বিশ্ব
ইতিহাসের সাক্ষী: কেমন ছিল নেলসন ম্যান্ডেলার কারামুক্তির দিনটি?
লেখক
বিবিসি বাংলা
দীর্ঘ ২৭ বছর বন্দী থাকার পর ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হন দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন তিনি। তার মুক্তির এই দিনটির জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার লাখ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ অপেক্ষা করছিল। এর মধ্য দিয়েই দেশটিতে অবসান ঘটতে শুরু করে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা শ্বেতাঙ্গ শাসনের।
ঐতিহাসিক সেই দিনটির কথা স্মরণ করেছেন তারই এক রাজনৈতিক সহকর্মী ভ্যালি মুসা। তিনি জানান, নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির ব্যাপারে তাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এজন্য তাদেরকে খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। কিন্তু সবকিছু যে সেই পরিকল্পনা মতোই হয়েছে তা নয়।
তিনি জানান, মাত্র একদিন আগে তাদেরকে জানানো হয় যে নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
“দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। এবং অবশ্যই বলতে হয় যে আমরা এর জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।”
এক সপ্তাহ আগেও তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় নিষিদ্ধ ছিলেন। এমনকি বাড়ি থেকে বের হওয়ারও অনুমতি ছিল না তার। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা দেখলেন সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।
১০ই ফেব্রুয়ারি ছিল শনিবার।
তিনি বলেন, “সেদিন সকালে সরকার আমাদের সাথে বৈঠক করার কথা জানালো। আমরা ছোট্ট একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সেখানে গেলাম। সরকার বললো, তারা আমাদের জানাতে চায় যে আগামীকাল অর্থাৎ পরদিন নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হবে।”
“১১ই ফেব্রুয়ারি রবিবার, ১৯৯০ সাল, সকাল এগারোটায়। তারা বললেন, নেলসন ম্যান্ডেলা চান মুক্তির পর তাকে যেন কারাগারের গেটে তার কমরেডদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্যে আমাদের কোন প্রস্তুতি ছিল না। তখন সবকিছু ম্যানেজ করা আমাদের জন্যে খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

তাদের এরকম একটি ঘটনা আয়োজনের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের কাছে ছিল অল্প কিছু গাড়ি। কিন্তু তার জন্যে এসব চালাতে পেশাদার চালক ছিল না। মুক্তির পর নেলসন ম্যান্ডেলা যে গাড়িতে করে সেন্ট্রাল স্কয়ারের দিকে যাচ্ছিলেন সেটি জনতার ভিড়ে আটকা পড়ে গিয়েছিল। গাড়ির চালক সেসময় খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন।
এক পর্যায়ে নেলসন ম্যান্ডেলাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
“গাড়ির চালক নিরাপদে থাকতে চেয়েছিলেন এবং জনতার ভিড় থেকে নেলসন ম্যান্ডেলাকে বাঁচাতে তিনি তাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন। আমরা তাকে ফোনও করতে পারছিলাম না।”
ভ্যালি মুসা বলেন, “আমরা কয়েকজন বুঝতেও পারছিলাম না যে কী করবো। আমাদের সঙ্গে আর্চ বিশপ টুটুও ছিলেন। এক পর্যায়ে আমরা নেলসন ম্যান্ডেলাকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা জানতাম না তিনি কোথায়।”
কেপ টাউনের একজন ট্রাফিক অফিসার অবশেষে তাদেরকে জানালেন যে নেলসন ম্যান্ডেলাকে পাওয়া গেছে। তিনি জানালেন, স্থানীয় একজন রাজনৈতিক কর্মীর আত্মীয়দের সঙ্গে বসে তিনি চা খাচ্ছেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা টাউন হলের একটি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার জন্যে। সমবেত লোকজন তাকে দেখে উল্লাস করে উঠলো।
সমাবেশে যারা জড়ো হয়েছে তাদের অনেকেই এই প্রথম নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেখতে পেলেন। কারণ মি. ম্যান্ডেলা কারাগারে যাওয়ার পরেই তাদের জন্ম হয়েছে।

জনতার উদ্দেশ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা বললেন, “কোন মহান ব্যক্তি হিসেবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে নেই, দাঁড়িয়ে আছি আপনাদের একজন বিনীত সেবক হিসেবে।”
নেলসন ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন ১৯৬৪ সালে। এই অপরাধে তার সাজা হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তার ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি তাকে উদ্ধৃত করে কিছু বলাও ছিলো বেআইনি।
কিন্তু এসব বিধিনিষেধ তার কারা-কক্ষকে প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে উঠতে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গদের তুমুল আন্দোলন গড়ে ওঠে। সারা পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করে সহিংসতা, ধর্মঘট, বয়কট ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
১৯৯০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট এফ ডাব্লিউ ডি ক্লার্ক পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বর্ণবাদী শাসন অবসানের কথা ঘোষণা করলেন।
ভ্যালি মুসা বলেন, “আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এএনসি ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো। আমার মতো রাজনৈতিক নেতাদের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো।”
কিন্তু সেদিনই ভ্যালি মুসা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পার্লামেন্টের বাইরে বিশাল এক প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই আইন অমান্য করার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটে যখন প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের ভেতরে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
“এ ধরনের বিক্ষোভ ছিল খুবই বিরল ঘটনা। ওই সমাবেশের দাবি ছিল এএনসির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং নেলসন ম্যান্ডেলাসহ অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তি। আমি যখন সমাবেশ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি তখন শাসকরা ঘোষণা করলো যে তারা এসব দাবি মেনে নিচ্ছে। ফলে আমি যে বেআইনি কাজ করছিলাম তখন হঠাৎ করেই সেটা আর বেআইনি থাকলো না।”

সরকার তখনও ঘোষণা করেনি যে নেলসন ম্যান্ডেলাকে কখন মুক্তি দেওয়া হবে। শুধু বলা হয়েছে তাকে মুক্তি দেওয়ার কথা। মি. ম্যান্ডেলাকে স্বাগত জানানোর জন্যে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার একজন সদস্য ছিলেন ভ্যালি মুসা। এর আট দিন পর সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ফোন করে বৈঠকে ডাকা হলো এবং সেদিনই বলা হলো যে নেলসন ম্যান্ডেলাকে পরের দিন মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
“বৈঠক খুব অল্প সময় স্থায়ী হয়েছিল। তারা জানালেন নেলসন ম্যান্ডেলা ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তাকে যেন জেলখানার গেটে মুক্তি দেওয়া হয়। যেন তুলে দেওয়া হয় তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের হাতে। তখন আমি ও আমার সহকর্মীদের মনে হয়েছিল যে তাদেরকে বলি, তোমরা কি তাকে আরো কিছু সময় জেলে আটকে রাখতে পারো না, যাতে আমরা কিছু একটা আয়োজন করতে পারি? কিন্তু আমরা সেরকম কিছু বলিনি।”
পরে তারা জানতে পেরেছিলেন যে নেলসন ম্যান্ডেলা তার মুক্তির ব্যাপারে আরো কিছুটা সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু ডাব্লিউ ডি ক্লার্ক সেই অনুরোধ রাখেন নি।
সরকার চেয়েছিল খুব নিরবে তাকে মুক্তি দিতে। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা তাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি তাদেরকে জানান, অন্যান্য বন্দীদের যেভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তিনিও ঠিক সেভাবেই জেল থেকে বের হয়ে যেতে চান।
মুক্তির আগেও নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে কয়েকবার দেখা করেছিলেন ভ্যালি মুসা। তিনি বলেন, “তার মুক্তির বিষয়ে উৎসব আয়োজন করার মতো কোন সময় আমাদের ছিলো না। এটাই ছিল বাস্তবতা। তিনিও খুব শান্ত ছিলেন। তার পর দিন কী হবে এসব বিষয়ে আমারা অনেক কিছু আলাপ করেছিলাম।”
কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা চেয়েছিলেন, জেল থেকে বের হওয়ার পর জোহানেসবার্গে যাওয়ার আগে তিনি কেপটাউনে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। কারাগার থেকে তাকে সেন্ট্রাল স্কয়ারে নিয়ে যাওয়ার জন্যে স্থানীয় একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাছ থেকে একটি গাড়ি ধার করতে হয়েছিল। লোকজনকে বলা হয়েছিল সেখানে জড়ো হতে।

তখন তো ল্যাপটপ ছিলো না, তাই নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষণ টাইপ করতে ভ্যালি মুসাকে বেশ কয়েকবার কারাগার ও কেপটাউন শহরে যাওয়া আসা করতে হয়েছিল।
হাতে একেবারেই সময় ছিল না। ফলে নেলসন ম্যান্ডেলার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা, এএনসির আরো কয়েকজন নেতা তখন জোহানেসবার্গ থেকে একটি ভাড়া করা বিমান নিয়ে এসেছিলেন কেপটাউনে।
“এসব লোকজনের ভাড়া করা বিমানে চলাচলের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। এছাড়াও একটা বোয়িং যতো সময় নেয়, ছোট্ট বিমানগুলো তার চাইতেও অনেক বেশি সময় নিয়ে থাকে। তারা প্রায় দ্বিগুণ সময় নিয়েছিল। তাদের আসতে দেরি হয়। ফলে দু থেকে তিন ঘণ্টা পর নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।”
এর কয়েক ঘণ্টা পর, যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, নেলসন ম্যান্ডেলা কেপটাউনের টাউন হলের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। ভাষণ দিলেন জনতার উদ্দেশ্যে। তাড়াহুড়োর মধ্যে তিনি তার চশমা হারিয়ে ফেলেন।
“সিটি হলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা জনতার সমুদ্রের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন নিখুঁতভাবে শেষ হচ্ছে। স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামী বহু মানুষ তাদের জীবনে কখনো এধরনের চিত্র দেখতে পারে না। কিন্তু আমি সেই দৃশ্যটা দেখেছি। এবং এই মুহূর্তটি সারা জীবনই আমার সাথে থেকে গেছে।”
ভাষণে নেলসন ম্যান্ডেলা বললেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ, তারা আজ স্বীকার করে নিয়েছেন যে বর্ণবাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই।”
নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
ভ্যালি মুসা পরে ম্যান্ডেলা সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
-
২৭ বছরের কারাবাসের ১৯ই বছরই রোবেন আইল্যান্ডের এই জেলখানায় কাটিয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। মুক্তির পর ১৯৯৫ সালে তিনি তার ঘরটি দেখতে গিয়েছিলেন।
-
মুক্তির দুদিন পর সোয়েটো স্টেডিয়ামে তৎকালীন স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলার সাথে।
-
নেলসন ম্যান্ডেলা: জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর।
-
নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তি উপলক্ষে সোয়েটো শহরে উৎসব।
-
মুক্তির পর গাড়িতে করে যাচ্ছেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি ধানের চাষে কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক, কী লাভ এই চাল উৎপাদন বাড়লে?
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন
-
যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি আপেলের চাষ শুরু হয়েছে যা ‘এক বছর সতেজ থাকবে’


চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন