বিশ্ব
পোষা প্রাণী: ঘোড়ার দাম ছয় কোটি ডলার, বিশ্বের সবচেয়ে দামী কুকুর, বেড়াল, কবুতর যেগুলো

বিগ ডেইভ’ নামের একটি হাঁসকে একদিন নিলামে ওঠানো হল। বিগ ডেইভ ছিল পুরস্কারজয়ী পুরুষ মাস্কভি হাঁস – যেটি হাঁস প্রজননকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বেশ ভালো জাতের হাঁস ছিল বিগ ডেইভ।
হাঁসটির মালিক গ্রাহাম হিকস সেসময় বিবিসিকে বলেছিলেন, “তার মেজাজ খুবই চমৎকার। সে সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে, সবসময় নিজের খেয়াল রাখে। আর আপনি যখন তাকে প্রদর্শনীতে নিয়ে আসবেন, সে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।”
বিগ ডেইভের এই খ্যাতির কথা স্বীকার করেন অন্যান্যরাও। বিগ ডেইভকে ‘বড় চরিত্র’ বলে মনে করেন হিকসের মত আরেকজন প্রজননকারী জ্যানিস হটন-ওয়ালেস, যিনি যুক্তরাজ্যের টার্কি ক্লাবের সেক্রেটারি। গ্রাহাম হিকসের সাথে সবসময়ই তার ভালো সম্পর্ক ছিল।
গ্রাহাম হিকস যখন প্রজননকারী হিসেবে অবসরে যাচ্ছিলেন, তখন বিগ ডেইভসহ তার অন্যান্য পাখি ও হাঁসও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন।
সেসময় বিগ ডেইভকে কেনার জন্য বিদেশ থেকে প্রজননকারীরাও আগ্রহী হয়ে উঠছিল বলে গুজব ছড়িয়েছিল। বিগ ডেইভের জিনের জন্যই হাঁসটির চাহিদা বেড়েছিল।

নিলাম শুরু হওয়ার পর অবশ্য বেশ চমকপ্রদ একটি ঘটনা ঘটে।
হাঁসটির মালিক গ্রাহাম হিকসকে না জানিয়ে তার বন্ধু হটন-ওয়ালেস একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে, যাদের উদ্দেশ্য ছিল ডেইভকে কিনে নেয়া।
হটন-ওয়ালেস ডেইভের দাম হাঁকা শুরু করেন ৯০০ পাউন্ড দিয়ে। ধীরে ধীরে নিলামে ডেইভের দাম চড়তে থাকে।
এক পর্যায়ে হটন-ওয়ালেস বিগ ডেইভকে কিনে নেন ১৫০০ পাউন্ড বা ২,০৭০ ডলারের বিনিময়ে – যা পৃথিবীর যে কোনো হাঁসের জন্য সবচেয়ে বেশি দাম।
কেনার পর সাথে সাথেই সিন্ডিকেট বিগ ডেইভকে তার পুরনো মালিক গ্রাহাম হিকসের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। আসলে হটন-ওয়ালেস তার পুরনো বন্ধু হিকসকে তার অবসর উপলক্ষে উপহার দিতে চাচ্ছিলেন, তাই হিকসের প্রিয় হাঁস বিগ ডেইভকেই কিনে আবার তারই কাছে ফেরত দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
সেদিন ডেইভ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী হাঁস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পাশাপাশি সে যোগ দেয় হাতে গোনা কয়েকটি প্রাণীর একটি তালিকায় যাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিগ ডেইভ নিজেকে হাঁসদের মধ্যে সবচেয়ে দামী দাবি করতে পারে, কিন্তু এমন আরো অনেক প্রাণীই রয়েছে যেগুলোর দাম বিগ ডেইভের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
এরপর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণী তাহলে কোনগুলো? আর এগুলোর দাম নির্ধারণই বা হয় কী করে?
এসব প্রশ্নের উত্তর আপাত দৃষ্টিতে যতটা সহজ বলে মনে হয়, আসলে ততটাও সহজ নয়।
এই প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ শুরু করার আগে বলে নেয়া ভালো যে, জীবিত প্রাণীকে তাদের মূল্যের ভিত্তিতে র্যাঙ্কিংয়ে ফেলার বিষয়টি অনেকের কাছে অরুচিকর মনে হতে পারে।

পশুপাখির অর্থনৈতিক মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
পশুপাখিদের কী অর্থনৈতিক মূল্যের ভিত্তিতে পরিমাপ করা উচিৎ? জীবিত কোনো প্রাণীর দাম নির্ধারণ করাও কি আসলে উচিৎ?
জীবিত প্রাণী বা প্রকৃতির কোনো উপাদানের দাম নির্ধারণ করার ধারনাটির বিরোধিতা করেন অনেকেই। কিন্তু বাস্তবতা হল, পশুপাখি সবসময়ই মানুষের অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
পশুপাখির মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে মানুষ যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, এবং প্রাণী কেনার ক্ষেত্রে যে কখনো কখনো পরিমাণ দাম দিতে রাজী থাকে – তা পর্যবেক্ষণ করলে আমাদের বিশ্ব সম্পর্কে বিচিত্র তথ্য পাওয়া যায়।
পশুপাখি কেনার ক্ষেত্রে মাথা ঘুরিয়ে দেয়া দামের নজির দেখা যায় কৃষিক্ষেত্রে, যেখানে পশুপাখি কেনা-বেচা সবসময়ই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত ছিল।
যেমন, খামারে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, এমন একটি প্রাণী ভেড়ার কথাই ধরুন।
কিছু কিছু অনুমান অনুযায়ী বিশ্বে মোট ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি, আর এর মধ্যে অধিকাংশই খুব একটা দামী নয়।

তবে যুক্তরাজ্যের কোনো এক জায়গায় ‘ডাবল ডায়মন্ড’ নামের একটি বিশেষ ভেড়া রয়েছে, যেটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি।
ভেড়াটির দামের পেছনে কারণ এর জিন। নেদারল্যান্ডসের একটি ছোট দ্বীপে পাওয়া যাওয়া টেক্সেল জাতের ভেড়ার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এটি।
২০২০ সালের শেষদিকে একদল কৃষকের একটি সংঘ একটি নিলাম থেকে এই ভেড়াটি কেনে সাড়ে তিন লাখ গিনি – যা যুক্তরাজ্যে গবাদি পশু নিলামের জন্য ব্যবহৃত মুদ্রা – বা চার লাখ ৯০ হাজার ৫০০ ডলারে।
সেসময় ঐ কৃষকদের একজন বিবিসিকে বলেছিলেন, “একটা ভেড়ার জন্য এই মূল্য সত্যিই অস্বাভাবিক। কিন্তু আমরা এর জিনের জন্য ভেড়াটি কিনেছি।”
খামারে থাকা কুকুরের মধ্যে সবচেয়ে দামী কুকুরটির নাম কিম। কলি জাতের এই কুকুরটি ২০২১ সালের শুরুর দিকে ওয়েলসে কেনা হয় ২৮ হাজার ৪৫৫ পাউন্ড বা ৩৮ হাজার ৯০০ ডলারে।
তবে খামারের প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম গরু আর ষাঁড়ের। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিল হলস্টেইন জাতের একটি গাভীর নিলাম।
মিসি নামের ঐ গাভীটি ২০০৯ সালে ১২ লাখ ডলারে কেনা হয়েছিল।
এর দশ বছর পর ২০১৯ সালে অ্যাঙ্গাস জাতের একটি ষাঁড়, যেটির নাম ছিল ‘এসএভি আমেরিকা ৮০১৮’, ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এক উপদেষ্টার কাছে বিক্রি হয় ১৫.১ লাখ ডলারে। টাকায় রূপান্তর করলে অঙ্কটা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি।

পোষা প্রাণী
শুধু খামার শিল্পেই যে প্রাণী কেনাবেচার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক উচ্চ দামের নজির দেখা যায়, তা নয়। কিছু মানুষ পোষা প্রাণীর জন্যও বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করে থাকে।
পোষা প্রাণীর মধ্যে কুকুরের দামের হিসেবে সবচেয়ে বেশি দাম ছিল একটি তিব্বতি ম্যাস্টিফের, যেটির নাম বিগ স্প্ল্যাশ।
এক কোটি চাইনিজ ইউয়ান বা ১৫.৫ লাখ ডলারে এই কুকুরটি কেনেন চীনা একজন ব্যবসায়ী। গত কিছু বছর ধরে চীনে ম্যাস্টিফ জাতের কুকুরকে অনেকটা আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কুকুরের পর এবার বিড়ালের দামের দিকে নজর দেয়া যাক। ঘরে পালন করা বিড়ালের মধ্যে অন্যতম মূল্যবান ধারণা করা হয় সাভানাহ জাতের বিড়ালকে – এই জাতের একটি বিড়ালছানার দাম হতে পারে ২০,০০০ ডলার বা প্রায় ১৭ লাখ টাকা।
একটি বিড়ালের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড কী, তা গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নেই।
কুকুরের মত বিড়ালের দাম সরাসরি মিলিয়ন ডলার না ছাড়ালেও অন্য পদ্ধতিতে গৃহপালিত বিড়ালের মূল্য যাচাই করার নজির আছে।

গিনেজের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বিড়াল ছিল ব্ল্যাকি।
ব্ল্যাকির মালিক ছিলেন একজন অ্যান্টিক পণ্যের ডিলার। তিনি মারা যাবার সময় তার পরিবারের সদস্যদের উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু না দিয়ে ব্ল্যাকিকে দিয়ে যাওয়ায় ১৯৮৮ সালে প্রায় ৯৭ লাখ ডলার (৮০ কোটি টাকা) সম্পত্তির মালিক হয় বিড়ালটি।
তবে এই উদাহরণের সাথে আরেকটি উদাহরণ আনতে হয় – টোবি নামের একটি কুকুর একসময় এর চেয়েও অনেক বেশি সম্পদের মালিক হয়েছিল।
১৯৩১ সালে নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথে জড়িত ধনী পরিবারের শেষ উত্তরসূরি এলা ওয়েনডেল মারা যাওয়ার পর টোবি দেড় কোটি ডলারের সম্পদের মালিকানা লাভ করেছিল।
তবে আপনি যদি আয় করা সম্পদের হিসেব করেন, তাহলে সবচেয়ে মূ্ল্যবান পোষা প্রাণীর তালিকায় ‘গ্রাম্পি ক্যাট’ টারডার সস সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
কিছু অনুমান অনুযায়ী, মৃত্যুর আগে তার বাজার মূল্য ছিল আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ডলার।

প্রতিযোগিতার প্রাণী
গিনেজের রেকর্ড অনুযায়ী, যেসব প্রাণী কেনার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই এমন প্রাণী যারা প্রতিযোগিতায় রেস করতে পারে।
ওজনের হিসেবে এই বিভাগে সবচেয়ে দামী প্রাণী হবে একটি পাখি।
২০২০ সালের শেষদিকে চীনের এক ক্রেতা ‘নিউ কিম’ নামের এই কবুতরটি কিনে নেন ১৬ লাখ ইউরো দাম দিয়ে।
তবে স্বাভাবিকভাবেই রেসের ঘোড়া এই ধরণের প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামী হিসেবে বিবেচিত হয়।
গিনেজের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে এক কোটি ৩১ লাখ ডলার দিয়ে কেনা প্রায় দুই বছর বয়সী ঘোড়া ‘সিয়াটল ড্যান্সার’ বিশ্বের সবচেয়ে দামী রেসের ঘোড়া।
এরপর এর চেয়ে বেশি দামে আরো কিছু ঘোড়া বিক্রি হয়েছে। যেমন ২০০০ সালে ফুসাইচি পেগাসাস নামের একটি ঘোড়া বিক্রি হয় ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার দামে।
বন্যপ্রাণীর দাম কীভাবে ঠিক হয়?
পোষা প্রাণী বা রেস করা প্রাণীর মত বন্যপ্রাণীর দামও কি একই পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়? নাকি বন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে হিসেবটা অন্যরকম?
বন্যপ্রাণীর দাম নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেটি পোষা প্রাণী বা গবাদি পশুর দাম যেভাবে নির্ণয় করা হয়, তার চেয়ে ভিন্নভাবে নির্ধারণ করা হয়।
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা পরিবেশের বাস্তুসংস্থানের সব উপাদানের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করছেন প্রত্যেকটি উপাদান মানবজাতিকে কী ‘সেবা’ দেয়, তার ভিত্তিতে। এই ‘সেবা’র মধ্যে খাদ্য থেকে শুরু করে কার্বন গ্রহণের মাত্রা, পরাগায়ন অথবা পর্যটনের মত বিষয়ও বিবেচনা করা হয়।

তবে অনেক বিজ্ঞানীই বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের উপাদানকে মূল্যায়নের এই ধারণার বিপক্ষে। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক মূল্য দিয়ে মেপে এই ধরণের বিষয়গুলোর যাচাই করা উচিৎ নয়।
২০১৫ সালে বিবিসি আর্থ পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী এবং উপাদানের মূল্যায়নের চেষ্টা করে একটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে পরিবেশের একেকটি উপাদান বা প্রাণীর মোট মূল্যের একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
যেমন, পর্যটন শিল্পের জন্য হাঙ্গরের অনুমিত মূল্য ছিল প্রায় ৯৫ কোটি ডলার আর কানাডার ‘পোলার বেয়ার’ বা শ্বেত ভালুকের মূল্য ধরা হয়েছিল ৬৩০ কোটি ডলার।
এই অনুমান থেকে একটি প্রাণীর দামের আনুমানিক মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন, কানাডায় সেসময় শ্বেত ভালুকের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার, কাজেই প্রতিটি ভালুকের দাম সেসময় ধরা হয়েছিল আনুমানিক চার লাখ ডলার।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রালফ চামি নামের এক কর্মকর্তা তার সহকর্মীদের নিয়ে ‘একক প্রাণী’র দাম আরো সঠিকভাবে নির্ণয়ের চেষ্টা চালিয়েছেন।
তাদের লক্ষ্য ছিল আফ্রিকার জঙ্গলের হাতি এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের বড় তিমির মূল্য নির্ধারণ করা।
চামি ও তার সহকর্মীদের হিসেব অনুযায়ী একেকটি হাতির মূল্য আসে ১৮ লাখ ডলার।

অন্যদিকে প্রজাতিভেদে তিমির মূল্য ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার ডলার থেকে ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত।
আরেকটি প্রাণীকে, যা গিনেজের তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে মূল্যবান চিড়িয়াখানার প্রাণী এবং যেটি বন্য প্রাণীদের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে মূল্যবান হতে পারে, অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয় – সেটি হল জায়ান্ট পান্ডা।
এর কারণ বিশ্বের সব পান্ডার মালিকানা চীনের হাতে এবং বিশ্বের অনেক চিড়িয়াখানাকে – বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চিড়িয়াখানাগুলো – পান্ডা রাখার খরচ বাবদ চীনকে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়; যা বছরে ১০ লাখ ডলার পর্যন্তও হয়ে থাকে।
আর পান্ডার বাচ্চা হলে চীনকে এককালীন ছয় লাখ ডলার দিতে হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।
সুতরাং সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণীর তালিকায় পান্ডা, হাতি, তিমি বা ঘোড়ার মত প্রাণী যেমন রয়েছে, তেমনি বিগ ডেইভের মত হাঁসও রয়েছে; যেটি প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবান না হলেও সবচেয়ে বেশি দামের প্রাণীর তালিকায় ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে।
এগ্রোবিজ
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
এগ্রোবিজ
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
জৈব
জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
এগ্রোবিজ
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছাদকৃষি
সহজ পদ্ধতিতে টবে করুন কদবেল চাষ

ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন