লাইভস্টক
গরুর দাম তিন কোটি ১১ লাখ টাকা!
লেখক
কালের কণ্ঠ
সোয়া এক বছর বয়সী একটি গরু কত দামে বিক্রি হতে পারে? মাথা চুলকেও সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের একটি গরুর দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবেই। নিলামে গরুটির দাম উঠেছে তিন কোটি টাকারও বেশি!
গরুটির নাম পস স্পাইস। মধ্য ইংল্যান্ডে জন্ম এটির। নিলামে এটির দাম উঠেছে বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। দামের নিরিখে এরই মধ্যে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেছে গরুটি। এর আগে এত দামে কোনো গরু বিক্রি হয়নি।
ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের ভক্ত এই গরুর মালিক। সেই কারণে জন্মের পর তিনি এর নামও রাখেন পস স্পাইস। গায়িকা ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম প্রথমে ‘স্পাইস গার্লস’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্পাইস গার্লস একটি গানের ব্যান্ড। এই ব্যান্ডের হয়েই গান করতেন ভিক্টোরিয়া। তখন তিনি পরিচিত ছিলেন পস স্পাইস হিসেবে।
এই গরুটির মায়ের নাম ছিল জিঞ্জার স্পাইস। স্পাইস গার্লসের এক গায়িকার নাম ছিল জিঞ্জার স্পাইস। ক্রিস্টাইন উইলিয়ামস এবং তাঁর মৃত বাবা ডন দুজনে মিলে গরুর খামার তৈরি করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে খামারটি চালু হয়েছে। খামারের গরু প্রতিবছরই নিলাম হয়। এ বছরও হয়েছে। এ বছর যে দাম উঠেছে তা কোনো বছর ওঠেনি। ক্রিস্টাইনের কাছে এটা স্বপ্নের মতো। এত দাম দিয়ে কে কিনলেন গরুটি? ম্যানচেস্টার ও কেমব্রিয়ার কয়েকজন গবাদি পশু কারবারির যৌথ উদ্যোগে গরুটি কেনা হয়েছে। তবে তাঁরা গরুটিকে ফের নিলামে বিক্রি করে লাভ করবেন, না অন্য কিছু করবেন, তা জানা যায়নি।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
হারানো ঐতিহ্য ফিরছে রেশমে, বাড়ছে চাষও
-
আটঘরিয়ায় অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে মুরগি
-
কেন্দুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শনে ব্রির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা
-
মনোহরদীতে প্রতিকূল আবহাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান, কৃষকের দুশ্চিন্তা
-
শিম জাতীয় ফসল চাষে ধানের উৎপাদন বাড়বে ২০ শতাংশ
-
গফরগাঁওয়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায়
-
গরম হাওয়া ও ব্লাস্ট রোগে কৃষকের মাথায় হাত
-
ক্যাপসিকামে বিঘাপ্রতি আয় চার লাখ টাকা
-
সয়াবিন ও পামওয়েলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার
-
ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিবর্ণ ধানক্ষেত

এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট ছিল রেশম চাষের অন্যতম উপজেলা। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে রেশমের ঐতিহ্য। স্থানীয় রেশম বিভাগের উদাসীনতা ও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল রেশম চাষ থেকে। ফলে ৩০০ বিঘা থেকে রেশম চাষ নেমে আসে প্রায় ১০০ বিঘায়।
কিন্তু বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাষ অব্যাহত রেখেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। তবে এবার রেশমের বাম্পার ফলন পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরেছে তাদের মাঝে।

ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য মতে, এবার প্রায় আড়াইশ বিঘা জমিতে রেশম চাষ হয়েছে।
ভোলাহাটের চরধরমপুর গ্রামের রেশম চাষি সমরুদ্দিন জানান, বিগত দিনে কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে ও কৃষকদের খোঁজ-খবর না নেয়ায় ফলন বিপর্যয় হতো। আগে ১০০ ডিমে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ কেজি ফলন পাওয়া যেত। তবে বর্তমান পদ্ধতি অবলম্বন করে এখন ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১০০ ডিমে ৯০-৯৫ কেজি। আগে মণ প্রতি দাম মাত্র ৮-৯ হাজার টাকা পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছ ১৪-১৫ হাজার টাকা করে।

যাদুনগর গ্রামের মন্টু আলী। তিনি প্রায় ৪৫ বছর ধরে রেশম চাষে জড়িত। তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। যুবক বয়স থেকেই জড়িয়ে পড়েন রেশম চাষে।
মন্টু জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে রেশম চাষ করে আসছেন। প্রথমে ভালো দাম পাওয়ায় প্রায় ৫ বিঘা জমিতে রেশম চাষ করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে রেশমের দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। এরপরও ছাড়েননি এই পেশা। বর্তমানে রেশমের দাম ভালো পাওয়ায় এবার দুই বিঘা জমিতে রেশম চাষ করেছেন।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর ১৭০টি ডিম নিয়েছিলেন ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে। তা থেকে তিন মণ ২০ কেজি গুটি পেয়েছেন। গুটিগুলো প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন। সরকারিভাবে বিনামূল্যে ডিম, তুত গাছ, চাষের জন্য প্রতি পাঁচ কাঠায় তিন হাজার টাকা, ডালা, নেট ইত্যাদি পাওয়ায় রেশম থেকে আয় হচ্ছে ভালো।
কৃষকরা জানান, রেশম বোর্ডের কর্মকর্তারা রেশমের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ফার্মিং পদ্ধতিতে রেশম চাষের পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাসহ জীবাণুমুক্ত ডিম সরবরাহ করেছেন। রেশম বোর্ডের আন্তরিকতায় এক বছরের চারটি বন্দ অগ্রণী, চৈয়তা, জৈষ্ঠী ও ভাদরি বন্দে রেশমের বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা। ফলে এক বছরের চারটি বন্দ অগ্রণী, চৈয়তা, জৈষ্ঠি ও ভাদরি বন্দে রেশমের বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা।

লোকসানের কারণে রেশম চাষ ছেড়ে দেয়া আসাদুল হাবিব জানান, আগ্রহী চাষিদের মধ্যে উন্নতমানের তুত চারা সরবরাহসহ আর্থিক সহায়তা দিলে রেশম চাষ পুরোপুরি আগের ঐতিহ্য ফিরে পাবে, বাড়বে রেশম চাষিদের পরিবারে সচ্ছলতা। রেশমের বাম্পার ফলনে চাষিদের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে তাই তারও রেশম চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

এ ব্যাপারে ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ জোনাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত) কাজী মাসুদ রেজা জানান, জীবাণুমুক্ত ডিম সরবরাহ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিদর্শন করে পরামর্শ দেয়ার কারণে এ বছর রেশমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে রেশমের আগের ঐতিহ্য। রেশম চাষিদের ঘরে ঘরে ফুটবে সুখের হাসি। আগের তুলনায় দ্বিগুণ চাষি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রেশম চাষির সংখ্যা রয়েছে ২৬৬ জন।

আটঘরিয়া উপজেলায় মুরগির খামারে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত রোগ। এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অর্ধশতাধিক খামারে কয়েক হাজার মুরগি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন খামারিরা। তাদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কোনো খামারেই খোঁজখবর নেন না। খামারিরা কোম্পানির যে চিকিৎসকরা থাকেন, তারা যে ব্যবস্থাপত্র দেন, সে ওষুধের কোনো কার্যকারিতা নেই।
জানা গেছে, বেকারত্ব ঘোচাতে আয়ের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মুরগির খামার। অল্প খরচ আর কম সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন এই ব্যবসায়। দেশের অন্যান্য জেলার মতো পাবনার আটঘরিয়াতেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য মুরগির খামার। কিন্তু হঠাৎই আটঘরিয়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার দেবোত্তর, চাঁদভা ও মাজপাড়া ইউনিয়নের খামারগুলোতে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত রোগ। এই উপজেলায় এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অর্ধশতাধিক খামারে কয়েক হাজার মুরগি। প্রথমে ঝিমুনি এরপর খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে আক্রান্ত মুরগি।
আটঘরিয়া পৌর এলাকার কিরানীর ঢালু মহল্লার মো. গোলজার হোসেনে জানান, তিনি চারটি সেটে মুরগির খামার গড়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অজ্ঞাত রোগে তিনটি সেটের প্রায় ৪ হাজার মুরগি মারা গেছে। দেবোত্তর ইউনিয়নের শ্রীকান্তপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেন বলেন, আমার খামারে ৪২০ মুরগি ছিল। অজ্ঞাত রোগে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০ মুরগি মারা গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে ডিম দেওয়া মুরগি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি আটঘরিয়া পৌর মহল্লার বিশ্রামপুর গ্রামের আক্কাস আলী প্রাং, আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, এই রোগের জন্য বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। কোনো ওষুধেই সুফল মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে মিলছে না কোনো সহযোগিতাও।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই দেখা দিয়েছে এই রোগ। তিনি আরও জানান, মারা যাচ্ছে সাধারণত কিছু ভাইরাসজনিত রোগে। যেমন—রাণীক্ষেত রোগ, গামবোরো এই রোগগুলো সারা বছরই হয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় কক্সিডিওসিস বেশি হয়। এই রোগগুলোতেই বেশি মারা যাচ্ছে। খামারিদের উচিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ও পরামর্শ গ্রহণ করা। তারা যদি আমাদের অফিসে যোগাযোগ করে তাহলে ময়নাতদন্ত করে বা ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠিয়ে রোগ নির্ণয় করে আমরা ব্যবস্থা নিব।

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস। এই রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। ভোগ্যপণ্য নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি করতে পারবে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বাজার তদারকি করবে সরকারের ছয় সংস্থা। নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলমান লকডাউনের মধ্যেও পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলবে আগের মতো। এতে করে বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। শুধু রমজানকে কেন্দ্র করে চাহিদার দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে গত কয়েক মাসে। রমজান উপলক্ষে আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড,এনবিআর। এতে করে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে আসবে। আর মাত্র একদিন পর থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ কারণে ইফতারিতে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয় নিত্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবি প্রথমবারের মতো দ্বিগুণ পরিমাণ নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সারাদেশে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য, রোজায় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সস্তায় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ এবং খেজুরের মতো ভোগ্যপণ্য পৌঁছে দেয়া। পণ্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরো রমজান মাস বাজার মনিটরিং করা হবে। জেলা পর্যায়ে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করবেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে থানা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবেন। রমজানে বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্যে ভেজালরোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফরের বিশেষ টিম বাজার মনিটরিং করবে। ন্যায্যমূল্য ও সঠিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাজার তদারকি করবে র্যা ব ও পুলিশের বিশেষ টিম। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কাজ শুরু করবে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।
ভোগ্যপণ্য নিয়ে ক্রেতাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। তাঁরা বলছেন, দেশে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই। সরবরাহ নিশ্চিত করা ও ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বাজার মনিটরিং টিম কাজ করবে। পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারী- বেসরকারী খাতে।
জানা গেছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি পাঁচ নির্দেশনা দেয়া হয়। অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থাগুলো কাজ করবে। চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ এবং ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে রমজানে সারাদেশে টিসিবির বিশেষ ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে । এর পাশাপাশি এবার রমজানে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে করে স্বল্প আয়ের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পাবেন। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।
রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য কিভাবে স্থিতিশীল থাকবে সে বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবদের উদ্দেশেবলা হয়-রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। কোন নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা, ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মুরগির দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রুত মুরগি, মাছ, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিকে এখন থেকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নেবে তাদের এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রধামন্ত্রীর সচিব বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজলভ্য করা এবং বিভিন্ন পণ্যের মজুদ কি সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সরকার দ্রুত জিটুজি পদ্ধতিতে সরাসরি চাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন থেকে দশ লাখ টন চাল আনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারী খাত চাল আমদানি করবে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সম্প্রতি দ্রুত আমদানির স্বার্থে আইন সংশোধন করে। এছাড়া বিকল্প উৎস থেকেও চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি জানান, চাল সহজলভ্য ও দাম কমাতে ভারতের পাশাপাশি অন্যদেশগুলো থেকেও আমদানি করা হচ্ছে। যত দ্রুত চাল আমদানি করা হবে, তাতে দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ নেই।
জানা গেছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি এবং টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা। টিসিবির মাধ্যমে এবার ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রমজানে ছোলা, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ এবং ডাল বিক্রি করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল। এছাড়া টিসিবিও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি ॥ রমজান সামনে রেখে এবার তিনমাস আগে থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। সরকারী সেই পরামর্শ গ্রহণ করে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও বাজারজাতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ চাল, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, পেঁয়াজ, মসলাপাতি এবং খেজুর আমদানি করে। ইতোমধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের বড় অংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়ে পৌঁছে গেছে দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে। আমদানিকৃত পণ্যে ঠাসা এখন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর এবং শ্যামপুর কৃষিপণ্যের মার্কেট। ভোগ্যপণ্যের জায়ান্ট গ্রুপ হিসেবে খ্যাত এস আলম গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ, পিএইচপি ফ্যামিলি ও আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ রোজা সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শুধু রোজা সামনে রেখে ২৫ টি দেশ থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, তেল, দুধ, চিনি, খেজুর, মটর, মসুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানিকারকদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে তিনি জানান, চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া ওই বৈঠকে পণ্যমূল্য বাড়বে না বলেও আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। যদিও এরই মধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল এবং খেজুরের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে কমেছে পেঁয়াজসহ কয়েকটি মসলাপাতির দাম। মুরগি ও মাছ-মাংস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে। সরবরাহ কমায় বেড়ে গেছে সব ধরনের শাক-সবজির দাম। রোজার আগে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ বাজার মনিটরিং শুরু হবে যা চলবে পুরো মাস জুড়ে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের পাশাপাশি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবিও দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে মাঠে রয়েছে। রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি ভোগ্যপণ্য ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি বিক্রি করছে।
রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন ছয় পণ্য নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ ॥ রোজায় চাহিদা বাড়ায় এমন ছয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। এই ছয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে সারাবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারাবছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারাবছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার মৌলভীবাজারে সারাদেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছি। সব আমদানিকারকদের নিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এই কমিটি কাজ করবে। এছাড়া আমদানি পরিস্থিতির বিষয়েও সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এই কমিটি সহযোগিতা করবে।
দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে মাঠে টিসিবি ॥ এবারই প্রথমবাবের মতো দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে ট্রাকসেল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পবিত্র রোজা শুরু হতে পারে। তবে ক্রেতাদের দিক বিবেচনায় নিয়ে ১ এপ্রিল থেকে টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। সংস্থাটির এই কার্যক্রম শুক্রবারসহ রমজান মাসজুড়ে চলবে। এতে ক্রেতারা সস্তায় নিত্যপণ্য সামগ্রী কিনতে পারবেন। ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে টিসিবির পণ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন নগরবাসী। রমজান সামনে রেখে ৬টি নিত্যপণ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। নতুন দর অনুযায়ী একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এছাড়া রমজান উপলক্ষে দুই কেজি ছোলা প্রতিকেজি ৫৫ টাকা দরে এবং এককেজি খেজুর ৮০ টাকা দরে পাবেন। এতে প্রতিকেজি তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ডাল ও চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৫ টাকা। বাজার পরিস্থিতির কারণে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে টিসিবি। চলমান ৪০০ ট্রাকের মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়ে রমজান উপলক্ষে দ্বিতীয় ধাপে ট্রাকের সংখ্যা হবে ৫০০টি। এর মধ্যে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি করবে ১০০ ট্রাক। টিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে এ মুহূর্তে আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মজুদ নিয়ে সুলভ মূল্যের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান সম্প্রতি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ মজুদ সক্ষমতা নিয়ে রোজার আগে মাঠে থাকবে টিসিবি। আরও কিছু পণ্যের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
পেঁয়াজের দাম কমেছে ॥ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এবার রোজা সামনে রেখে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনও ভাল হয়েছে। ফলে কমে আসছে পেঁয়াজের দাম। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার কমেছে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। প্রকারভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি আট থেকে ১০ টাকা কমেছে। আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা অনেক বাড়বে। তবে আমদানি কার্যক্রম চালু থাকায় এ পণ্যটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ভোজ্যতেলের দাম কমাতে এনবিআরের উদ্যোগ ॥ রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। রোজার মৌসুমে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের বাজার হিসাবে টান লাগে। তাই সরকার আমদানি পর্যায়ে যাতে খরচ কমে যায়, সে জন্য অগ্রিম কর কমাল। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বলা হয়, খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন ১১৫ টাকা লিটারে বিক্রি হবে। বোতলজাত সয়াবিনের লিটার বিক্রি হবে ১৩৫ টাকায়। এ ছাড়া পাম সুপার বিক্রি হবে ১০৪ টাকা লিটার দরে। পরে আবার গত ১৫ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ হয় ১৩৯ টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে অস্থির হয়ে পড়ে ভোজ্যতেলের বাজার। দফায় দফায় বাড়তে থাকে দাম। ফেব্রুয়ারি মাসে দাম বেড়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে। অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ওই দামের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে। আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই এই অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হলো।
কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়ল চিনির দাম ॥ রমজান উপলক্ষে কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা দরে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)। যা আগে ছিল ৬৫ টাকা। পাশাপাশি মিল এলাকায় খোলা চিনি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মাননিয়ন্ত্রণে বিএসএফআইসির চিনি বিক্রয় কার্যক্রম সম্পর্কে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। পরে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল চিনির দাম প্রতিকেজি তিন টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে বিএসএফআইসি। দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর তিন লাখ টনই লাগে রমজান মাসে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর রমজানকে সামনে রেখে নানা অজুহাতে চিনির দাম বাড়িয়ে দেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী চিনির দাম বৃদ্ধিতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার মনিটরিংয়ে পুলিশকে তৎপর হতে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে পুলিশকে তৎপর হতে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি একথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না। তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ এবং ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশবাসীকে বাঁচাতে সরকার আগামী ১ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সকলকে তা মানতে হবে।
ওই অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেয়া যাবে। তিনি জানান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে। যারা শিগগিরই তাদের কাজ শুরু“ করবে। মেয়র বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং সকলকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদ করার মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের আগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, মহামারীর ফলে গত বছরের শেষ ৯ মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসেন বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সকল সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ গোলাম মওলা বলেন, পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোন ঘাটতি নেই, শুধুমাত্র ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের লকডাউন ও সাধারণ ছুটিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল পোলট্রি খাতে। ক্রেতাশূন্যতা ও বাজারে প্রবেশ করতে না পারায় লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির বিক্রি কমে গিয়েছিল। একদিনের মুরগি বিক্রি ও ডিমের দামও কমে যায়। এ বছরও নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলমান থাকাকালেই আরো এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে যাওয়ার চিন্তা করছে সরকার। সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। এ অবস্থায় লকডাউন আতঙ্কে ভুগছেন দেশের পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তারা আবারো পোলট্রি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এজন্য লকডাউন হলে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চের শেষদিকে দেশে লকডাউন শুরু হয়। দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। দীর্ঘ এ লকডাউনের সময় লেয়ার মুরগি বিক্রি ৩৫ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি ৬০ শতাংশ এবং একদিনের মুরগি বিক্রি কমে গিয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। পোলট্রি খামার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছিলেন একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারীরা। এক মাসের ব্যবধানে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ফার্মে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হয়েছিল। এছাড়া নষ্ট করতে হয়েছিল প্রায় এক কোটি পিস একদিনের বাচ্চা। সব মিলিয়ে এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এদিকে চলতি মাসে ঘোষিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামনের দিনে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় গত কয়েক দিনে একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম কমে গেছে। এর প্রভাবে বাজারে মুরগির দামও কমতির দিকে। ডিমের দামও কমেছে। এতে ক্রেতার স্বস্তি মিললেও খামারিদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, কঠোর লকডাউন হলে পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার-হাটে ক্রেতার উপস্থিতি ব্যাপক হারে কমবে। এ কারণে সব ধরনের পোলট্রি পণ্য বিক্রিতে ধস নেমে আসতে পারে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য বলছে, দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষ চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করছে পোলট্রি খাত। আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দৈনিক ডিম উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৬ লাখ পিস, দৈনিক মুরগির মাংস উৎপাদন তিন হাজার টন, একদিন বয়সী বাচ্চা প্রতি সপ্তাহে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৮০ লাখ, দৈনিক পোলট্রি ফিড উৎপাদন হচ্ছে ৯ হাজার ৮৬৩ টন। খাতটিকে ঘিরেই দুই শতাধিক শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আশির দশকে বছরে একজন মানুষ মাংস গ্রহণ করত মাত্র দুই কেজি আর এখন সেটি ছয় কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আবার সেই সময়ে ডিম গ্রহণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮ পিস, এখন সেটি ১০৫ পিসে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত খামার প্রায় ৭০ হাজার আর অনিবন্ধিত খামার প্রায় এক লাখ। ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লিংকেজ শিল্প, কাঁচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সামনের দিনে দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকলে পোলট্রি শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে বিপিআইসিসি সভাপতি ও প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান বলেন, গতবারের লকডাউনে আমাদের ২ টাকায় ডিম ও একদিনের বাচ্চা বিক্রি করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একদিনের বাচ্চা মেরে ফেলতে হয়েছে। সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পোলট্রি খাতের উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারে প্রবেশের সব ধরনের সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। আর জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে বাজারে পণ্যের চাহিদা তৈরি করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এবার আগে থেকেই নানা উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারি এবং উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত মাছ, দুধ, ডিম ও পোলট্রি পণ্য বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বাজারজাত সংকটে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উৎপাদক, খামারি ও উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এবং ভোক্তাদের প্রাণিজ পণ্য প্রাপ্তির চাহিদা বিবেচনা করে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত চলমান নিষেধাজ্ঞাকালে মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু, দুধ, ডিম, মাছের পোনা, মুরগির বাচ্চা, পশু চিকিৎসা সামগ্রী, টিকা, কৃত্রিম প্রজনন সামগ্রী, মত্স্য ও পশু খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি পরিবহন এবং বিপণন কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ বিষয়ে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় সারা দেশের মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় চালুর নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সেদিন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, আমরা সবকিছু বন্ধ করে দিলে মানুষের মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আবার উৎপাদক, খামারি, বিপণনকারীসহ এ খাতসংশ্লিষ্ট অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বছর এ খাতের সংকট উত্তরণে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, পরিবহনের বাধা দূর করা হয়েছে। বন্দরে মত্স্য ও প্রাণী খাদ্য ছাড়করণেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বছরও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ বিক্রির জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করার জন্য সভায় সংশ্লিষ্ট মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তত্পর থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
গত বছর করোনা সংকটে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা মূল্যের খামারিদের উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় বিক্রি করা হয়েছিল। এবারো যদি সেই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়, তাহলে এ শিল্পের ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুেফ ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, পোলট্রি খাতে নিয়োজিতদের প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট মাংসের ৪৫ শতাংশই আসছে পোলট্রি খাতের মাধ্যমে। গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তর, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি গ্রামীণ উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে বড় ভূমিকায় এখন পোলট্রি খাত। ফলে সামনের দিনে দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকলে এ শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ প্রয়োজন।

সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার ওমর ফারুক হাঁস খামার করে ্এখন স্বাবলম্বী ।গত মাত্র সাত মাস ধরে একটি হাঁস উৎপাদন খামার পরিচালনা করে তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, দেখা দিতে শুরু করেছে স্বপ্নের স্বার্থক বাস্তবায়ন। ওমর ফারুক হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী।
সরোজমিনে পাওয়া তথ্যনুযায়ী জানাগেছে, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল নেত্রকোনা থেকে চিনের খাকি ক্যাম্বেল, বেজিং ও জিনডিং এ ৩ জাতের ৬’শ হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে এনে “মাসাল্লাহ ভাই ভাই” হাঁস উৎপাদন খামারের যাত্রা শুরু করে ওমর ফারুক।
প্রতিদিন গড়ে ১’শ ৮০টি হাঁসি ডিম দেয় “মাসাল্লাহ ভাই ভাই” হাঁস উৎপাদন খামারে। যা ৪০ টাকা থেকে ৪৪ টাকা হালি দরে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে । বর্তমানে হাঁস খামারটিতে ৩’শ ৭৫টি হাঁসি ও হাঁসা রয়েছে ১’শ ৫০টি। ইতিমধ্যে কিছু কিছু হাঁসি ৬ মাসের স্থলে ৫ মাসের মাথায় ডিম দিতে শুরু করেছে। সামনে বাকি হাঁসিগুলো ডিম দেয়া শুরু করলে এর ডিমের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে।
এবিষয়ে “মাসাল্লাহ ভাই ভাই” হাঁস উৎপাদন খামারের সফল পরিচালনাকারী ওমর ফারুক বাসস’কে বলেন, অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বণির্ভর হওয়া যায়। প্রথমে আমি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার পুজিঁ দিয়ে খামারের কার্যক্রম শুরু করি। এ অল্প সময়ের মধ্যেই আমি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছি। এখন আমি হাঁসএবং ডিম বিক্রি করে পরিবারকে সাহায্য করতে পারি। খামারে এখনো সব হাঁসিতে ডিম দেওয়া শুরু করেনি। বাকি হাসিঁগুলো ডিম দেওয়া শুরু করলে ডিম বিক্রি করার মাধ্যমে আয়ের অর্থ আরো বেশী হবে বলে ফারুক আশা করছেন।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে খামারে প্রতি মাসে হাঁসের খাবার ক্রয় করা থেকে বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে তার ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো। বর্তমানে হাঁসগুলো বড় হওয়ার পাশাপাশি খরচের অর্থ সাশ্রয় হয়ে ২৮ হাজার টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথমদিকে হাসেঁর খাবারের পিছনেই অনেকটা অর্থ ব্যয় হতো। এখন হাঁসগুলো নিজেরাই পাশ্ববর্তী খাল-বিলে প্রাকৃতিক খাবার সংগ্রহ করে খাওয়ার কারণে খরচ কম হয়।
এছাড়া হাসঁগুলোর পরির্চযায় ১টা ভ্যাকসিন ক্রয় করে ১’শ হাঁসের মাঝে দিতে হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২৫ দিন দ্বিতীৃয় পর্যায়ে ৪৫ দিন পর দিতে হয়।
ওমর ফারুক আরো বলেন, তার খামার থেকে কোন হাঁসি বিক্রি করেন না তিনি, তবে মাঝে মাঝে হাঁসা বিক্রি করে থাকেন। এখন একদিকে ফার্মে খাবারের পিছনে খরচ কমে এসেছে অন্যদিকে হাঁসিগুলো ডিম দিতে শুরু করায় তার স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে ।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: নুরুল আলম বলেন, ওমর ফারুক যদি সুষ্ঠুভাবে খামারটি পরিচালনা করতে পারেন তবে আরও ভালো করতে পারবেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের খামার করতে পারলে লাভবান হওয়া যায়। খামারের সামনে পানি থাকলে খাবার কম লাগে। সময় মতো ভ্যাকসিন দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিছন্ন জায়গায় রাখতে হবে ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ঠিকমতো খামার করতে পারলে মুরগি ও হাঁসের খামার এবং ডেইরি ফার্মের প্রত্যেকটিই লাভজনক।

দক্ষিণাঞ্চলে সুগন্ধি তুলসীমালা ধান চাষ

স্লো স্মার্টফোন ফাস্ট করার উপায়

হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল দিয়ে জমি চাষ

সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে ‘নয়াখেল’-এর মৃৎশিল্প

দেশীয় উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশই নারী

গরমে স্বস্তি দেবে তরমুজ লেমোনেড স্লাসি

ফলন ভালো, দাম কম

উখিয়ায় মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে

ইন্টারনেটের অপব্যবহার

নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, বিপাকে কৃষকরা

বিস্ময়কর উদ্ভাবন; এক গাছেই উপরে বেগুন, নিচে আলুু!

সবজিটির প্রতি কেজির মূল্য এক লাখ ১৫ হাজার টাকা!

যেসব গাছ রাখলে গরমে ঘর ঠান্ডা থাকবে

নাটোরে টক আতার ফলনে সফলতা

গরু: ব্রাহমা জাত থেকে বেশি মাংস পাওয়া গেলেও আমদানি নিষিদ্ধ যে কারণে

চরার বিলে এক কেজি ওজনের টাকি মাছ

শরীয়তপুরে বারোমাসি বেবি তরমুজ আবাদে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন কৃষকের

সরিষাখেতে মৌ চাষ

কক্সবাজারে মাছ ধরা ট্রলারে রহস্যময় বিস্ফোরণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

ডুমুরিয়ায় গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে লাভবান হয়েছেন বর্গাচাষী সুরেশ্বর মল্লিক

দেশীয় উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশই নারী

বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষের অবস্থা কী?

সৈকতে আসা দ্বিতীয় তিমির ওজন ১০ টন, লম্বায় ৪৬ ফুট

যুক্তরাষ্ট্রে মনসুরা আসমা ও এম. খালেকুজ্জামান দম্পতির আঙিনা কৃষি,পর্ব ৭৭

ভোলায় করোনার মধ্যে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান চাষিরা

কক্সবাজারে তিমি: মৃতদেহগুলো কোথা থেকে ভেসে এলো?

ভালুকায় লেবু বাগান করে তরুণ উদ্যোক্তার বিস্ময়কর সাফল্য

মৃত ব্যক্তির কুলখানি করা কি শরিয়ত সম্মত?

পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটায় খোরশেদের ছাদবাগান

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন