আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বিশ্ব

‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিক : মুম্বাইতে যেভাবে চলছে শেখ মুজিবের জীবন নিয়ে ছবির শুটিং

ভারতে বিনোদনের রাজধানী মুম্বাইয়ে শহরতলির এক প্রান্তে পাহাড়, লেক আর গাছগাছালিতে ঘেরা দাদাসাহেব ফালকে ‘চিত্রনগরী’ বা ফিল্মি সিটি – সেখানেই দিনপনেরো আগে শুরু হয়েছে বহুপ্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের শুটিং।

অ্যারে পার্ক নামে একটা বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়ি অরণ্যের কোলে বিছোনো এই ফিল্ম সিটি, আপাতত তারই অন্তত ছ’টা লোকেশনে পড়েছে বঙ্গবন্ধুর সেট।

কোথাও টুঙ্গিপাড়ার নদীর ঘাট বা ফুটবল মাঠ, কোথাও আবার শেখ মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেল।

আসলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার মিলে তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগেই।

‘বঙ্গবন্ধু’ নামে এই ছবিটির সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে তিনজনের নামও প্রস্তাব করে ভারত, যার মধ্যে থেকে বলিউডের বর্ষীয়ান নির্মাতা শ্যাম বেনেগালকেই বেছে নেয় বাংলাদেশ।

কিন্তু এরপর কোভিড মহামারি ও আরো নানা কারণে সেই ছবির শুটিং বারে বারে বিলম্বিত হয়েছে। অবশেষে এ বছরের গত ২১ জানুয়ারি মুম্বাইতে ‘মহরতে’র মাধ্যমে শুরু হয়েছে ছবির প্রথম পর্বের কাজ।

মনিটরে চোখ পরিচালক শ্যাম বেনেগালের
ছবির ক্যাপশান,মনিটরে চোখ পরিচালক শ্যাম বেনেগালের

পরিচালক ভারতীয় হলেও ছবির প্রায় নব্বই শতাংশ অভিনেতাই অবশ্য বাংলাদেশের। আর তা ছাড়াও এটি প্রথমত একটি বাংলা ছবি, যা পরে ইংরেজি ও হিন্দিতে ডাব করা হবে।

ফিল্মের প্রযোজক দুটো দেশের সরকার – অথবা বলা যেতে পারে তাদের চলচ্চিত্র শাখা বিএফডিসি ও এনএফডিসি।

ফলে অর্থটা যে এখানে কোনও সমস্যা নয়, সেটে বিশাল আয়োজন আর কয়েকশো মানুষকে নিয়ে কর্মযজ্ঞ দেখলেই সেটা দিব্বি বোঝা যায়!

শ্যাম বেনেগালের কথা

অসম্ভব উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে এই পুরো কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছিয়াশি বছরের ‘তরুণ’ শ্যাম বেনেগাল।

ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই মুম্বাইতে কাঠফাটা রোদ আর তার সঙ্গে শরীর নিংড়ে নেওয়া আর্দ্রতা – এর মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে তিনি রোজ শুট করছেন টানা বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে।

‘কল-টাইম’ কখনও ভোর পাঁচটা, কখনও বেলা বারোটা। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে বেনেগাল স্যার কিন্তু রোজ সেটে হাজির – সঙ্গে তাঁর পুরো টিম।

“সেই প্রায় চল্লিশ বছর আগে আরোহণ নামে একটা বাংলা ছবি করেছিলাম, তারপর এটা আমার দ্বিতীয় বাংলা ছবি। যদিও দুটোর মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না”, হাসতে হাসতে বিবিসিকে বলছিলেন প্রবীণ পরিচালক।

বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল
ছবির ক্যাপশান,বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল

“আসলে এর আগেও গান্ধী, সুভাষ বোস, নেহরুর জীবন নিয়ে কাজকর্ম করেছি, এই জঁনর-টাই আমার খুব প্রিয়।”

“এবার বাঙালি জাতীয়তাবাদের নায়ককে নিয়ে কাজ করার এত বড় সুযোগ – সেই ড্রাইভটাই বোধহয় আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিচ্ছে”, পেঁপের টুকরো মুখে ফেলে স্মিত হেসে বলছিলেন শ্যাম বেনেগাল।

সেই সঙ্গেই তিনি জানালেন, মুম্বাইতে এখন ফিল্মের যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো মূলত শেখ মুজিবের জীবনের প্রথম পর্ব ও পারিবারিক অংশটুকুর – পরিচালকের কথায় যেটা ছবির ‘ডোমেস্টিক পার্ট’।

“এটা একটা খুব লম্বা কাজ, লং হল! এপ্রিলে ভারতের এই অংশটুকুর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর মনসুন শেষ হলে, ধরা যাক আগস্টের শেষ দিকে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ায় লোকেশন সরে যাবে বাংলাদেশের বিশাল ক্যানভাসে।”

“যেমন ধরুন শেখ মুজিবের বিশাল জনসভাগুলো। উনি তো আর দশটা মানুষের সামনে ভাষণ দিতেন না, তাঁর কথা শুনতে হয়তো পাঁচ লক্ষ মানুষের ভিড় হতো।”

“তো সেই জিনিস তো আর এখানে রিপ্রোডিউস করা সম্ভব নয়, বাংলাদেশেই ওটা করতে হবে”, বলছিলেন শ্যাম বেনেগাল।

'বঙ্গবন্ধু'র নামভূমিকায় অভিনয় করছেন আরেফিন শুভ
ছবির ক্যাপশান,’বঙ্গবন্ধু’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন আরেফিন শুভ

আরেফিন শুভর কথা

‘বঙ্গবন্ধু’র বায়োপিকে নামভূমিকায় অভিনয় করছেন বাংলাদেশের নামী চিত্রতারকা আরেফিন শুভ। বেশ কয়েক দফা অডিশন দেওয়ার পর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর নাম এই চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

“সত্যি বলতে কী সেই দিনটার পর আমার জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আমি যেন একটা অদ্ভুত মোডে ঢুকে গেছি”, শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ভ্যানিটি ভ্যানে বসে বিবিসিকে বলছিলেন আরেফিন।

একটু আগেই তাকে দেখেছি অনশন ধর্মঘটে শীর্ণ, দুর্বল শেখ মুজিবের মেকআপে।

ঘটনাচক্রে সেদিন ছিল আরেফিন শুভ-র জন্মদিন। অথচ রুগ্ণ, অনশনক্লিষ্ট চেহারাটা ফুটিয়ে তুলতে তিনি আগের রাত থেকে একদম না-খেয়ে আছেন – মেথড অ্যাক্টিংয়ের পাঠ যেরকমটা বলে!

‘বঙ্গবন্ধু’র সেই লুক প্রকাশ করার এখনও অনুমতি নেই, কাজেই আরেফিনের সঙ্গে কথা হল তিনি মেক-আপ তোলার পরই।

“বলে না যে ভালবাসা অন্ধ হয়? ভালোবাসার বা প্রেমের কোনও চোখ থাকে না? আমারও এখন যেন সেই অবস্থা, জানেন? কারণ আমি মানুষ শেখ মুজিবের প্রেমে পড়ে গেছি।”

শ্যুটিং লোকেশনে 'বঙ্গবন্ধু'র কলাকুশলীরা
ছবির ক্যাপশান,শ্যুটিং লোকেশনে ‘বঙ্গবন্ধু’র কলাকুশলীরা

“আসলে এই মানুষটার সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে গিয়ে, গবেষণা করতে গিয়ে, তার জীবনদর্শনটা উপলব্ধি করতে গিয়ে এই মানুষটা আমাকে একেবারে প্রেমে পাগল করে দিয়েছেন। আর সেই প্রেম থেকেই আমি কাজটা করছি।”

“আমি কিন্তু এখানে জাতির পিতা, রাজনীতিবিদ বা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের কথা বলছি না – বলছি মানুষ শেখ মুজিবের কথা”, সেই সঙ্গেই যোগ করেন আরেফিন শুভ।

“কাজেই প্রতিটা শট, প্রতিটা মুহুর্তই আমার কাছে কল্পনার মতো। আমি খালি ভাবছি উনি কি আমার কাজটা দেখতে পাচ্ছেন? কিছু কি বলতে চাইছেন?”

“উনি কি ভাবছেন এই গাধাটাকে কে এই চরিত্রটা দিয়েছে? না কি উনি খুশি হচ্ছেন?”, বলতে বলতে ধরে আসে আরেফিন শুভর কণ্ঠস্বর।

শেখ হাসিনা ও চিত্রনাট্যের ‘রাজনীতি’

‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন শ্যাম বেনেগালের বহুদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী শামা জাইদি, সঙ্গে ছিলেন অতুল তিওয়ারি।

প্রবাদপ্রতিম পরিচালক এম এস সথ্যুর স্ত্রী শামা নিজেও থিয়েটার ও চলচ্চিত্র দুনিয়ার একজন কিংবদন্তী, এর আগেও শ্যাম বেনেগালের বহু ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি।

শামা জাইদি, বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায়
ছবির ক্যাপশান,শামা জাইদি, বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায়

এই বিরাশি বছর বয়সেও তিনি প্রায় রোজই বঙ্গবন্ধুর সেটে আসছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাচ্ছেন।

শামা জাইদি বলছিলেন, শুধু জাতির নায়ক হিসেবে নন, এই ছবিতে তারা শেখ মুজিবকে ধরতে চেয়েছেন তাঁর একান্ত পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকেও।

“এ কারণেই আমরা যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি, প্রথমেই তাঁকে বলেছিলাম আমরা ছবিটা বানাতে চাই আপনার মায়ের চোখ দিয়ে, শেখ মুজিবের প্রিয় ‘রেণু’র চোখ দিয়ে।”

“এরপর টানা দুদিন ধরে শেখ হাসিনা আমাদের তাঁর মায়ের গল্প শুনিয়েছিলেন।”

“একজন নিরীহ গ্রামের মেয়ে, যে তাঁর স্বামীকে রাজনীতিতে আসতে দিতে চায় না – সেখান থেকে ফজলেতুন্নিসা মুজিব কীভাবে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর সার্থক অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠেছিলেন সেটাই তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন”, বলছিলেন শামা জাইদি।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই চিত্রনাট্যের ‘রাজনীতি’র দিকটাও শুধরে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।

তৈরি হচ্ছে টুঙ্গীপাড়ার নৌকা ঘাটের সেট
ছবির ক্যাপশান,তৈরি হচ্ছে টুঙ্গীপাড়ার নৌকা ঘাটের সেট

“শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন, নান্দনিক দিক থেকে আপনারা চিত্রনাট্যে যা খুশি করুন আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু চিত্রনাট্যে যে রাজনীতির অংশটা, সেটা কিন্তু নিজেই দেখে দিয়েছেন।”

বস্তুত রোজ ফজরের নামাজের পর শেখ হাসিনা নিজেই স্ক্রিপ্টটা নিয়ে ঘন্টাদুয়েক বসতেন। তারপর নোট নিয়ে আমাদের নানা মূল্যবান পরামর্শ দিতেন, যেগুলো চিত্রনাট্যে প্রতিফলিত হয়েছে”, বিবিসিকে জানালেন শামা জাইদি।

শেখ মুজিবের বাবা মায়ের কথা

যেদিন ফিল্ম স্টুডিওর সেটে বঙ্গবন্ধুর শুটিং দেখতে যাই, সেদিন ‘লেকডাউন’ লোকেশনে শ্যুট করা হচ্ছিল টুঙ্গিপাড়া গ্রামের নৌকাঘাটে বিশেষ একটি দৃশ্যের।

কারাগারে উনিশ দিনের টানা অনশন ধর্মঘটের পর মুক্তি পেয়েছেন তরুণ শেখ মুজিব, নৌকো করে তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে নিজের গ্রামে।

নদীর ঘাটে তাঁকে নিতে এসেছেন বাবা লুৎফর রহমান, খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন গ্রামবাসীরাও। পুরো গ্রামে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে, অনশনে দুর্বল মানুষটাকে ধরাধরি করে নৌকা থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন তারা।

এই বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন বাংলাদেশের বিনোদন জগতের সুপরিচিত নাম চঞ্চল চৌধুরী।

শেখ মুজিবের পিতার চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী
ছবির ক্যাপশান,শেখ মুজিবের পিতার চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী

“পিতার সঙ্গে শেখ মুজিবের আসলে একটা মাল্টি-ডায়মেনশনাল সম্পর্ক ছিল। বাপ-ব্যাটা একসঙ্গে ফুটবল খেলতেন, আরও অনেক কিছু করতেন যেগুলো সে আমলে খুব একটা দেখা যেত না”, বলছিলেন তিনি।

“আদর, সোহাগ, শাসন – সেই সম্পর্কের আসলে অনেকগুলো পরত ছিল। তার সব খুঁটিনাটি হয়তো চিত্রনাট্যে আসেনি, তার পরও যেটুকু এসেছে সেগুলো সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

“আর একটা জিনিস হল বঙ্গবন্ধুর পিতার চরিত্রে অভিনয় করাটা তো আমার কাছে সত্যিই বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ আমার বয়স বলি, যাই বলি কোনওটাই তো বাস্তবে সেরকমটা নয়”, হাসতে হাসতে বলেন চঞ্চল চৌধুরী।

“তা ছাড়া চরিত্রের যে সময়টাকে ধরছি সে সময়ের ঠিকঠাক রেফারেন্সও তো খুব একটা নেই, কাজেই চরিত্রটার রূপায়নে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাও কাজ করছে বলতে পারেন।”

এবং চঞ্চল চৌধুরী একা নন, বাংলাদেশের যে নামী অভিনেতারা এই ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত তারা প্রত্যেকেই খুব দরদ দিয়ে কাজটা করছেন, এবং যেন একটা অনাবিল ঘোরের মধ্যে আছেন।

যেমন বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুনের ভূমিকায় অভিনয় করা প্রবীণা অভিনেত্রী দিলারা জামান।

শেখ মুজিবের মায়ের ভূমিকায় রয়েছেন দিলারা জামান
ছবির ক্যাপশান,শেখ মুজিবের মায়ের ভূমিকায় রয়েছেন দিলারা জামান

এই আশি ছুঁই-ছুঁই বয়সে ডায়াবেটিস তাকে বেশ কাবু করে ফেলেছে, সকাল-বিকাল ইনসুলিনের ভরসাতেই থাকা। কিন্তু তারপরও এই কোভিডকালে তিনি বেশ ঝুঁকি নিয়েই মুম্বাই চলে এসেছেন, সেটে আসছেন রোজ সকাল-বিকেল।

দিলারা জামান বিবিসিকে বলছিলেন, “আসলে কি আমেরিকার পাট গুটিয়ে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন স্বপ্নেও ভাবিনি এত বড় একটা কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“কাজটা শেষ করতে পারলে হয়তো এটাই হবে আমার জীবনের শেষ কাজ, জানি না!”

“কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি এই ছাপ্পান্ন বা সাতান্ন বছরের অভিনয় কেরিয়ারে এটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠতম কাজ। কারণ জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যাকে বলা হয় – তাঁর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জীবনের এক পরম প্রাপ্তি।”

মুজিব কোট ও কলারের কারসাজি

শেখ মুজিবের নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট, পোশাক-আশাক আর বিখ্যাত ‘মুজিব কোট’ নিয়েও অনেক গবেষণা করেছে ‘টিম বঙ্গবন্ধু’।

এই মুভিতে কস্টিউম ডিজাইন করছেন পিয়া বেনেগাল, যার ঝুলিতে রয়েছে বলিউডের বহু ছবির জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা।

'বঙ্গবন্ধু'র কস্টিউম ডিজাইনার পিয়া বেনেগাল, কথা বলছেন বিবিসির সাথে
ছবির ক্যাপশান,’বঙ্গবন্ধু’র কস্টিউম ডিজাইনার পিয়া বেনেগাল, কথা বলছেন বিবিসির সাথে

ফিল্ম সিটির এক প্রান্তে তার নেতৃত্বে চলছে ‘বঙ্গবন্ধু’র শিল্পীদের শত শত পোশাক তৈরির কারখানা। অবিরাম সেলাই মেশিনের ঘড়ঘড় আর কাঁচির কারিকুরিতে তৈরি হচ্ছে পিরিওড ফিল্মের কস্টিউম।

‘স্মার্ট অ্যান্ড ড্যাশিং হ্যান্ডসাম’ শেখ মুজিবের পরিণত বয়সের ‘ড্রেস সেন্স’ মুগ্ধ করে রেখেছে পিয়া বেনেগালকেও।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “যদি ওঁনার মুজিব কোটের কথাই ধরি, তার যেমন চমৎকার কাট – তেমনি একটা দারুণ আইডিয়া হল সেই কোটের হোয়াইট ইনার কলার, যেটা রোজ পাল্টানো হত।”

“আমি ঠিক জানি না এই কলারের আইডিয়াটা মুজিবের নিজস্ব, না কি তাঁর গৃহিণীর – কিন্তু এই ঘাম আর ধুলোর দেশে এই আলাদা কলারের ভাবনাটা চমৎকার একটা কনসেপ্ট।”

“একটা কোটের জন্য আসলে অনেকগুলো কলার থাকত – আর কোট তো আর রোজ কাচাকুচি করা সম্ভব নয়, কিন্তু নোংরা হলেই সাদা কলারটা পাল্টে নেওয়া খুব সোজা”, কোটের আলাদা কলারের উচ্ছ্বসিত তারিফ করে বলছিলেন পিয়া।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে প্রযোজনা করছে এই ছবিটি
ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে প্রযোজনা করছে এই ছবিটি

এভাবেই এই ফিল্মের শ্যুটিংয়ে ছোটখাটো নানা খুঁটিনাটির মধ্যে দিয়ে চলছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন করে আবিষ্কারের পালা।

আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে যে এই বায়োপিকের শ্যুটিং শুরু হল সেটাকেও নিছক সমাপতন ভাবার কোনও কারণ নেই।

বস্তুত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘কালচারাল ডিপ্লোম্যাসি’ বা সাংস্কৃতিক কূটনীতিরই একটা মাইলফলক হয়ে থাকছে এই ফিল্ম ‘বঙ্গবন্ধু’।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@theagronews.com, theagronewsbd@gmail.com