পরিবেশ
জলাভূমির নিঃশব্দ নীরব হাহাকার
লেখক
প্রথম আলো
যে মনে জল, যে প্রাণে কৃষি—তার আশা, নিরাশা, অস্তিত্ব ও সংগ্রামশীলতার বয়ানই বাংলাদেশ। ‘বিস্তীর্ণ দুপারে, অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনেও নিঃশব্দে নীরবে’ গঙ্গা বইছে! আজ ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী জলীয় পরিবেশ রক্ষার সম্মিলিত প্রয়াস রামসার সম্মেলনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এ বছরই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। কেমন আছে মুক্ত এ দেশের মাছ, পাখি, গাছগাছালিসহ অসংখ্য প্রাণ? নৈসর্গিক জলাভূমিকে মানুষ রেখেছে কেমন?
ক্ষীণ হয়ে আসছে জলাভূমি
বাংলাদেশের জলাভূমি হাওর, বাঁওড়, বিল ও ঝিল নিয়ে গঠিত। ভূকম্পের ফলে সৃষ্ট বিশাল গামলা আকৃতির জলাশয়কে বলে হাওর। বাঁওড় হলো পুরোনো নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট জলাশয়। পুরোনো নদীর গতিপথের ধার ঘেঁষে সৃষ্ট জলাধারই বিল। নদীর পরিত্যক্ত খাতকে ঝিল বলে।
উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমিগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, জলাভূমিগুলো দেশের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। জলাভূমির আয়তন কমে এখন ৪৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিতে প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জলাভূমি ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলনিষ্কাশন ও সেচে’ হারিয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
সংরক্ষিত জলাভূমিতেও জীববৈচিত্র্য সংকট
১৯৭১ সালে ইরানের রামসার শহরে বিভিন্ন দেশ জলাভূমি রক্ষা ও টেকসই ব্যবহারের লক্ষ্যে ‘কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস’ আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সুন্দরবন ১৯৯২ সালে রামসার অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। যদিও মানবসৃষ্ট মারাত্মক হুমকিতে সুন্দরবন ও তার জীববৈচিত্র্য।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ২০০০ সালে রামসার অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরে বিরল প্রজাতির ২ শতাধিক পাখির অভয়াশ্রম এবং বিপন্ন ১৫০ প্রজাতির মাছের সমাগম। সরকার টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে সুফল পেলেও বিভিন্ন মানবসৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ঠেকানো যাচ্ছে না।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওরকে তৃতীয় রামসার অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৩৮টি স্বতন্ত্র বিলসহ এর আয়তন ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর। হাকালুকি হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ, ৫২৬ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটে।
বায়েরের ভূতিহাঁস গোটা পৃথিবীতে মহাবিপন্ন প্রজাতি। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের মতে, পৃথিবীতে মাত্র ২০০ জোড়া বায়েরের ভূতিহাঁস টিকে আছে। শীতকালের পরিযায়ন মৌসুমে এ হাঁসটি হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে। বায়েরের হাঁসের মতো আরও প্রায় ২০ জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ২-৩ লাখ হাঁস হাওর এলাকার জলাশয়গুলোতে আসে। পাখিশুমারির বিভিন্ন তথ্য বলছে, প্রতিবছরই পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ কমছে। অবৈধভাবে বুনো হাঁস শিকারে ফাঁদের ব্যবহার তুলনামূলক কমলেও ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে জমিতে রাখায় পরিযায়ী হাঁস মারা পড়ে। গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি হাঁস মারা পড়েছে হাকালুকি হাওরে। বিষে মরা হাঁসগুলো বাজারে বিক্রি হওয়ায় জনস্বাস্থ্যও হুমকির সম্মুখীন।
অরক্ষিত জলাভূমি
জলাভূমির হালনাগাদ তথ্য নেই। মোট ৩৭৩টি জলাভূমির আয়তন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। অধিকাংশ জলাভূমিই সুরক্ষিত নয়। এসব জলাভূমিতে কী পরিমাণ জীববৈচিত্র্য এবং হুমকি রয়েছে, তা–ও অজানা। বেশির ভাগ জলাভূমি সংরক্ষিত না থাকায় আইইউসিএনের গবেষণা অনুযায়ী পরিযায়ী পাখির বিচরণ ক্রমশ সংরক্ষিত এলাকায় সীমিত হয়ে আসছে।
সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজনে জলাভূমি সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের সৃষ্টি করলেও কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। সব জলাভূমি সংরক্ষণ করা গেলে পরিযায়ী পাখি এবং অন্যান্য জীববৈচিত্র্যও নিরাপদ হবে।বিজ্ঞাপন
জীবন-জীবিকায় টানাপোড়েন
জলাভূমি কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জন্য বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্র। শুধু হাওর অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দশমিক ৭২০ লাখ হেক্টর। প্রতিবছর ৫০ লাখ টনের বেশি ধান উৎপাদিত হয়, মূলতই বোরো। আন্তদেশীয় পানি বণ্টনের বৈষম্যমূলক প্রভাবে অসময়ে বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে হাওর অঞ্চল। উচ্চফলনশীল ধানের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের বাস্তুসংস্থানের সঙ্গে অভিযোজিত দেশি জাত হারিয়ে যাচ্ছে। জলাভূমিগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরও চাপ পড়ছে।
হাওর অঞ্চলে আছে ১৪০ প্রজাতির মাছ। গত এক দশকে এসব মাছের মধ্যে প্রায় ৬২টি প্রজাতির অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে পাঙাশ, সরপুঁটি, রিঠা, শিশর, মহাশোল, একথুটি, বামোশ, বাগাড়, পিপলা, তিলা শোল, ঘাউড়া, বাচা, বাটা, কালিয়া, ঘইন্যা, শাল বাইম, কুমিরের খিল, গুইজ্জা, চিতল, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, রানি, চাকা, গজার, কাশ খাউড়া, কালাবাটা, নেফতানি, ডানকুনি, ঢ্যালা, বিষতারা, শিলং, গুজি আইড়, ছেপ চেলা ও রায়েক, কানি পাবদা, মধু পাবদা, পাবদা প্রধান।
অধিক ফলনের আশায় জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে জলজ প্রাণী ক্ষতির শিকার। এখন ভরা মৌসুমও মাছ পাওয়া যায় কম। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং জলাভূমি দখল হওয়ায় বাধা পড়েছে পানি নিষ্কাশনে। ফলে জলবদ্ধতা বাড়ছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনের স্খলন
দিন দিন জলাভূমি দখল হয়ে পড়ছে, বহু জলাভূমি চলে যাচ্ছে ব্যক্তিমালিকানায়। আইনে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত জলাধার ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একমাত্র টাঙ্গুয়ার হাওর বাদে অন্য সব জলাশয়ে ইজারাপ্রথা বিদ্যমান। ‘জাল যার জলা তার’, নীতিবাগীশ কথা হয়েই থাকছে। প্রকৃত মত্স্যজীবীরা ইজারা পাচ্ছেন না। আগে ছোট ছোট বিল ইজারা দেওয়া হতো না। অতীতে প্রজননের জন্য কিছু মাছ রেখে দেওয়া হতো। সব বিল ইজারা দেওয়ায় মুনাফার লোভে সব ধরনের আহরণ চলছে।
জীবন্ত সত্তা, জনমানুষের সম্পৃক্ততা, প্রথাগত স্থানীয় জ্ঞান
আশার কথা, হাইকোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ (লিভিং এনটিটি) বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যান্য অনেক দেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে পৃথিবীর সুরক্ষা ও হেফাজতের লক্ষ্যে ‘গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা’র প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে।
জলাভূমি বাঁচাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। দেশের সব জলাভূমির সংরক্ষণই জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমত জলমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করে ‘টোকেন ফি’ ব্যবস্থায় জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, জলাভূমির পুরোটা ধান চাষের আওতায় না এনে নির্দিষ্ট এলাকা মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করা দরকার। তৃতীয়ত, হাওরাঞ্চলের বাঁধগুলো ফাল্গুন মাসের মধ্যে মেরামত করে বৈশাখ মাসের শুরুতে হাওরে পানি প্রবেশের সুযোগ দেওয়া কর্তব্য। চতুর্থত, কৃষক ও জেলেদের মূলধন ঘাটতি মোকাবিলায় সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা প্রয়োজন। পঞ্চমত, অন্য দেশ থেকে আসা পানি নিয়মিত পরীক্ষা করে বোঝা দরকার খনির বর্জ্য মাছ ও অন্য জীবের কী ক্ষতি করছে। সেটি নিরূপণ করে তার আন্তদেশীয় সমাধান জরুরি।
সবচেয়ে জরুরি, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রথাগত স্থানীয় জ্ঞানের সম্মিলন। এটি না ঘটলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে। স্থানীয় মানুষ সংশ্লিষ্ট বাস্তুসংস্থানেরই অংশ। তাঁদের ঐতিহ্যগত পন্থা ও প্রথাগত জ্ঞান ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার উভয়ই বাড়বে। যেমন, আগে জলাভূমিগুলোতে প্রতি তিন বছরে একবার মাছ ধরা হতো। এ পদ্ধতি ‘পাইল’ নামে পরিচিত। এতে মাছের প্রজনন বাড়ত, মাছ বড় হতো। ইজারার দাপটে পাইলপ্রথা নেই। অনিয়ন্ত্রিতভাবে আহরিত হচ্ছে মাছ।

নতুন প্যারাডাইম: সাগরমাতা থেকে সাগরব্যাপী ন্যায্যতা
পানিচক্রের দুটো দিক—মজুত ও প্রবাহ। পানির মজুত অস্থায়ী। জলাশয়ের অস্থায়ী মজুতের পরিমাণ নির্ভর করে মানুষের ওপর। প্রাকৃতিক জলাধারের ওপর অত্যাচার, তথা বাঁধ নির্মাণ, ভরাট ও গতিপথ পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে পানিচক্রের ভারসাম্য ও ন্যায্যতা নষ্ট হয়। পানির যথাযথ প্রবাহ না থাকলে জীববৈচিত্র্য ও জীবনযাত্রা হুমকিতে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, শুধু প্রকৌশলভিত্তিক সমাধান, তথা বাঁধ নির্মাণ করলেই পানির যথাযথ মজুত বজায় রাখা সম্ভব নয়। বরং জোয়ারাধার থাকলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত হয়ে পলি জোয়ারে ভরাট হয়ে জলবদ্ধতা হয় না।
অবৈধ দখল, আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদির কারণে ভরাট হচ্ছে। যেমন, ঢাকার ৬৫টি খালের মধ্যে ৪৩টি খালই অবৈধভাবে দখলের শিকার এবং ২৪টি খালে পানিপ্রবাহ হয় আংশিকভাবে। ঢাকায় ৮০ শতাংশ পানির জোগান হয় ভূগর্ভ থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসে পৃষ্ঠে প্রবাহিত পানির উৎস থেকে। একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, অন্যদিকে একুইফারের (নিষ্কাশনযোগ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তর) পানির গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ সরকারের জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রামের হিসাবে ১৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না। ঢাকায় মাত্র ২০ শতাংশ পয়োব্যবস্থাপনার পাইপলাইন রয়েছে, বাকিটা খোলা৷ পাইপলাইনের ৮০ শতাংশেই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে৷ পুকুরের পানিতেও একই মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে৷ ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতেও ক্ষতিকর অণুজীবের অস্তিত্ব মিলেছে৷ আবার আগাছানাশক ও কীটনাশক ব্যবহারে পানিদূষণে জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
নিঃশব্দে নীরবে জলরাশি মানুষকে অবারিত সম্পদ দিয়েই চলেছে। জলাভূমিকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা সময়ের দাবি। সাগরমাতা থেকে সাগরে তথা পানিচক্রের প্রতিটি স্তরে ন্যায্যতার জন্য নতুন চুক্তি প্রয়োজন। আন্তদেশীয় পানিপ্রবাহের বৈষম্য নিরসন হলে ভাটির পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান টিকতে পারবে। বাঁধ নির্মাণ, দখল বন্ধ করে পানির মজুত ও প্রবাহের ন্যায্য হিস্যায় প্রয়োজন বহুপাক্ষিকতা।
-
জলাভূমির নিঃশব্দ নীরব হাহাকার

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা


শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

বেদানা খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সব্বার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখের মধ্যে দিলেই, সুমিষ্ট রোষে মন উতলা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে অত্যন্ত বলবর্ধক এই ফল, রুগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। বাজারেও এর চাহিদা থাকায়, এই ফলের চাষ বহুল পরিমাণে আমাদের রাজ্যে হয়। তবে বাড়ির ছাদে এই ফলের চাষ নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সহজে, বুদ্ধিমত্ততার প্রয়োগে এই ফলের চাষ বাড়িতেও করা যায়। অনেকেই বাড়ির ছাদে ইদানিং এই ফলের চাষ নিয়ে মেতে উঠেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাড়ির ছাদে বেদনা চাষের সহজতম পদ্ধতি। যা শিখে আপনি আপনার পাড়া-পড়শীকেও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>ছাদে বেদানার চারা লাগানোর জন্য প্রথমে ভালো মানের টব সংগ্রহ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য টবের তলায় তিন থেকে চারটি ফুটো করে নিয়ে সেগুলি স্টোন চিপস দিয়ে ভালোভাবে বুজিয়ে দিতে হবে। ছাদে রোদ পড়ে এমন জায়গায় ডালিমের টবটিকে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি কালে বেলে দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে টবে জল দিয়ে প্রায় ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। পনেরটা দিন কাটলে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ এরকম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরেই লক্ষ্য করা যাবে টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে আসবে। ঠিক সেইসময় বেদানার কলমের চারা টবে পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, সোজা করে বসিয়ে যেন বেদানার চারা রোপণ করা হয়। সরু লাঠি দিয়ে চারাটিকে এরপর বেঁধে দেওয়া উচিত। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। পরবর্তী কালে জল দেওয়ার পরিমাণ চারাতে বাড়াতে হবে। গাছের গোড়ায় কখনোই যাতে জল না জমে তাতে নজর রাখা উচিত।
বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪-৫ মাস হয়ে গেলে, এক মাস অন্তর সরিষার খোল পচা জল গাছে দেওয়া উচিত। সরিষার খোল ১০ দিন ভালো রূপে জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেই পচা খোলের জল হালকা ভাবে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে নিতে হবে। টবের কিছুটা মাটি ১ বছর হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। মাটি যখন বদলাতে হবে সেই সময়কাল বর্ষার শেষ ও শীতের আগে যাতে হয় তাতে খেয়াল রাখা উচিত। মাঝে মধ্যেই টবের মাটি খুঁচিয়ে উল্টে পাল্টে দেওয়া উচিত।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>সার প্রয়োগ (Fertilizer)
বেদানার চারা বসানোর আগেই টবে দেওয়া মাটির গর্তে সার দিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই । গর্ত করার ৮-১০ র প্রয়োগ করা উচিত, এতে গাছের ফলনের মান উন্নত হবে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে বেদনা গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গর্ত
কম্পস্টের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ১০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ গ্রাম
১ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম এবং পটাশ সার ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। ওই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে মে- জুন মাসে এবং দ্বিতীয় বারে সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ: (Harvest)
৩-৪ বছর বয়স থেকেই বেদনা গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল পাকতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি বর্ণ নিলেই ফল পেড়ে নিতে হবে। ফল গাছে বেশিদিন থাকলেই তা ফেটে যেতে পারে। বেদনার খোসা অত্যন্ত শক্ত হওয়ার জন্য এই ফল অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।
ফলন:(Yield)
চার-পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই ডালিম গাছ ফল দিতে শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো প্রথম দিকে এই গাছ ভালো ফলন দেয় না। গাছের বয়স ৮ থেকে১০ বছর হয়ে গেলেই পরিপুষ্ট ডালিম গাছে আসতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ডালিম গাছের ফলনও বেড়ে যায়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটা বেদনা গাছ কম করে ২০০ টির মতন ফল দিতে পারে। কম করে ৩০ বছর বেদনা গাছ অত্যন্ত ভালো মানের ফলন দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন