বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন কৃষকরা
সারাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। অনেকেই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। টানা লকডাউনে অনেকেই বাড়ির আঙিনায়, বাসার ছাদে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অভাব পড়তে পারে শাকসবজি ও কৃষিখাদ্যের। তাই প্রান্তিক কৃষকরা যেন খাদ্য সংকটে না পড়েন সেজন্য বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ কর্মসূচির আওতায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কমিটি করে এ তালিকা করা হয়েছে। এতে কৃষকের নাম, কৃষকের বাবার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর অথবা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সংযুক্ত করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক কৃষক স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও চারা পাবেন। এছাড়াও জনপ্রতি জৈব ও অজৈব সার বাবদ ৪৩৫ টাকা, শাক-সবজি রক্ষায় বেড়া তৈরির খরচ বাবদ এক হাজার টাকা ও পরিচর্যা বাবদ ৫০০ টাকাসহ নগদ মোট ১৯৩৫ টাকা পাবেন।
এ নগদ অর্থ ব্যাংক হিসাব অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ ও নগদ) মাধ্যমে হাতে পাবেন কৃষকরা। এই টাকা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের হাতে পৌঁছেছে কিনা কিংবা তালিকায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা সরাসরি কৃষি কর্মকর্তারা তদারকি করে নিশ্চিত হবেন।
বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন কৃষকরা
মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগের ফলে করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় প্রান্তিক কৃষকদের খাদ্য সংকটে পড়তে হবে না। একদিকে যেমন কৃষকরা পুষ্টিকর শাক-সবজি উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন অন্যদিকে এ মহামারিতে শাক-সবজির জন্য হাট-বাজারে তাদের যেতে হবে না।
এ বিষয়ে কৃষক সুরাবই গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান জানান, করোনা সংকটে এটা সরকারের চমৎকার একটি উদ্যোগ। সরকারি সহায়তা পেলে আমাদের শাকসবজি কিনে খেতে হবে না।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জের কৃষক সুজাত মিয়া বলেন, আমরা বাসার ছাদে বেশ কিছুদিন ধরে শাকসবজি চাষ করে আসছি, এতে করে আমাদের শাকসবজির চাহিদা অনেকটা মিটে যায়। আর সরকারিভাবে বীজ, সার পেলে আমরা আরো ভালো করে শাকসবজি চাষ করতে পারব।
এ বিষয়ে নুরপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিকী বলেন, আজকে আমরা নুরপুর ইউনিয়নের ৩২ জনের তালিকা জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর জানান, সর্বনিম্ন এক শতক জমিতে কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন থেকে ৩২ জন করে কৃষক স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও চারা পাবেন।
২৫ জুন থেকে শায়েস্তাগঞ্জে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাবেন। যা সার, পরিচর্যা ও সবজি বাগান সুরক্ষা বাবদ খরচ করবেন। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকরা করোনাকালে শাক-সবজির সংকটে পড়বেন না বলে আশা করা যায়।
বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন কৃষকরা
বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন কৃষকরা
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কাঁচিচর এলাকার চরমাধবরাম গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছেলে মো. আব্দুল জলিল (৩৮)। পেশায় দিনমজুর। দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করেছেন। দিনমজুরের কাজ করে আয়ের টাকা থেকে পরিবারের কাছে কিছু অংশ পাঠিয়ে বাকি টাকা জমা করেন।
দীর্ঘসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কৃষিকাজ করার পর নিজে কিছু একটা করার মনস্থির করেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে ফিরে আসেন নিজ জেলা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রামে ফিরে জেলা শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিঠু মিয়ার কাঁচিচরের চরমাধবরাম গ্রামে থাকা ২৫ বিঘা পরিত্যক্ত জমি লিজ নেন।
জমিতে থাকা জঙ্গল পরিষ্কার করে দীর্ঘদিনের কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কোনো জনবল না খাটিয়ে একক শ্রমে ও নিজের প্রচেষ্টায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাত বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। এবং ৫০০ পেঁপের চারা লাগিয়েছিলেন। সেগুলোতে পেঁপে ধরায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন।
এছাড়া আদা চাষ করেছেন ২০ শতক জমিতে। এক একর জমিতে ২ হাজার ৫০০ পারটেক্স জাতের মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। ২০ শতক জমিতে বরবটি চাষ করেছেন। মরিচ ও পুঁইশাক চাষ করেছেন ২০ শতক জমিতে। মুলা ও পাটশাক লাগিয়েছেন ২০ শতক জমিতে। জমির বিভিন্ন অংশে প্রায় ৩০০ লেবু গাছ লাগিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ১৫০টি হাড়িভাঙা আমের গাছ লাগিয়েছেন।
২০ শতক জমিতে প্রায় ৩০০ পানি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। ২০ শতক জমিতে ঝিঙে। আপেল জাতের টমেটো লাগিয়েছেন ৫ শতক জমিতে। এবং লাল তীর হাইব্রিড জাতের ঢেঁড়শ ১০ শতক জমিতে। তিন জমিতে থাকা পুকুরে সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, রুইসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষ। এছাড়াও পুকুরের একদিকে প্রায় দুই বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে বিআরডিসি ও হাইব্রিড জাতের শিম চাষ করেছেন।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন গিয়ে জেলা সদরের চরমাধবরাম রাম এলাকায় আব্দুল জলিলের প্রজেক্ট ঘুরে শাক-সবজি খেতের এমন চিত্র দেখা যায়।
আব্দুল জলিল জানান, আমরা কৃষক পরিবার। এক সময় আমাদের অনেক জমিজমা ছিল। ধরলার ভাঙনে সবকিছু বিলীন হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেছি। আগে আরো তিনজন উদ্যোক্তা চেষ্টা করেও এই জমিতে কোনো কিছু তৈরি করতে সক্ষম হননি।
আমার একক শ্রম দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে এই শাক-সবজির খেত তৈরি করেছি। এই শাক-সবজি চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চাই। আশা রাখি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকা আয় করতে পারবো। আমি চাই আমার এই সবজি খেত দেখে এলাকার বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে নিজেদের বেকারত্ব দূর করুক।
আব্দুল জলিলের ভাই আব্দুল হাকিম বলেন, আব্দুল জলিল অনেক কষ্ট করে এই প্রজেক্টটি করেছেন। এই প্রজেক্টটি তার বেকারত্ব দূর করবে। এবং সে ভালো কিছু করতে পারবে। তার এই প্রচেষ্টা দেখে ইতিমধ্যে এলাকার দু-তিনজন যুবক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা রাখি এলাকার বেকার যুবকরা আব্দুল জলিলের প্রচেষ্টা দেখে নিজেরাও কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান বলেন, আব্দুল জলিল বেকার না থেকে নিজ প্রচেষ্টায় এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সে অত্যন্ত পরিশ্রমী। আশা রাখি সে ভালো কিছু করতে পারবে। এলাকার বেকার যুবকরা তাকে অনুসরণ করে নিজেরাও উদ্যোগী হবে বলে আমি মনে করি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ধানের চেয়ে শাক-সবজি অত্যন্ত লাভজনক। শাক-সবজি চাষে তেমন কীটনাশক ও স্প্রের প্রয়োজন হয় না।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী শাক-সবজি চাষ করলে ওই কৃষক এক বছরের মধ্যেই কয়েক প্রকারের শাক-সবজি চাষ করতে পারবেন। এবং শাক-সবজি চাষে খরচ কম থাকায় অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাক-সবজি চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাচীন পার্সিয়ায় জন্ম হয়েছিল পালংশাকের। তথ্য সে রকমই বলছে। এরপর এটি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন জনপদে। ৬৪৭ সালের দিকে এটি ‘পার্সিয়ান সবজি’ নামে ছড়িয়ে পড়ে ভারত এবং প্রাচীন চীনে নেপালের মাধ্যমে। মূলত সিল্ক রোড ধরেই ছড়িয়ে পড়ে এটি।
পালংশাকের আর এক নাম পার্সিয়ান সবজি
সেই থেকে মানুষ এটি খেয়েই চলেছে পনির দিয়ে, আলু দিয়ে, মাছ দিয়ে, মাংস দিয়ে কিংবা এমনি এমনি। আর ইদানীং পালংশাকের জুসও খাওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, সুদীর্ঘকাল ধরে কেন পালংশাক খেয়েই চলেছে? কারণ, এর মধ্যে রয়েছে এমন কিছু গুণ, যেগুলো মানুষকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করে চলেছে।বিজ্ঞাপন
পালংশাকের ৫টি গুণ
১. হাড় মজবুত ও গঠন: পালংশাক ভিটামিন কে–এর বড় উৎস। এই ভিটামিন অস্টিওক্যালক নামের একটি প্রোটিন উৎপাদন করে থাকে। অস্টিওক্যালক হাড়ে ক্যালসিয়ামকে স্থিতিশীল রাখে। এ ছাড়া পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এসবই হাড়ের গঠন ও মজবুত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
২. দৃষ্টিশক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ বাড়ানো: পালংশাকে থাকা জেক্সানথিন, লুটিন ও ক্লোরোফিল মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
পালংশাক ভিটামিন কে–এর বড় উৎস
৩. ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া: পালংশাকে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ। এটি মানুষের ত্বক ও শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ভিটামিন এ সিবাম উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিবাম চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
৪. ভিটামিন সি–এর বড় ক্ষেত্র: পালংশাকে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। বলা হয়ে থাকে, এটি ভিটামিন সি–এর বড় আধার। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে কী করে, তার বিস্তারিত বিবরণ মনে হয় প্রয়োজন নেই। তারপরও বলে রাখি, ভিটামিন সি মানুষের চোখের রোগ এবং কপালের বলিরেখা দূর করতে পারে, প্রসবপূর্ব সময়ে মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ভিটামিন সি কার্ডিওভাসকুলার রোগ দূর করতে সক্ষম। ভিটামিন সি-তে লুটিন থাকে। এটি ধমনির গা মোটা হওয়া ঠেকিয়ে মানুষের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৫. তরতাজা করে: পালংশাকে থাকে ম্যাগনেশিয়াম। এটি শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত পালংশাক খেলে তরতাজা থাকা যায়।
কয়েকটি রেসিপি
রেসিপি দিয়েছেন ফারাহ সুবর্ণা।
মুরগি-পালং সালাদ
কয়েকটি রেসিপি
উপকরণ:
পালংশাক ২ আঁটি (ছোট পালং হলে ভালো), কর্ন (ভুট্টার দানা) আধা কাপ, সেদ্ধ মুরগি অথবা চিকেন সসেজ আধা কাপ, আনার সিকি কাপ, জলপাই তেল ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা-চামচ, চিলি ফ্লেক্স ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ চা-চামচ, চিনি আধা চা-চামচ।
কয়েকটি রেসিপি
প্রণালি
ডাঁটা বাদ দিয়ে পালংশাক বেছে নিয়ে ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে দিয়ে এক মিনিট রেখে তুলে নিন। এবার বরফ পানিতে কিছুক্ষণ রেখে তুলে নিয়ে কিচেন টিস্যুতে ভালো করে মুছে হাত দিয়ে ছিঁড়ে রাখুন। কচি ভুট্টার দানা অল্প লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। মুরগি ব্যবহার করলে হাড় ছাড়ানো মুরগি ছোট টুকরা করে অল্প লবণ-হলুদ দিয়ে তেলে হালকা করে ভেজে নিন। চাইলে গ্রিল করা মুরগিও ব্যবহার করা যাবে। আর চিকেন সসেজ ব্যবহার করলে তা–ও ছোট ছোট টুকরা করে তেলে হালকা ভেজে নিন।
এবার ড্রেসিং তৈরির পালা। একটা পাত্রে অলিভ অয়েল, চিলি ফ্লেক্স, লেবুর রস, চিনি ও স্বাদমতো লবণ খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এতে ভুট্টার দানা, মুরগি অথবা চিকেন সসেজ মিশিয়ে নিন। হালকা হাতে পালংশাক আর আনার দানা ছড়িয়ে মিলিয়ে নিলেই সালাদ তৈরি। সেদ্ধ ডিম বা খোসা ছাড়ানো কমলা ওপরে ছড়িয়ে পরিবেশন করলে দেখতে ভালো দেখাবে। সালাদ সব সময় পরিবেশনের একদম আগে তৈরি করা উচিত। নাহলে পানি ছেড়ে দিয়ে নরম হয়ে যায়। এ ছাড়া মুরগি বা সসেজের পরিবর্তে চিংড়িও ব্যবহার করা যেতে পারে।বিজ্ঞাপন
ওটস-পালং পাকোড়া
ওটস-পালং পাকোড়া
উপকরণ:
পালংশাক ১ কাপ (মিহি কুচি), ওটস ৪ টেবিল চামচ (প্রয়োজনে কমবেশি করা যেতে পারে), কর্নফ্লাওয়ার ৪ টেবিল চামচ, ডিম ১টি, চিকেন স্টকের কিউব ১টি, পেঁয়াজ ১টি (কুচি), আদা ১ চা-চামচ (কুচি), কাঁচা মরিচ ৩-৪টি (কুচি), লবণ স্বাদমতো, তেল ভাজার জন্য।
ওটস-পালং পাকোড়া
প্রণালি
একটা পাত্রে সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন গোলা তৈরি করে নিন। প্যানে গরম তেলে প্রয়োজনমতো গোলা ঢেলে কম আঁচে দুই দিক সোনালি করে ভেজে নিন। পছন্দমতো সস বা চাটনির সঙ্গে গরম–গরম পরিবেশন করুন।
পালং পায়েস
পালং পায়েস
উপকরণ:
ডাঁটা ছাড়া পালংশাক ১ কাপ, গাজর ২টি, পোলাওয়ের চাল ৩ টেবিল চামচ, তরল দুধ ১ লিটার, কনডেনসড মিল্ক ১ টিন, ঘি ২ টেবিল চামচ, এলাচিগুঁড়া চা-চামচের তিন ভাগের এক ভাগ, গোলাপজল ১ চা-চামচ, বাদাম-আমন্ড-চেরি ৮-১০টি (সাজানোর জন্য)।
প্রণালি
পালং পায়েস
পোলাওয়ের চাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন দুই ঘণ্টা। পালংশাক সেদ্ধ করে ব্লেন্ডারে দিয়ে পিউরি করে নিন। গাজর মিহি করে গ্রেট করে নিন। দুধ জ্বাল দিয়ে একটা বলক উঠলে পানি ঝরানো পোলাওয়ের চাল হালকা ভেঙে দুধে দিয়ে দিন। অন্য একটি পাত্রে ঘি গরম করে গাজর দিয়ে বেশি আঁচে হালকা ভেজে (গাজরের কাঁচা গন্ধটা চলে গেলেই হবে) দুধের মধ্যে দিয়ে দিন। গাজর ভাজার সেই পাত্রে অল্প ঘি দিয়ে পালং পিউরি দিয়ে হালকা ভেজে নামিয়ে নিন। দুধের মধ্যে দেওয়া চাল আর গাজর ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে থকথকে হয়ে এলে প্রয়োজনমতো কনডেনসড মিল্ক আর এলাচিগুঁড়া মিশিয়ে দিন। গোলাপজলটাও এ সময় মিশিয়ে দিতে হবে। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে তারপর অল্প অল্প করে পালং পিউরি মেশান। পিউরি সবটা না-ও লাগতে পারে। হালকা সবুজ ভাব এলে পরিবেশন পাত্রে ঢেলে বাদামকুচি, লাল চেরি বা ভাজা গাজরকুচি দিয়ে সাজিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে তারপর পরিবেশন করুন।
প্রবাদ আছে—শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই। দেশের জনপ্রিয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক। বাজারে সারা বছরই কমবেশি পুঁইশাক পাওয়া যায়। ইলিশ-পুঁই ও চিংড়ি-পুঁই অনেকের অতি প্রিয় খাবার। নানা ধরনের ভিটামিনসমৃদ্ধ এই শাক এক দিকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
পুঁই লতাজাতীয় উদ্ভিদ। পুঁইগাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে পুঁইশাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটি নরম বহুশাখাযুক্ত উদ্ভিদ। এর মাংসল লতা দ্রুত বাড়ে, দৈর্ঘ্যে ১০ মিটারও হতে দেখা যায়। পুঁইয়ের মোটা, রসাল, হরতন আকৃতির পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে। পাতা মসৃণ, খানিকটা পিচ্ছিল ভাব আছে। এই শাক দুই ধরনের। একটি সবুজ পাতা ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটি সবুজ পাতা কিন্তু কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের, যা লাল পুঁই হিসেবে পরিচিত।
অন্যান্য শাকের মতো এতে অনেক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা ও ক্যালসিয়াম আছে। আমিষের পরিমাণও বেশি। এ ছাড়া এর মধ্যে আঁশের পরিমাণও অনেক।
পুঁইশাকের উপকারিতা
পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দেহের বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে।
পুঁইশাকে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, সেই সঙ্গে চুল মজবুত করে।
নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুবই কম।
পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
যাঁরা ত্বকে ব্রণের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য পুঁইশাক খুবই ভালো।
বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করে। এ ছাড়া পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এই শাক রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
পুঁইশাকের আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত উপশম হয়।
শরীরে খোসপাঁচড়া কিংবা ফোঁড়ার মতো অনাবশ্যক সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়তে পারদর্শী পুঁইশাক।
যাঁদের প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথা থাকে, নিয়মিত পুঁইশাক খেলে তাঁরা উপকার পাবেন খুব দ্রুত। তাই পরিবারের সবার স্বাস্থ্যসচেতনতায় খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন পুঁইশাক।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন