আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

 নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

প্রবল বৃষ্টি, তীব্র শীত উপেক্ষা করে গ্রামের জঙ্গল চষে ৬টি পাখি খুঁজে আবুল হাসনাত মো. নাজমুল কামাল রনি পেয়েছেন ‘বিগ বার্ডার অব দ্য ইয়ার’ এবং রাশেদুল কবীর ও মুহম্মদ তারিক হাসান দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়ে ‘বিগ বার্ড অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন। ‘পাখিমেলা’য় এই তিন তরুণকে পুরস্কৃত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। প্রথম হওয়া রনির জবানীতে তার পাখি দেখার গল্প তুলে ধরেছেন আদীব মুমিন আরিফ-

রনি যা বলেন
কৃষি ব্যাংকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কাজ করি। পুরো সপ্তাহ খেটে খেতে হয়। ফলে শুক্রবার সকালেই বেরিয়ে পড়ার একমাত্র সুযোগ থাকে। অথচ এদিন সকালেই কিনা আকাশ মেঘে ঢাকা। তারপরও পাখি দেখার নেশায় রাজশাহী শহরের বাসা থেকে বাইকে বেরিয়ে গেলাম। এটি গত বছরের ৫ মে’র ঘটনা। নওদাপাড়া এলাকায় এসে দেখি আলো বাড়ছে। ফলে আমার আশাও বাড়তে লাগল। কিন্তু পাখি তো দেখি না, মাঝেমধ্যে শাহ বুলবুলির ডাক শুনি।

নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

তবে একপলক দেখার পরই ওরা হাওয়া হয়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে কড়ইয়ের বাঁকলে পোকা খুঁজছে দুই-তিনটি টিট, ওড়া না শেখা কোকিল ছানা এ ডালে-ও ডালে লাফাচ্ছে। ছোট আকারের প্যাঁচার এক পরিবার আমি কী করছি জ্ঞানীর মতো খুব খেয়াল করছে। একটু দূরে কালাপাখ কাবাসির ডাক শোনা যাচ্ছে। আকাশ আরো কালো হয়ে আসছে। হঠাৎ বড় কড়ইগাছে বাতাবি কাঠবিড়ালি বসতেই কী যেন উড়ে পালাল। খুব আস্তে ওর পিছু নিয়ে সবুজ পাতার পেছনে দেখি ছোট্ট একটি পাখি। অসম্ভব দ্রুত গাছের পোকা ঠোকরাচ্ছে। এ ডাল থেকে ও ডালে লাফাচ্ছে। গায়ের রংটি এই অস্থির পাখির এমন, একবার লুকালে আর দেখিই না। এই পাখির ছবি কোনো দিনও দেখিনি। এটি হয়তো নতুন। সকাল ৯টা বাজে। আকাশ এত কালো হয়ে এসেছে যে মনে হলো সন্ধ্যা নেমেছে। কয়েকটি শট নিয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। দুপুরে খেয়ে-দেয়ে পাখিটির ছবি ‘বার্ডস বাংলাদেশ’ ও ‘আস্ক আইডিস অব ইন্ডিয়ান বার্ডস’ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন নামকরা পাখিবিদ বললেন, এটি ‘ব্রাউন ক্যাপড পিগমি উডপেকার’ বা ‘ইন্ডিয়ান উড পেকার’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পরে ড. মনিরুল এইচ খান ও সায়াম ইউ চৌধুরীও সেটি নিশ্চিত করলেন। পরে ইনাম আল হকও নিশ্চিত করলেন। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের কোনো কোনো এলাকায় দেখা গেলেও এ দেশে আগে কেউ দেখেননি বলে এর কোনো বাংলা নাম নেই। পরে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এটির নাম প্রস্তাব করল ‘খয়রা টুপি বাটকুড়ালি’। ইংরেজিতে একে বলে ‘ব্রাউন ক্যাপড উডপেকার’। ১৪ সেন্টিমিটারের ছোট্ট কাঠঠোকরা জাতের এই পাখির মাথার ওপর ও দুই চোখের পেছনে খয়েরি রং আছে।

শুধু খয়রা টুপি বাটকুড়ালিই নয়, আমাকে এবারের ‘বিগ বার্ডার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার এনে দিয়েছে ‘চিতঠুটি গগনবেড়’ও। এটিও এ দেশে আমিই প্রথম রেকর্ড করেছি। সে গল্পও দারুণ। সেদিন আগের রাত থেকে তুমুল, সকালেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আমাদের হরিণা গ্রামের লোকেরা আষাঢ়ের এই বাদলধারাকে স্থানীয় ভাষায় ‘আশ্বিনী গেইন’ (আশ্বিনের বাদলা) বলি। মায়ের মুখে শুনেছি— এর মানে হলো, আশ্বিন চলে যাচ্ছে, এখন রাজশাহীর বিখ্যাত কনকনে শীত নামবে। তারপরও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পাখি দেখার নেশায় বেরিয়ে গেলাম ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর। বিকেল ৫টায় পদ্মা নদীর তীরে এসে দেখি পাখি দেখার সব সময়ের সঙ্গী অনিক বা তার নৌকার চিহ্নমাত্র নেই। ফোন দিলাম। বলল, নদীতে নৌকা বাইছে, হাসনাতের চরে থাকবে। ফলে অচেনা এক মাঝিকে নিয়েই বড় বড় ঢেউ আর পুব আকাশের ঘন কালো মেঘ উপেক্ষা করে নদীযাত্রা শুরু করতে হলো। আস্তে আস্তে বৃষ্টির ফোঁটা বড় হচ্ছে, রেইনকোট পরেও ঠান্ডা লাগছে। ক্যামেরাটি প্লাস্টিক, গামছায় মোড়া। ক্যামেরা ভেজানো যাবে না। নষ্ট হয়ে গেলে লেন্স, ক্যামেরা কেনার পয়সা কোথায় পাব? জবুথবু বসে আছি। ট্রলারচালিত নৌকা কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘হাসনাতের চরে’ চলে এলো।

নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

প্রায় বর্ষায়ই চরটি পানিতে ডুবে থাকে, শুকনো মৌসুমে জাগে। নৌকা ভিড়ল। বড় একঝাঁক ‘রাঙা মানিকজোড়’ এদিক-সেদিক হাঁটছে। মাথাগুলো দেখছি। আমায় দেখে উড়ে পালাবে বলে বুকে হাঁটা শুরু করতে হলো। কনুই-হাঁটু জ্বলে, হাঁপ ধরে যায়। একটু জিরিয়ে আবার এগোই, ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলি। এভাবে ৫০০ গজ এগিয়ে গেলাম। আর এগোলে ওরা ভয়ে পালাবে। কিন্তু আমার রিং পরানো হার্টও দ্রিম দ্রিম বাড়ি দিতে লাগল। হায় আল্লাহ, সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে পঞ্চাশেক রাঙা মানিকজোড়ের পালে একটি ‘চিতিঠুটি গগনবেড়’! তা-ও আবার রাজশাহীর এক অচেনা চরে! পুরো শরীর ঠান্ডায় না উত্তেজনায় কাঁপতে লাগতে বুঝতে পারলাম না। কয়েক ফোঁটা চোখের জল বৃষ্টিতে মিশে গেল। এই পাখিটির ইংরেজি নাম ‘স্পট বিল প্যালিকান’ বা ‘গ্রে প্যালিকান’। আকাশে বেড়ানোর সময় বিশাল ডানা পুরো আকাশ বা গগনকে বেড় বা ঢেকে ফেলে বলে বাংলায় একে ‘গগনবেড়’ বলে। ৫০ থেকে ৬০ ইঞ্চি লম্বা, চার থেকে ছয় কেজি ওজনের পাখিটি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও কম্বোডিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে প্রজনন করে। বক গোত্রের পাখিটি স্বজাতি রাঙা মানিকজোড়ের সঙ্গে মিলে বাসা বাঁধে। অগভীর, পরিষ্কার পানিতে ঘুরে ঘুরে ছোট মাছ খায়। এর আগে কোনো দিনও আমাদের দেশে এদের দেখা যায়নি। আমার এই ছবি আর বিবরণই তাদের প্রথম রেকর্ড। ফলে বৃষ্টি, কাদা, বালি পরোয়া না করেই ছবি তুলে ফেললাম। চিতিঠুটি গগনবেড় সারা বিশ্বেই ‘প্রায় বিপন্ন’ পাখি। পাখির ছবি তোলা, প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজের সুবাদে ২০১৬ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আমাকে ‘পাখি সংরক্ষণ সম্মাননা ২০১৬’ প্রদান করেছে।

নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

সাগরের দুটি পাখি
তখন ১৪ সদস্যের দলটি ছিল বঙ্গোপসাগরে। প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’ ও বন বিভাগের গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র রাশেদুল কবীরও আছেন সে দলে। তিনি পাখির বাসস্থান, প্রজনন ও বৈচিত্র্য নিয়ে এমফিল করছেন। করতোয়া জাহাজে চড়ে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে পৌঁছে যে যার মতো সামুদ্রিক পাখির ছবি তুলছিলেন। নতুন মনে হলো বলে তিনি একটি পাখির ছবি দ্রুত তুলে ফেললেন। পরে জানলেন, ‘মাস্কড বুবি’ নামের এই সামুদ্রিক পাখিটি এর আগে এ দেশে দেখা যায়নি। পর দিন তিনি সেখানেই ‘রেড বিল্ড ট্রপিক বার্ড’র ছবি তুললেন। এটি এর আগে একবার মাত্র এ দেশে রেকর্ড হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

bird-in-(5)

রাতচরার দুটি প্রজাতি
অন্যদিকে তৃতীয় পুরস্কার পাওয়া মুহাম্মদ তারিক হাসান চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেখা পেয়েছেন ‘সাভানা নাইটজার’ ও ‘ইন্ডিয়ান নাইটজার’ নামে দুটি দুর্লভ প্রজাতির পাখি। ২০১৩ সাল থেকেই তিনি পাখির ছবি তোলা শুরু করেন। ২০১৫ সালে পাখি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ছোটবেলা মেলা থেকে মাটির পাখি কিনে খেলা করতেন। আর তখন থেকেই তার পাখির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা সৃষ্টি হতে থাকে। বাড়ির পাশেই পড়ে আছে সরকারি খাস জমি। সেখানে আছে খিছু ঝোপঝাড়, অর্জুন গাছ ও ঘেসো জমি। বাগানে থাকে নানা প্রজাতির পাখির ঝাঁক ও শেয়ালের দল। তাই বাড়িতে গেলেই বাগানে ঢুঁ মেরে আসেন। তেমনি একদিন বাগানে যান পাখির ছবি তুলতে। দূরে গাছের ডালে কিছু একটা বসে থাকতে দেখেন। ক্যামেরা বের করে কিছু ছবি তোলেন। দেখেন পাখিটি ঘুমোচ্ছে। এটা ছিল দেশি রাতচরা পাখি। যারা দিনে ঘুমায় রাতে কাজে ব্যস্ত থাকে। পাখিটির গাঁয়ের রং গাছের ডালের রঙের মতো। খুব ভালো করে লক্ষ্য না করলে এদেরকে দেখা অসম্ভব। বাড়ি এসে পাখিপ্রেমীদের সাথে গল্প করে জানতে পারেন, পাখিটি বাংলাদেশে খুবই দুর্লভ। এর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। তাই পরের দিন আবার গেলেন সেই বনে, গিয়ে আগেরটির দেখা পেলেন না। সারাদিন খুঁজে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির দিকে রওনা দেন। সূর্য ডুবে যাওয়ায় রাতচরারা বেড়িয়ে পরে। সাথে সাথেই ছবি তোলেন আরো একটি পাখির। এটির নাম মেঠো-রাতচরা। দুই দিনে দুই দুর্লভ পাখির ছবি তুলে পেয়ে যান বিগ বার্ড অ্যাওয়ার্ডের তৃতীয় পুরস্কার। তারিক হাসান বর্তমানে অহনিশ ফিল্মের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

এবং পাখিমেলা
‘২০০১ সালে এই আয়োজনটির শুরু হয়েছে। গত ১৭ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পাখিমেলা হচ্ছে। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে মেলায় সহযোগিতা করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৬৯০ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে পাখি পর্যবেক্ষণ ও নতুন প্রজাতির পাখির সন্ধান নিশ্চিত করতে ২০১৪ সাল থেকে এই অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়। দুর্লভ ও নতুন পাখির সন্ধান দিয়ে গত পাঁচ বছরে মোট পনেরো জন তরুণ পাখিবিদ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ‘বিগ বার্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তারা ক্রেস্ট ও সম্মাননা পান। সেরা পাখিবিদকে একবছরের জন্য ‘বিড বার্ডার অব দ্য ইয়ার’ খেতাব দেওয়া হয়।’ কথাগুলো বললেন এ পুরস্কারের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতনামা বন্য প্রাণীবিদ ড. মনিরুল এইচ খান।

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

    নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
  • নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com