ফসল
পেঁয়াজের পর চালের দাম কেন বেড়ে চলেছে?
Published
2 weeks agoon
By
bbc bangla
বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে হুলস্থূল কাণ্ড চলার মধ্যেই সব ধরণের চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
আড়তদার, মিল মালিক কিংবা খুচরো বিক্রেতা- সবাই একবাক্যে বলছেন এ সময়ে এভাবে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারনিজেও বলেছেন যে দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
এমনকি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে যাতে করে কোনো সংকট তৈরি না হয় সেজন্য অগ্রিম সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলো মন্ত্রণালয় ।
বাজারে দামের হেরফের
টিসিবির হিসেবে আজ চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত আর নাজির/মিনিকেট সাধারণ মান ৪৮থেকে ৫৩ টাকা; আর উত্তম মানের চাল ৫৩ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। আর মোটা চাল অর্থাৎ স্বর্ণা/চায়না/ইরি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
অথচ এক সপ্তাহ আগে এগারই নভেম্বর এই মোটা চাল বিক্রি হয়েছ ২৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। এমনকি সরু বা চিকন চাল ছিলো ৪৫ তেকে ৫৬ টাকার মধ্যে।
তবে গত বছর নভেম্বরের এই সময়েও চালের দাম হুট করে বেড়ে গিয়েছিলো।
তারও আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তুমুল শোরগোল শুরু হলে তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী দুজন চালকল নেতার বিরুদ্ধে মজুতদারির অভিযোগ এনে তাদের গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
দাম বাড়ছে কেনো?
তবে এবার পেঁয়াজ নিয়ে যখন তুমুল আলোচনার ঝড় চলছে, তার মধ্যে চালের দাম বাড়ছে কেনো – তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
এমন প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার হোসেন বলছেন, যে দামে এখন চাল বিক্রি হচ্ছে সেটি বছরের এ সময়ে সাধারণত যে দামে চাল বিক্রি হয় তার চেয়ে কেজি প্রতি গড়ে ৪/৫ টাকা করে বেশি।
“দাম এখন একটু বাড়তির দিকে। এক সপ্তাহ আগেও যে দামে চাল বিক্রি করেছি, এখন তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ মিল থেকে আমাদের কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে”।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোটা চালের দাম ২/১ টাকা বাড়লেও নাজিরশাইল চাল খুব একটা বাড়েনি। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তরা যে চাল বেশি কেনেন সেই মিনিকেট চাল।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা বলছেন যে, মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে বেশি দামে ধান কেনার কথা বলছেন।
“বাজার এখন চড়া। সাধারণত চিকন চাল ও মিনিকেটের দাম এসময় কম থাকে। কিন্তু এখন বাজারে সেটি দেখা যাচ্ছে না। মিলাররা বলছেন তাদের বেশি দাম দিয়ে নতুন ধান কিনতে হচ্ছে”।
মহিউদ্দিন রাজা বলছেন, আগামী বৈশাখ মাসের আগে চালের দাম কমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে।
দাম বাড়াননি – বলছেন মিল মালিকরা
পাইকারি পর্যায়ে বিক্রেতারা মিল মালিকদের দায়ী করলেও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ধানের দাম একটু বেড়েছে বলে মিনিকেট চালের দাম সামান্য বেড়েছে।
“যে ধানটা আমরা ২০/২২ দিন আগেও ৮৫০ টাকায় কিনেছি সেটা এখন ১০২০ টাকা ধরে কিনছি। এ কারণে সামান্য বেড়েছে যা খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়”।
তিনি বলেন, চিকন (মিনিকেট) চালটা আগে অল্প লোক কিনতো কিন্তু দাম কম থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই খাওয়া শুরু করেছে। যদিও যে ধান থেকে চালটা হয় সেটি বছরে মাত্র একবার উৎপাদন হয়।
“অন্যদিকে পরিবহন সেক্টরেও কিছুটা অস্থিরতা আছে। ট্রাক নিয়ে রাস্তায় নামতে পারছে না। কিন্তু মিনিকেটে ২/১ টাকার ব্যবধান ছাড়া খুচরা পর্যায়ে অন্য কোনো চালের দাম বাড়ার সুযোগই নেই। যারা বাড়াচ্ছেন দায়টা তাদের”।
ঢাকায় ভোক্তা পর্যায়ে ‘কোনো অদৃশ্য শক্তি’ দাম বাড়ায় সেটি তাদের জানা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেড় মাস আগেও চালের খুব একটা বেচাকেনা ছিলো না কিন্তু এখন হঠাৎ করেই বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।
‘দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই’
এদিকে চালের দাম নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানার খানম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করেছি। নিশ্চিত করে বলতে চাই যে এক টাকাও দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই”।
তিনি বলেন, মিল মালিকরা বলছেন তারা দাম বাড়াননি এখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কিছু করলে তার জন্য আইন আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটা দেখবে।
“আমাদের উৎপাদন সর্বোচ্চ। মজুতও যথেষ্ট। যদিও মিল মালিকরা বলছেন সড়ক আইনের কারণে পরিবহন নিয়ে একটু সংকট চলছে কিন্তু তাতেও খুব একটা হেরফের হওয়ার কথা নয়”।
You may like
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
-
পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে ভারতে; ভরসা তুরস্ক থেকে আমদানি
-
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
-
পেঁয়াজ: বাংলাদেশ কি পারবে ভারতের উপর নির্ভরতা কাটাতে?
-
কফি সংকট যেভাবে আপনার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে
-
বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে মাংস কম খেতে হবে?
-
ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল
-
জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান
ফসল
পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে ভারতে; ভরসা তুরস্ক থেকে আমদানি
Published
4 days agoon
December 5, 2019By
bbc bangla
পেঁয়াজের দাম পশ্চিমবঙ্গের বাজারে প্রতি কিলো ১০০ টাকা ছুঁয়েছিল আগেই। কিন্তু হঠাৎই বুধবার থেকে সেই দাম বেড়ে ১৫০ টাকা কিলো হয়ে গেছে।
কলকাতা আর পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু বাজারে পেঁয়াজের এই দামই নেওয়া হচ্ছে। কোথাও সেটা দশ টাকা কম।
তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে সবজি বিপণন ব্যবস্থা আছে, সেখানে প্রতি কিলো ৫৯ টাকা দরে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ৮৮ টাকায় কেনা ওই পেঁয়াজ ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ঐ সরকারি দোকান আর চলমান ভ্যান হাতে গোনা, যার ফলে সাধারণ মানুষকে ১৫০ বা ১৪০ টাকা দিয়েই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
ওদিকে দিল্লিতেও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা পেরিয়েছে।
সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে বিরোধীরা সংসদে সরব হয়েছে।
সরকার বলছে, যেখানে পেঁয়াজ চাষ সবচেয়ে বেশি হয়, সেই মহারাষ্ট্রে ব্যাপক বন্যার ফলে উৎপাদন মার খেয়েছে। সরকার কম দামে পেঁয়াজ সরবরাহ করার চেষ্টা করছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।

আর অন্যান্য এলাকায় যারা পেঁয়াজ চাষ করেন, তারা বলছেন কয়েক মাস আগেও ছয়-সাড়ে ছয় টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ক্ষেত থেকে।
সেই দরে অবশ্য চাষিদের লাভ প্রায় কিছুই থাকে না।
তবু সেই পেঁয়াজই মুজত করে এখন আগুন দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে বা খুচরো দোকানে পেঁয়াজের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলেই সন্দেহ রয়েছে।
বাজারের চাহিদা পূরণে ভারত নিজেই বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। বুধবার তুরস্ক থেকে বড়সড় এক চালান এসে পৌঁছেছে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে, যে চালানে ১১,০০০ টন পেঁয়াজ আনা হয়েছে।
পেঁয়াজ বিপণনের দায়িত্বে আছে ন্যাফেড বলে যে সরকারি এজেন্সি, তাদের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৮০০ টন পেঁয়াজ আনার অর্ডার পেশ করেছে বলে রাজ্য সরকারের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
ঐ পেঁয়াজ মুম্বাই বন্দরে ৫৫ টাকা কিলো দরে আনা হবে, যার সঙ্গে পরিবহন খরচ প্রভৃতি যোগ করে কলকাতায় তা ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে পিটিআই জানাচ্ছে।
পেঁয়াজ যত দুর্মূল্য হচ্ছে, ততই পেঁয়াজ চুরিও বেড়ে গেছে।

মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন যাতে পেঁয়াজ চুরি না হয়।
আবার পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি মুদি দোকান থেকে গত সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজার টাকা মূল্যের পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সুতাহাটা এলাকার ওই দোকানের তালা ভেঙ্গে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ অর্থ বা অন্য কিছুই চুরি হয়নি। চোরেরা নিয়ে গেছে শুধু ১০ বস্তা পেঁয়াজ।
আবার পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠায় বর্ধমান জেলায় এক বিয়েতে নবদম্পতি বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন ৩০ কিলো পেঁয়াজ।
পেঁয়াজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয়েছে নানা মীম আর পোস্টারও।

ফসল
পেঁয়াজ: বাংলাদেশ কি পারবে ভারতের উপর নির্ভরতা কাটাতে?
Published
1 week agoon
November 29, 2019By
bbc bangla
যেসব ভোগ্যপণ্যের জন্য বাংলাদেশের ভোক্তারা ভারতের উপর অনেক নির্ভরশীল তার মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেবার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন আকাশচুম্বী।
ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হাবার পরে সেদেশ থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে।
গরুর মাংসের দাম এক লাফে কেজি প্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
তীব্র সংকট তৈরি হয় কোরবানির পশু সংগ্রহের ক্ষেত্রে। প্রথম দু’বছর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে কোরবানির জন্য গরু খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়েছিল অনেকের জন্য।
এই সংকটের কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার গড়ে উঠে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের কোরবানির পশুর বাজার ভারতের উপর নির্ভরশীল নয়।
পেঁয়াজের এই নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধি যে প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে সেটি হচ্ছে, ভারতের উপর যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বাংলাদেশ কি বেরিয়ে আসতে পারবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “আমাদের কখনোই উচিত হবে না একটি বাজারের উপর নির্ভরশীল হওয়া।”
তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুধু ভারতের উপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প বাজারও খুঁজতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের ভেতরেও পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক বিদিশার মতে, পেঁয়াজের জন্য ভারতের উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়ার একটি দুটো কারণ রয়েছে।
প্রথমত, ঐতিহাসিকভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের পেঁয়াজের গুণগত মান এবং দাম বিবেচনা করলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক বিদিশা।

বাংলাদেশ কি ভারত–নির্ভরতা কাটাতে পারবে?
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান মনে করেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাবার পর বাংলাদেশের গরুর খামারিরা যে সফলতা দেখিয়েছে, সেটি পেঁয়াজ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সম্ভব।
“প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে পেঁয়াজ যে পরিমাণ উৎপাদন হয়, ভারত থেকে যদি পেঁয়াজ না আসতো তাহলে হয়তো বাংলাদেশের কৃষক উৎপাদিত পেঁয়াজের ভালো দাম পেতো”
কৃষি সচিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা পায়। ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসলে বাংলাদেশের কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৩০-৩২ টাকা পেতো।
সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময় প্রায় পাঁচ লাখ টন নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে থাকে।
অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি হয় ১১ লাখ টন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ প্রয়োজন।
“আমাদের চাষীদের যে সক্ষমতা আছে, সেক্ষেত্রে তারা খুব সহজেই ৩০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি যখন চাষীরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে নিয়ে আসবে, তখন যেন ভারত থেকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে,” বলছিলেন কৃষি সচিব।

তিনি বলেন, কৃষকরা যদি পেঁয়াজের দাম পায়, তাহলে পরবর্তী বছর আরো বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবে।
বাংলাদেশের যদি পেঁয়াজ উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদা পূরণের সক্ষমতা থাকে, তাহলে এতদিন সেটি না করে ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলো কেন?
কৃষি সচিব বলছেন, বিষয়টি নিয়ে অতীতে ভিন্ন চিন্তা করা হয়নি।
“কৃষক যখন উৎপাদন করে তখন বিদেশ থেকে আমদানি করলে দাম অনেক নেমে যায়। এটা যাতে না হয়। এটা হলে পরবর্তী বছর কৃষক উৎপাদন করতে আগ্রহী হয় না।”
“ভারত থেকে বা দেশের বাইরে থেকে যে পেঁয়াজ আসবে, সেটা যদি না আসে তাহলে সারা বছর হয়তো আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকবে। হয়তো কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা থাকবে, কিন্তু কখনো আড়াইশ টাকায় উঠবে না,” বলছিলেন কৃষি সচিব।
ফসল
কফি সংকট যেভাবে আপনার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে
Published
2 weeks agoon
November 29, 2019By
bbc bangla
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কফি কাপের দাম না কমলেও, বিশ্বের অনেক স্থানে চাষিরা কফি চাষ বন্ধ করে অন্য ফসল চাষ শুরু করেছেন, ভিন্ন চাকরি খুঁজছেন বা অন্য কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন।
বিশ্বের কফি খাত একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে কফির দাম।
এর কারণ হচ্ছে, ব্রাজিলের দুই বছরের অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন। সেগুলো বাজারে আসার কারণে কফির দাম পড়ে গেছে আর তার ফলে মধ্য আমেরিকা আর আফ্রিকার অনেক দেশের চাষিরা তাদের কফি বিন কম দামে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
যদিও গ্রাহক পর্যায়ে কফির দামে সেই পার্থক্য এখনো দেখা যাচ্ছে না।
কফির ওপর এই সংকট কীভাবে পর্যায়ক্রমে সবার ওপর ভূমিকা রাখে, এখানে সেটি আলোচনা করা যাক।

কফি চাষিদের ক্ষেত্রে
সারা বিশ্বে দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে কফির ওপরে। চাষিরা সাধারণত বছরে একটি ফসল তোলেন। ফলে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কফির রেকর্ড দরপতন অনেককে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
গত অক্টোবরে, যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসী দলের সঙ্গে আসা মধ্য আমেরিকার একজন চাষি বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, কফির দরপতনের কারণে তারা চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য রওনা হয়েছেন।
গত ১০ বছরে গুয়াতেমালা, নিকারাগুয়া, এল সালভাদর এবং মেক্সিকোর ৬০ শতাংশ কফি চাষি খাবারের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছেন বলে স্পেশিয়ালি কফি এসোসিয়েশনকে জানিয়েছেন।

আমেরিকান কফি অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক (আইসিও) হোসে সেত্তে বলছেন, ”কৃষকরা যদি আজ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে, সেটা ভবিষ্যতের জন্য খুব খারাপ হবে। কারণ প্রতিবছর কফির চাহিদা ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
তিনি বলছেন, বিশ্বে কফি খাত থেকে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হলেও, তার মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলার যাচ্ছে উৎপাদনকারী দেশগুলোয়। তারও মাত্র ১০ শতাংশ যাচ্ছে কফি উৎপাদনকারীদের কাছে।
আফ্রিকার দেশগুলোয় যেখানে এই কফি চাষিরা মূলত ছোট খামারে চাষ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরো মারাত্মক।
ইন্টার-আফ্রিকান কফি অর্গানাইজেশনের মহাসচিব ফ্রেড কায়ুমা বলছেন, ”আফ্রিকার একজন কৃষক তার জমি থেকে যতটুকু কফি পান, তা ভারতীয় অথবা ভিয়েতনামের কফি চাষিদের তুলনায় অনেক কম।”
এর মানে হলো যখন কফির দাম পড়ে যায়, তখন এই সামান্য লাভের কৃষকরা আরো বিপদে পড়ে যান।
তিনি বলছেন, তার সংস্থা দেখতে পেয়েছে যে, অনেক কফি চাষি কফি চাষ করা ছেড়ে দিয়ে অন্য লাভজনক ফসল চাষ করতে শুরু করেছেন।

রেস্তোরা এবং ক্যাফের জন্য
ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনার একটি রেস্তোরা এবং ক্যাফের মালিক চাক জোনস, যিনি এই শিল্পের আগাগোড়া সবটা জানেন। তবে তার ক্যাফের অর্ধেকের বেশি বিন আসে গুয়াতেমালা থেকে, যেখানে তার এবং আত্মীয়স্বজনের কফির ক্ষেত আছে।
কিন্তু এই বছর জুলাই মাস শেষ হলে তার একজন আত্মীয় কফি চাষ ছেড়ে দেবেন।
”যিনি আমাকে কফি রপ্তানি করতেন, তিনি চাষাবাদের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন, কিন্তু আর শোধ করতে পারেননি। তারা সেই খামারটি নিয়ে নিচ্ছেন। ”বলছেন মি. জোনস।

তিনি বলছেন, কফির মূল্যবৃদ্ধি এবং দরপতনের চক্রবৃদ্ধির কারণে তার এই আত্মীয়ের মতো অনেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, কারণ এই চাষ থেকে তাদের পোষাচ্ছে না।
”একজন ক্রেতা হিসাবে আমি হয়তো ভিন্ন কোন উৎস খুঁজে নিতে পারবো, কিন্তু আমার এই আত্মীয়ের মতো চাষিরা তাদের আয়ের উৎস হারাচ্ছে।” তিনি বলছেন।
মি. জোনস বলছেন, কফি শিল্পের খুচরা ব্যবসায়ীদের উচিত কফির জন্য আরো দাম দেয়া।
তবে তিনি এটাও বলছেন, কফি কিনে এনে, তার সঙ্গে গুদামের খরচ, পারিশ্রমিক, মেশিন ও বিনিয়োগ যোগ করে খুব একটা লাভ তারাও করছেন না। ফলে এই চেইনের কোন পরিবর্তন হবে বলে তার মনে হয় না।

ক্রেতাদের জন্য
আইসিও কর্মকর্তা মি. সেত্তে বলেছেন, খুচরা ক্রেতাদের কাছে যখন কফি বিক্রি হয়, তখন সেটা আসলে আসল উৎপাদনকারীদের সঙ্গে খুব এটা মিল রেখে হয় না।
”উৎপাদনকারীদের কাছে হয়তো ক্রেতার এই দামের ১-২ শতাংশ যাচ্ছে, কিন্তু ক্রেতা যখন কিনছেন, তখন কফির পাশাপাশি শ্রম, ভাড়া, বাজারজাতকরণ মিলে দামটা নির্ধারিত হচ্ছে” বলছেন মি. সেত্তে।
তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, তার দোকানে ৪ ডলার মূল্যে এককাপ কফি বিক্রি হয়। সেখান কফির দাম মাত্র ১০ শতাংশ, বাকিটা হলো অর্গানিক দুধ, পারিশ্রমিক, কাপ, ভাড়া, দোকানের আসবাব ইত্যাদি।
সমাধানের পথ কি?
কফি খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা ছোট ছোট উৎপাদনকারীদের অন্যান্য খাতের রাজস্বের অংশ দেয়া, ঝুঁকি নির্ণয় করা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, উৎপাদন চেইনের সঙ্গে পরিচিত করানোর মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
”সেই সঙ্গে কফি উৎপাদনকারী দেশগুলোয় কফি খাওয়ার হার বাড়াতে হবে, সেটা এখনো অনেক কম আছে” বলছেন মি. সেত্তে।
এর একটা উদাহরণ হতে পারে থিংক কফি এবং ইন্টেলিজেন্টাসিয়ার মতো কোম্পানিগুলো, যারা ধনী বিক্রেতাদের পরিবর্তে ছোট এবং ঝুঁকিতে থাকা কফি উৎপাদকদের কাছ থেকে সরাসরি কফি কিনছে। ফলে এই উৎপাদকরা ভালো দাম পাচ্ছে এবং তাদের জীবন মান উন্নত হচ্ছে।
আইসিও কর্মকর্তা মি. সেত্তে বলছেন, ”আমরা যদি আজই এই বিষয়ে মনোযোগ না দেই, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আমরা পর্যাপ্ত কফির আর দেখা পাবো না।”
এগ্রোটেক
কৃষকের অ্যাপ: ধান ক্রয়ে দুর্নীতি অনিয়ম ঠেকাতে কাজ করবে কীভাবে
Published
2 weeks agoon
November 28, 2019By
bbc bangla
বাংলাদেশে ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে অনিয়ম রোধে এবার বেশ কিছু জেলায় অ্যাপের মাধ্যমে আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চালানোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশের খাদ্য বিভাগ।
চলতি বছরের আমন ধান সংগ্রহ অভিযান ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছ গত ২০শে নভেম্বর থেকে, যা শেষ হবে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি।
এবারে ২৬ টাকা কেজি দরে ছয় লাখ টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করবে সরকার।
এছাড়া মিল থেকে সাড়ে তিন লাখ টন চাল কিনবে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দরে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এ বছর কোন জেলা থেকে কত পরিমাণ ধান কেনা হবে তার একটি তালিকা করেছে কৃষি বিভাগ।
যদিও খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বিবিসিকে বলছেন, এখন মূলত কৃষকদের নাম নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে।
নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রির আবেদনের সুযোগ পাবেন কৃষকরা, বলছেন তিনি।

অ্যাপ কিভাবে কাজ করবে
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামে এই অ্যাপটি তৈরি করেছে কম্পিউটার কাউন্সিল।
এখন অ্যাপে ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজেদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন কৃষকরা।
এরপর যাদের নাম অ্যাপে চলে আসবে তারা ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন আবেদনের।
অর্থাৎ কৃষক তখন তার আবেদনে জানাবেন যে তিনি কোন জাতের ধান উৎপাদন করেছেন এবং কি পরিমাণ ধান তিনি বিক্রি করতে চান।
এসব তথ্য বিশ্লেষণের পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে লটারি করে চূড়ান্ত করা হবে যে কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।
একই সাথে ডিজিটালি জানিয়ে দেয়া হবে যে তিনি কোথায় ধান বিক্রি করবেন এবং সেখানেই তাকে মূল্য পরিশোধে একটি চেকের প্রিন্ট কপি দেয়া হবে যা তিনি ব্যাংকে দেখিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন, “ফলে ধান ক্রয়ের সময় মধ্যসত্ত্বভোগী দালাল কিংবা কর্মকর্তাদের মধ্যেও যদি কোনো অসাধু ব্যক্তি থাকে তারা আর অনিয়মের সুযোগ পাবেনা”।

কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোন না থাকলে অ্যাপ কৃষকেরা পাবেন কোথায়?
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলছেন, তারা যে ১৬জেলায় অ্যাপটি এবার ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তা ও কৃষকদের বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
খাদ্য বিভাগের জেলা ও থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রগুলো সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে অ্যাপটি ব্যবহার সম্পর্কে।
মহাপরিচালক বলেন, “কারও কাছে ফোন না থাকলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে তারা নাম নিবন্ধন ও আবেদন করতে পারবেন। আর নিবন্ধন একজনের জন্য একবারই চূড়ান্ত। ওই নিবন্ধন নাম্বার দিয়েই তিনি প্রতিবছর ধান বিক্রয়সহ বেশ কিছু কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন”।
অ্যাপের বৈশিষ্ট্য:
১.গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি যে কেউ ডাউনলোড করতে পারবেন।
২. এরপর এটি ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কৃষক তার উৎপাদিত ধান ও চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
৩. মিল মালিক ও কৃষক মোবাইলে ধান চালের চাহিদা, সরবরাহের তারিখ বার্তার মাধ্যমে জেনে যাবেন
৪. ধান বিক্রয়ের আবেদন ও আবেদনের অবস্থা দেখা যাবে
৫. কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করতে পারবেন
এগ্রোটেক
প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি ধানের দাম বাড়ানো যাবে?
Published
2 weeks agoon
November 23, 2019By
bbc bangla
বাজারে দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হাহাকার পড়েছে। সরকার ভাবছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও চাল রপ্তানির কথা।
টাঙ্গাইল জেলার ক’দিন আগে একজন কৃষক ক্ষোভ এবং হতাশা থেকে জমিতে পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে দেন।
দেশে যে বছরই ধানের ফলন ভাল হয়, তখনই ধানের দাম নিয়ে কৃষকরা হতাশায় পড়তে হয়।
এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার আদৌ কি কোন উপায় আছে – এই প্রশ্ন এখন উঠছে।
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার মোসাম্মৎ বানেশা বেগম অন্যের তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন তার শ্রম এবং খরচের তুলনায় ধানের দাম কম হওয়ায় তিনি থমকে গেছেন।
“ধানের দাম নাই। কিন্তু কৃষি খরচ বেশি। ১২০০ টাকা দিয়া এক বিঘা ধান কাটাতে কামলা নিতে হয়। পোষায় না।”
টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বানকিনা গ্রামের একজন কৃষক আবদুল সিকদার কয়েকদিন আগে তার জমিতে পাকা ধানে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
খরচের তুলনায় ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষোভ এবং হতাশা থেকে তিনি এটা করেছিলেন বলে তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন।
বোরো ধান মণপ্রতি এখন কৃষকদের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের একজন কৃষক আজিজার রহমান বলছিলেন, প্রতি বছরই ধানের দাম নিয়ে তাদের হতাশায় পড়তে হচ্ছে।
“আমাদের জমিতে ধান ছাড়া অন্য ফসল করা যায় না। এটা ধানী জমি। সে কারণে বাধ্য হয়ে ধান করি।”
ধানের দাম বাড়াতে দুই উদ্যোগ – প্রযুক্তি ও রপ্তানী
সরকারও এ পরিস্থিতিটা স্বীকার করছে।
কৃষিমন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই বছর আমন এবং আউশের উৎপাদন বেশি হয়েছে। এখন বোরো ধানও এক কোটি ৯০ লাখ টনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
ফলন বেশি হওয়ায় ধানের দাম এবার আগের তুলনায় অস্বাভাবিক কম বলে তিনি মনে করেন।
ড: রাজ্জাক জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা সরকার নিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য চাল রপ্তানির বিষয় সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
“কৃষক আমন ধানও ভাল দামে বিক্রি করতে পারে নাই এই অস্বাভাবিক হারে দাম কমে গেছে। ইতিমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হাওর থেকেও ধান কাটা হয়ে গেছে। ফলে স্পষ্ট বোঝা যায়, অনেক ধান উদ্বৃত্ত থাকবে।”
“আমরা বেশি কিনতে পারতাম। কিন্তু সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা অনেক কম। সেজন্য আমরা ১২ লাখ টন টার্গেট করেছি। তার চেয়ে বেশি কেনা সম্ভব হবে না। আর সাড়ে তিন কোটি টন চালের মার্কেটে ১০ বা ১২ লাখ টন চাল কিনলে এর প্রভাব পড়ে না। এছাড়া কৃষকরা প্রত্যক্ষভাবে এর সুবিধাটা পায় না। ডিলাররা কিনলে তার একটা প্রভাব পড়ে।”
মন্ত্রী আরও বলেছেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাল রপ্তানির বিষয় আমরা বিবেচনা করছি।”
তবে কৃষি বিষয়ক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ফলন ভাল হলেই ক্ষুদ্র এবং মাঝারী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর গবেষক ড: নাজনীন আহমেদ বলছিলেন, ধান চাল কেনার প্রচলিত পদ্ধতিতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো হলে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিলে দীর্ঘমেয়াদে ভাল সমাধান হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
“সমস্যা অনেক, যেমন চাতালের জায়গায় অটো রাইস মিলের উত্থান। এর সাথে কৃষকের ফলন ধরে রাখার নিজেদের ব্যবস্থা নেই। ফলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কৃষককে ধান কেটেই বিক্রি করতে হয়। তখন তারা দাম কম পায়।”
“এখানে সরকার যদি তাদের চাল কেনার প্রক্রিয়া একটু আগে শুরু করে, তাহলে সেখানে ধানের দাম যেটা ঘোষণা করা হবে, সেটা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য একটা বারগেইনিং পয়েন্ট হতে পারে। এটা এখনকার ব্যবস্থায় কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষককে প্রযুক্তির দিকে নেয়া ছাড়া বিকল্প নাই।”
সরকার অবশ্য কিছুদিন আগে ৩৬ টাকা কেজিতে চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। আর ধানের দাম ঘোষণা করেছে ২৬ টাকা কেজি।
সরকারের এই দাম অনুযায়ী মণপ্রতি ধানের দাম এক হাজার টাকার বেশি হয়। কিন্তু সরকারি কেনার প্রক্রিয়া মাঠ পর্যায়ে এখনও সেভাবে শুরু হয়নি।
কৃষি মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারও স্থায়ী উপায় হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে চাইছে।
“ধান লাগানো এবং ধান কাটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকার কৃষককে সহযোগিতা করছে। একটি যন্ত্র কিনতে কৃষক ৫০ টাকা দিলে সরকার বাকি ৫০ টাকা দিচ্ছে। আরও কিভাবে খরচ কমানো যায়, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা একদিনে সম্ভব না। অনেক সময় প্রয়োজন।”
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সারাদেশের কৃষকদের তালিকা এবং তথ্য সরকারের কাছে আছে। ফলে সরকার কৃষকদের সাথে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিলে অল্প সময়েই স্থায়ী সমাধান সম্ভব হতে পারে।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে

পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে ভারতে; ভরসা তুরস্ক থেকে আমদানি

অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?

পেঁয়াজ: বাংলাদেশ কি পারবে ভারতের উপর নির্ভরতা কাটাতে?

কফি সংকট যেভাবে আপনার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে

বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে মাংস কম খেতে হবে?

ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল

জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান

মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের

স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

কৃত্রিম মাংসের বার্গার, যা থেকে ‘রক্ত’ও ঝরে – আর বেশি দূরে নয়

কৃষকের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ধান কেনার নতুন সিদ্ধান্তে কৃষকের কী লাভ হবে

প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি ধানের দাম বাড়ানো যাবে?

পেঁয়াজ সংকট: বিদেশ থেকে আমদানির ফলে বিপদে পড়বে চাষীরা?

কবে থেকে ফের পেঁয়াজ রফতানি শুরু করবে ভারত?

পেঁয়াজ সংকট: বাংলাদেশ চাহিদামতো উৎপাদন করতে পারছে না কেন

You must be logged in to post a comment Login