বিশ্ব
বাইডেনের জয়ে রাজপথে জনতার উল্লাস
নিজেদের পছন্দের নেতা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছে আমেরিকার জনতা। এখন তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ। ছবিতে দেখুন জো বাইডেনের জয়ের পরে আমেরিকানদের উল্লাস।
বাইডেন-হ্যারিস জুটি যে আমেরিকাকে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বহু সমর্থক। ডেলাওয়্যারে বহু দর্শকের চোখে দেখা গিয়েছে আনন্দাশ্রু। জয়ের উৎসবের আমেজটা আগে থেকেই ছিল ডেমোক্র্যাট শিবিরে। তবে তা সত্ত্বেও চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের মধ্যেও আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাননি বহু সমর্থক। তবে আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের নির্বাচনের খবরটা সরকারিভাবে ঘোষিত হওয়ামাত্রই সেই বাঁধ ভেঙেছে। বাইডেন-হ্যারিস জুটির জয়ে উল্লাস মেতে উঠেছেন তারা। জো বাইডেন-কমলা হ্যারিস জুটির সাফল্যে স্বাভাবিক ভাবেই আত্মহারা হয়েছেন সমর্থকেরাও। সরকারিভাবে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পকেটস্থ করার আগে থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে জয়ের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন বাইডেন-সমর্থকেরা। পেনসিলভেনিয়ায় সরকারিভাবে জয় ঘোষণার আগেই রাস্তায় নেমেছেন অনেকে। জয়ের পরও দেখা গিয়েছে ওই রাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় পোস্টার হাতে নেমে পড়েছেন সেখানকার নানা সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতীয় সময় রবিবার সকালে প্রথম ভাষণ দিয়েছেন বাইডেন। ডেলাওয়্যারে নিজের শহর উইলমিংটনের মঞ্চে ছিলেন তার জয়ের অংশীদার তথা ভাইস-প্রেসিডেন্টের পদে নির্বাচিত কমলা হ্যারিসও। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর আনন্দে যেন সংগীতের ছন্দে তাল মিলিয়েছেন তারা দু’জনা। নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে প্রথম থেকেই আমেরিকার সব মানুষের স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রæতি শোনা গিয়েছে বাইডেন-হ্যারিস জুটির মুখে। তার ফলও পেয়েছেন তারা। দেশের সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটে পেয়েছেন বাইডেন-হ্যারিস। নয়া জুটির সাফল্যে লস এঞ্জেলসের রাস্তায় নেমে পড়েছেন উচ্ছ্বসিত সমর্থকেরা। পরাজয়ের পরের দিনই যেন খানিকটা বেপরোয়া মনোভাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আমেরিকা জুড়ে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের উল্লাসের মাঝেই হোয়াইট হাউসে গল্ফে মেতেছেন তিনি। এই নির্বাচনী লড়াই যে এখনো বাকি, সে বিবৃতিও দিয়েছেন ট্রাম্প। এ দিন বিজয়ীর ভাষণে একে অপরকে ফের একটা সুযোগ দেয়ার কথা শোনা গিয়েছে বাইডেনের মুখে। বিরোধী রিপাবলিকানদের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আমেরিকার রাস্তাতেই মিলেমিশে আনন্দে মেতেছেন আম জনতা। ব্যলটে যারা সমর্থন জানাননি, তাদের হয়েও আগামী ৪ বছর কাজ করার অঙ্গীকার করতে শোনা গিয়েছে বাইডেনের কণ্ঠে। ডেলাওয়্যারের সভায় তার ভাষণ শুনে আপ্লুত জনতা রব তুলেছে, বা-ই-ডে-ন। হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে তুঙ্গে ওঠার আগে আমেরিকার মাটিতে ঘটে গিয়েছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের খুনের ঘটনা। এতে আমেরিকার সমাজে নিহিত বর্ণবৈষম্যের নির্মম সত্য আবার সামনে এসে পড়েছে। গোটা বিশ্বের কাছে উত্তাল করা ওই ঘটনা নিয়ে ট্রাম্পের কণ্ঠে সহানুভূতি বা নিন্দার কোনোটাই শোনা যায়নি। অনেকের মতে, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসকেই যেন অবহেলা করা হয়েছে তাতে। কমলা দেবী হ্যারিসকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করার মধ্যেই দিয়েই সমাজের একটি বড় অংশের কাছে যেন বার্তা দিতে চেয়েছেন বাইডেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত-আমেরিকান, এশীয়, হিসপ্যানিক, অভিবাসী অথবা এলজিবিটি সম্প্রদায় সমাজের সকল পক্ষের হয়ে মুখ খুলেছেন বাইডেন-হ্যারিস জুটি। আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর আম জনতার উদ্দেশে কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘আশাভরসা, বিজ্ঞান, সংঘবদ্ধতা এবং সত্যকেই বেছে নিয়েছেন আপনারা।’ এই ঘটনা যে আমেরিকার ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে, তা-ও মনে করছেন সমর্থকে করোনার মতো মহামারি নিয়ে ট্রাম্পের লাগামছাড়া মনোভাবও তার বিপক্ষে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। মাস্ক পরা নিয়ে তার বিরূপ মনোভাব অথবা আমেরিকায় সংক্রমণে রাশ টানতে ব্যর্থতাকেই ডেমোক্র্যাটরা ভোট জয়ে হাতিয়ার করেছেন। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ ট্রাম্পের বদলে বাইডেন-হ্যারিস জুটি যে সমর্থ হবেন, সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আমেরিকার ভাবী ভাইস-প্রেসিডেন্ট। আমেরিকা যে নতুন পথে চলতে প্রস্তুত, সে বিষয়েও আশাবাদী কমলা। আমেরিকার নির্বাচন বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করতে বাইডেনের হাতে ৫টি অস্ত্র কাজে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, করোনা পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে ২ নেতার দক্ষতা। ওয়াশিংটনের পিউ রিসার্ট সেন্টারের সমীক্ষায় দাবি, এ প্রসঙ্গে ভোটের আগে ট্রাম্পের থেকে ১৭ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। তিনবারের প্রচেষ্টার পর ওভাল অফিসে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন বাইডেন। অনেকের মতে, কোনো রকম শোরগোল ছাড়াই ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনে প্রচার করে যাওয়াটাও বাইডেনকে সাফল্য এনে দিয়েছে। ট্রাম্পের ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ইমেজ বা প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে কটূক্তির পরিবর্তে নিজেদের প্রতিশ্রুতিগুলো ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছেন বাইডেন-হ্যারিস। অনেকের মতে, সমাজের বড় অংশের কাছেই তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। বাইডেনের জয়ের পথে কাজে এসেছে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও। ৪ বছরে মেরুকরণের রাজনীতি, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের মনোভাবের জবাবে বিরোধী পক্ষকে নিজেদের শত্রু না ভাবার বাইডেনের নীতির প্রশংসা করেছেন অনেকেই। ব্যালটের তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। উদারনীতির বদলে মধ্যপন্থার পথ বেছে নেওয়াটাও বাইডেনের জয়ের পথ মসৃণ করেছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকদের একাংশ। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ বা বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষাদানের মতো নীতি বেছে নেননি বাইডেন। এর ফলে সমাজের একটি বড় অংশের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছেন বাইডেন। লকডাউনে ঘরবন্দি ভোটারদের আরও কাছে পৌঁছেছেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে হোয়াইট হাউস ছিনিয়ে নিলেও বিরোধী পক্ষকে শত্রু ভাবতে নারাজ জো বাইডেন। বরং জেতার পর প্রথম ভাষণেই বিভাজনের রাজনীতিকে দূরে ঠেলে সংঘবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার শোনা গিয়েছে তার কণ্ঠে। ডেমোক্র্যাটদের নীল বা রিপাবলিকানদের লাল রঙে রাঙানো কতগুলো রাজ্য নয়, আমেরিকাকে অখণ্ড রাষ্ট্র হিসাবেই দেখেন বলেও জানিয়েছেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। শুধুমাত্র সমর্থকেরাই নন, রানিং মেট হিসাবে একজন মহিলাকে বেছে নেয়ার জন্য বাইডেনের সাহসের তারিফ করেছেন কমলাও। নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পের বেপরোয়া মনোভাবকে বিশেষ গ্রাহ্যের মধ্যে আনছেন না ডেমোক্র্যাটরা। বিজয়ীর ভাষণ দিতে গিয়ে সমর্থকদের পাশাপাশি মুহূর্তের জন্য হলেও বাইডেনকেও দেখা গিয়েছে হাল্কা মেজাজে।
এগ্রোবিজ
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
এগ্রোবিজ
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
জৈব
জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
এগ্রোবিজ
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছাদকৃষি
সহজ পদ্ধতিতে টবে করুন কদবেল চাষ

ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন