আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

কুরআন যেভাবে আমরা পেলাম

কুরআন যেভাবে আমরা পেলাম
কুরআন যেভাবে আমরা পেলাম

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। মানুষের জন্য আল্লাহর দেয়া একমাত্র জীবনব্যবস্থা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর পবিত্র হেরা গুহায় নাজিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিজা গ্রন্থ। আল্লাহ তাআলা এ গ্রন্থ মানুষের বুকে ধারণ করিয়ে অবিকল সংরক্ষণ করেছেন। পৃথিবীতে যার নমুনা দ্বিতীয়টি আর নেই।

কুরআনুল কারিমের ভাব-ভাষা-বর্ণ সবই আল্লাহ তাআলা নাজিল করেছেন। এর প্রবক্তা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এটি দীর্ঘ ২৩ বছরে সাইয়্যেদুল মুরসালিন, খাতামুন্নাবিয়্যিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাজিল হয়েছিল। যাতে মানুষ কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারে।

সে কারণেই আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়ই হলো মানুষ। কুরআনে যত ভাব, ভাষা, আশা, আকাঙ্ক্ষা, আদেশ নিষেধ তথা সব বিধি-বিধানই মানুষের জন্য। যখন এই কুরআন বাণী আসা শুরু হয় তখন থেকেই সাহাবায়ে কেরাম তা ক্বলবে ধারণ তথা মুখস্ত করতেন আবার তা লিখেও রাখতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের আয়াতগুলো লিখে সংরক্ষণের জন্য হজরত যায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি কাতেবে ওহি হিসেবে পরিচিত।

এ ছাড়া খোলাফায়ে রাশেদার চার খলিফাসহ আরও অনেক সাহাবি ওহি লিখে রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন। কুরআনের আয়াতগুলো প্রথমত সাহাবায়ে কেরাম ক্বলবে ধারণ করতেন। কুরআনের কোনো আয়াতের ব্যাপারে একাধিক কোনো বর্ণনা বা মতপার্থক্যের তথ্য নেই। যারা কুরআন মুখস্ত করেছেন। তাদের সবার মুখস্ত ছিল হুবহু এক রকম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রকম বলেছেন।

তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য নিযুক্ত কাতেবে ওহি বা ওহির লেখকগণ ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুরআনুল কারিমের আয়াতসমূহকে খেজুরের ডাল, গাছের পাতা, পাথর, চামড়াসহ ইত্যাদি উপকরণের উপর লিখেই সংরক্ষণ করা হত। তবে লিখিত অংশগুলো বিভিন্ন জনের কাছে বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল।

কুরআন একত্রিত করার উদ্যোগ
ইসলামের শুরুর দিকে ইসলাম চরম বাধার মোকাবেলা অবতীর্ণ হয়। ইসলামের শত্রুতরা ইসলাম ও মুসলমানকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার মানসে সারা দুনিয়ার অমুসলিমদের সঙ্গে একত্রিত হয়। বিভিন্ন সময় প্রবল শক্তি নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ খোলাফায়ে রাশেদার আমিরুল মুমিনিনগণ সেসব যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছে। আর সেসব যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। অনেক হাফেজে কুরআন।

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহ সময়ে ইয়ামামার যুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক হাফেজে করআন শাহাদাত বরণ করলে সর্ব প্রথম হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআনুল কারিম লিখিতভাবে একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। যা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে গিয়ে শেষ হয়।

অবশেষে কুরআন একত্রিত করার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে এসে পৌছে। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রসিদ্ধ সাহাবাদের সম্বন্বয়ে গঠিত কমিটি পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করেন। যা বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর কাছে থাকা আজকের কুরআন।

হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআন একত্রিত করে তা সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেন। আর এভাবেই আজ পর্যন্ত অবিকল কুরআন এখনও আমাদের মাঝে বিরাজমান।

তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় যারা ওহি লিখে রাখতেন তাদের মধ্যে অন্যতম যারা ছিলেন। তারা হলেন-
– হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত সালেম মাওলা হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
– হজরত আবু জায়েদ কায়েস ইবনিস সাকান রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ।

কুরআন বিন্যস্তকরণ পদ্ধতি
কুরআনুল কারিমের লিখিত কপি করতে গিয়ে ৪ সদস্য কমিটির প্রসিদ্ধ সাহাবাগণ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে সুবিন্যস্ত করেছেন। আর তাহলো-
– সুরা : ১‌১৪।
– মনজিল : ৭।
– পারা : ৩০।
– রুকু : বড় সুরায় একাধিক রুকু।
– আয়াত : প্রতিটি সুরায় সর্বনিম্ন ৩ আয়াত। আর সর্বোচ্চ রয়েছে ২৮৬ আয়াত।
– ওয়াক্ফ : প্রতিটি সুরায় রয়েছে অনেক ওয়াক্ফ। যার কিছু পালন করা ওয়াজিব, কিছু স্থানে থামা উত্তম। কিছু স্থানে থামা নিষেধ আবার কিছু স্থানে থামা জায়েজ।

তাইতো সারা পৃথিবী জুড়ে কুরআন কারিমের সূরা, মনজিল, পারা, রুকু, ওয়াক্ব ফইত্যাদি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে কোথাও কোনো অমিল বা মত পার্থক্য আজও পর্যন্ত দেখা দেয়নি। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠ মু`জেজা হওয়ার একমাত্র কারণ। যা আরবি ভাষায় রচিত।

তৎকালীন আরবের সবচেয়ে বড় বড় পণ্ডিত আরবি সাহিত্যিকগণ বহু চেষ্টা করেছেন কুরআনকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বানানো কথা বা ভাষা প্রমাণের চেষ্টা করার জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তামাম পৃথিবীর সব নাস্তিক, মুশরিকদের প্রতি। আল্লাহ বলেন- ‘এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। তোমাদের সে সব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও, এক আল্লাহকে ছাড়া; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাক্বারা : আয়াত ২৩)
এরপর নাস্তিক, মুশরিকরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বহু চেষ্টা করেছেন। তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে; একটি আয়াতও তারা তৈরি করতে পারেনি। পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়ে তারা সূরা কাওছারের একটি আয়াতের ছন্দের সাথে মিলিয়ে কুরআন কারিমের সত্যতা ঘোষণায় এক লাইন রচনা করেছিল।
আর তা ছিল এই-
ইন্না- আ`ত্বাইনা- কাল কাওছার।
‘লাইসা হাজা কালামুল বাশার’ ইহা মানুষের রচিত কোনো ভাষা নয়। অর্থাৎ নি:সন্দেহে ইহা আল্লাহ পাকের কালাম।

হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু`র সময় কুরআনের যে লিখিতরূপ তৈরি করা হয়েছিল তা ছিল হরকতবিহীন। পরবর্তীতে পড়ার সুবিধার্থে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কুরআনুল কারিমের হরকত সংযোজন করেন। যা অনারবী (আরবি ভাষাভাষি নয়) তথা মুসলিম বিশ্বের সব মুসলমানের তিলাওয়াত উপযোগী হয়েছে। এবং সব মুসলমান দেখে দেখে সুন্দর করে তিলাওয়াত করতে পারেন।

সুতরাং কুরআন আল্লাহর কিতাব; যা সংরক্ষণ আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানব জীবনের এর বাস্তব প্রতিফলনও ঈমানের অনিবার্য দাবি। তাই কুরআনকে সংরক্ষণ ও মানব জীবনে বাস্তবায়ন করারই তাওফিক চাই, সেই মহান মনিবের দরবারে-
যিনি এই কুরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আমি এই কুরাআন (মানুষের জীবন পরিচালনার গাইডস্বরূপ) নাযিল করেছি। আমি নিজেই তা হেফাজত বা সংরক্ষণ করব।`

আল্লাহ সব মুসলিমকে কুরআনের সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে সফল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com