আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

অন্যান্য

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ
গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

ঈদ উল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি উৎসব। বাঙালি মুসলিমের কাছে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গাম্ভীর্য ও আনন্দের সাথে যে দিনটি পালিত হয় আমাদের মুসলিমপ্রধান দেশে। ছোটবেলা থেকেই দেখছি বাঙালি ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’-এর জাতি। যেখানে সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ছটা পরিলক্ষিত হয়নি। এখনো হয়না। কালের পরিক্রমায় ঈদের উৎসবের রং পাল্টেছে। বেড়েছে এর উৎসবের আকার। বাঙালি মুসলিমের প্রাণের গভীরের যে ঈদ উৎসব তা নতুন বর্ণে আনন্দ বয়ে এনেছে।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এ ধারণাটাই যেন এই উৎসবের মূলে প্রোথিত। আর ক’দিন বাদেই ঈদ উল আযহা। যা আমাদের কাছে কুরবানির ঈদ হিসেবেই বেশি পরিচিত। মহান আল্লাহ্তায়ালার রাহে মুসলিমরা তার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন।

ইতিহাস বলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলায় মুসলিমরা আসে পারস্য অঞ্চল হয়ে। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। সারা বছরই নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান লেগে থাকতো পরিবারগুলোতে। তবে ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহাই যেন সবকিছুর ওপরে। যেহেতু গ্রামবাংলার মুসলিমরা ছিলো দরিদ্র এবং প্রান্তিক তাই এ দেশে ইসলাম প্রবেশকালে ওই দুটি দিন প্রথমদিকে বড় হয়ে ওঠেনি। কালক্রমে মুসলিমরা যখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির দেখা পায়, সমাজে একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। তখনই ঈদ এই জনপদে পায় সামাজিক মর্যাদা। ভারতবর্ষের নবাব-বাদশাহদের আমলে ঈদ উৎসবে রূপান্তরিত হয়। এই তথ্যগুলো ইতিহাসের পাতা থেকে সংগৃহীত।

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ
গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশের মুসলিমরা ঈদকে নিয়ে এসেছে জাতীয় উৎসবের কাতারে। যোগ হয়েছে নতুন সাংস্কৃতিক মাত্রা আর নানান নতুন উপাদান। ঈদ এখন আর কেবল মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। ঈদ ক্রমেই ধর্মীয় থেকে সামাজিক ও জাতীয় গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। হয়ে উঠেছে সর্বজনীন এক উৎসব। ঈদের এই উৎসবে সময়ের সাথে যুক্ত হয়েছে নানান উপাদান। ঈদ ফ্যাশন, পত্র-পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, নাটক, মঞ্চানুষ্ঠান এমনকি বেতার-টেলিভিশনে ঈদ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিচিত্র সব আয়োজন ঈদকে সর্বজনীন হতে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশের বাঙালিদের ঈদ উৎসবের নানা মাত্রা। এ উৎসব গ্রাম ও শহর ভেদে যেমন আলাদা। তেমন পাথর্ক্য সমাজ ভেদেও। তবে উৎসবের মূল উপাদান আনন্দ। যে কোন উৎসবেই মানুষ আনন্দ খোঁজে। আনন্দের মাত্রায় সমাজের সকলেই একই বৃত্তে এসে দাঁড়ালে তা সর্বজনীন হয়ে ওঠে। আর তাই মানুষ যুগ যুগ ধরে চিন্তা করে এসেছে মানুষের চিত্তকে আনন্দিত করে কী? কিসের জন্য মানুষ তার যাপিত জীবনের ক্লেদকে মুছে দাঁড়াতে শেখে? পায় বাঁচার নতুন অনুপ্রেরণা?

গণমাধ্যম এখন ঈদ উদযাপনের একটি বিশেষ জায়গা। যেখানে মানুষ ঈদের দিনগুলোতে খুঁজে পেতে চায় বিনোদন। টেলিভিশন, বেতার, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সিনেমা হল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল- সবাই সাজতে চায় উৎসবে। আর দর্শক বা পাঠক চায় বাড়তি একটু আনন্দ। ঈদের এই অনুষ্ঠানমালা বা লেখালেখি সাজানোর একটা বড় জায়গা জুড়েই থাকে শহরের মানুষ। শহরের মানুষ কী দেখতে বা পড়তে চায়- তা’ই যেন দেখাতে বা পড়াতে উদগ্রীব থাকে প্রকাশক বা টেলিভিশনের স্বত্ত্বাধিকারী। আর বিজ্ঞাপনের বাজারটির কথাও ভুলে গেলে চলবে না।

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ
গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

ঈদ এলেই সব বিজ্ঞাপনদাতাদের চাই তারকাখচিত অনুষ্ঠান, তারকাদের ফ্যাশন, রান্না ইত্যাদি নিয়ে বহুমাত্রিক আধুনিক প্রকাশনা। তারকা না থাকলে বিজ্ঞাপনদাতা নারাজ থাকে। গণমাধ্যমের যেকোনো শাখা যেমন টিভি, রেডিও বা যা উল্লেখ করলাম একটু আগে- তাদের জন্য মুনাফা আয় করা হয়ে পড়ে কঠিন। এমন অবস্থায় টিভিতে যেখানে আমি কাজ করছি সেই আশির দশকের শুরু থেকে, সেখানে সবসময়ই দেখেছি ঈদ আনন্দে প্রান্তিক ও গ্রামীণ মানুষের বিনোদনের জন্য কিছুই নেই। নেই পত্র-পত্রিকাতেও, অনলাইন বা রেডিওতেও।

কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় গ্রামের সাধারণ মানুষদের ঈদ আনন্দে? এমন একটি প্রশ্ন এবং এক ধরণের দায়বদ্ধতা কাজ করছিল বহু আগ থেকেই। চ্যানেল আইতে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটি শুরুর পর থেকে এ ধারণা আরও বাস্তবতার পথে হাঁটতে থাকে। পরিকল্পনাগুলো ধীরে ধীরে পরিপক্ক হতে থাকে।

২০০৬ সালে, অবশেষে শুরু করি টেলিভিশনে বাংলাদেশের ঈদ বিনোদনে নতুন মাত্রা, কৃষকের ঈদ আনন্দ। যেখানে প্রান্তিক, দরিদ্র, স্বাবলম্বী কৃষকেরা অংশগ্রহণ করে। আর তাদের গ্রামীণ খেলাগুলো স্যাটেলাইটের যুগে পৌঁছে যায় শহরে, নগরে এমনকী পুরো বিশ্বে। বিপুল জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান শুধু খেলা বা কৃষকের অংশগ্রহণের জন্যই যে জনপ্রিয় হয়েছে তা নয়। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি মানুষের মন জয় করতে পেরেছে কারণ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণ মানুষ আর তাদের জীবনের নানান গল্পগুলো প্রামাণ্যচিত্রের আকারে খেলার ফাঁকে ফাঁকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ
গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

এই ঈদ বিনোদন অনুষ্ঠানে শুধু দেশের কৃষক নয়, বিশ্বের কৃষকরাও সংযুক্ত হয়েছে। উগান্ডার কৃষক, জার্মানির কৃষক, দেশে-বিদেশে ঐতিহাসিক স্থানগুলো থেকে কৃষকের ঈদ আনন্দ হয়ে উঠেছে একটি বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান। যখন ঈদ আনন্দ প্রচারিত হয় চ্যানেল আইয়ে সে সময়ে সর্বাধিক দর্শকের চোখ থাকে টেলিভিশনের পর্দায়। এই অর্জন শুধুমাত্র চ্যানেল আই বা হৃদয়ে মাটি ও মানুষের নয়, এই অর্জন পুরো বাংলাদেশের মানুষের। ঈদ আনন্দে যদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রেণী পুরোপুরি বাদ পড়ে যায়, তাহলে বিনোদনের সংজ্ঞা কী দাঁড়ায়? দর্শক তাই মনেপ্রাণে ভালোবেসেছে এই অনুষ্ঠান। একটু বলতে চাই পাঠক, যেমন কোন টেলিভিশনে কৃষি সংবাদের ধারণাটি ছিলো না একসময়।

আমরা প্রথম এরকম শুরু করি। শুরুর দিকে সম্পাদনা পর্ষদ বা কেউই তখন মনে করতেন না কৃষি নিয়ে সংবাদ হতে পারে। পরবর্তীতে টেলিভিশনে কৃষি সংবাদ হয়েছে এবং আমরা তার শুরুটা করেছি দক্ষতার সাথে। চ্যানেল আইয়ের বাইরে অন্যান্য টেলিভিশনও এখন প্রচার করছে কৃষি সংবাদ। আমি মনে করি কৃষকের বিনোদনের বিষয়টিও এখন তাই। পথ দেখাচ্ছে কৃষকের ঈদ আনন্দ। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এগিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে দু’চারটি টেলিভিশন কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুসরণ করে ঈদে এমন বিনোদন অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেছে। দর্শক এখন তার ঈদ অনুষ্ঠানের তালিকায় কৃষকের ঈদ আনন্দ-কে স্থান দিয়েছে ভালোবাসার জায়গা থেকে। গ্রাম-গঞ্জ-হাট-বাজার-শহর-নগর-বন্দর সবখানে মানুষই কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানটি দেখার অপেক্ষায় থাকে।

প্রিয় পাঠক, বাঙালি মুসলিমদের ঈদ উদযাপনে সংস্কৃতি একটি জরুরি বিষয়। আর টেলিভিশন সংস্কৃতি এখন মূল্যায়ন হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে, আমাদের টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং এমন গণমাধ্যমে অবশ্যই গ্রামীণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে ঈদ আনন্দে। নইলে, আমরাই পিছিয়ে পড়বো। পৃথিবী জানতে পারবে না বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষগুলোর শ্রমে আর ঘামেই যে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের শক্তিশালী অর্থনীতি। তারাই যে এ জাতির মেরুদন্ড, তারাই যে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আর কনকনে শীতে আমাদের জন্য ফলিয়ে চলেছে সোনার ফসল।

গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ
গণমাধ্যমের সংস্কৃতি বলয়ে বাংলার মানুষের ঈদ আনন্দ

গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এবং দেশের মানুষের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করতে চাই, বিনোদনকে বৈষম্যের কাতারে না ফেলে এবং বাণিজ্যের জোয়ারে না ভেসে দেশের সাধারণ মানুষদের আনন্দকে আরও আপন করে নিই, টেলিভিশনে বা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরতে চেষ্টা করি আমাদের গ্রামীণ কৃষ্টি আর ঐতিহ্য, যার ওপর দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যে ভূখণ্ডে একটা সময় কৃষি সংস্কৃতি থেকেই কৃষ্টি এসেছিল; বর্ণাঢ্য একটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে যে ভূখণ্ড বেড়ে উঠেছে, তা বর্তমান সময়ের তথাকথিত আধুনিকতার গড্ডালিকা প্রবাহে যেন হারিয়ে না যায় তাও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।

ঈদ আনন্দ তাই কখনোই কোথাও বৈষম্যের শিকার হতে পারে না। আমি তাই মনে করি, আসুন যে দেশে ১১ কোটি মানুষের বসবাস গ্রামাঞ্চলে, এই ঈদের সময়ে এবং ঈদ সংস্কৃতির নতুন জোয়ারে, গণমাধ্যমেও যেন আমরা জায়গা করে দিতে পারি এই সব মানুষদের। ঈদ আনন্দে জয় হোক বাংলার মেহনতি মানুষের যাদের সারা বছরের কঠিন শ্রম আর কষ্টের ভেতর, কিছুটা হলেও বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

অন্যান্য

আমন ধানের বাম্পার ফলন

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এ বছর রোপা আমন ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এবার আবহাওয়া ধান চাষে অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। 

সরেজমিনে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বিল দাদুরিয়া ও ধুলপুখুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে আমন ধানের ক্ষেত চোখে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। এবছর রোপা আমন ধানের উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে একর প্রতি প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ। একর প্রতি খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।  উপজেলার ধুলপুকুরিয়া গ্রামের ধান চাষি মো. শামীম মোল্লা বলেন, এক একর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করেছি। একর প্রতি ৮০ মণ ফলন আশা করছি, খরচের চেয়ে দুই ভাগ বেশি লাভ হবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রীতম হোড় বলেন, এ বছর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার চারশ’ ৪২ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটটিউিট (বিনা) র্কতৃক উদ্ভাবিত স্বল্পজীবনকাল বিশিষ্ট বিনা ধান-১৬, বিনা ধান-১৭ জাতগুলো আগাম পাকতে শুরু করছে। হাইব্রিড ধান ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান-৭৫, ব্রিধান-৮৭ জাতের বেশিরভাগ ধান কাটা-মাড়াই আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এবং মাঠ র্পযায়ে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে নিয়মিত আলোক ফাঁদ স্থাপন করাসহ কৃষিবিভাগ কৃষকদের পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছে।     

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

ঘাটে ঘাটে বদলায় সুন্দরবনের মাছের নাম

জোয়ার-ভাটা, স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সমুদ্রসংলগ্ন নদী হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মাছ পাওয়া যায় সাতক্ষীরা এবং এর আশপাশের এলাকায়। এসব মাছের অধিকাংশ রাজধানীর বাজার পর্যন্ত আসে না। সেখানকার স্থানীয় ও আশপাশের জেলা-উপজেলার হাটবাজারে বিক্রি হয় এই মাছ।

খুলনা বাজারে বিক্রেতারা কলাপাতা নিয়ে বসেছেন মাছ বরণ করতে। এসেছে জাভা, ভোলার মতো মাছ
খুলনা বাজারে বিক্রেতারা কলাপাতা নিয়ে বসেছেন মাছ বরণ করতে। এসেছে জাভা, ভোলার মতো মাছ

হাটবাজার মানেই হুলুস্থুল ব্যাপার। হাটসংশ্লিষ্ট খেয়াঘাটের চরিত্রটা আবার একটু আপন আপন। তাড়া থাকলেও মানুষ দুদণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলে। চা-পান খায়। শ্যামনগরের প্রণব মণ্ডল ওই করতে গিয়ে ধরাটা খেলেন। ভালোই যাচ্ছিলেন লম্বা-চওড়া হাসিমুখে। নীলডুমুরের নওয়াবেঁকী ঘাটে উঠতেই কয়েকজন মাছের দাম জানতে চাইল। ভীষণ খুশি মানুষটা একটু থেমে গর্বের সঙ্গে জানালেন, হাজার টাকায় নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। প্রাগৈতিহাসিক কালের পাথুরে রঙের শরীর আর পৃথক অঙ্গের মতো বসিয়ে রাখা কুদেমার্কা চোখের খুদে তিমির এমন সংস্করণ আগে দেখিনি। সরল মনে মাছের নাম জানতে চাইলাম। ওটা ‘চরখাদা’ শুনেই নদীর খাদ থেকে লাফিয়ে উঠলেন একজন। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে বললেন, ‘এহ্, নাম জানে না, দ্বিগুণ দামে মাছ কিনে কত খুশি। এর নাম “মোচড়”।’ প্রণব মণ্ডলের হাসিটাই দুমড়েমুচড়ে গেল এবার।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন

নওয়াবেঁকীর ঘাটে চরখাদা হয়ে গেল মোচড়
নওয়াবেঁকীর ঘাটে চরখাদা হয়ে গেল মোচড়

ছোট জালে নদীর কুলীন মীন

সুন্দরবনের উপকূলঘেঁষা জনপদের মাছেরা স্বভাবে ও বিচরণে দেশের অন্য সব এলাকার মাছেদের সঙ্গে কৌলীন্য প্রথা বজায় রেখে চলেছে সব সময়ই। তবে স্থানীয় মানুষের মাছের নাম না জানা হলো মাঝির সেই সাঁতার না জানা গল্পের মতো। প্রণব মণ্ডল তাঁর শোক কবে ভুলবেন জানি না, আমি উৎসুক হলাম এমন আরও কিছু মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে। বৃক্ষের পরিচয় ফলে হলে নদীর পরিচয় মাছে হওয়া উচিত। সুন্দরবন মানেই আঠারো ভাটির বারো রকম। বাদাবনের মাছ দেখতে হলে যাওয়া উচিত ছোট জাল দিয়ে শুধু পরিবারের জন্য মাছ ধরা মানুষদের কাছে। নদীর কিনারে ফেলা তাদের ছোটখাটো ঝাঁকি বা ঠেলাজালে বড় মাছের কমতি হলেও বৈচিত্র্যে ভরন্ত। শ্যামনগরের নীলডুমুর হয়ে গাবুরার শেষ মাথায় চাঁদনীমুখা একেবারে বাদাবনের প্রতিবেশী গ্রাম। গনগনে দুপুরে উপস্থিত হলেই এ অঞ্চলের ‘গনগনে’ মাছের সঙ্গে দেখা হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে যাদের দেখা পাবেন, তাদের ঠিকুজি মুখস্থ কঠিন। এখানে খোলপেটুয়া পেটমোটা। মাঝেমধ্যেই সে তেড়ে আসে লোকালয়ে। দক্ষিণে সামান্য আগালেই রেসের গতিতে বঙ্গোপসাগরের দিকে দৌড়াচ্ছে আড়পাঙাশিয়া। পাঙাশের কদর একটু কম হলেও সমগোত্রীয় মাসতুতো-পিসতুতো মীন ভাইবোন ভাঙান, কাইন, পারশের আদর আছে। যদিও ভাঙান মাছের সঙ্গে রুইয়ের স্বাদের ব্যবধান পাওয়া কঠিন। কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, আড়পাঙাশিয়ার মতো দাপুটে নদ-নদীর পানি সময়ভেদে নোনা-স্বাদু—দুই স্বাদ হওয়ায় বাস্তুতন্ত্রের প্রভাবে বৈচিত্র্য পেয়েছে কুলীন মাছেরা।বিজ্ঞাপন

শ্যামনগেরর গাবুরার চন্দ্রমুখায় মাছ উৎসব
শ্যামনগেরর গাবুরার চন্দ্রমুখায় মাছ উৎসব

সুন্দরবনের জাভা আর সুন্দরী পায়রা

চন্দ্রমুখার কাছে তখন সদ্যই জাল টেনে উঠেছেন কয়েকজন। একই জালে নানা রকম মীনশাবক আসায় জড়ো হলো একদঙ্গল ছেলেমেয়ে। রুপচাঁদার ধরন কিন্তু গায়ের রংটা শ্যামলা মেয়ের মতো একটা চ্যাপ্টা মাছের। চাপা রং বলেই কি না নিজেকে সুন্দর করার প্রচেষ্টায় শরীরে নানা বর্ণের নকশা তৈরি করেছে ‘পায়রা’। তার নামে পাখি আর বন্দর দুই-ই আছে। পাওয়াও যায় দুরকম চাঁদা আর অলি পায়রা। এর পাশেই রাখা রঙিন তেলাপিয়া, কথ্য সম্বোধনে ফাইশ্যা হচ্ছে ফেসা, আছে খয়রা, পারশে। ধবধবে একটা মাছ কাদায় গড়াগড়ি দিয়েছে ধরে আনার শেষ সময়। শৈশবকালে মাছ ও মানুষ দুটোরই কাদা মাখার অবাধ স্বাধীনতা থাকে। এ মাছের নাম শুনে আমার চোখও জ্বলজ্বল করে উঠল। সুন্দরবনের সবচেয়ে দামি মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘জাভা’। বড় হলে এর কেজি ১০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। তবে জাভার রূপ-গুণের গোপন রহস্য থাকে গোপনে। পেটের মধ্যে মূল্যবান ফুসফুস, যেটা থেকে তৈরি হয় আরও মূল্যবান ওষুধ। বাতাসযন্ত্রটা বের করে নিলে এর সঙ্গে নছি মাছের বিশেষ পার্থক্য নেই দামে। আফসোস যে জাভার পরিণত খোলতাই চেহারাটা দেখা হলো না। কী আর করা যাবে, এখন তো আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সেই হাজার বছর আগেকার রুপা রাজার নির্দেশ মেনে একমণি কম ওজনের মাছ ধরা হয় না (বেণে মেয়ে উপন্যাস)।

গাবুরার চন্দ্রমুখায় ছোট জালে ধরা মাছ
গাবুরার চন্দ্রমুখায় ছোট জালে ধরা মাছ

সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় গামবুট আর চিংড়ির মাথা

ভাগ্য ভালো, এই শিশু মাছদের সঙ্গে দেখা হলো। স্থানীয় মানুষ ধরে না আনলে বাজারে এ বয়সের মৎস্যপুত্র-কন্যাদের দেখা মেলে না। বাজার বলতেই বিপণনটা দেখতে ইচ্ছা হলো।

সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বাজারে আসে সব রকম মাছ
সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বাজারে আসে সব রকম মাছ

সাতক্ষীরার বিনেরপোতা মাছের আড়তটা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। সেখানে দেখবেন, আড়তের নোনাপানি থেকে পা বাঁচাতে গামবুট পায়ে হাঁটাহাঁটি করছে। সকাল আটটার দিক থেকে ট্রাক আসা শুরু হলে রীতিমতো মচ্ছব। এ বাজারে ঘোরাফেরা করলে সমুদ্র থেকে ঘের, নদী থেকে পুকুরে চাষ করা সব মাছের সঙ্গে দেখা হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে, মাছের নাম জানা। এক দোকানে শুনলেন ‘ভাঙান’ তো পাশের দোকানে বলবে ‘সেলুর ভাঙন’। ভোলা মাছের নাম শুনে খুশি হয়ে আগাতে আগাতেই দেখি আরেক দোকানে ডাকছে ‘পোয়া’ নামে। এখানে মুফতে পাওয়া যাবে বড় চিংড়ির বিচ্ছিন্ন মাথাও। এসব বিক্রি হবে আলাদাভাবে। কেজিপ্রতি মাত্র ৭০ টাকা। অথচ মাথার আকার দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আসল মাছ কেজিপ্রতি কমসে কম হাজার টাকার কমে বললে বিক্রেতা রাগ হতে পারেন। এ বাজার বিচিত্র। এখানে মাছ পাল্লা হিসেবে নিলামে তোলা হয়। আধা কেজি, এক কেজির সুযোগ নেই। অধিকাংশ ক্রেতা আসেন নিজের দোকানের জন্য মাছ নিতে। তবে এর মধ্যেই গোপনে একজন নিয়ে বসেছেন কিছু খুদে কাঁকড়া।

নানা বয়সী কাঁকড়া হচ্ছে কালো সোনা
নানা বয়সী কাঁকড়া হচ্ছে কালো সোনা

কালো সোনার কাঁকড়া

কাঁকড়ার প্রসঙ্গ আসায় দুটো কথা না বললেই নয়। পানির ভারসাম্য রক্ষায় খুবই দায়িত্বশীল সে। ঝরে যাওয়া পাতা নিজ দায়িত্বে কুচি কুচি করে কেটে মাছেদের খাবার তৈরি করে প্রাকৃতিক রন্ধনশিল্পীর খেতাব পেয়েছে কাঁকড়া। অবশ্য সন্ন্যাসী কাঁকড়া আবার ভয় পেলেই শামুকখোলে আশ্রয় নেয়। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার পুলসিরাত অতিক্রম কায়ক্লেশের। নারী কাঁকড়া ১০০ গ্রাম আর পুরুষ কাঁকড়া ১৫০ গ্রামের কম ধরা নিষেধ। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার মূল্য নির্ধারণ হয় ওজনে। যদিও কাঁকড়াদের অঙ্ক করার অদূর ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই, তবে তাদের মগজের পরিমাণ পরীক্ষা হয় রীতিমতো টর্চ জ্বালিয়ে। কাঁকড়া যে চিংড়িকে এক দৌড়ে পেছনে ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়েছে, তা নিয়ে আর নতুন কিছু বলার নেই। তবে খামারে ওদের বড় হওয়ার ধরনটা একটু সঙিন। তাদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খেলার সঙ্গী ছাড়া একা একাই বড় হতে হয়। এ অঞ্চলের নদী আর বননির্ভর মানুষের হিসাবটা ভিন্ন। তাঁরা ভাটিগা আর গোণের কালের হিসাব করে। সে হিসেবে গোণের কাল এলে কাঁকড়ারা ডাঙার দিকে উঠে আসতে চায়।বিজ্ঞাপন

সুন্দরবনের মূল্যবান জাভা মাছ।
সুন্দরবনের মূল্যবান জাভা মাছ।

খুলনার বাজারে কলাপাতার ডালি

পরিণত জাভা না দেখে এ অঞ্চল থেকে ফিরে যাওয়া অনুচিত। তাকে খুঁজতে রওনা হলাম খুলনায়। সকাল সকাল গেলে নিউমার্কেটের বাজারে পাবেন মাছ বরণের আয়োজন। ককশিটের বাক্সে বরফ রেখে ডালায় কলাপাতা বিছিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কলাপাতায় কাঁচা মাছ ঠান্ডা থাকে। কিছুক্ষণ পরই এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ আসবে ঘাট হয়ে বাজারে। সে অপেক্ষা করতে করতে দেখা হলো সেই কুলীন জাভার সঙ্গে। বিক্রেতা মাছের পেট থেকে বাতাসযন্ত্র বের করে দেখালেন। এই সেই মহার্ঘ, যার জন্য দামের ও রকম তফাত। পরিণত জাভা খুলনার বাজারে শুয়ে আছে মৎস্যকন্যার মতো আয়েশে। পাশেই পাওয়া গেল হলুদ কেশরের ভোলা মাছকে। দেখতে ছোটখাটো হলেও ভোলা নামে জেলা, এ নামে নদী থাকায় তারও দেমাক কম নয়। মুখ ঘুরিয়েই রইল সে।

ঘাটে ঘাটে বদলায় সুন্দরবনের মাছের নাম
ছবি: সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

মাছ খুঁজতে হলে বাজার একটা বড় ব্যাপার। কোন দোকানের চাল খাচ্ছেনের মতো অবস্থা। এখানকার সন্ধ্যা বাজার অসূর্যম্পশ্যা। পথের পাশ দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে ডালা নিয়ে যেন লাইন টেনে বসেছেন বিক্রেতারা। একগাল হেসে পরিচয় করিয়ে দিলেন একজন ‘তাইড়্যাল’ শুদ্ধ ভাষায় তাড়িয়ালের সঙ্গে। প্রায় ‘ভোলা’ মাছের কাছাকাছি রূপ। গুণ কেমন জানি না, তবে একে বেশি ঝাঁজে রাঁধতে নেই। মাছবাজারে ঘুরলে আপনার দশাও সাতক্ষীরার প্রণব মণ্ডলের মতো হতে পারে। এ বলল পারশে তো কিছু দূর গিয়েই শুনবেন সেটার আরেক নাম। এখানে বলল ভাঙন তো ওখানে বলবে এটা ‘আধা ভাঙন’।

সন্ধ্যা বাজারে চিংড়ি ছিল চার রকমের
সন্ধ্যা বাজারে চিংড়ি ছিল চার রকমের

তাড়িয়াল দেখে তাড়া নিয়ে ফেরার পথে সেই কুলীন হয়েও সর্বজনে মিশে যাওয়া ‘সাদা সোনা’র থালা চোখের সামনে। বাগদা, গলদা, চাকা আর হরিণা চিংড়ি। এমনি তো আর অস্থির মানুষকে চিংড়ির মতো ছটফট করছে বলা হয় না। না হলে বোকার মতো নোনাপানি সয়ে নিয়ে কৃষকের ক্ষতি হতে দেয়? এখন নিজের দৌড়েই কাঁকড়ার কাছে রানার্সআপ। এখান থেকে বের হয়ে এলাম দ্রুত। সাতসকালে দাকোপে অভিযান আছে। এ অঞ্চলে একটু দূরেই যাওয়া মানে খেয়াঘাটের সঙ্গে দেখা। আর ঘাট মানেই নতুন নতুন মাছ আর ভিন্ন মুখে এক মাছের অনেক রকম নাম।

ভদ্রার মেনির কাছে পানি আর কাদা দুই ই প্রিয়
ভদ্রার মেনির কাছে পানি আর কাদা দুই ই প্রিয়

ভদ্রা নদীর রঙিন মেনি

কে জানত দাকোপের কালাবগি যাওয়ার পথে তারই সঙ্গে দেখা হবে, যে আছে অপেক্ষা করে গায়ে রং নিয়ে। তাঁর সমস্ত শরীরে আলোর দ্যুতি। সে এ অঞ্চলের খুদে ক্ষেত্রাধিপতি। ভদ্রা নদীর খেয়াঘাটে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় পায়ের কাছ দিয়ে লাফিয়ে গেল নীল আলোর ছটা। সে কাদা ও পানি উভয়েই সমান চটপটে। ক্যামেরা তাক করার আগেই এক ফুটের লাফ। গাল ফোলানো সে ‘মেনি’। ওকেই আবার কেউ কেউ ডাকে মেনু বা মিনু নামে। অনেকেই চেনে ইংরেজি ‘মাডস্কিপার’ হিসেবে। মেঘলা দিন না হলে আরও বেশি জেল্লাই দেখাত রঙের। তাঁর এই বিচিত্র রং সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় বাস্তুসংস্থানের প্রতীক। স্কুলের ব্যাক বেঞ্চের শিশুর মতোই বুদ্ধিতেও সেরা। ফোলা মুখে পানি ছিটিয়ে ঝুঁকে থাকা পাতায় বসা পোকাকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ঘায়েল করে মেনি।

সুন্দরবনের নদী মানে মাছের বাস্তুসংস্থান
সুন্দরবনের নদী মানে মাছের বাস্তুসংস্থান

বাদাবনে নদীর খাঁড়ি থেকে সরু গোপন নালা, শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে লুকোনোর আস্তানা, জোয়ারে উঠে ভাটায় নেমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সেই সঙ্গে স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সহাবস্থানে সুন্দরবনের মিনেরা বাংলাদেশের উচ্চবংশীয়। রহস্যময় সুন্দরবনের অলিগলির সন্ধান জানে ওরা। চোখেমুখে সে গর্ব স্পষ্ট এই লোকালয়ের মাছেদের। বিশ্বাস না হলে নিজেই একবার ঘুরে দেখতে পারেন। সুন্দরবন ভালোবাসা মানুষ যদি বাদাবনের নদী, মাছ না চেনে, তাহলে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ থাকে না। ভালো কথা, আকবর বাদশা কিন্তু সত্যি সত্যি মাছ খেতে ভালোবাসতেন। আইন-ই-আকবরি আর ইম্পিরিয়াল গেজেটে উল্লেখ আছে, প্রাচীন ভারতবর্ষের ১৩টি মহাবন ছিল। এরই একটি আঙ্গেরীয়। মতান্তরে সে আঙ্গেরীয়রই অংশ আজকের সুন্দরবনের অরণ্য। মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে নাম না জানা মাছের টুকরো উঠে এলে নিজের সম্মান থাকে?

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি যেভাবে কমাবেন

মুরগির খামারে বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর কৌশলঃ

কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। নিচে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

১। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য থাকার স্থান যাতে বেশ বড় হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। মুরগির বাচ্চার থাকার জায়গা কম হলে বাচ্চাগুলো গাদাগাদি হয়ে মারা যেতে পারে। গাদাগাদি হওয়া থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে বেশি পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ রাখতে হবে।

২। বাচ্চার থাকার স্থানের তাপমাত্রা যেন খুব বেশি কিংবা খুব কম না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার শরীরের সাথে বাইরের তাপমাত্রার বড় কোন পরিবর্তন হলে অনেক সময় বাচ্চা মারা যেতে পারে। এজন্য মুরগির বাচ্চা সহনীয় তাপমাত্রায় মধ্যে রাখতে হবে।

৩। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য বাচ্চা পরিবহণ করার সময় এমনভাবে পরিবহণ করতে হবে যাতে কোনভাবেই মুরগির বাচ্চাগুলো আঘাত না পায়। পরিবহণের সময় বাচ্চা আঘাত পেলে পরে বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৪। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য খামারে প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য জটিল রোগ থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কোন কারণে বাচ্চাগুলো রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

গরুর খামারিরা যেসব কারণে বাড়িতে তুলসি গাছ রাখবেন

তুলসী গাছ ভেষজ চিকিৎসায় একটি অনন্য উপাদান। এই তুলসীর যে কত গুণ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় সব জায়গাতেই এটা কম বেশী পাওয়া যায়।

তুলসীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে,যা ক্যান্সার প্রতিরোধে পর্যন্ত কাজ করে। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও দারুন ভূমিকা তুলসীর।ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের কাজ করে তুলসী পাতা।

১। আপনি হঠাৎ দেখলেন আপনার গোয়ালের গরু বা বাছুর পেটের ব্যাথায় কাৎরাচ্ছে। একবার উঠছে,একবার বসছে।
অর্থাৎ ব্যাথায় সে অস্থির। ঠিক সেই মুহুর্তে আপনি কি করবেন? চিন্তার কিছু নেই, আপনি বড় বা মাঝারী আকারের গরুকে ৩০ মি:লি: এবং বাছুর বা ছোট গরুকে ২০ মি:লি: তুলসী পাতার রস খাইয়ে দিন, ইনশাআল্লাহ ব্যাথা চলে যাবে। এটা ৬ ঘন্টা পর পর তিন বার দিবেন।
২। আপনি দেখলেন যে,আপনার গাভী বা বাছুরের গায়ে জ্বর বা সামান্য কাশি হয়েছে। হাতের কাছে ডাক্তার বা ওষুধপাতি নেই।

কোন দুশ্চিন্তা করবেন না, গাভীকে ৩০ মি:লি: তুলসী পাতার রসের সাথে চার চা চামচ মধু মিশিয়ে ৩/৪ বেলা খাইয়ে দিন,ইনশাআল্লাহ সেরে যাবে। বাছুরের ক্ষেত্রে পথ্যের পরিমাণ টা অর্ধেক হবে।

৩। হঠাৎ দেখলেন আপনার গরু বা বাছুরটি কোন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরের উপরিভাগে হাল্কা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
দুশ্চিন্তার কিছুই নেই,কিছু তুলসী পাতা বেঁটে একটা পেস্টের মত তৈরী করে ক্ষততে লাগিয়ে দিন,২/৩ দিন লাগালেই ক্ষত সেরে যাবে।
তুলসী পাতার পেস্ট কিন্তু ইনফেকশন রোধেও কাজ করে।

৪। আপনি দেখলেন যে, আপনার খামারের বাছুরটি কৃমিতে আক্রান্ত, কৃমিনাশক ওষুধপাতি নেই হাতের কাছে অথবা আপনি এলোপ্যাথিক ওষুধ দিতে চাচ্ছেন না।

কোন সমস্যা নেই তাতে,তুলসী পাতা ও মুলের রস বের করে ১৫ মি:লি: আন্দাজ নিয়ে খাইয়ে দিন খালি পেটে বাছুরকে, কৃমিনাশক ওষুধের কাজ করবে।

প্রথম বার খাওয়ানোর ৭ দিন পর আবার খাওয়াবেন। ভালো কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।এভাবে তুলসী গরু বাছুরের অনেক রোগের ওষুধ হিসাবে কাজ করে,যার জুড়ি নেই বললেই চলে। তাই যারা গরু পালনের সাথে যুক্ত তারা অবশ্যই বাড়ির আশে পাশে কিছু তুলসী গাছ লাগাবেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

বেড়েছে সবজির দাম, কমেছে পেয়াঁজের

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সবজির। অপরদিকে কমেছে মুরগি, পেয়াঁজের দাম।এছাড়াও অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দামও।  

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর বাজার, মিরপুর কালশী বাজার ও পল্লবী এলাকা ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, , ফুলকপি প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা,  টমেটো ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা। গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, কাকরোলা ৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা ও পেঁপের কেজি ২৫ টাকা।

মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা আলআমিন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সবজির আমদানি কম থাকায় দাম বেড়েছে। সবজি বাজারের কোন নিশ্চয়তা নেই, আগামীকাল আবার দাম কমে যেতে পারে তরকারির।

এ সব বাজারে আলুর দাম বিক্রি হচ্ছে ২০থেকে ২৫ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকা। যা গতসপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল।

ইন্ডিয়ান ও মায়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

এইসব বাজারে গতসপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।

এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান ডালে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।

এসব বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।  

বাজারে অপরিবর্তিত আছে ডিমের দাম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা।   সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

বাজারে কমেছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ৩০ কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৯০ টাকা। গত সপ্তাহের থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। কেজি ৩০০ থেকে ৩১৯ টাকা। লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কেজি ২৩০ টাকা।  

১১ নম্বর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, শীত কাল আসছে বলে কমেছে মুরগির দাম। সামনে আরও দাম কমতে পারে মুরগির।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com