যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতোটা পূরণ করেছেন?
ঘোড়াও মানুষকে বুঝতে পারে এবং সে কি চায় সেটাও সে মানুষকে জানাতে পারে- বলছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীতে অনেক প্রাণী আছে যারা মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে।
অর্থাৎ তারা মানুষকে বুঝতে পারে এবং তারা কি বলছে সেটাও তারা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করতে পারে।
এই গ্রুপে এখন যোগ দিয়েছে ঘোড়াও।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলছেন, এই প্রাণীটিও মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে। আর এই কাজটি তারা করে বিভিন্ন প্রতীকের দিকে ইশারা করার মাধ্যমে।
এই পরীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এসব ঘোড়াকে বলা হয়েছে তারা যদি গায়ে কম্বল পড়তে চায় তাহলে তাদের মুখে পড়ানো ঠুলি দিয়ে একটি বোর্ড স্পর্শ করে দেখাতে।
কোন জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করার মাধ্যমে আরো যেসব প্রাণী মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও বানর জাতীয় প্রাণী এবং ডলফিন।
নরওয়ের পশুরোগ বিষয়ক একটি ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী ড. সেসিলি মেডেল এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলছেন, এই গবেষণায় ঘোড়ার কাছে কিভাবে জানতে চাওয়া যায় যে সে কম্বল পড়তে চায় কীনা – তার একটি উপায় খুঁজে বের করা।
বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়ার ওপর এই গবেষণা চালানো হয়
নরওয়ের মতো নরডিক দেশগুলোতে সারা বছরেই ঘোড়ার গায়ে কম্বল পড়ানো থাকে।
এই পরীক্ষার বিষয়ে বিজ্ঞানী ড. সেসিলি মেডেল বলেছেন, “ঘোড়া কিভাবে অনুধাবন করে সেটা বোঝার জন্যে আমরা এই পরীক্ষাটি চালিয়েছি। দেখার চেষ্টা করেছি এই প্রাণীটির শেখার ক্ষমতা কি ধরনের, কি ধরনের জিনিস সে শিখতে পারে এবং ঘোড়া কিভাবে চিন্তা করে।”
“প্রায়শই মনে করা হয় যে ঘোড়া খুব বেশি বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে তারা মানুষের সাথে ভালোভাবেই কমিউনিকেট করতে পারে। এবং তারা কি চায় সেটা তারা বোঝাতে পারে,” বলেন তিনি।
এই গবেষণায় বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি ঘোড়ার আচরণ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
প্রশিক্ষকের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরেই এসব পরীক্ষা চালানো হয়।
ঘোড়াগুলোকে প্রথমে শেখানো হয়েছে প্রাচীরের ওপর টাঙানো একটি বোর্ডে কিভাবে তাদের মুখে পরানো ঠুলির মাধ্যমে স্পর্শ করতে হবে।
তারপর তাদেরকে শেখানো হয়েছে বোর্ডে যেসব প্রতীক আছে সেগুলোর একটার সাথে আরেকটার তফাতকে কিভাবে প্রকাশ করতে হবে। যেমন কম্বল পড়তে চাইলে আড়াআড়িভাবে আঁকা রেখা স্পর্শ করা, কম্বল পড়তে না চাইলে খাড়া করে আঁকা রেখা স্পর্শ করা আর কোনটাই করতে না চাইলে যে জায়গাটায় কোন রেখা আঁকা নেই সেই জায়গাটি স্পর্শ করা।
আর সবশেষে শেখানো হয় নির্দিষ্ট কোন কাজের সাথে বিশেষ একটি প্রতীককে বেছে নিতে।
প্রশিক্ষণ শেষে দেখা গেছে, খুব বেশি ঠাণ্ডা বা গরম লাগলে ওই ঘোড়াগুলো সেটা আলাদা আলাদাভাবে বোঝাতে পারছে। অর্থাৎ তখন বলতে পারছে তারা কি গায়ে কম্বল পড়তে চায় কি চায় না।
ঘোড়ার ওপর এই গবেষণা চালানো হয় নরওয়েতে
গবেষকরা বলছেন, যখন খুব বৃষ্টি হচ্ছে বা জোরে বাতাস বইছে অথবা খুব ঠাণ্ডা পড়েছে- এরকম আবহাওয়াতেই ঘোড়াগুলো কম্বল পড়তে চেয়েছে।
কিন্তু যখন খুব গরম পড়েছে তখন তারা কম্বল ছাড়াই বাইরে হেঁটে গেছে।
এথেকে বোঝা যায়, নিজেদের প্রয়োজন ও ইচ্ছা অনুসারেই এসব ঘোড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারছে এবং সেটা প্রকাশ করছে।
এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে মাত্র দুই সপ্তাহ। আর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
গবেষকরা আশা করছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এখন ঘোড়াকে আরো অনেক প্রশ্ন করতে পারেন। এবং এই গবেষণাকে পশু-প্রাণীর কল্যাণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মহাসমুদ্রের উষ্ণতা
মহাসমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে যাওয়ার ওপর একটি গবেষণায় চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, এর ফলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক রকমের প্রভাব পড়ছে। যে ধরনের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়েছে সেগুলোকেও গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়নি, বলছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাসমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়ছে
সারা বিশ্বের ১২টি দেশের ৮০ জনের মতো বিজ্ঞানীদের একটি দল এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।
এই গবেষণায় তারা বলেছেন, মহাসাগরের পানি গরম হয়ে যাওয়ার কারণে পানিতে যেসব জীবাণু বা প্ল্যাঙ্কটন আছে, সেসবসহ জেলিফিশ, কচ্ছপ, সমুদ্রের পাখি – এসব এক জায়গা থেকে অনেক জায়গার দিকে সরে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এর ফলে সমুদ্রে মৎস্য প্রজাতির বর্তমান স্থিতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা আরো সতর্ক করে দিয়েছেন যে এর ফলে উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে নানা ধরনের অসুখ বিসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা রকমের ক্ষতিকর জীবাণু।
এসব নিয়েই শুনুন সমুদ্র বিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরীর সাক্ষাৎকার।
সানগ্লাসে ক্যামেরা
বার্তা আদান প্রদানের একটি অ্যাপ – স্ন্যাপচ্যাট। তরুণদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
কোম্পানিটি এই প্রথম তাদের একটি গেজেট বাজারে ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে।
এই ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা যাবে ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও
এটি একটি সানগ্লাস- তাতে ক্যামেরা বসানো। এবছরেই এটি বাজারে আসবে।
কোম্পানি বলছে, স্পেকটাকেলস নামের এই সানগ্লাসে বসানো ছোট্ট ক্যামেরার সাহায্যে তিরিশ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করা যাবে। যা সরাসরি তাদের অ্যাপে ডাওনলোড করার মাধ্যমে অন্যান্যদের সাথেও শেয়ার করতে পারবে।
বলা হচ্ছে যে এর ফলে মানুষ খুব সহজেই তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে পারবেন।
এই যন্ত্রটিতে যে ব্যাটারি বসানো থাকবে সেটির চার্জ থাকবে একদিনের মতো।
আর যখন কোন কিছু রেকর্ড করা হবে তখন এর সামনের দিকে জ্বলে ওঠা আলো থেকেই আশেপাশের লোকজন বুঝতে পারবেন যে এই সানগ্লাসে কিছু রেকর্ড করা হচ্ছে।
তবে এই গ্লাসটি কিভাবে কাজ করবে সেবিষেয় স্ন্যাপচ্যাট থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।
এই ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা যাবে ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও
মহাসমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়ছে
ঘোড়ার ওপর এই গবেষণা চালানো হয় নরওয়েতে
বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়ার ওপর এই গবেষণা চালানো হয়
যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতোটা পূরণ করেছেন?
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন। গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।
সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’
তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন