ডায়াবেটিস (বহুমূত্র রোগ) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। আমাদের দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয় তবে ডায়াবেটিস রোগ হয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। এছাড়া অনিয়মতান্ত্রিক জীবনধারা, অনিয়মিত ও অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে জেনেটিক বা বংশগত কারণেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একেবারেই কম নয়।
বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে। তবে আক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি প্রতিরোধ করা যায় সেটাই ভাল। গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত ফল তাল ও ওলকচু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যাদুকরী ভূমিকা পালন করবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ শাহিনুর রহমান গবেষণার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি জানান, ডায়াবেটিস মাত্রা খুব বেশি না হলে তাল এবং ওলকচু তা স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে সক্ষম। এমনকি ডায়াবেটিস-২ চরম মাত্রায় পৌঁছালেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আমাদের অতি পরিচিত তাল এবং ওলকচু। তালের কচি শাস বা অংকুরিত তালের আটিতে এন্টি ডায়াবেটিকস উপাদান আছে। যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস এর মাত্রা কমাতে কাজ করে। এছাড়া ওলকচু জাতীয় খাদ্যদ্রব্যেও এন্টি ডায়াবেটিস উপাদান আছে। এগুলো সহনীয় মাত্রায় খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তাৎপর্যময় ভূমিকা পালন করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ শাহিনুর রহমান একই বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ এর তত্ত্বাবধায়নে পিএইচডি গবেষণায় ডায়াবেটিকস নিরাময়ে ওলকচু ও তালের ভূমিকা প্রমাণ করতে সক্ষম হন। এই অনবদ্য গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪৫তম সিন্ডিকেট সভা তাকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করেছেন।
গবেষণায় দেখো গেছে, পাকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অংকুরিত তালের আটির ভেতরের সাদা অংশ এবং ওলকচুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণ ফাইটোকেমিকেল থাকায় উপাদান দুটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এর মধ্যে পাকা তালের রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম না হলেও স্থিতিতাবস্থায় রাখে। তবে কচি তালের শাঁস ও অংকুরিক তালের শাঁস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অধিক পরিমাণ সক্ষম।
গবেষক শাহিনুর রহমান জানান, আমাদের সমাজে ডায়াবেটিস রোগীকে মাটির নিচের কোন জিনিস ক্ষেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ওলকচু মাটির নিচে উৎপাদিত হলেও এতে অ্যান্টি ডায়াবেটিসরোল আছে। এতে প্রচুর পরিমান ফাইটোকেমিক্যাল ও পুষ্টিগুণ থাকায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এ দুটি উপাদান পরিমিত মাত্রায় খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
তিনি আরো জানান, জারমিনেটেড ইনডোস পাম (অংকুরিত তালের আটি) নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথা গবেষনা হয়নি। আমি ডায়াবেটিস র্যাটের উপর গবেষনা করে দেখেছি তালের কচি শাস বা জারমিনেটেড ইনডোস পাম ও ওলকচু ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য এন্টি ডায়াবেটিস হিসেবে ভূমিকা রাখে। এর ফলে ডায়াবেটিস র্যাটের ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল সহনীয় পর্যায়ে আসে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলে গবেষক ড. রহমান বলেন, উপযুক্ত ফান্ড ও পর্যাপ্ত প্রযুক্তি না থাকার কারণে ডায়াবেটিস-১ নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হয়নি। উপযুক্ত ফান্ড পেলে ডায়াবেটিস-১ ও ডায়াবেটিস-২ নিয়ে মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর চেষ্টা করবো। অদূর ভবিষ্যতে উদ্ভিতজাত উপাদানের সংমিশ্রণে একটি কার্যকর ডায়াবেটিস নিরাময়ে সক্ষম খাদ্য উপাদান তৈরির নিমিত্তে গবেষণা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন