রোদ নেই, মেঘলা আকাশের নিচে কুয়াশা মোড়ানো শীতলতা। সবুজ-হলুদ-লাল সবজিগুলো সতেজ মুখ করে তাকিয়ে আছে। লাউয়ের মাচার নিচে আলসেমিতে মত্ত দুটি বিড়াল। কৃষকের বাড়ির লেবুগাছের ঝোপের ডালে পরপর বসা তিনটি মুরগি যেন বিজ্ঞ মাথার ঝুঁটি এদিক–ওদিক নাড়িয়ে সতর্ক চোখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভাবটা এমন, বেমিল দেখলেই ভাবগাম্ভীর্য ঝেড়ে দৌড় দেবে বাড়ির ভেতরে। একটি কিশোরী চারটি অবাধ্য ছাগলের পেছনে ছুটছে আর বকা দিচ্ছে, ‘একদম কথা শোনছ না তরা’।বিজ্ঞাপন

পরে জানা গেল, এ হলো জয়নালের মেয়ে শাহনাজ। তার বড় যে ভাই, সে বিদেশে কাজ করে। আর ওই যে বিলের ধারের রাস্তা ধরে কাঁচি-টুকরি হাতে দুটি শিশু আসছে, তারা চতুর্থ শ্রেণির সুমাইয়া আর শিশু শ্রেণির আরমিনা। তারা দাদা জয়নালের সঙ্গে জমিতে যাচ্ছে ফুলকপি তুলতে। বড় বোন সুমাইয়ার দুঃখ, ক্লাসে মুখস্থ বলতে পারেনি বলে আরমিনাকে প্রথম শ্রেণি থেকে নামিয়ে শিশু শ্রেণি দেওয়া হয়েছে। ওদের দাদা পৌঢ় কৃষক জয়নালের মুখে সব সময়ই হাসি। নিজের খেত থেকে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, দুই রকমের লাউশাক তুলে দিয়ে মনটা ভরিয়ে দিলেন। শীতের তাজা সবজির স্পর্শে মনে হলো, এ তো শুধু খাদ্য না, এই-ই তো জীবনীশক্তি। ঢাকার বাজারের মূল্যে দাম দিতে গেলে অবাক হলেন। এতটা তিনি আশা করেননি।

একটি কিশোরী চারটি অবাধ্য ছাগলের পেছনে ছুটছে
একটি কিশোরী চারটি অবাধ্য ছাগলের পেছনে ছুটছে 

জয়নালের মেয়েটি অবশেষে ছাগলগুলোকে খুঁটার সঙ্গে বাঁধতে পেরেছে। ওদের মা লাউয়ের মাচার তলে ঢুকে বেছে বেছে কচি লাউ তুলে দিলেন। বিল থেকে আবার ভিটায় উঠতে উঠতে বললেন, ‘হাতে কাজ পইড়া রইছে, আমি যাইগা।’ গোয়ালে পাঁচটা তাগড়া গরু, দুটি বাছুর। গোয়ালের পেছনে গোবর আর কচুরিপানা মেশানো জৈব সারের স্তূপ। তার পাশের বেলগাছে একটা সুন্দরী মাছরাঙা উৎসাহী চোখে বিলের দিতে তাকিয়ে আছে।

ইলিয়াসের খোয়াবনামা
জয়নালের খেত পেরিয়ে বিলের জলরাশির দিকে আগালে পাশাপাশি দুটি খেত। একটিতে তিন ভাইবোন আর বাবা-মা মিলে নীরবে লালশাক তুলে চলেছে। খুবই নীরব পরিবার। পাশের জমির লোকটিকে দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল। আইল ধরে এগোলে কানে আসে বিড়বিড় করে বলা তাঁর কথা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাসের তমিজের বাপও এমন আনমনে কথা বলত। তিনিও কাৎলাহা বিলের সিথানে জাগা নতুন মাটির কৃষক।

ফসলের রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ দমনের জন্য কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, পতঙ্গনাশক ও রোডেন্টিসাইড (ইঁদুর মারা বিষ) ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিবছর এসব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে গড়ে ৩৫-৩৭ হাজার টন। এ ছাড়া বছরে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হচ্ছে ৫০ লাখ টনের বেশি। কৃষকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি এসব উপকরণের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সার্বিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশেও দেখা যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব।

আমাদের ইনি অবশ্য তমিজ নন, জমিরের বাপ। সবুজ ধনেখেতে তিনি ফুটে ছিলেন লাল পাঞ্জাবি আর মাওলানা ভাসানীর মতো সফেদ দাড়িতে। আবারও মনে হলো, যেভাবে মহাত্মা গান্ধী নিয়েছিলেন গুজরাতি কৃষকের দরিদ্র বেশ, ঠিক সেভাবেই মওলানা ভাসানীর বেশভূষার মধ্যে ফুটে ওঠে বাংলার মুসলিম কৃষকের মাসুম চেহারা। উনিশ শতকের শেষের দিকে ছাপা পুঁথিতে আদি মানবকে কৃষক হিসেবে ভাবা হয়েছিল। তাই লেখা হয়: আদম করে কৃষিকাজ/ হাওয়া বোনে তাঁত।

এগিয়ে গিয়ে কিছু বলার আগেই কথা বলে উঠলেন প্রবীণ মানুষটি। ‘আপনারা আইলে বড় খুশ লাগে, ছবি তুলবেন?’

অনেক কথা হলো। মানুষটার নাম লিয়াকত আলী, বয়স সত্তরের ওপরে। অনেক বছর আগে যখন এই এলাকা বুড়িগঙ্গা নদীর আশ্রয়ে ছিল, তখন বড় চর জেগে উঠলে কুমিল্লা থেকে অনেক মানুষ এসে সেই চরে বসত বাঁধেন। তিনি যে জমি চাষ করছেন, একসময় সেটা তাঁর দাদায় করত। দাদা ছিলেন মাতবর গোছের মানুষ। দাদার পরে জমির হাল এখন তাঁর হাতে। কিন্তু তাঁর তিন ছেলের কেউ কৃষিকাজে মন দেবে কি না, তা বলা যায় না। তারা কেউ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কেউ গাড়ি চালানো শিখছে, আরেকজন টুকটাক এটা–ওটা করে। এই গ্রামে বিদ্যুতের মিস্ত্রির দরকার পড়ে কম। ড্রাইভার ছেলের লাইসেন্স এখনো মেলেনি। ফলে কারোরই আয়-উপার্জন ভালো নয়। অথচ কী আদরে বাড়িতে ধরে নিয়ে আপ্যায়ন করলেন, সম্পর্ক পাতালেন।

কৃষির সঙ্গে বিরোধের পাঁচিল
কৃষিতে তাঁরা আসবেনই–বা কেন? তাঁদের জমির কপি রায়েরবাজারে কিংবা কারওয়ান বাজারের আড়তে ৫ থেকে ১০-১২ টাকার বেশি দাম পায় না। যে ধনেপাতার আঁটি বাঁধছেন, প্রতিটিতে পাবেন দুই টাকা। অথচ এই কপি ঢাকার বাজারে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হয়, ধনেপাতার আঁটি চলে ১০ টাকা করে। ফিরবার পথে তা-ই দেখা গেল। লিয়াকত আলীর জমি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের কলাতিয়া বাজারে একটি মাঝারি মাপের কপির দাম ২৫ টাকা। আর কারওয়ান বাজারে তার দাম ৩০-৩৫ টাকা। ঢাকা শহরের স্থানীয় বাজারে দাম আরও বেশি হওয়ার কথা।

বিলের ওপর উড়ছে পানকৌড়ি, দূরে বসে আছে বকের সারি
বিলের ওপর উড়ছে পানকৌড়ি, দূরে বসে আছে বকের সারি 

গতবারের চেয়ে এবারে সবজিতে প্রচুর লোকসান কৃষকের, জানালেন লিয়াকত আলী। শুধু এই এলাকা কেন, সারা দেশেরই চিত্র এই। মহাজনেরা, আড়তদারেরা অতি সস্তায় কিনে বিক্রি করে ৪/৫ গুণ বেশি দামে। আর ওই যে বিল, সেটা ইজারা নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালীরা। আগের মতো সেখানে মাছও ধরা যায় না। ওদিকে এগিয়ে আসছে শহুরে ক্রেতারা। কৃষিজমিতে তৈরি হচ্ছে কারখানা কিংবা আবাসন ব্যবসার প্লট। লিয়াকতের পাশের জমিটাও বিক্রি হয়ে গেছে। বিলের পাশে দেয়ালঘেরা জায়গাটা কৃষির সঙ্গে বিরোধের পাঁচিল তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘দূরে কাছে কেবলই গ্রাম পতনের শব্দ শুনি’। ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, হযরতপুর, রুহিতপুরে হাজার হাজার একর কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে আছে। যারা সেগুলো কিনেছে বা দখলে পেয়েছে, তারা কৃষি চায় না, ব্যবসা চায়। লিয়াকত কিংবা জয়নালের মতো চাষিরা বাজার, নগরায়ণ ও ফসলের রোগবালাইয়ের সঙ্গে পেরে ওঠেন না। তাঁরা তখন জমির ফলন বাড়িয়ে লোকসান কমানোয় মন দেন। আর বেশি বেশি বিষাক্ত সার ও কীটনাশক ঢালেন। আর এভাবেই বাংলার দুঃখী কৃষকের দেহ ক্যানসারের বাসা হয়ে ওঠে।

লুকিয়ে আছে ভয়ংকর বিপদ
বণিক বার্তার অনলাইনে ১৫ জানুয়ারির একটি খবর বলছে, দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ক্যানসার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিবছর যত রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক।বিজ্ঞাপন

এই যে সুন্দর গ্রাম, সরল কৃষক পরিবার, তার পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এই বিপদ। হাসপাতালটির ক্যানসার এপিডেমিওলজি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, ক্যানসার শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষকের হারও এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে ক্যানসারে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১০ হাজার ৩১০ জন। তাঁদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে শনাক্তকৃত ১১ হাজার ১৫ জনের মধ্যে কৃষক ছিলেন ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ৪৪ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন কৃষক।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফসলের রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ দমনের জন্য কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, পতঙ্গনাশক ও রোডেন্টিসাইড (ইঁদুর মারা বিষ) ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিবছর এসব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে গড়ে ৩৫-৩৭ হাজার টন। এ ছাড়া বছরে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হচ্ছে ৫০ লাখ টনের বেশি। কৃষকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি এসব উপকরণের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সার্বিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশেও দেখা যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব।

মাটির মায়ায় মাটি কামড়ে থাকা কৃষক কেন মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন, ফি বছরের লোকসানি আর গণহারে ক্যানসারের ছোবল তার একটা ব্যাখ্যা দেয়।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফসল

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা তাঁদের জমির ধানের ফলন খারাপের চিত্র দেখিয়ে দিচ্ছেন। গত সোমবার বিকেলে নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের পাছবাড়িয়া গ্রামে
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা তাঁদের জমির ধানের ফলন খারাপের চিত্র দেখিয়ে দিচ্ছেন। গত সোমবার বিকেলে নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের পাছবাড়িয়া গ্রামে

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিম্নমানের বীজ কিনে বোরো ধান আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকেরা। উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের পাছবাড়িয়া গ্রামের কৃষকদের দাবি, এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কেনা বীজে ধান চাষ করে তাঁরা ধরা খেয়েছেন। ২০ জনের বেশি কৃষকের প্রায় ৮৫০ শতক জমির ৪ ভাগের ৩ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

পাছবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. তাইজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও আতাউর রহমান জানান, তাঁরা স্থানীয় বাংলাবাজারের সোলাইমান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সোলাইমান মিয়ার কাছ থেকে বেঙ্গল সিড কোম্পানির ধানবীজ কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। সেই বীজতলার চারা নিজেদের জমিতে রোপণ করেন। উদ্বৃত্ত চারা গ্রামের অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। এখন তাঁদের সঙ্গে অন্য কৃষকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে আছেন মহসিন মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আবদুল হেকিম, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান, রমজান আলীসহ আরও অনেকে।

অভিযোগের বিষয়ে বীজ ব্যবসায়ী সোলাইমান মিয়া বলেন, কৃষকেরা তাঁর কাছে বীজ চেয়েছিলেন। তাই তিনি নান্দাইল শহরের স্বপন মিয়ার বীজ বিক্রির দোকান বেঙ্গল সিডের ব্রি ধান-৮৯ জাতের বীজ কিনে এনে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। বীজ বিক্রির লাইসেন্স আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বীজ বিক্রি করার জন্য তাঁর কোনো লাইসেন্স বা কৃষি বিভাগের অনুমতি নেই। সাত বছর ধরে তিনি লাইসেন্স ছাড়াই বীজ বিক্রির ব্যবসা করছেন।

সোমবার পাছবাড়িয়া গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, একই বীজের চারা রোপণ করা হলেও জমিতে তিন ধরনের ধানগাছ গজিয়েছে। ধানের শিষ হয়েছে তিন প্রকারের।

এই ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ ও উপযুক্ত বিচার চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। তাঁরা জানান, ধানের বীজ মানসম্পন্ন না হওয়ায় গ্রামের ৮৫০ শতকের বেশি জমির ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে প্রতি ১০ শতকে ১০-১১ মণ ধান ফলন হওয়ার কথা। সেখানে ফলন হতে পারে এক থেকে দেড় মণ। বোরো মৌসুমে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বৃদ্ধ কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, তিনিও সুলাইমানের দোকান থেকে বেঙ্গল সিডের বীজ কিনে ৭০ শতক জমি আবাদ করেছেন। তাঁর জমিতেও ফলন ভালো হয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পাছবাড়িয়া গ্রামে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফয়জুর রহমান বীজ বিক্রেতা সুলাইমান ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে সালিসে বসার কথা।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে পাঠাবেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এই ঘটনার জন্য নিম্নমানের ধান বীজ দায়ী হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফসল

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

গত সোমবার কালিহাতীর আউলিয়াবাদ গ্রামে
গত সোমবার কালিহাতীর আউলিয়াবাদ গ্রামে

টাঙ্গাইলে এবার বোরোর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় ধান গোলায় তুলতে বিঘ্ন হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরির কারণেও ধান ঘরে তুলতে অনেক খরচ হচ্ছে।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সব মিলিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করতে ধানের বীজ, হালচাষ, সার, শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে সেচপাম্পের মালিকের পানি সেচের জন্য ২৫ ভাগ দেওয়ার পর ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ধানের মূল্য ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এতে তিন মাস পরিশ্রম করেও কৃষকের তেমন লাভ থাকছে না। বর্তমান ধানের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিঘাপ্রতি দু-তিন হাজার টাকা ক্ষতি যাচ্ছে। এ ছাড়া রোদ না থাকায় দফায় দফায় বৃষ্টিতে অনেকের ধান খেতেই নষ্ট হচ্ছে। এলাকাভেদে তিন বেলা খাবারসহ শ্রমিকের মজুরি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন বেশি হয়েছে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক পাকা ধানের খেতে পানি জমে আছে। আবার নিচু খেতগুলোতে হাঁটুপানি জমে আছে। শ্রমিকেরা পানির মধ্যেই ধান কাটছেন। অনেক ধান আবার পাকার আগেই ঝড়ে মাটিতে পড়ে খেতেই নষ্ট হয়েছে। এ সময় কয়েকজন কৃষক জানান, শুকনার সময় প্রতি বিঘা ধান কাটা, আনা ও মাড়াই করতে আটজন শ্রমিক লাগলেও খেতে পানি থাকায় ১০ জন শ্রমিক লাগছে। এতে কৃষকের সময় ও টাকা বেশি লাগছে।

পঞ্চগড় থেকে আসা শ্রমিক সুভাষ ও কালিপদ সাহা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় খাবার ছাড়া ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি। টাঙ্গাইলে কাজ করছি তিন বেলা খাবারসহ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, ধানেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকেরা একটু সমস্যায় পড়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে ৫০টি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করা হয়। সেগুলো ধান কাটার কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের জেলা থেকে মেশিন এনে ধান কাটা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@theagronews.com, theagronewsbd@gmail.com