স্বাস্থ্য
কাঁচা হলুদের ভেষজ গুণ
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাঁচা হলুদের জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা আপনাকে সুস্থ রাখতে ভীষণ কার্যকর। ভারতীয় পুষ্টিবিদ সিমরান সাইনি জানাচ্ছেন কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

- হজমের সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদ খান নিয়মিত।
- প্রাকৃতিক অ্যান্টি-সেপ্টিক হিসেবে এটি ঠাণ্ডা-জ্বর থেকে দূরে রাখবে।
- রক্তের দূষিত উপাদান বের করতে সক্ষম কাঁচা হলুদ।
- ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখতে এর জুড়ি নেই।
- হলুদের মধ্যে এমন উপাদান রয়েছে যা থেকে গ্যাসট্রিক, পেপটিক এবং গ্যাসট্রিক আলসার রোধ করে।
- লিভারের সমস্যা ও পেশির সমস্যা থেকেও দূরে রাখে কাঁচা হলুদ।
যেভাবে খাবেন কাঁচা হলুদ
১ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদ গুঁড়ার সঙ্গে ১০০ গ্রাম মধু ভালো করে মিশিয়ে খান। এই দুই উপাদান কুসুম গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
দৈনন্দিন
জেনে নিন পদ্মের যত ওষুধি গুণ

বেনজীর আহমেদ সিদ্দিকী
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষার শেষে এবং শরতের শুরুতে বিল-ঝিল, পুকুরে সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্ত থেকে ফুটতে শুরু করে মনোমুগ্ধকর জলজ ফুলের রানি ‘পদ্ম’! সারারাত ধরেই একে একে পাল্লা দিয়ে সৌরভ ছড়িয়ে ফুটতে থাকে পদ্মফুল। তাই এক বিল বা পুকুর পদ্ম যেন গভীর সৌন্দর্যের আধার। তবে কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশে পদ্ম বিল ও পুকুর অনেক কমে এসেছে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ঘাগুটিয়ার পদ্মের বিল, ফরিদপুরের বিল গজারিয়া ও সদরের ঝিলটুলি এলাকায় সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনের পুকুর, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার রাবান এলাকার বিল, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার খইলাপুরী বিল, গোপালগঞ্জের করপাড়ার বলাকইর বিল, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জাদুরতাইর ও ঝারাবর্ষা বিল, নাটোরের বড়াই গ্রামের বিল, রাজশাহীর মোহনপুরের সাবাই বিল, নড়াইলের রামগর চরের বিল এবং বরিশালের বিআইডব্লিউটিএ’র পুকুরে বসে পদ্মের মেলা।

কমল, শতদল, সহস্রদল, উৎপল, মৃণাল, পঙ্কজ, অব্জ, অম্বুজ, নীরজ, সরোজ, সররুহ, নলিনী, অরবিন্দ, ইন্দিরা, কুমুদ ইত্যাদি সমার্থক নামের পদ্ম সৌন্দর্য, বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। পদ্মের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র মানুষকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে, তাই বাংলা প্রবাদেও পাওয়া যায় ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’।
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে পদ্মের ব্যবহার হয়ে আসছে। উপমহাদেশে পদ্মফুলের একেক স্তরের পাপড়ি ধর্মীয় শিক্ষা বা সংস্কারে বিভিন্ন অর্থ বহন করে। হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পদ্ম জীবন, উর্বরতা ও পবিত্রতার প্রতীক। হিন্দু ধর্মমতে, নারায়ণের নাভি থেকে নির্গত পদ্ম ব্রহ্মার আসন আর শ্বেতপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন।

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, প্রত্যেক মানুষের মাঝেই পদ্মের পবিত্র আত্মা রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, পদ্মফুলের কুঁড়ি যেমন কোমল, ঈশ্বরের স্পর্শ আর দর্শনও সেরকম। পদ্মকে পবিত্র বলে মনে করে বৌদ্ধরাও। পদ্মফুলকে অনেক দেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। গোলাপি পদ্ম গৌতম বুদ্ধের কিংবদন্তির ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়।
পদ্মফুল নিয়ে একধরনের মিথ আছে, এর সৌরভে না-কি সাপ চলে আসে এবং পাতার আড়ালে লুকিয়ে ফুলের সৌরভ উপভোগ করে। বিষয়টি মিথ হলেও একেবারেই ফেলনা নয়। আসলে সাপ আসে ইঁদুরের লোভে। পদ্মফুলের গোড়ায় এর বীজ (পদ্ম খোঁচা) হয়। এই বীজ খেতে ইঁদুর আসে। আর তাকে ধরতে মাঝে মাঝে আগমন ঘটে সাপের।

পদ্মের বীজ বেশ সুস্বাদু, ফ্যাট, মিনারেল ও ট্রেস উপাদানযুক্ত। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ বীজ দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। তাই ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এ বীজ খেয়ে কয়েকদিন না খেয়ে থাকত গেরিলা এবং সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া পদ্মের আছে অনেক ওষুধি গুণাবলী। ভেষজ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিম্নোক্ত গুণাগুণ পাওয়া যায়-
১. শ্বেতী বা ভিটিলিগো রোগে পদ্মপাতার নির্যাসের কার্যকারিতা আছে।
২. পদ্মের পাতা শরীরের নানা ধরনের প্রদাহ ও জ্বরের তাপমাত্রা কমাতে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত হতো।
৩. এখনো অনেক গ্রামে গেলে দেখা যায়, জ্বর হলে বাচ্চাদের পদ্মপাতায় শুইয়ে রাখতে।
৪. অর্শ্ব বা গেজ রোগে পদ্মপাতা ও মূল ব্যবহৃত হয়।
৫. পদ্মের পাপড়ির নির্যাস হৃদশূলের (এনজাইনা পেকটোরিস) যন্ত্রণা কমায়।
৬. প্রসবের পর মায়েদের নাড়ি সরে এলে (প্রোলাপ্স অব ইউটেরাস) সারাতে ভূমিকা রাখে।
৭. শুষ্ক কাশি নিরাময়ে বাসক পাতা ও মধুর সাথে পদ্মের মূল ও কেশর ভালো কার্যকারিতা দেয়।
৮. নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবে পদ্মের মূল ও বীজ বেশ কাজের।
৯. পদ্মবীজ দেহের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
১০. পদ্মবীজের প্রোটিন ও কার্বহাইড্রেট ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য উপকারী।
১১. পদ্মবীজ দেহের ওজন কমাতে সহায়তা করে।
১২. এর বীজ গ্যাস্ট্রাইটিস ও রক্তপাতজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
১৩. পদ্ম মধু থেকে চোখের ওষুধ তৈরি হয়।
১৪. ত্বক সুন্দর করতে পদ্মপাতা, ফুলের পাপড়ি ও বীজের নানা ভূমিকা আছে।
১৫. ‘সুগন্ধি’ বা ‘অ্যারোমা’ হিসেবে প্রসাধনী শিল্পে পদ্ম ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
একসময় গ্রামবাংলার হাট-বাজারে গুঁড়া মসলা, গুড়, চিনি, লবণ, অন্য জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন মেলায় বাতাসা, মোয়া, মুড়ি, মুড়কি, নাড়ু, লাড্ডু ইত্যাদি পদ্মপাতায় সুন্দরভাবে বেঁধে বিক্রি করা হতো। সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর ব্যবহার ছিল অসাধারণ। এখনো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী পদ্মপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়। দৈনন্দিন নানা কাজে এর পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।
দৈনন্দিন
ফুলকপির মজাদার রেসিপি

ফুলকপিতে আছে ওজন কমানো ও হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ফাইবার; আছে কোলাইন, যা স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজন। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ এই ফুলকপি। এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ। ফলে প্রতিদিনের খাবারে শীতকালীন এই সবজির গুরুত্ব আছে অনেক।
বিভিন্নভাবে ফুলকপি খাওয়া যায়। শুধু একটু উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগেই ফুলকপি দিয়ে বানানো যায় সুস্বাদু সব খাবার। ফুলকপি দিয়ে বানানো খাবার একই সঙ্গে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ।
রেসিপি দিয়েছেন জিনাত নাজিয়া, সেলিনা আক্তার ও শুভাগতা গুহরায়।বিজ্ঞাপন
ফুলকপির ভাজা ভাত
উপকরণ
ফুলকপি ১টি (মাঝারি), ডিম ৩টি (তেলে দিয়ে ঝুরি করে নিন), মুরগির বুকের মাংস ১ কাপ (কিউব করে কাটা), বরবটি ১ কাপ, গাজর ১ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজপাতা পরিমাণমতো, লবণ পরিমাণমতো, তেল/ঘি/বাটার অয়েল ৩ টেবিল চামচ, ম্যাগি সস ২ চা-চামচ।

প্রণালি
ফুলকপি পরিষ্কার করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে মুরগির মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। গাজর ও বরবটি দিতে হবে। সয়া সস, গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে লবণ দিন। ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর ব্লেন্ড করা ফুলকপি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন। ভালো করে মিশিয়ে পেঁয়াজপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বেকড ফুলকপির রোস্ট
উপকরণ
আস্ত ফুলকপি ১টি, মিহি থেঁতলানো রসুন ১ টেবিল চামচ, জলপাইয়ের তেল সিকি কাপ, শর্ষে পেস্ট ২ টেবিল চামচ, লেবুর মিহি খোসা ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পাপরিকা আধা চা-চামচ, মেশানো হার্বস ১ চা-চামচ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, মধু দেড় টেবিল চামচ, গ্রেট করা পনির সিকি কাপ, লবণ সিকি চা-চামচ।

প্রণালি
আস্ত ফুলকপির পাশের ডাঁটাগুলো কেটে ধুয়ে রাখুন। একটি বড় হাঁড়িতে অনেকটা পানি দিয়ে চুলায় বসান। ২ টেবিল চামচ লবণ দিন এবং পানি ফুটে উঠলে আস্ত ফুলকপি দিয়ে দিন। ২ মিনিট রেখে তুলে নিন। কিচেন টাওয়েল দিয়ে খুব ভালো করে মুছে নিন। ওভেন ২২০ ডিগ্রিতে ১০ মিনিটের জন্য প্রিহিটে দিন। একটি বাটিতে থেঁতলানো রসুন, জলপাইয়ের তেল, শর্ষে পেস্ট, গোলমরিচগুঁড়া, মেশানো হার্বস, লেবুর রস, মধু, পাপরিকা, লেবুর খোসা, লবণ একসঙ্গে খুবভালো করে মিশিয়ে ড্রেসিং তৈরি করে নিন। ফুলকপির ওপর ড্রেসিং ব্রাশ করে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এবার ফুলকপির ওপর গ্রেট করা চিজ ছড়িয়ে প্রিহিটেড ওভেনে বেক করুন ৪০ মিনিট। ওভেন থেকে বের করে ওপরে ড্রেসিং ছড়িয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন।বিজ্ঞাপন
ফুলকপির ক্রিম স্যুপ
উপকরণ
চিকেন স্টক ৩ কাপ, ফুলকপির টুকরা ২ কাপ, মাশরুমকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ৩ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, মাখন ৫০ গ্রাম, কুকিং ক্রিম এক কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লেবুর রস সামান্য ও পার্সলেকুচি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি
প্রথমে চুলায় অর্ধেক মাখন দিয়ে রসুন সামান্য ভেজে নিন। পেঁয়াজকুচি দিয়ে একটু ভেজে ফুলকপির টুকরাগুলো দিয়ে দিতে হবে। ফুলকপি খুব ভালো করে ভেজে নিন। ভালো করে ভাজা হলে ১ কাপ চিকেন স্টক দিয়ে দিন। ফুলকপি নরম হয়ে এলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে রাখুন। আবার প্যান দিয়ে বাকি মাখন ও মাশরুম দিয়ে একটু ভেজে নিন। ময়দা দিয়ে ভেজে নিন। ময়দার রং পরিবর্তন হলে দুধ দিয়ে খুব ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। এরপর একে একে চিকেন স্টক, ফুলকপির পেস্ট দিয়ে দ্রুত নাড়তে থাকুন। ফুটে উঠলে ক্রিম ও গোলমরিচের গুঁড়া দিন। হয়ে এলে নামানোর আগে পার্সলেকুচি ও লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন গরম-গরম।
মচমচে ফুলকপি
উপকরণ
ফুলকপির ফুল ১০-১২টি, সবুজ ক্যাপসিকাম ১টি, গাজর ১টি, আলু ১টি, ডিম ২টি, কর্নফ্লাওয়ার ও চালের গুঁড়া আধা কাপ করে, গোলমরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, চাট মসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লবণ, পানি, কাঁচা মরিচকুচি পরিমাণমতো, আদা ও রসুনকুচি ১ চা-চামচ করে, টমেটো, চিলি ও সয়া সস ২ টেবিল চামচ করে, মাখন আধা কাপ, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি
ফুটানো লবণপানিতে ফুলকপিগুলো এক মিনিট ফুটিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একইভাবে লম্বা করে কেটে আলু, ক্যাপসিকাম ও গাজর অল্প সেদ্ধ করে নিন। এবার ফুলকপিতে ডিম, কর্নফ্লাওয়ার, চালের গুঁড়া, গোলমরিচ ও চাট মসলা দিয়ে ভালোভাবে মেখে ডুবোতেলে ফুলগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার ওই প্যানে মাখন গরম করে আদা ও রসুন ফোড়ন দিয়ে সস ও কাঁচা মরিচকুচি দিয়ে অল্প পানি দিয়ে কষান। কষানো হলে সেদ্ধ সবজি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে ভাজা ফুলকপি দিয়ে হালকা হাতে নেড়ে নিন। নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ফুলকপির পাকোড়া
উপকরণ
ফুলকপি ১টা, চালের গুঁড়া সিকি কাপ, বেসন সিকি কাপ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া সিকি চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, ব্রেড ক্রাম্ব ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো ও তেল প্রয়োজনমতো (ডুবোতেলে ভাজার জন্য)।

প্রণালি
ফুলকপির ফুলগুলো একটা একটা করে খুলে নিন এবং লবণপানিতে ভাপিয়ে নিন। একটা চালনিতে ফুলকপির টুকরাগুলো ঢেলে পানি ঝরতে দিন। এবার একটা পাত্রে সব মসলা, চালের গুঁড়া ও বেসন নিয়ে আন্দাজমতো পানি মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। ফুলকপিগুলো চালের মিশ্রণে ভালো করে মেখে নিন। এবার বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে নিন। একটা কড়াইয়ে তেল গরম করে ফুলকপির টুকরাগুলো ভাজুন। গাঢ় বাদামি রং হলে তেল থেকে তুলে নিন এবং সসের সঙ্গে গরম-গরম পরিবেশন করুন।
দৈনন্দিন
ওজন নিয়ন্ত্রণে ফুলকপির ভাত

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর দেহ-মন অর্জন করা এবং বজায় রাখার তাগিদ এখন সারা বিশ্বে সবার মধ্যেই। হৃদ্রোগ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে শরীরের ব্যথাবেদনা, হাড়ক্ষয়, বাতের সমস্যা—এসব রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়ও ওজন কমানো ও নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এমনকি করোনা মহামারিতেও দেখা যাচ্ছে মরবিড অবেসিটি বা বিপজ্জনক রকমের বেশি ওজন এই রোগের ভয়াবহতা ও প্রকারান্তরে মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।বিজ্ঞাপন
ওজন নিয়ন্ত্রণে লো কার্ব ডায়েট ও কলিফ্লাওয়ার রাইস

নিজের শরীর স্লিম আর ফিট রাখতে যুগে যুগে বহু বিশেষায়িত ডায়েট বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের দ্বারস্থ হয়েছে মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় কম শর্করা গ্রহণের মূলমন্ত্র নিয়ে বহু ধরনের লো কার্ব ডায়েট অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে অনেকেই দ্রুত সুফল পেয়েছে। এসব লো কার্ব ডায়েটের মধ্যে আছে একসময়ে সাড়া জাগানো এটকিন্স ডায়েট, প্যালেও ডায়েট আর হাল আমলে সবার মুখে মুখে ফেরা বিখ্যাত কিটোজেনিক ডায়েট বা কিটো ডায়েট। কম শর্করাযুক্ত খাবারের সমন্বয়ে করা লো কার্ব ডায়েট মানে কিন্তু না খেয়ে থাকা নয়। এ ক্ষেত্রে শর্করাজাতীয় খাবারের বিকল্প বিভিন্ন খাবার খেয়ে অত্যন্ত কার্যকরভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে আমাদের মতো ভেতো বাঙালিসহ আরও যেসব দেশের মানুষ ভাত না খেয়ে থাকতে পারে না, তাদের জন্য ভাতের এক চমৎকার বিকল্প কলিফ্লাওয়ার রাইস বা ফুলকপি ভাত।
কলিফ্লাওয়ার রাইস কী
গোটা ফুলকপি কুরিয়ে বা গ্রেট করে দানাদার চালের মতো তৈরি করে তা ভাতের বিকল্প কলিফ্লাওয়ার রাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সবজি কুরানোর যন্ত্রে হাতে গ্রেট করে অথবা ব্লেন্ডারে হালকাভাবে ফুলকপির ফুলগুলো ব্লেন্ড করে নিলেই হয়ে গেল ফুলকপির চাল। এবার এই চাল দিয়ে অনায়াসে রান্না করা যায় ফ্রাইড রাইস, পোলাও, বিরিয়ানি। নিজস্ব খুব কড়া কোনো স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ না থাকায় চাল দিয়ে তৈরি করতে হয়—এমন যেকোনো রেসিপিতেই সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায় কলিফ্লাওয়ার রাইস।আরও পড়ুনচাল ছাড়াই ফ্রায়েড রাইস
কলিফ্লাওয়ার রাইসের ইতিকথা
সেই ১৮৬৩ সালে লো কার্ব বা কম শর্করার ডায়েটের ওপরে বই লিখে ওজন সচেতন মানুষের মনে সাড়া জাগিয়েছিলেন ব্রিটিশ এক ফিটনেস এক্সপার্ট। এরপর ২০০২ সালের দিকে ব্যায়ামবিজ্ঞানী লরেইন কোর্ডেনের ‘প্যালেও ডায়েট’ বইয়ে প্রথম চালের ভাতের বদলে কলিফ্লাওয়ার রাইস খাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়। আর এখন তো কলিফ্লাওয়ার রাইস সারা বিশ্বেই সমাদৃত।বিজ্ঞাপন
কলিফ্লাওয়ার রাইস বনাম চালের ভাত
দানাদার ও সাদা ফুলকপি ভাত দেখতে ও খেতে কিছুটা হলেও ভাতের আমেজ দেয় আমাদের। অথচ এক কাপে ভাতের তুলনায় প্রায় ৮০ ভাগ কম ক্যালরি থাকে ফুলকপির ভাতে। নেট শর্করার পরিমাণও ভাতের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগের ১ ভাগ। এ ছাড়া ফুলকপির পুষ্টিগুণের ব্যাপারটা তো আছেই!

কলিফ্লাওয়ার রাইসের উপকারিতা
কলিফ্লাওয়ার রাইসের উপাদান হচ্ছে গোটা তাজা ফুলকপি। শীতকালের এই ভরা মৌসুম মানেই ফুলকপির বড়া, ফুলকপির তরকারি, ফুলকপির শিঙাড়া। কিন্তু এই অভিনব কলিফ্লাওয়ার রাইস খেলে কম শর্করা খাওয়ার উপকারের পাশাপাশি ফুলকপির অনন্য পুষ্টিগুণ পাব বাড়তি পাওনা হিসেবে। ফুলকপির গুণের কথা তো বলে শেষই করা যায় না। তাও দেখে নেওয়া যাক এর প্রধান উপকারিতা আর উপযোগিতাগুলো।
পুষ্টিকর সবজি ফুলকপিতে আছে অপ্রত্যাশিত পরিমাণে ভিটামিন সি। তবে উচ্চতাপে নষ্ট হয়ে যায় বলে একমাত্র কাঁচা কলিফ্লাওয়ার রাইসেই যথার্থ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তবে পানি না দিয়ে অল্প তাপে তাড়াতাড়ি নেড়েচেড়ে কোরানো ফুলকপি স্টারফ্রাই করলেও কিছুটা অক্ষুণ্ন থাকে ভিটামিন সি। এ ছাড়া এতে আছে যথেষ্ট ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। তবে কোলিন নামের আধুনিক কালে আবিষ্কৃত এক বিশেষ পুষ্টি উপাদান উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে একমাত্র ফুলকপিতেই পাওয়া যায় খুবই ভালো পরিমাণে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই কোলিন আমাদের হার্ট, লিভার, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্যানসার গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রকলি ও ফুলকপির বিশেষ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্যানসারের জন্য দায়ী কারসিনোজেনের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।

আমাদের বাঙালি স্বাদগ্রন্থির পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি আর গলা অবধি উদরপূর্তির অভ্যাসের নিরিখে দেখতে গেলে ফুলকপি ভাতের ভবিষ্যৎ আপাতদৃষ্টিতে খুব উজ্জ্বল মনে না হলেও বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথা বলে। কলিফ্লাওয়ার রাইসের ফাইবার আর পানির উপস্থিতির কারণে ভাতের বদলে খেলে কিছুটা হলেও পেট ভরে আর তৃপ্তি মেলে। আর বর্তমান সময়ে যখন অতিরিক্ত ওজনের ফলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ বেড়েই চলছে হু হু করে আমাদের দেশে, তখন শর্করার বিকল্প হিসেবে এই ফুলকপি ভাতের গুরুত্ব ও আবেদন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে অবশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোয় এর জনপ্রিয়তার কারণেও আমরা ধীরে ধীরে এই কিটোজেনিক লো কার্ব রাইসের দিকে আগ্রহী হচ্ছি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সমাজের ফিটনেস–সচেতন মানুষের প্লেটেও ঘরে ঘরে নিত্যদিন শোভা পাবে ফুলকপি চালের পোলাও অথবা ফ্রাইড কলিফ্লাওয়ার রাইস।
দৈনন্দিন
উপকারী ফুলকপির পাঁচ পদ

চলছে শীতকাল। বাজারে গেলেই এখন দেখা যায় টাটকা ফুলকপি। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সবজিটি আমাদের রান্নাঘরে দীর্ঘদিনের বন্ধু। ভেজে, ভাপিয়ে, ঝোল ঝোল করে, অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে, বিভিন্নভাবেই খাওয়া যায় এটি। ফুলকপিতে থাকা বিভিন্ন খাদ্য উপাদান আমাদের সর্দি-কাশি, জ্বর জ্বর ভাব থেকে যেমন বাঁচায়, তেমনি বাঁচায় অকালে দাঁত লাল হয়ে যাওয়া, মাড়ি দুর্বল হয়ে যাওয়া থেকেও। এ ছাড়া এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
তাই এই শীতকালে যত ইচ্ছা ফুলকপি খান। এখন এটি দামেও সস্তা। রেসিপি দিয়েছেন কবিতা গোস্বামী ও জিনাত নাজিয়া।
ফুলকপির ফুলকারি

উপকরণ:
মাঝারি আকারের ফুলকপি ১টি, আলু ২টি, তেল ১ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, জিরা ২ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ২টা, তেজপাতা ২টা, জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, কাজু বাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, দুধ ২ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, পানি পরিমাণমতো, সাজানোর জন্য কিশমিশ ও ভাজা কাজুবাদাম।

প্রণালি
ফুলকপির ফুলগুলো সমানভাবে কেটে লবণপানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর লবণ ও হলুদ দিয়ে মেখে নিন।
কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে লবণ-হলুদ মাখানো ফুলকপির টুকরা লাল করে ভেজে তুলে নিতে হবে। ওই তেলে শুকনা মরিচ, জিরা, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে আলু ভাজতে হবে। লবণ ও হলুদ দিয়ে এরপর জিরা, ধনে, আদাবাটা, কাঁচা মরিচবাটা, শুকনো মরিচগুঁড়া, চিনি এবং অল্প পানি দিয়ে কষাতে হবে। কপি নরম হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর দুধ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে কাজুবাদামবাটা, গরমমসলা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঝোল ঘন হয়ে এলে পরিবেশনের পাত্রে ঢেলে ভাজা কাজু দিয়ে সাজিয়ে নিন।
মালাই ফুলকপি

উপকরণ:
ফুলকপি ১টি, আদা ও রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ করে, কাজুবাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, টমেটোকুচি আধা কাপ। হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ করে। এলাচ ও কাঁচা মরিচবাটা আধা চা-চামচ করে। তেজপাতা ও দারুচিনি ২-৩টি করে, দুধ দেড় কাপ, ক্রিম আধা কাপ, ঘি আধা কাপ, টক দই আধা কাপ, চিনি ও লবণ স্বাদমতো, কিশমিশ অল্প পরিমাণে।

প্রণালি
ফুলকপির ফুল ছাড়িয়ে নিন। প্যানে অল্প ঘি দিয়ে ফুলগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার এতে বাকি ঘি দিয়ে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজকুচি ভেজে নিন। এতে কাজুবাদাম ছাড়া অন্য সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। তিন মিনিট পর দই দিন। আরেকটু কষিয়ে অল্প দুধ দিন। মসলা ভাজা-ভাজা হলে টমেটো ও ভাজা ফুলকপি দিয়ে আবার একটু দুধ দিয়ে কষান। একটু পর বাকি দুধ দিয়ে ঝোল ঝোল করে নিন। ফুটে উঠলে অল্প দুধে কাজুবাদামবাটা গুলে দিন। এই রান্নায় পানি দেওয়া যাবে না। ফুলকপি সেদ্ধ হয়ে এলে ক্রিম দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে চিনি ও কিশমিশ দিয়ে নামান।
ফুলকপির ফুলবাহার

উপকরণ:
ছোট করে কাটা ফুলকপির ফুল ৩ কাপ, কালোজিরা ১ চা-চামচ, শুকনো মরিচ ২-৩টি, মাখন ৪ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ করে। টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ, সয়া সস ২ টেবিল চামচ। লবণ, পানি, কাঁচা মরিচকুচি পরিমাণমতো, জিরার গুঁড়া সামান্য, ধনেপাতা সামান্য।

প্রণালি
অল্প মাখনে ফুলগুলো এক মিনিট ভেজে নামান। এবার মাখনে শুকনা মরিচ ও কালোজিরা ফোড়ন দিয়ে আদা ও রসুনকুচি ভেজে নিন। এতে ফুলগুলো দিয়ে লবণ দিন। আধা সেদ্ধ হয়ে এলে সস ও সয়া সস দিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে দিন। ফুলকপি সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে কাঁচা মরিচকুচি, ধনেপাতাকুচি ও জিরার গুঁড়া দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ওপরে একটু মাখন দিয়ে নামান।
মচমচে ফুলকপি

উপকরণ:
ফুলকপির ফুল ১০-১২টি, সবুজ ক্যাপসিকাম ১টি, গাজর ১টি, আলু ১টি, ডিম ২টি, কর্নফ্লাওয়ার ও চালের গুঁড়া আধা কাপ করে, গোলমরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, চাট মসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লবণ, পানি, কাঁচা মরিচকুচি পরিমাণমতো, আদা ও রসুনকুচি ১ চা-চামচ করে, টমেটো সস, চিলি সস ও সয়া সস ২ টেবিল চামচ করে, মাখন আধা কাপ, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি
ফোটানো লবণপানিতে ফুলকপিগুলো এক মিনিট ফুটিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একইভাবে লম্বা করে কেটে আলু, ক্যাপসিকাম ও গাজর অল্প সেদ্ধ করে নিন। এবার ফুলকপিতে ডিম, কর্নফ্লাওয়ার, চালের গুঁড়া, গোলমরিচ ও চাট মসলা দিয়ে ভালোভাবে মেখে ডুবোতেলে ফুলগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার ওই প্যানে মাখন গরম করে আদা ও রসুন ফোড়ন দিয়ে সস ও কাঁচা মরিচকুচি দিয়ে অল্প পানি দিয়ে কষান। কষানো হলে সেদ্ধ সবজি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে ভাজা ফুলকপি দিয়ে হালকা হাতে নেড়ে নিন। নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ফুলকপির রাজ কোফতা

উপকরণ:
কুচি করা ফুলকপি ৪ কাপ, গরু বা খাসির মাংসের কিমা বাটা ১ কাপ, মিহি পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাকুচি ১ চা-চামচ। কাঁচা মরিচকুচি, ধনেপাতাকুচি ও লবণ স্বাদমতো। গোলমরিচ গুঁড়া ও চাট মসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ করে। টমেটোকুচি আধা কাপ, ব্রেড ক্রাম্ব ও কর্নফ্লাওয়ার আধা কাপ বা পরিমাণমতো। ডিম ২টি, কাজুবাদাম ও কিশমিশকুচি ২ টেবিল চামচ করে, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি
তেল ছাড়া সব উপকরণ ফুলকপির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। হাতে অল্প তেল নিয়ে কোফতা বানিয়ে ডুবোতেলে মচমচে করে ভেজে তুলুন।
দৈনন্দিন
মেনোপজ: নারীত্ব, যৌনতা, আবেগ, শারীরিক জটিলতা, রজঃনিবৃত্তির প্রভাব নিয়ে যত প্রশ্ন

মেনোপজ, বাঙলায় যাকে বলে রজঃনিবৃত্তি, অর্থাৎ নারীদের একটি বয়সের পর পুরোপুরি মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। পৃথিবীর সকল নারীর জীবনে একটি বয়সে এসে এটি ঘটে কিন্তু বাংলাদেশে শব্দটি নিয়ে সহসা আলোচনা হতে দেখা যায় না।
মেনোপজ নারীর শরীরে প্রচুর পরিবর্তন নিয়ে আসে। সঠিক যত্ন না নিলে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশে নারীরা মেনোপজের প্রভাব নিয়ে কথা বলেন না, এর জন্য কোন প্রস্তুতি নেন না এবং নীরবে মানিয়ে নেন।
মেনোপজ নিয়ে কয়েকজন নারীর ভাবনা
ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটের দরজা খুলে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন ঘরের গৃহকর্ত্রী।
বসতে বলে চায়ের জোগাড় করতে গেলেন। মেনোপজের মতো একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন।
দুই ছেলে মেয়ে চারপাশে আছে কিনা একটু নজর বুলিয়ে নিলেন। দুই ছেলেমেয়ে যার যার ঘরে গান শুনছে দেখে একটু আশ্বস্ত হলেন।
কিন্তু আসল কথায় এলে মেনোপজ সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা দিতে পারলেন না ৪৫ বছর বয়সী এই নারী।

তিনি জানালেন, “না আমি আসলে কোন প্রস্তুতি নেই নাই বা এরকম কিছু সম্পর্কে আসলে খুব একটা জানিও না”।
কেউ কি কখনো বিষয়টি বিষয়টা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ আমি শুনছি মাসিকটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন কিছু শারীরিক সমস্যা হয়। আমাদের বড় বোন ও ভাবিদের কাছে শুনেছি”।
বিশ্বব্যাপী সকল নারীর একটি বয়সের বাস্তবতা হচ্ছে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ব্রিটিশ মেডিকেল বুলেটিন বলছে, বয়স অনুপাতে গড়ে একজন নারীর জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় মেনোপজের মধ্য দিয়ে কাটে। যার একদম প্রাথমিক লক্ষণ খুব গরম লাগা।
সেই অনুভূতিকে গুরুত্ব দেননি এমন একজন বলছিলেন, “আমার মাঝেমাঝে হঠাৎ যখন খুব গরম লাগতো, একদম মনে হত যে শরীর জলে যাচ্ছে, ভাবতাম কিরে এত গরম লাগে কেন? এরকম হচ্ছে কেন? আবার হঠাৎ মেজাজ খুব খিটখিট লাগতো। বুঝতাম না প্রথমে, পাত্তাও দেই নাই।”
গরম ও খিটখিটে মেজাজের চেয়েও অনেক বেশি প্রভাবিত হয়েছে এই নারীর শরীর। অস্টিওপোরোসিসের কারণে তার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেছে।
হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কিছু লক্ষণ আগেই বুঝেছিলেন কিন্তু মনোপজের পর তা বেশ জটিল আকার ধারণ করে।
তিনি বলছেন, “আমার বয়স এখন ৫৫। আমার মাসিক বন্ধ হইছে ৫০ বছরের দিকে। ফ্যামিলিতে মেয়েমানুষ যারা ছিল তারা সবাই আমার চেয়ে বয়সে ছোট। কারোর সাথে যে কথা বলবো সেটাও পারি নাই”।

ডাক্তারের কাছে যখন গেছি, আমাকে বলছে, “আমার অনেকগুলো বাচ্চা হইছে তাই এমনিতেই হাড় দুর্বল। কিন্তু মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সমস্যাটা অনেক বেড়ে গেছে। মাসিক বন্ধ হওয়ার সাথে এরও যে সম্পর্ক আছে তাতো বুঝি নাই।”
আবার মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক নারীর কাছে বরং স্বস্তির একটি বিষয়। চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল ঢাকার আবাসিক এলাকায় সেই দুই সন্তানের জননীর সাথে।
“এটা বন্ধ হয়ে গেলে মনে হয় আমার ভালই লাগবে। আমার আর ছেলে মেয়ের দরকার নেই। এটা (মাসিক) আমার কাছে একটা ঝামেলা লাগে।”, কথাগুলো বলে তিনি বেদম হাসতে লাগলেন।
মেনোপজ হলে নারীর শরীরে যা ঘটে
বাংলাদেশ মেনোপজ সোসাইটির তথ্যমতে এদেশে নারীদের মনোপজের গড় বয়স ৫১ বছর।
মেনোপজের বয়স প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন। মেনোপজের প্রক্রিয়াটি কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে ঘটে।
সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে নারীদের মেনোপজ হয়ে থাকে। অনেক সময় এই বয়সের মধ্যে থেমে থেমে কয়েক মাস পরপর ঋতুস্রাব হতে পারে।
অনেক সময় কোন অস্ত্রোপচারের কারণে যদি কোনও নারীর দুটো ওভারি অথবা জরায়ু ফেলে দিতে হয় তাহলেও হঠাৎ মেনোপজ হয়ে যায়।
তবে একটানা ১২ মাস যখন ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে, তখন সেটিকে চিকিৎসকেরা মেনোপজ বলে থাকেন।
বাংলাদেশ মেনোপজ সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক গুলশান আরা বলছেন, মেনোপজের ফলে নারীর শরীরে যে পরিবর্তনগুলো হয় তার পেছনে মূল কারণ ইস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। যা নারীর শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলছেন, “ইস্ট্রোজেন নারীদের নানাভাবে প্রটেকশন দেয়। যেমন নারীর মেনোপজের আগে পুরুষের চেয়ে হার্ট ডিজিজ কম হয় এবং ইস্ট্রোজেনের জন্যেই। কিন্তু যখনই তার মেনোপজ হয় তখন কিন্তু নারী ও পুরুষ হার্ট ডিজিজের সমান সমান রিস্কে থাকে। ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীর প্রজনন গ্রন্থিকে তো প্রোটেকশন দেয়ই, ইস্ট্রোজেন নারীর মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ইস্ট্রোজেন নারীর হাড়ের জন্য ভাল। ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীর শরীরে আরও অনেক কাজ করে।”
গুলশান আরা বলছেন, তার কাছে মেনোপজ নিয়ে কথা বলতে আসেন এমন নারীর সংখ্যা খুবই বিরল।
মেনোপজের ফলে ইস্ট্রোজেন হরোমন কমে যাওয়ায় নারীর শরীরে আর কি ঘটে সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারনা দিলেন তিনি।
“মেনোপজের কারণে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলে সবচেয়ে প্রথমে যেটা ঘটে সেটা হল হটফ্লাস। দিনের মধ্যে কয়েকবার হঠাৎ করে খুব গরম লাগে। মুখ লাল হয়ে যায়, ঘেমে যায়। এছাড়া অনেক কিছু ভুলে যাওয়া, খুব ছোটখাটো বিষয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলা।
অনেকে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না, একটু হাঁচি কাশি দিলে প্রস্রাব পড়ে যায়। যোনিপথ শুকিয়ে যায়, জ্বালা-পোড়া হয়। আর ইস্ট্রোজেন না থাকার আর একটা দীর্ঘমেয়াদি এফেক্ট হল অস্টিওপোরোসিস।”
অস্টিওপোরোসিস
এটি মেনোপজ পরবর্তী সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলোর একটি। এটি হাড়ের ক্ষয়জনিত একটি রোগ।
মেনোপজ পরবর্তী সময়ে নারীরা অস্টিওপোরোসিসের বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পুরুষের চেয়ে নারীর হাড়ের পুরুত্ব কম।
ইস্ট্রোজেন তাকে এ থেকে নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু শরীরে মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিরাপত্তা কমে যায়।
এর কোন উপসর্গ থাকে না কিন্তু খুব অল্পতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে।
নারীর শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস না থাকলে মেনোপজ পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিস জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়া ঘুম না হওয়া, উদ্বেগ, মনমরা ভাব এবং যৌন মিলনে আগ্রহ কমে যাওয়া মেনোপজ পরবর্তী কয়েকটি অভিজ্ঞতা।
সকল নারীর অভিজ্ঞতা অবশ্য একরকম নয়।
বাংলাদেশে নারীরা মেনোপজ নিয়ে কেন নীরব থাকেন?
মাসিক শুরু হলে যেমন নারীর শরীরে আমূল পরিবর্তন ঘটে, সেটি বন্ধ হয়ে গেলেও বদলে যায় অনেক কিছু।
চিকিৎসকেরা বলেন মেনোপজের জন্য আগেভাগে একজন নারীর প্রস্তুতি দরকার।
কিন্তু বাংলাদেশে নারীদের মেনোপজের প্রভাব নিয়ে কথা বলতে যেমন দেখা যায় না, এর জন্য কোন প্রস্তুতিও তারা নেন না এবং কোন সমস্যা হলে নীরবেই তা সহ্য করেন।
বাংলাদেশে মেনোপজ বিষয়ে অনেক নারীর জ্ঞান বেশ সীমিত বলে মনে হয়।
মেনোপজ মানে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া এর বাইরে তেমন কোন তথ্য তাদের জানা নেই।
আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা সাধারণত স্বামী অথবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের উপর নির্ভরশীল।
অন্য কোন শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে যেমন, মেনোপজের ক্ষেত্রে বিষয়টি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। যদি না তা বড় কোন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গবেষণা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক আফসানা কাওসার।
তিনি বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বে মেনোপজ নারীদের জন্য অনেক বড় ইস্যু।
“তাদের কাছে যৌনতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে চেহারায় মেনোপজের ছাপ পড়লে, অর্থাৎ মেনোপজের কারণে সৌন্দর্য কমে গেলে তারা ছবি পর্যন্ত তুলতে চান না। সেখানে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হয়। অনেক কিছু করেন নারীরা। তারা এটি নিয়ে কথা বলেন।”
তার ভাষায়, বাংলাদেশে নারীর জীবনের পরবর্তী ধাপ যেমন সে শাশুড়ি, নানী ও দাদী হয়ে উঠবে।
সন্তান জন্মদান, যৌনতা, সৌন্দর্য, শরীরের এই দিকগুলো তার জন্য গৌণ হয়ে উঠবে, সেটি সামাজিকভাবে ঠিক করে করে দেয়া থাকে।
এর উপর নির্ভর করে এই অঞ্চলে মেনোপজের প্রতি মনোভাব গড়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন।
“এই অঞ্চলের কথা বলি, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল, এখানে নারীর এই শারীরিক পরিবর্তনটা খুব প্রাকৃতিক পরিবর্তন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যুগ যুগ ধরে এটা খুব ন্যাচারালভাবে চলে এসেছে”।
“এখানে নারীরা বাড়িতে থাকেন, সংসার সন্তান এসব দেখভাল করে থাকেন। একটা সময় নাতি নাতনির দায়িত্ব তার উপরে আসে। নারী কোন সময়ে থেমে নেই। তার জীবন চলমান জীবন। এমন চলমান জীবনে সে তার এই পরিবর্তনটা অনেক সময় বুঝতেই পারে না।”
যৌনতা ও মেনোপজ
কিন্তু সমস্যাটি যদি হয় যৌনতা বিষয়ক তাহলে সে নিয়ে এখানে কথা বলা রীতিমতো অস্বাভাবিক ব্যাপার।
যৌনতায় নারীর আগ্রহ থাকলে সেটি সমাজের পছন্দ নয়। যৌনতা নিয়ে নারী এদেশে কথা বলে খুব কম।
কিন্তু গাজীপুরে একটি কলেজের শিক্ষক কাজি রোমেনা বলছিলেন, মেনোপজের পর তার শরীরের যৌনতা যে আর আগের মতো নেই সেটি তিনি অনুভব করেন।
তিনি বলছেন, “অনেক সময় মনে হয় যে মাসিকের কারণে নিজের শরীরের ভেতরে একটা উর্বরতা অনুভব করা, সেই উর্বরতাটা মিস করছি। ওইখানে আমি একটা অভাব বোধ করছি। যখন একটা মেয়ের পিরিয়ড হয় তখন যে এটা ফিল করে। কিন্তু এখন অনবরত দিনের পর দিন একই রকম চলছে। উর্বরতা ফিল করতে পারছি না।”
মেনোপজের পর প্রায়শই দাম্পত্য জীবনে যৌনতায় সমস্যা হবে বলে ধারণা করা হয়।
যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়াকে সেজন্য অনেকে দায়ী করেন।
তবে চিকিৎসকেরা বলেন এটি ভ্রান্ত ধারনা। নারীরা অনেকে যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বলে বলে মনে করা হয়।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছেন, অনেক নারী মনে করেন স্বামী হয়তো তাকে আর আগের মতো ভালবাসবেন না, তার নারীত্ব হারিয়ে যাবে, এসব চিন্তার কারণে মেনোপজ হওয়ার পর নারীরা অনেকেই আশা হারিয়ে ফেলেন, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি বলছেন, “নারীত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হল সন্তান ধারণের ক্ষমতা। এর সাথেই মাসিকের সম্পর্ক। মাসিকের সাথে আর একটা যে ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল যৌনতা। অনেক নারীর মনের মধ্যে একটা ভয় থাকে যে সে বোধহয় সেক্সুয়ালি আর আগের মতো পারফর্ম করতে পারবে না।”
এছাড়া একজন নারী অনেক দিন ধরে একটি শারীরিক অভিজ্ঞতার সাথে বসবাস করেন। কিন্তু মেনোপজের মাধ্যমে তিনি নতুন একটা ধাপে প্রবেশ করেন। তার শরীরের অনেক বড় একটি পরিবর্তন ঘটে, সেই সাথে তার জীবনেও অনেক বড় একটি রূপান্তর ঘটে। অনেকের এসব আমূল পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।
ডা. মেখলা সরকার বলছেন, “দেখা যায় কোন সমস্যা না থাকলেও ইনসিকিউরিটি থেকে সমস্যাটা আসলেই দেখা দেয় এবং এদেশে অনেক নারী যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।”
যা করলে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে
ডা. গুলশান আরা বলছেন মেনোপজ কোন অসুখ নয় যে এর চিকিৎসা দরকার হবে।
৩০ বছর বয়স থেকে কিছু বিষয় মেনে চললেই ইস্ট্রোজেন কমে গেলে যে সমস্যাগুলো হয় তার প্রভাব অতটা মারাত্মক হয় না। সে নিয়ে কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
“প্রতিটি নারীর মেনোপজ সম্পর্ক সচেতন থাকা প্রয়োজন। এটা সুসম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, কায়িক পরিশ্রম ও জীবনে অ্যাক্টিভ থাকার উপর নির্ভর করে। একদম শুরু থেকে যদি আমরা লাইফস্টাইলটা এরকমভাবে তৈরি করি, খাবার যদি সুসম হয়, সচেতনতা থাকে তখন অনেক ভালোভাবে অ্যাডাপ্ট করা যায়, জটিলতাগুলো কম হয়।”
জটিলতাগুলো কমানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল বিষয়টি নিয়ে কথা বলা।
বয়ঃসন্ধিকালে একটা সময় হলে মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হওয়াটাই যেমন স্বাভাবিক, ঠিক তেমনি একটি বয়সের পর পুরোপুরি মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়াও নারীর শরীরের জন্য প্রাকৃতিক নিয়ম।
তার নানা দিক নিয়ে কথা বলে, সঠিক তথ্য জেনে নিলে যে কোন ক্ষতি নেই সেই বিষয়টি এখনো বাংলাদেশে গুরুত্ব পাচ্ছে না।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন