কোরবানির ঈদের আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার রুখতে বিএসএফ এক নতুন কৌশল নিয়েছে। পাচার হওয়ার আগে গরুগুলিকে যে অপরিসীম নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়, সেগুলো কোরবানি দেওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে বি এস এফ।
কোন গরু কোরবানি দেওয়া উচিত বা অনুচিত, তা নিয়ে কোনও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এধরণের বার্তা আগে কখনও দিতে চেয়েছে বলে জানা যায় না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে ভারতের কোনও বাহিনীর এধরণের মন্তব্য অনুচিত।
একই সঙ্গে গরু পাচারের প্রক্রিয়ায় মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে, সেইসব রাখালদের উদ্দেশ্যেও তারা বার্তা দিতে চেয়েছে যে – কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে তারা বিএসএফের হাতে ধরা পড়া বা গুলি খাওয়ার মতো বড় ঝুঁকি নিলেও পাচারচক্রের মাথারা আড়ালেই থেকে যায়।
পাচার রোধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএসএফ?
ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বলছে প্রতিবারের মতো এবছরও কোরবানির ঈদের আগে গরু পাচার রোধে তারা বেশকিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে, যার মধ্যে আছে পাচারের পরিচিত এলাকাগুলিতে বাড়তি প্রহরা দেওয়া, ইলেকট্রনিক নজরদারি, স্পিড বোটে চেপে নদী অঞ্চলে পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।
তারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার একটি বিবরণী সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠিয়েছে বিএসএফ।
তাতে বলা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিএসএফ জেনেছে যে সীমান্ত এলাকায় গরুর হাটে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা খুব দ্রুত চালু করা হবে যেখানে ভারত থেকে পাচার হয়ে যাওয়া গরু বেচাকেনা হচ্ছে।
বিএসএফ বলছে, গলায় কলাগাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলছে ভারত থেকে গরুপাচার
এছাড়াও তারা উল্লেখ করছে, যে পাচারের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কলার ভেলায় বেঁধে নদীতে গরু ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলি যখন বাংলাদেশের দিকে পাচারকারীরা স্পিড বোটে চেপে নদী থেকে তুলতে যায়, তাতে কখনও কখনও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের সম্মতি থাকে।
তবে ওই বিবরণীতে সবথেকে বেশি নজরে পড়েছে যে বিষয়টি, তা হল পাচার হওয়া গরু কোরবানি দেওয়া কতটা উচিত, তা নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্নটি।
বিএসএফের লিখিত বিবরণীতে বলা হয়েছে, “পাচারকারীরা গরুগুলির সঙ্গে পাশবিক আচরণ করে। পাচার করার আগে গরুর শরীরে মাদক মেশানো ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়। কোনও সময়ে লেজ কেটে দেওয়া হয়, যাতে গরুগুলি প্রাণপনে দৌড়তে পারে, তাদের অভুক্ত রাখা হয়।”
“এইরকম যন্ত্রণা দিয়ে গরুগুলিকে সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় কয়েকশো কিলোমিটার পায়ে হাঁটিয়ে অথবা ট্রাকে গাদাগাদি করে। এইরকম যন্ত্রণা দেওয়ার পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ীই গরুগুলি আর কোরবানির উপযুক্ত থাকে না,” লেখা হয়েছে ওই বিবরণীতে।
কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে গরু পাচারের এই অভিনব পদ্ধতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল
‘পাচার হওয়া গরু খাওয়া উচিত নয়’
এ প্রসঙ্গে বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস এস গুলেরিয়া অবশ্য ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী যন্ত্রণা দিয়ে যে গরু পাচার হয়েছে, তা কতটা আদর্শ, সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি।
তিনি বলেছেন পশুবিজ্ঞান অনুযায়ী ওই ভাবে পাচার হওয়া গরু মানুষের খাওয়া উচিত নয়।
মি. গুলেরিয়ার ব্যাখ্যা,”বাংলাদেশে যখন গরুগুলিকে পাচার করা হয়, তার আগে থেকেই এদের ব্যাপক নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়। তাদের যেভাবে গাদাগাদি করে গাড়িতে চাপিয়ে অথবা বহু কিলোমিটার পায়ে হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয়, তাতে অনেক গুরু আহতও হয়, রক্তাক্ত হয়। সীমান্তে নিয়ে আসার পরে তাদের মাদক মেশানো ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়।”
“কখনও তাদের দৌড় করানো হয় বা চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে, পা বেঁধে কলার ভেলায় বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় যেসব গরু বাংলাদেশে পৌঁছায়, সেগুলি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আদৌ মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়।”
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষের পাচার হওয়া গরু কোরবানি দেওয়া উচিত না অনুচিত, তা নিয়ে কেন বিএসএফ মন্তব্য করতে গেল – এই প্রশ্নের জবাবে বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডি আই জি সমীর কুমার মিত্র বলছিলেন, “হিন্দু ধর্ম হোক বা ইসলাম, ঈশ্বরের কাছে যা উৎসর্গ করা হয়, সেই জীবটির তো সুস্থ, সবল থাকা উচিত। কিন্তু পাচার হওয়ার আগে বা পাচারের সময়ে গরুগুলিকে যে নিষ্ঠুরতা আর পাশবিকতার শিকার হতে হয়, সেগুলি অনেক সময়েই শুদ্ধভাবে উৎসর্গ করার অবস্থায় থাকে না।”
“পাচার হয়ে যাওয়া যে গরুগুলিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অনেকেই কোরবানি দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে হয়তো বিএসএফ একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই প্রশ্নটা সেদেশের মানুষের মনে ঢুকে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ভারত থেকে গরুর চাহিদা কমবে, তাতে পাচারও কমানো যাবে,” ব্যাখ্যা করছিলেন মি. মিত্র।
সীমান্ত এলাকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পদ্মা নদীতে থাকা বেআইনি ঘাটের দখল নিয়ে প্রায়ই প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়
‘অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাংলাদেশের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কীভাবে ঈদ পালন করবে, সেটা নিয়ে ভারতের কোনও বাহিনীর মন্তব্য করা বাঞ্ছনীয় নয়।
“বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র। এমন কোনও মন্তব্য কাগজে কলমে করা ঠিক নয়, যা প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে আঘাত করে, বা তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উদ্বিগ্ন করে,” বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যান লাহিড়ী।
“সীমান্তে গরু পাচার সহ সব ধরণের অপরাধ বন্ধ করা নিশ্চয়ই প্রয়োজন। কিন্তু সেটা নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন। প্রতিবেশী দেশে কীভাবে ঈদ বা অন্য কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে, তা নিয়ে ভারতের কোনও বাহিনীর মন্তব্য করা অনুচিত। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে একটা থিয়োরি আছে, ‘থিয়োরি অফ নন ইন্টারফিয়ারেন্স।’
“অর্থাৎ অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি। এটা না মেনে চললে বাংলাদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক আমাদের আছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে,” বলছিলেন মি. লাহিড়ী।
পাচার হওয়া গরু কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করা ছাড়াও বিএসএফের বিবরণীতে যেভাবে পাচারের সঙ্গে বিজিবির পরোক্ষ সহযোগিতা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে, সেটাও বেশ আশ্চর্যজনক।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএফ বলে থাকে যে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সর্বকালের সেরা সম্পর্ক এখন রয়েছে। দুই বাহিনীর নিয়মিত বৈঠক হয়। তাই পাচারকারীদের সহায়তা দেওয়ার মতো প্রসঙ্গ সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয় না।
বিএসএফের ডি আই জি মি. গুলেরিয়া বলছিলেন, “বাংলাদেশ সরকার তো আনুষ্ঠানিকভাবেই বলে থাকে যে তারা চায় না যে ভারত থেকে গরু পাচার হয়ে তাদের দেশে যাক। নিজেদের দেশেই তারা গরুপালনে উৎসাহ দিচ্ছে।”
“বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশও সেদেশের সরকারের নীতিই মেনে চলে। কিন্তু এই বেআইনী ব্যবসায় বহু কোটি টাকা জড়িয়ে আছে। ভারত আর বাংলাদেশের মাফিয়ারা তাই সবসময়েই চেষ্টা করে দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে পাচার চালিয়ে যেতে।”
কিন্তু লিখিত বিবৃতিতে গরু পাচারে বিজিবি-র পরোক্ষ সম্পৃক্ততা নিয়ে যা লেখা হয়েছে, তাতে বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়ার অফিসাররাও কিছুটা বিস্মিত।
এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়ার অফিসার বলেন যে দুই বাহিনীর বৈঠকে এই প্রসঙ্গ ওঠে ঠিকই, যে বিজিবি যথেষ্ট কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কিন্তু সেসব কথা বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও থাকে না। একেবারেই অনানুষ্ঠানিকভাবে সেসব কথা হয়। কিন্তু সেরকম একটি তথ্য কেন লিখিত বিবৃতিতে দেওয়া হল, সেটাই আশ্চর্যের।
সীমান্ত এলাকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পদ্মা নদীতে থাকা বেআইনি ঘাটের দখল নিয়ে প্রায়ই প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়
কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে গরু পাচারের এই অভিনব পদ্ধতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল
বিএসএফ বলছে, গলায় কলাগাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলছে ভারত থেকে গরুপাচার
ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হওয়া গরু কি কোরবানির উপযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছে বিএসএফ
মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন। গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।
সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’
তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন