ফল
নওগাঁয় মিশ্র ফল চাষে সফলতা

শুধু চাকরি নয়, কৃষি কাজ করেও জীবনের পথ পরিবর্তন করা যায়। একজন শিক্ষিত যুবক কামরুল হাসান তুষার তা প্রমাণ করে দিলেন। করোনার বৈশ্বিক পরিবেশে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। তুষার নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বালুভরা ইউপির প্রধানকুন্ডি গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আল এমরানের ছেলে। ৩ ভাই পরামর্শ ক্রমে ৪৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন মিশ্র ফলজবাগান। নাম দেওয়া হয় রাইয়্যান এগ্রো ফার্ম। বাগান শুরু এখনও দু’বছর হয়নি। প্রথম বছরেই বড়ই বিক্রির সাফল্যে আশার আলো দেখতে পান ইঞ্জিনিয়ার তুষার।
১২ বিঘা জমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা বড়ই বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে আড়াইশ ক্যারেজ মাল্টা বিক্রি করেন। প্রায় ৩শ মণ পেয়ারা বিক্রি করেন। মাল্টা বেচা কেনা প্রায় শেষের দিকে। রয়েছে শুধু পেয়ারা।জানা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ বেষ্টনীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক পরিবেশ। যা গ্রামের মেহনতী মানুষকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। উৎসাহ পেয়ে আশপাশের কয়েকজন বড়ই বাগান তৈরি করছে। বাগানে দেখা যায় কিছু জমিতে মাল্টা পেয়ারার গাছ বড় হয়ে গেছে। আবার কিছু জমিতে গাছ ছোট রয়েছে। এক দেড় ফিট লম্বা পেয়ারা গাছ হাফ কেজি থেকে ৬শ/ ৭শ গ্রাম ওজনের মিষ্টি পেয়ারা ধরে আছে।
তুষার জানান, বাগান তৈরিতে আমি ভবিষ্যতে আশার আলো দেখতে পেয়েছি। কেউ যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারে অবশ্যই সফল হবে। শ্রমিকের সাথে নিজেকেও শ্রমিক হতে হবে। আমার বাগানের মাল্টা, পেয়ারা এলাকায় ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোনে ফলের অর্ডার করেন। সে মোতাবেক ডেলিভারি দেওয়া হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, আমরা সব সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। মাল্টা কমলা ও লেবু জাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। বিদেশি ফল পরিহার করে দেশীয় ফলে নির্ভরশীল হতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন জানান, আমি বাগানটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে নানা প্রজাতির ফল রয়েছে। খেতেও খুব মিষ্টি। বাগান মালিকের উৎসাহ উদ্দীপনা এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করবে।
ফল
কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ

সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
ফল
আমের চারা তৈরি, চারা রোপণ,সার ব্যবস্থাপনা, সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা,রোগ ব্যবস্থাপনা, পোকা দমন ব্যবস্থাপনা – দা এগ্রো নিউজ

বারি আম-১ (মহানন্দা): প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়। পাকা ফলের রং আকর্ষণীয় হলদে। ফলের ওজন গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম।
বারি আম-২: প্রতি বছর ফল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত। ফলের ওজন গড়ে ২৫০ গ্রাম। ফলের খোসা মধ্যম পুরু ও মসৃন। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়।

বারি আম-৩ (আম্রপালি): প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। ফলের শাঁস গাঢ় কমলা রঙের। আঁশহীন, মধ্যম রসালো, শাঁস ফলের শতকরা ৭০ ভাগ। গাছের আকৃতি মাঝারি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১৫৫-১৭০ টি।
বারি আম-৪ (হাইব্রিড আম): এটি একটি উচ্চ ফলনশীল, মিষ্টি স্বাদের নাব জাত। ফজলী আম শেষ হওয়ার পর এবং আশ্বিনা আমের সাথে এ জাতের আম পাকে। এ জাতের আম কাঁচা অবস্থাতেও খেতে মিষ্টি।

চারা তৈরি: ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা যায়।
চারা রোপণ: ষড়ভূজি পদ্ধতিতে আম চারা রোপণ করলে ১৫ ভাগ চারা বেশি রোপণ করা যায়। জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় (মধ্য মে থেকে মধ্য জুলাই) এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। প্রতি গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ থেকে ১০ মিটার রাখতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ গোবর ২২ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৫৫০ গ্রাম, এমওপি সার ৩০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারার গোড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে রোপণ করতে হবে।

একটি পূর্ণ বয়স্ক ফলন্ত আম গাছে বছরে ৫০ কেজি জৈব সার, ২ কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি, ৫০০ গ্রাম এমওপি, ৫০০ গ্রাম জিপসাম ও ২৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখিত সার ২ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমবার জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে এবং দ্বিতীয়বার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: ফলন্ত গাছে মুকুল বের হওয়ার ৩-৪ মাস আগ থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তবে মুকুল ফোটার পর ও ফল মটর দানা হলে একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া দরকার। গাছের গোড়া ও গাছের ডালপালা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
আমের
এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন:
ভূমিকা: এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমনের কারণে এ রোগ হয়।
ক্ষতিরনমুনা: গাছের পাতা, কান্ড, মুকুল ও পরে ধুসর বাদামি রঙের দাগ পড়ে। এ রোগে আক্রান- মুকুল ঝরে যায়, আমের গায়ে কালচে দাগ পড়ে এবং আম পচে যায়।

প্রতিকার: আমের মৌসুম শেষে গাছের মরা ডালপালা কেটে পুড়ে ফেলতে হয়। কাটা অংশে বোঁর্দো মিশ্রণ লাগাতে হয়। গাছে মুকুল আসার পর কিন’ ফুল ফোটার আগে ডাইথেন এম-৪৫ বা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রয়োগ করা দরকার।
পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
আমের ভোমরা পোকা দমন:
ভূমিকা: আমের ভোমরা পোকার আক্রমনে ফলনে মারাত্নক ক্ষতি হয়ে থাকে।
ক্ষতিরনমুনা: ভোমরা পোকার কীড়া আমের গায়ে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খায়। সাধারণত কচি আমে ছিদ্র করে এরা ভিতরে ঢুকে এবং ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ছিদ্রটি বন্ধ করে দেয় এ জন্য এ জন্য বাইরে থেকে আমটি ভাল মনে হলেও ভিতরে কীড়া পাওয়া যায়।
প্রতিকার: আম গাছের মরা ও অতিরিক্ত পাতা শাখা এবং পরগাছা কেটে ফেলতে হবে। গাছে ফল আসার ১-২ সপ্তাহ পর অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার।
ফসলতোলা: আমের বোটা যখন হলুদাভ রঙ ধারণ করে তখন আম সংগ্রহ শুরু করতে হয়। গাছ ঝাকি না দিয়ে জালিযুক্ত বাঁশের কৌটার সাহায্যে আম সংগ্রহ করা ভালো।
ফল
লিচুর চারা তৈরি, চারা রোপণ, সার ব্যবস্থাপনা,অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা – দা এগ্রো নিউজ

বারি লিচু-১: ফল ডিম্বাকার এবং রঙ লাল। দেশের উত্তারাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ জাতটি আগাম জাত।
বারি লিচু-২: বীজ অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষ করা যায়।
বারি লিচু-৩: মাঝ মৌসুমী জাত, নিয়মিত ফল ধরে। গোলাপের সুঘ্রান বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বড় আকারের ফল উৎপাদনকারী এ জাতটি বসতবাড়ীর বাগানের জন্য অত্যন- উপযোগী। ফলের শাঁস মাংসল রসালো ও মিষ্টি।
চারা তৈরি: কাটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়।

চারা রোপণ: জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস কলমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ৮-১০ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের সময় গর্তে কিছুটা পুরাতন লিচু বাগানের মাটি মিশিয়ে দিলে চারার অভিযোজন দ্রুত হবে।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে টিএসপি সার ৭০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪৫০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৬০ গ্রাম ও জৈবসার ২৫ কেজি দিতে হয। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাবাবে লাগাতে হবে। রোপণের ৩ মাস পর ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা দরকার।পূর্ণ বয়স্ক ফলন- গাছের জন্য ইউরিয়া সার ২ কেজি, টিএসপি সার ৩.৫ কেজি, এমওপি সার ২ কেজি, জিপসাম সার ২৬০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম, গোবর ১৫ কেজি এবং ৯ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা: পূর্ণ বয়স্ক গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙ্গে দেয়া দরকার।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। তাছাড়া গাছের গোড়া আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
পোকার নাম: লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা
ভূমিকা: এটি লিচুর একটি ক্ষতিকারক পোকা। এর আক্রমণে লিচুর বাজার মূল্য কমে যায়।
ক্ষতির নমুনা: ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় এ পোকা ফলের বোঁটার নিকট দিয়ে ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এরা ফলের শাঁস খায় না তবে বোঁটার কাছে বাদামী রংয়ের এক প্রকার করাতের গুড়ার মত পদার্থ উৎপন্ন করে।
ব্যবস্থাপনা: এ পোকা দমনের জন্য ফল ধরার পর লিবাসিড ৫০ তরল বা ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরল অথবা টোসিটকস আর ২৫ তরল এর যেকোন একটি প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার সেপ্র করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত: ১৫ দিন পূর্বে শেষ সেপ্র করতে হবে।

মাকরের নাম: লিচুর পাতার ক্ষুদ্র মাকড়
ভূমিকা: লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়।
ক্ষতির নমুনা: আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতার নীচের দিক লাল মখমলের মত হয়। পরবর্তীতে পাতা দুর্বল হয়ে মরে যায় এবং ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না। আক্রান্ত ফুলে ফল হয় না।
ব্যবস্থাপনা: আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল ২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ভালভাবে সেপ্র করা।
ফসল তোলা: ফলের খোসার কাঁটা চ্যাপ্টা হয়ে যখন মসৃণ হয় এবং ফলের গায়ে লালচে বর্ণ ধারণ করে তখন কিছু পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে রিচু থোকায় থোকায় সংগ্রহ করতে হবে।
ফল
তাল উৎপত্তিস্থান, পুষ্টিমান, ওষুধিগুণ, উৎপাদন পদ্ধতি, বীজতলা তৈরী ও চারা উৎপাদন – দা এগ্রো নিউজ

উৎপত্তিস্থান :
তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপ-মহাদেশীয় বৃক্ষ।
পুষ্টিমান :
পাকা তালের খাদো্যপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭.২ গ্রাম খনিজ০.৭ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শাক্তি ৮৭ কিলোক্যালরী রয়েছে।
ওষুধিগুণ :
তালের রস শেৱষ্মানাশক।এটি মূত্র কর , প্রদাহ ও কোষ্ঠাঠিন্য নিবারণ করে। রস থেকে তৈরি তালমিসরি সর্দি কাশির মহৌষধ, যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।

জাত :
তালের কোন অনুমেদিত জাত নেই। তবে এদেশে বিভিন্ন আকার ও রংয়ের তাল দেখা যায়। আবার কোন কোন তাল গাছের বারমাসই কমবেশী তাল ধরে থাকে।
উৎপাদন পদ্ধতি :
জমি নির্বাচন ও তৈরী :
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল ফসলের আবাদ করা যায়। তবে উঁচুজমিতে এবং ভারী মাটি ইহা চাষের জন্য বেশী উপযোগী। এদেশে বাগান আকারে কোন তাল ফসলের আবাদ নেই। বাগান আকারে চাষ করতে হলে নির্বাচিত জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।

বীজ সংগ্রহ ও নির্বাচন :
আগষ্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুর্ব করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। তাল বীজ সংগ্রহ করে নির্বাচন করা উত্তম। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃৰ হতে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।
বীজ বপনের সময় :
ভাদ্র হতে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজ বপনের দূরত্ব :
সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চাবা থেকে চারা ৭ মিটার
গর্ততৈরী ও প্রাথমিক সার প্রয়োগ:
গর্তের আকার হবে ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টি এস পি এবং ২০০ গ্রাম এমপি মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।

বংশ বিস্তার :
বীজের মাধ্যমে তালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। দুই ভাবে তাল গাছ লাগানো যায়। একটি পদ্বতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে অথবা বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারা রোপনের মাধ্যমে এর আবাদ করা যায়।
বীজ বপন:
সমতল ভূমিতে তালের বীজ সাধারনত বর্গাকার বা ষড়ভূজী প্রণালীতে লাগানো যেতে পারে। তাবে উচু নিচু পাহাড়ী এলাকায় কন্টুর প্রনালী করা যেতে পারে। গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে বীজ বপন করতে হবে।

বীজতলা তৈরী ও চারা উৎপাদন :
পাকা অথবা ইট হিছানো মেঝেতে বীজতলা তৈরী করতে হবে। মাটির উপরও বীজতলা তৈরী করা যেতে পারে। এৰেত্রে চারার শিকড় যাতে বীজতলার তৈরী মাটিতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রথমেই পলিথিন শীট বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর ৩০-৪০ সে.মি: পুর্ব বেলে মাটি অথবা কম্পোষ্ট দিয়ে বীজতলা তৈরী করতে হবে। বীজতলার আকার হবে ১ মিটার প্রস্থ ও ১০ মিটার অথবা জমির সাইজ অনুযায়ী দৈর্ঘ্য হতে পারে । এ আকারের একটি বীজতলা প্রায়১০০০ টি বীজবপন করা যায়। সংগ্রহিত বীজ পাশাপাশি রেখে বীজতলার উপর সাজাতে হবে এবং বীজের উপর ২-৩ সে. মি: বালি অথবা কম্পোষ্ট দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
বীজতলা সবসময় ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হতে শুর্ব করবে। বীজ অংকুরোদগমের সময় বীজপত্রের যে আবরণী বের হয়ে আসে তা দেখতে শিকড়ের মত কিন্তু আসলে তা শিকড় নয়। এই বীজপত্রের আবরণীর মাঝে ফাঁপা থাকে, অগ্রভাগে ভ্রূণ অবস্থান করে এবং টিউবের আকৃতিতে বৃদ্ধি পায়। হলদে রং-এর জার্মটিউবের অগ্রভাগে ভ্রূণ আবৃত থাকে এবং তা সাধারণত মাটির নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।

জার্মটিউবলন্ব হবার পরেই ভ্রূণের Coleoptile (åƒY কান্ডের আবরণী) এবং Coleorhiza
(ভ্রূণ মূলের আবরণী)-এর বৃদ্ধি শুর্ব হয়। জার্মটিউবের মতো Coleoptile ১৫-৪০ সে. মি. লন্ব হয়ে থাকে । Coleorhiza ও শিকড় এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যে এদের পৃথক করা কঠিন এবং বীজতলার নিচের মেঝেতে বাধা প্রাপ্ত হয়ে বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। জার্মটিউব লন্ব হবার ১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে Coleoptile এর উপরে একটি পাতলা আবরণীতে পরিণত হয়। এঅবস্থায় চারায় কেবল ১ টি Coleoptile ও ১টি শিকড় থাকে। চারার গোড়া ও শিকড়ের গা হতে ছোট ছোট অনু শিকড়ও গজাতে শুর্ব করে। Coleoptile এর বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হলে বীজের সাথে জার্মটিউবের সংযোগ স্থানে পচতে/ শুকাতে আরম্ভ করলে চারা পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে।
চারা পলিব্যাগে স্থানান্তর ও নার্সারীতে পরিচর্য্যা :
বীজতলার উৎপাদিত চারা গোরব মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরা 15×15 সে. মি. আকারের পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। ব্যাগের পূর্বত্ব হবে ০.০৬/০.০৭ মিমি। প্রতিটি পলিব্যাগের নীচের দিকে চার জোড়া ছিদ্র রাখতে হবে। ব্যাগে ভরার জন্য ১/৫ অংশ গোবর ও ৪/৫ অংশ মাটির মিশ্রিণ ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে বীজতলা খনন করে বেলেমাটি / কম্পোস্ট সরিয়ে চারা উন্মুক্ত করতে হবে। বীজ থেকে চারা আলাদা করার জন্য জার্মটিউবের উপরে অর্থাৎ বীজ সংলগ্ন চিকন, পচা / শুকনো স্থানে কাটতে হবে। যদি চারার শিকড় বেশি লন্ব হয় তাহলে ১০-১৫ সে. মি. শিকড় রেখে বাকি অংশ ধারালো চাকু দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।
প্রথমত :
পলিব্যাগের ১/৩ অংশ গোবর মিশ্রিত মাটি ভরতে হবে। এরপর চারাটি পলিব্যাগের মাঝামাঝি এমনভাবে রাখতে হবে যেন চারার গোড়া প্রায় ৫ সে.মি. ব্যাগের মধ্যে থাকে। অত:পর গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে ব্যাগের বাকী অংশ ভরতে হবে (চিত্র-১)। পলিব্যাগে চারা স্থানান্তরের পরে অন্তত: ২-৩ সপ্তাহ আংশিক ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নার্সারিতে সাজিয়ে রাখতে হবে। পানি দিয়ে পলিব্যাগের মাটি আর্দ্র রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। পলিব্যাগের চারা সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে এবং রোগবালাই দমন করতে হবে।
মাঠে চারা রোপন:
মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লন্ব পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপন করা উচিত। তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল- মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে।সমতল ভূমিতে অন্যান্য বৃৰ প্রজাতির পলিব্যাগের চারার মতোইএ চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর নির্দিষ্ট স্থানে পলিব্যাগের আকৃতি অনুসারে অগার দিয়ে গর্ত করে পলিথিন ছিড়ে পলিব্যাগের মাটিসহ চারা গর্তে বসাতে হবে। গুড়ো মাটি দিয়ে গর্তের ফাঁক ভরাটসহ ভালভাবে চারার গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারাগুলো আগাছমুক্ত রাখা ও গবাদি পশুর উপদ্রব থেবে রৰার ব্যবস্থা দিতে হবে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম তিন বছর রোগ- বালাই ও কীট -পতঙ্গের আক্রমণের হাত হতে চারা রৰা করা আবশ্যাক।
সার প্রয়োগ :
প্রতি বছরই বর্ষার আগে ও পরে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে প্রতি বছর সারের মাত্রা ১০% হারে বাড়িয়ে দিতে হবে। পূর্ণবয়স্ক গাছে প্রতিবছর ১৫-২০ কেজি গোবর,ইউরিয়া ১ কেজি, টি এসপি ৫০০ গ্রাম, এমপি ৫০০ গ্রাম সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর পরই পানি সেচ দিতে হবে।
পরিচর্য্যা :
সার প্রয়োগ ছাড়াও আগাছা পরিস্কার , সেচ ও নিস্কাশনের প্রতি গুর্বত্ব দিতে হবে। নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্য্যা নিশ্চিত করা হলে ১০- ১২ বছরের মধ্যেই তাল খাওয়া যায়।
পোকা মাকড় ও রোগবালাই :
তাল গাছে কোন পোকামাকড়- ও রোগবালাই দেখা যায় না ।
ফল সংগ্রহ:
মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ- ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫০- ২৫০ টি ফল ধরে। তালের ব্যবহার তালের রস বিভিন্ন প্রকার পিঠা , মিছরি ও গুড় তৈরীতে ব্যবহার হয়। সদ্য আহরিত তালের রস পানীয়। তালগাছের পাতা ও আঁশ পাখা ও অন্যান্য কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরীর জন্য ব্যবহার করা যায়। বয়স্ক তালগাছ থেকে উৎকৃষ্ট মানের কাঠ পাওয়া যায় যা গৃহ নির্মান ও সৌখিন দ্রব্য প্রস্তুত করা জন্য ব্যবহার করা হয়। পাকা তালের রস কনফেকশনারীতে শুকনো খাবার প্রস্তুত করনের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ফল
লটকনের ওষুধিগুণ, চাষ পদ্ধতি, চারা রোপণ, পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ- দা এগ্রো নিউজ

লটকনের ওষুধিগুণ
১. লটকন অম্লমধুর ফল।
২. লটকন খাদ্যমানেও সমৃদ্ধ।
৩. ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও নিবারন হয়।
৪. শুকনো গুঁড়ো পাতা খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমায়।

চাষ পদ্ধতি মাটি
- ১. শুনিকাশযুক্ত প্রায় সব ধরণের মাটিতেই লটকনের চাষ করা যায়।
- ২. তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
- ৩. উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং উন্মুক্ত বা আংশিক ছায়া চাষ করা যায়।
চারা রোপণের সময়
- ১. বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়
- ২. তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়।

রোপণের দূরত্ব
- ১. সারি থেকে সারির দূরত্ব ঃ ৬ মিটার
- ২. চারা থেকে চারার দূরত্ব ঃ ৬ মিটা
গর্ত তৈরি
- ১. গর্তের আকার হবে ৯০ সেমি২। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। সার সারের পরিমাণ/গর্ত১) গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজি২) টিএসপি ৫০০ গ্রাম৩) এমপি ২৫০ গ্রাম
- ২. গর্ত ভর্তি করার সময় মাটি শুকনা হলে গর্তে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ ও পরিচর্যা
- ১. সাধারণত বীজ দিয়ে লটকনের বংশ বিস্তার করা যায়।
- ২. সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতিতে লটকনের চার লাগানো যেতে পারে।
- ৩. গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে নির্বাচিত চারা সোজাভাবে লাগিয়ে চারদিকে মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।
- ৪. চারা লাগানোর পর পর পানি দিতে হবে।
- ৫. প্রতি ১-২ দিন অন্তর পানি দিতে হবে।
- ৬. প্রয়োজনবোধে বাঁমের খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ
প্রতি বছর পূর্ণবয়স্ক গাছে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গাছ
- ১) গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজি২) ইউরিয়া ১ কেজি৩) টিএসপি ০.৫ কেজি৪) এমপি ০.৫ কেজি অথবা, মিশ্রসার প্রয়োগ করলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
- সারের নাম সারের পরিমাণ/গাছ১) গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজি
- ২) এনপিকেএস মিশ্র সার (১২-১৫-২০-৬) ১ কেজি উপরোক্ত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুুর বেলা ছায়াপড়ে ততটুকু জায়গায় ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ
- ১. চারা রোপণের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার
- ২. ফল ধরার পর দু’একটা সেচ দিতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।
ডাল ছাঁটাই
- ১. গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও কীটাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে।
ফল সংগহ
শীতের শেষে গাছে ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফল পাকে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন