পরিবেশ
জাহাঙ্গীরনগরও অন্যদের পথে
লেখক
প্রথম আলো
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি যখন যাত্রা শুরু করে, তখন কথা ছিল গবেষণায় সবচেয়ে জোর দেওয়া হবে। রাজধানী থেকে দূরে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে শিক্ষা ও গবেষণায় নিবেদিত থাকবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু পাঁচ দশক পরে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক চরিত্র হারিয়েছে। দেশের আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এটির বিভাগ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বাজেট ও অবকাঠামো বেড়েছে, কমেছে শিক্ষার মান, যা বলছেন শিক্ষকেরাই। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব সমস্যায় জর্জরিত—ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতা, শিক্ষকরাজনীতির নামে দলের লেজুড়বৃত্তি, দলীয় পরিচয়ে শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণায় নজর না দেওয়া, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ—এসব সমস্যা জাহাঙ্গীরনগরেও প্রকট।
সুবর্ণজয়ন্তীতে গর্ব করার মতো কী আছে—জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে। তাঁদের বক্তব্যের সারাংশ মোটামুটি এমন, বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্যাতন ও মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রশংসনীয় অবস্থান দেখিয়েছে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং নৃবিজ্ঞানের মতো বিভাগ দেশে প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীরনগরেই খোলা হয়েছিল। অনেক কালজয়ী নাটক, নাট্যাভিনেতা ও নির্মাতা তৈরি হয়েছে জাহাঙ্গীরনগরে। দেশের বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন ও ইতিহাস উদ্ধারের কাজ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ গবেষণা ও জ্ঞানচর্চায় সাফল্য দেখিয়ে সমাদৃত হয়েছেন।
কিন্তু সার্বিক মূল্যায়ন কী—এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য আবদুল বায়েস বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানে যে অবনতি, জাহাঙ্গীরনগর তার ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষকদের আন্তরিকতা কমেছে। সেই নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষার্থীও নেই।
আবদুল বায়েস জানান, জাহাঙ্গীরনগরকে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল গুরু-শিষ্যের মতো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-গবেষণায় নিবেদিত থাকার সুযোগ দেওয়া। বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আবাসিক বৈশিষ্ট্যটি আর টিকে নেই।বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার অদূরে সাভারে ৬৯৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। সেখানে প্রতিবছর প্রচুর শীতের পাখি আসে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট, আর ক্লাস শুরু হয় ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ওই বছরের ১২ জানুয়ারি। তাই এই দিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার করোনাভাইরাসের কারণে ছোট পরিসরে ভার্চ্যুয়াল কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জাহাঙ্গীরনগর যাত্রা শুরু করে চারটি বিভাগ নিয়ে—অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান। এখন ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র ১৫০ জন। এখন দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার। শুরুর ২১ জন থেকে বেড়ে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১৮।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত ১০ বছরে আটটি নতুন বিভাগ ও দুটি নতুন ইনস্টিটিউট হয়েছে। নতুন বিভাগগুলো হলো জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, চারুকলা, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ এবং আইন ও বিচার বিভাগ। ইনস্টিটিউট দুটি হলো—বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস।
আবাসিক শুধু নামেই
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের (১৯৭০-৭১) গণিতের ছাত্র ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। বছর দুই আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যে কক্ষটিতে থাকতাম সেখানে গিয়ে দরজার সামনে দেখি ৮ থেকে ১০ জোড়া জুতা। যে কক্ষে আমরা টেবিল টেনিস খেলতাম সেটিতে গণরুম করে শিক্ষার্থীরা থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘এই হলো এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক অবস্থা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে একটিমাত্র আবাসিক হল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখন রয়েছে ১৬টি। তবে শিক্ষার্থী আসনসংখ্যার অনেক বেশি। বর্তমানে ছাত্রীদের জন্য আটটি হলে আসন রয়েছে ৩ হাজার ৯১২টি। থাকেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্রী। আর ছাত্রদের আটটি হলে আসন আছে ৪ হাজার ৫৪০টি। থাকেন প্রায় সাত হাজার ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের যে কক্ষে দুজনের থাকার কথা, সেখানে তাঁরা আটজন থাকেন। শুধু শোয়ার মতো একটু জায়গা আছে। কক্ষে পড়ার পরিবেশ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগুজে একটি নিয়ম বলছে, হলে আসন থাকা সাপেক্ষে প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। কিন্তু প্রতিবছর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর কেউ আসন পান না। কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদের আটটি আবাসিক হলে প্রশাসনের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অলিখিতভাবে এসব হলে আসন বণ্টনের কাজ করেন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে বেশ কিছু বিভাগ খোলা হয়, এ জন্য আবাসনসংকট হয়েছে। সংকট নিরসনে নতুন হল তৈরি হচ্ছে।বিজ্ঞাপন
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানে যে অবনতি, জাহাঙ্গীরনগর তার ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষকদের আন্তরিকতা কমেছে। সেই নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষার্থীও নেই।
অধ্যাপক আবদুল বায়েস, সাবেক উপাচার্য, জাবি
সেশনজটে সংকট বেড়েছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের স্নাতক সম্মান কোর্স (বি. ফার্ম) পাঁচ বছরের। বিভাগটির ৪১ ও ৪২তম ব্যাচের (২০১১-১২ এবং ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি এই কোর্স শেষ করেছেন ৭ বছরে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সব কটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটই এখন বড় ধরনের সেশনজটের মধ্যে ছিল। তা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আন্দোলনে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং করোনা সংক্রমণ।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার পর ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এক মাস পর ক্যাম্পাস খুললেও অনেক বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এরপর করোনার সংক্রমণে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জাহাঙ্গীরনগরও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অবশ্য অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে।
এদিকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা থাকলেও শিক্ষকদের একটি অংশ ‘উইকেন্ড কোর্স’ নিয়ে ব্যস্ত। ১৮টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে এই বেসরকারি শিক্ষা চলছে।
আন্দোলনে বিদায় ৫ উপাচার্যের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫০ বছরে দায়িত্ব পালন করেছেন মোট ১৮ জন উপাচার্য। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন উপাচার্যকে আন্দোলনের মুখে বিদায় নিতে হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের দাবি করেছিলেন। একই ঘটনায় ‘চাঁদা দাবির’ অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে সরে যেতে হয়। এখন উন্নয়নকাজ চললেও এ দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।
গবেষণায় সামান্য বরাদ্দ
জাহাঙ্গীরনগরে গবেষণায় বরাদ্দ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জাহাঙ্গীরনগরের বাজেটের আকার ছিল প্রায় ২৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ দেখানো হয় ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা মোট বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগের অর্থবছরেও হারটি ১ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের। এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচটি অনুষদে মোট ১৮৩টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটে ওই শিক্ষাবর্ষে মোট ৩২৮টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
দুই শিক্ষকের সাম্প্রতিক এক অর্জনে গর্বিত শিক্ষার্থীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গবেষকদের প্রকাশিত একটি জার্নালে গবেষণার ‘সাইটেশনের’ দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগরের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিলের নাম আসে। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে এ এ মামুনের ৪১৭টি প্রকাশনা রয়েছে। তাঁর গবেষণা থেকে ১২ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি প্লাজমা ফিজিকস, কোয়ান্টাম ফিজিকস ও মেডিকেল ফিজিকস নিয়ে গবেষণা করেন।
ইব্রাহিম খলিলের ১১০টি প্রকাশনা রয়েছে। তিনি মূলত মধুর ঔষধি গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেন।
র্যাঙ্কিংয়ে নেই
শিক্ষার মান নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের মূল্যায়ন জানতে চাওয়া হয়েছিল সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগ ও ইনস্টিটিউট বাড়ানোর ফলে শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষক দেশে-বিদেশে সমাদৃত, প্রতিষ্ঠিত। তবে স্বীকার করতে হবে, দেশের সার্বিক শিক্ষার মান নিম্নগতি। তার মধ্যেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মান বাড়াতে বা ধরে রাখতে সচেষ্ট আছে। তবে যেভাবে শুরু হয়েছিল, তা হয়তো নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন তাদের ওয়েবসাইটে এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২০ শীর্ষক তালিকা প্রকাশ করে। এতে এশিয়ার সেরা ৪৮৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জাহাঙ্গীরনগর পায়নি। অবশ্য শিক্ষকেরা এ জন্য ওয়েবসাইটে তথ্যঘাটতির কথা বলছেন। উপাচার্যের দাবি, এটি নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজের মত হলো, দেশের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবখানেই গুণমান কমেছে। সেটা থেকে জাহাঙ্গীরনগরের যাত্রাটিও ভিন্ন কিছু নয়।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা


শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

বেদানা খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সব্বার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখের মধ্যে দিলেই, সুমিষ্ট রোষে মন উতলা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে অত্যন্ত বলবর্ধক এই ফল, রুগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। বাজারেও এর চাহিদা থাকায়, এই ফলের চাষ বহুল পরিমাণে আমাদের রাজ্যে হয়। তবে বাড়ির ছাদে এই ফলের চাষ নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সহজে, বুদ্ধিমত্ততার প্রয়োগে এই ফলের চাষ বাড়িতেও করা যায়। অনেকেই বাড়ির ছাদে ইদানিং এই ফলের চাষ নিয়ে মেতে উঠেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাড়ির ছাদে বেদনা চাষের সহজতম পদ্ধতি। যা শিখে আপনি আপনার পাড়া-পড়শীকেও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>ছাদে বেদানার চারা লাগানোর জন্য প্রথমে ভালো মানের টব সংগ্রহ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য টবের তলায় তিন থেকে চারটি ফুটো করে নিয়ে সেগুলি স্টোন চিপস দিয়ে ভালোভাবে বুজিয়ে দিতে হবে। ছাদে রোদ পড়ে এমন জায়গায় ডালিমের টবটিকে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি কালে বেলে দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে টবে জল দিয়ে প্রায় ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। পনেরটা দিন কাটলে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ এরকম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরেই লক্ষ্য করা যাবে টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে আসবে। ঠিক সেইসময় বেদানার কলমের চারা টবে পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, সোজা করে বসিয়ে যেন বেদানার চারা রোপণ করা হয়। সরু লাঠি দিয়ে চারাটিকে এরপর বেঁধে দেওয়া উচিত। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। পরবর্তী কালে জল দেওয়ার পরিমাণ চারাতে বাড়াতে হবে। গাছের গোড়ায় কখনোই যাতে জল না জমে তাতে নজর রাখা উচিত।
বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪-৫ মাস হয়ে গেলে, এক মাস অন্তর সরিষার খোল পচা জল গাছে দেওয়া উচিত। সরিষার খোল ১০ দিন ভালো রূপে জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেই পচা খোলের জল হালকা ভাবে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে নিতে হবে। টবের কিছুটা মাটি ১ বছর হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। মাটি যখন বদলাতে হবে সেই সময়কাল বর্ষার শেষ ও শীতের আগে যাতে হয় তাতে খেয়াল রাখা উচিত। মাঝে মধ্যেই টবের মাটি খুঁচিয়ে উল্টে পাল্টে দেওয়া উচিত।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>সার প্রয়োগ (Fertilizer)
বেদানার চারা বসানোর আগেই টবে দেওয়া মাটির গর্তে সার দিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই । গর্ত করার ৮-১০ র প্রয়োগ করা উচিত, এতে গাছের ফলনের মান উন্নত হবে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে বেদনা গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গর্ত
কম্পস্টের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ১০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ গ্রাম
১ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম এবং পটাশ সার ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। ওই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে মে- জুন মাসে এবং দ্বিতীয় বারে সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ: (Harvest)
৩-৪ বছর বয়স থেকেই বেদনা গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল পাকতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি বর্ণ নিলেই ফল পেড়ে নিতে হবে। ফল গাছে বেশিদিন থাকলেই তা ফেটে যেতে পারে। বেদনার খোসা অত্যন্ত শক্ত হওয়ার জন্য এই ফল অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।
ফলন:(Yield)
চার-পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই ডালিম গাছ ফল দিতে শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো প্রথম দিকে এই গাছ ভালো ফলন দেয় না। গাছের বয়স ৮ থেকে১০ বছর হয়ে গেলেই পরিপুষ্ট ডালিম গাছে আসতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ডালিম গাছের ফলনও বেড়ে যায়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটা বেদনা গাছ কম করে ২০০ টির মতন ফল দিতে পারে। কম করে ৩০ বছর বেদনা গাছ অত্যন্ত ভালো মানের ফলন দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন