পরিবেশ
করোনাকালের বসন্ত
লেখক
প্রথম আলোসাতসকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে দৌড়াতে হয়। এ জন্য মোবাইল ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে হয়; না হলে দেরি হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। গত কদিন অবশ্য অ্যালার্মের আগেই টের পেয়ে যাচ্ছি। কারণটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বুঝলাম, বাসার চারপাশের গাছে পাখিদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। শীতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পাততাড়ি গুটিয়ে বিদায় নিয়েছে আগস্টের ৩১-এ। এমনিতে সিডনির আবহাওয়া যেন পাড়ার পাগলাটে খ্যাপা ছেলেটার মতো। একই দিনে কখনো ঠান্ডা, কখনো গরম, কখনো নাতিশীতোষ্ণ আবার কখনো বৃষ্টি; কিন্তু শীতের পর বসন্তের আগমনী বাতাস দিয়ে ঠিক ঠিক জানিয়ে যায় ঋতুরাজ আসছে। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখেই প্রকৃতিতে এমন একটা বাতাস এসে সেই বার্তা জানিয়ে গেল, যে বাতাসকে বাংলাদেশের ভাষায় বলে লিলুয়া বাতাস। লিলুয়া বাতাসে মনটা হয় পাগলপারা। মনের মধ্যে একটা অব্যক্ত কাব্যভাব তৈরি হয়; মনে হয় ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে যাই। হাঁটতে থাকি গন্তব্যহীনভাবে। অকৃপণভাবে মাখতে থাকি এই লিলুয়া বাতাস। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যেন প্রেমটা এই বাতাসের সঙ্গেই, তাই অন্য কোনো সঙ্গীর দরকার নেই। অন্য কেউ থাকলে বরং লিলুয়া বাতাসের সঙ্গে এই নীরব কথোপকথনে ছেদ পড়তে পারে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়ছে। আজ যেমন জ্যাকেটটা বাসায়ই ফেলে আসলাম লিলুয়া বাতাসের সঙ্গে মাখামাখি ভালোবাসা করব বলে।
অ্যালার্মের আগেই ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণটা বের করেছি। ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের বসন্তকালের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ শিমুল ফুলের কথা, আমাদের স্থানীয় ভাষায় বলে মাদার ফুল। কুষ্টিয়াতে আমাদের শোয়ার ঘরের ঠিক পেছনেই ছিল একটা বেলগাছ আর তার একটু পেছনেই ছিল একটা শিমুলগাছ। বসন্তের এই সময়টাতে বেল ও শিমুলগাছে ফুল ফুটতে শুরু করলে অনেক পাখি সকাল সকাল এসে হাজির হতো আর তাদের কিচিরমিচির শুনে আমাদের ঘুম ভেঙে যেত। বেলফুলের ঘ্রাণ যে একবার নিয়েছে, সে আর জীবনেও ভুলবে না। বেলগাছটাতেও অনেক পাখি বসত। বেল আর শিমুলগাছ একসময় সমান উচ্চতার ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বেলগাছের কলেবর খুব একটা না বাড়লেও শিমুলগাছ ছাতার মতো তার ডালপালা ছড়িয়ে চারিদিক ঢেকে দিয়েছিল। আমরা ঘুম থেকে উঠেই শিমুলগাছের তলায় গিয়ে পড়ে থাকা শিমুল ফুলগুলো বেছে বেছে কুড়িয়ে নিতাম, যেগুলোর পুংকেশরগুলো তখনো শক্ত-সমর্থ আছে। ফুলের সেই অংশটাকে যে পুংকেশর বলে, সেটা জেনেছি অনেক পরে আর স্থানীয় ভাষায় আমরা কী বলতাম, সেটা আর এখন মনে নেই। তারপর শুরু হয়ে যেত আমাদের টানাটানি খেলা। আমার হাতের আঙুলে একটা ছোট পুংকেশর আর মেজোর হাতে একটা পুংকেশর। আমারটার সঙ্গে ওরটার ঘাড়ে ঘাড় লাগিয়ে এক টান৷ যার পুংকেশরের মাথাটা খুলে যাবে, সে হেরে যাবে আর বিপরীতজন জিতে যাবে। ছোটজন আমাদের এই খেলার নিবিষ্ট দর্শক। এভাবেই খেলা চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ভেতর বাড়ি থেকে মায়ের ডাক পড়ছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দাঁত ব্রাশ করে, হাত-মুখ ধুয়ে ত্বরিত গতিতে তৈরি হয়ে নিলাম। বাইরের দরজা খুলতেই লিলুয়া বাতাসে শরীরটা শীতল হয়ে গেল। গাড়ি স্টার্ট দিতেই পাকিস্তানের নব্বইয়ের দশক কাঁপানো ব্যান্ডের ভোকাল আলী আজমতের কণ্ঠে বেজে উঠল ‘ইয়ার বিনা দিল মেরা নাহি লাগতা’ আসলেই দেশে সব ইয়ার ফেলে এসে বিদেশে আর মন লাগে না। আমি তাড়াতাড়ি গানটা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ির কাচগুলো নামিয়ে দিলাম, কারণ বাইরে থেকে হাজারো পাখির গুঞ্জন ভেসে আসছে। কিছু দূর যাওয়ার পর পেম্ব্রুক রোড। এই রাস্তা ধরে সোজা পশ্চিম দিকে গেলেই মিন্টো স্টেশন।
সকালের সূর্যটা একেবারে পেছন দিকে ফেলে এগিয়ে যেতে হয় তখন গাড়ির বাম দিকের লুকিং গ্লাসে সূর্যের ছায়া পড়ে। এটাকে আমার কাছে মামা-ভাগনের লুকোচুরি খেলা মনে হয়। আমি মাথাটা সামনে-পেছনে করে সুয্যিমামার প্রতিবিম্বকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করি। অবশ্য স্টেশনের পশ্চিম দিকের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে যখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি, তখনই ঠিকই সুয্যিমামার কাছে ধরা পড়ে যাই। স্টেশনে গাড়ি পার্ক করে কিছু দূর হেঁটে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠতে হয়। দেখি স্টেশনমাস্টার একটা পিক আপ লাঠি নিয়ে স্টেশনের বেড়ার বাইরে থেকে আবর্জনাগুলো তুলে তুলে একটা বিন ব্যাগে ভরছেন।
মিন্টো স্টেশনে মোট তিনজন স্টেশনমাস্টার কাজ করেন; এঁদের দুজন প্রৌঢ় মহিলা আর একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। আমি ওনাদের প্রত্যেককেই চিনি এবং ট্রেন আসার আগ পর্যন্ত ওনাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করি। পুরুষ ভদ্রলোকের কথা বলার অসুখ আছে। উনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। গত তিন দিন ছুটিতে ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী করে ছুটি কাটালেন?
– আর কি, সেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
গতকাল বলছিলেন, ওনার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ওনার শ্যালিকা আর ভায়রা এসেছিলেন ভারত থেকে কিন্তু করোনার কারণে আটকা পড়েছিলেন। সৌভাগ্যবশত গত পরশু তাঁরা যেতে পেরেছেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ট্রানজিট কোথায় হবে? বললেন, ইরাকে, কারণ এখন নাকি শুধু এমিরেটস এয়ারওয়েজেরই কয়েকটা বিমান চলছে, বাকিদের পুরোপুরি বন্ধ। তা-ও স্টেশনে বিমানে চড়ার আগে অনেক ধরনের চেকআপ করতে হয়েছে।
গতকাল আমি তাঁকে বলেছিলাম, দেখেছেন তাপমাত্রা বাড়ছে। উনি বলেছিলেন, আজকে তো নাকি তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি হয়ে যাবে।
আমি বলি, তার মানে তো গ্রীষ্মকাল চলেই এল, কী বলেন?
উনি বললেন, ঠিক তাই।
এরপর ট্রেন চলে আসায় উনি আমাকে বিদায় দিয়ে নিজের অফিসকক্ষের দিকে হাঁটা ধরলেন। মহিলা দুজনের মুখভঙ্গিটাই এমন থাকে যে কেউই সাহস করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন না। তার মধ্যে একজনকে একদিন আমি ট্রেনে দেখে চিনে ফেলেছিলাম এবং জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কি আর মিন্টো স্টেশনে কাজ করেন না? শুনে উনি ভীষণ খুশি হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আসলে শিফট অনুযায়ী কাজ তো, তাই সব সময় মিন্টোতে দেখা যায় না। সেদিন থেকে ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলেই কুশলবিনিময় করি। আর দ্বিতীয় মহিলার সঙ্গে আজ সকালে দেখা হলো।
আমি বললাম, কী সুন্দর একটা দিন এবং দেখেন তাপমাত্রা বাড়ছে।
ওনার উত্তর, হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ার বসন্তকালটা আসলেই দারুণ। এরপর তাঁকে শুভকামনা জানিয়ে আমি প্ল্যাটফর্মের দিকে হাঁটা দিই। উনিও আমাকে ফিরতি শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের কাজে মন দেন।
ট্রেনে উঠেই ইউটিউব খুঁজে বসন্তের গান ছেড়ে দিই। গান শুরুই হলো শাহ আবদুল করিমের ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’ দিয়ে। এরপর এল একটার পর একটা রবীন্দ্রসংগীত, ‘ওহে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান’, ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’, ‘আহা আজি এ বসন্তে’সহ আরও অনেক গান। তবে আমি বেছে বেছে দলীয় সংগীতগুলো শুনছিলাম; কারণ এর মধ্য দিয়ে উৎসবের আবহ পাওয়া যাচ্ছিল মনে মনে। করোনার ভয় কাটিয়ে ট্রেন-বাসে ভিড় বাড়ছে। অবশ্য আজকে শুক্রবার বলে ট্রেন অনেকটাই ফাঁকা ছিল

মাসকাট স্টেশনে নেমে বাসে করে অফিসে যেতে হয়। অফিসে যাওয়ার পথেই একটা হ্রদ; তার আগে আরও একটু খোলা জায়গা। সেখানে বেশ কয়েকটা পালতে মাদারগাছ। পালতে মাদারগাছেও বসন্তকালে লাল টকটকে ছোট ছোট ফুল ধরে। পালতে মাদারগাছেও বসন্তকালে লাল টকটকে ছোট ছোট ফুল ধরে। কুষ্টিয়া অঞ্চলে শিমুল ফুলকে বলে মাদার ফুল আর মাদার ফুলের চেয়ে ছোট এই ফুলগুলোকে বলে পালতে মাদার। আর অস্ট্রেলিয়ার বসন্তকালের সিগনেচার ফুল ‘ওয়াটল’ তো আছেই। ওয়াটল দেখতে হুবহু বাংলাদেশের বাবলা ফুলের মতো ছোট ছোট হলুদ বর্ণের এবং গাছের পাতার আকৃতিও একই রকম কিন্তু ওয়াটলগাছে বাংলাদেশের বাবলাগাছের মতো বড় বড় কাঁটা নেই।
ছোটবেলায় আমরা যখন রাখালদের সঙ্গে মাঠে গরু রাখতে যেতাম, তখন রাখালেরা একটা জিনিস শিখিয়ে দিয়েছিল। বাবলাগাছের কচি ডগা চিবিয়ে তারপর পানি খেলে পানি মিষ্টি লাগে। এরপর থেকে পানি খাওয়ার আগে সব সময়ই বাবলার ডগা খুঁজে বেড়াতাম। আমি ইচ্ছে করেই দুটো স্টপেজ আগে বাস থেকে নেমে পড়লাম। বাকি রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। মিনিট পনেরোর হাঁটা পথ। ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছে যাব। বাস থেকে নেমে কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি পালতে মাদারগাছের ফুলগুলো বাতাসে দুলছে আর হাসছে। আমি প্রথমে পুরো গাছটার এবং পরে কয়েকটা ডালের আলাদা ছবি তুলে নিলাম। আরও কিছু দূর যেতেই দেখা পেলাম ওয়াটলগাছের। ওয়াটল ফুলেরও বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম।
হেঁটে হেঁটে অফিসের দিকে যাচ্ছি গায়ে বসন্তের লিলুয়া বাতাসের কোমল পরশ মাখতে মাখতে। গত পরশু দিন ছিল পূর্ণিমা। সারা দিন অফিসে বসে বসে পরিকল্পনা করলাম এবারের পূর্ণিমাটা সৈকতে গিয়ে উপভোগ করব। ব্যাপারটা জানার পর গুগল করে আমার বস ‘ব্রাইটন লে স্যান্ডস’ সৈকতটা দেখিয়ে বলল, এখানে পুরো জায়গাটাই সৈকত। এখানে যেতে পারো। যেখানে পার্কিং পাও, সেখানে নেমে পড়লে। আর কাছাকাছি বাচ্চাদের কয়েকটা খেলাধুলারও জায়গা আছে, তাই ওরাও বিরক্ত হবে না। আর সবচেয়ে ভালো ব্যাপার চাঁদটা উঠবে একেবারে জায়গাটার মাঝখানে দিয়ে, তাই পুরো সৌন্দর্যটা দেখতে পাবে। বাসায় ফিরে গিন্নিকে পরিকল্পনার কথা বলতেই বাতিল করে দিলে; কারণ পরের দিন বাচ্চা দুইটারই স্কুল আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের তৈরি করে কেয়ারে ড্রপ করে গিন্নি অফিসে যায়। ওরা কেয়ার থেকে স্কুলে যায়।

সৈকতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যাওয়ায় আমরা পরিকল্পনা করলাম আমাদের মতো করে পূর্ণিমাটা উদযাপন করার। যেহেতু বসন্ত চলে এসেছে, তাই বাইরের তাপমাত্রা সহনীয়। আমরা আমাদের বাসার পেছনের জায়গাটায় বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমরা তিনজন মিলে কিছুক্ষণ লুকোচুরি (আমাদের এলাকার ভাষায় পলানটুক আর অস্ট্রেলিয়ার ভাষায় পিকাবু) খেললাম। ততক্ষণে চাঁদটা বেশ ওপরে উঠে এসেছে। আমাদের পেছনের প্রতিবেশী কেইনদের বাসায় একটা তালের মতো গাছ আছে আমাদের দুজনের জায়গার মাঝের বেড়া বরাবর। আমরা ইচ্ছে করেই তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে চাঁদ মামার সঙ্গে লুকোচুরি খেলি। তালের পাতার আড়ালে কখনো চাঁদ মামা লুকিয়ে পড়েন আবার কখনোবা আমরা বেড়ার আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। এভাবে খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে আমরা আমাদের বাইরের ঘরে চলে আসি। সেখানে বাচ্চাদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রাখা—লুডু থেকে শুরু করে ক্যারম, দাবা, তাস আর আছে বাচ্চাদের অনেক খেলনা। আমি আর আমার মেয়ে তাহিয়া তাস নিয়ে বসলাম। রায়ান পাশে রাখা বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নাক ডাকা শুরু করল। আমি আর তাহিয়া কল ব্রিজ খেললাম বেশ কিছুক্ষণ। তারপর রাত ১০টার দিকে ঘরে ফিরে এলাম।
কর্মব্যস্ত পাঁচ দিনের শেষে সপ্তাহান্তের দুটো দিন কেটে যায় বাচ্চাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গী হয়ে। আমাদের বাসার খুব কাছেই একটা পার্ক আছে; পাসফিল্ড পার্ক। নাম পার্ক হলেও কোনো রাইড নেই শুধু মাঠের মাঝ দিয়ে সরু কংক্রিটের রাস্তা বানানো। তার ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটাহাঁটি করে আর বাচ্চারা সাইকেল চালায়। ৩০ আগস্ট রোববার ছেলে রায়ানকে নিয়ে সকালবেলা গেলাম পাসফিল্ড পার্কে। আমি একটা গাছের ছায়ায় একটা মরা গাছের ডালের ওপর বসে থাকলাম আর রায়ান সামনের কংক্রিটের চক্রাকার রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল আর একটু পরপর এসে পানি খেয়ে যাচ্ছিল। বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে পাশের গাছগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাখি গান গেয়ে যাচ্ছে। একটা পাখির স্বর শোনা যাচ্ছিল অবিরাম। হালকা হিমেল বাতাস উঁচু ঘাসের ডগাগুলোকে দোলা দিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সারা দিন বসে বাতাসের এই আদর মাখি। সবচেয়ে ভালো হতো ঘাসের বিছানায় শুয়ে পড়তে পারলে।
সে সময়ই বেশ কিছু মানুষ এসেছিল তাদের কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে। প্রত্যেকে একই কথা বলছে, আজকে একটা দারুণ দিন। এক প্রৌঢ় দম্পতি আমাদের বললেন, বসন্তের আগমনী বার্তা আবহাওয়ায়। রায়ান অবশেষে ক্লান্ত হয়ে এসে আমার পাশে গাছের ডালটায় বসে বিশ্রাম নিল কিছুক্ষণ, তারপর আবারও ফিরে গেল সাইকেল চালাতে। কী এক অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ ছিল চারপাশে। আসলে প্রকৃতি তাঁর বুকে আমাদের জন্য বিশাল ভালোবাসা জমা করে রেখেছে। আমাদের শুধু একটু থেমে সেটা অনুভব করা দরকার।
অফিসে ঢুকেই আমাদের উদযাপনের কথা বললাম সহকর্মী মিককে (মাইকেলের ডাকনাম)। শুনে সে বলল, খুব ভালো করেছ। আমরা একটু পরে কফি খেতে বের হব। আবহাওয়ার সঙ্গে মানুষের মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। কফি আনতে যেতে যেতে মিককে বলছিলাম বাংলাদেশে কীভাবে বসন্ত বরণ করে নেওয়া হয়, তার গল্প। আমি বললাম, বসন্তকে আমরা বলি ঋতুরাজ ‘কিং অব অল সিজনস’। আর বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আছে আমাদের নানা আয়োজন। আর বসন্তকে নিয়ে কত যে গান-কবিতা রচিত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। আর প্রকৃতিতেও পরিবর্তনটা সহজেই চোখে পড়ে। সারা দেশ শিমুলের লাল ফুলে রাঙা হয়ে ওঠে। পাখির দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কোনো অবুঝ শিশু লাল রং হাতে মেখে একটা সবুজ জমিনে ছিটিয়ে দিয়েছে; ঠিক অস্ট্রেলিয়াতে যেমন পথে প্রান্তরে বেগুনি জ্যাকারান্ডা ফুটে থাকে, আমাদের থাকে শিমুল। শুনে মিক বলল, তোমাদের সংস্কৃতি আসলেই অনেক সমৃদ্ধ। আমি বললাম, বহু ধর্মের, বহু মতের মানুষকে এই সংস্কৃতিটাই তো এক করে রেখেছে। আমাদের ইতিহাসও এই সংস্কৃতিনির্ভর কিন্তু এবার বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য কোনো আয়োজন করা হয়নি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে। মিক বলল, এইবার তো অস্ট্রেলিয়াতে তীব্র শীত পড়ল।
আমি বললাম, হ্যাঁ, এমনকি শীতকালের শেষের কদিনও ভোরবেলা আমি গাড়ির ওপর থেকে পুরু বরফের আস্তরণ সরিয়েছি। ঠান্ডাটা এতই বেশি ছিল যে পানি ঢেলে বরফ পরিষ্কার করার পর আবার সেই পানিটাই বরফে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম, তবুও দেখো প্রাকৃতিক নিয়মে বসন্ত কিন্তু ঠিকই চলে এল। আমার কেন জানি মনে হয়, করোনার এই প্রাদুর্ভাব তা সে যতই দীর্ঘ হোক না কেন, একদিন না একদিন ঠিক শেষ হবে এবং আমরা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব। আমরা আবারও আগের মতো নির্ভাবনায় চলাফেরা করতে পারব, সাগরে, সৈকতে, পাহাড়ে বেড়াতে যেতে পারব, সিনেমা দেখতে হলে যেতে পারব।
মিক তখন বলল, গুড ও ইউ মেট।
-
করোনাকালের বসন্ত
-
করোনাকালের বসন্ত
-
করোনাকালের বসন্ত
-
করোনাকালের বসন্ত

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
দেশের কৃষিতে নতুন সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে


শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

বেদানা খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সব্বার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখের মধ্যে দিলেই, সুমিষ্ট রোষে মন উতলা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে অত্যন্ত বলবর্ধক এই ফল, রুগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। বাজারেও এর চাহিদা থাকায়, এই ফলের চাষ বহুল পরিমাণে আমাদের রাজ্যে হয়। তবে বাড়ির ছাদে এই ফলের চাষ নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সহজে, বুদ্ধিমত্ততার প্রয়োগে এই ফলের চাষ বাড়িতেও করা যায়। অনেকেই বাড়ির ছাদে ইদানিং এই ফলের চাষ নিয়ে মেতে উঠেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাড়ির ছাদে বেদনা চাষের সহজতম পদ্ধতি। যা শিখে আপনি আপনার পাড়া-পড়শীকেও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>ছাদে বেদানার চারা লাগানোর জন্য প্রথমে ভালো মানের টব সংগ্রহ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য টবের তলায় তিন থেকে চারটি ফুটো করে নিয়ে সেগুলি স্টোন চিপস দিয়ে ভালোভাবে বুজিয়ে দিতে হবে। ছাদে রোদ পড়ে এমন জায়গায় ডালিমের টবটিকে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি কালে বেলে দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে টবে জল দিয়ে প্রায় ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। পনেরটা দিন কাটলে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ এরকম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরেই লক্ষ্য করা যাবে টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে আসবে। ঠিক সেইসময় বেদানার কলমের চারা টবে পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, সোজা করে বসিয়ে যেন বেদানার চারা রোপণ করা হয়। সরু লাঠি দিয়ে চারাটিকে এরপর বেঁধে দেওয়া উচিত। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। পরবর্তী কালে জল দেওয়ার পরিমাণ চারাতে বাড়াতে হবে। গাছের গোড়ায় কখনোই যাতে জল না জমে তাতে নজর রাখা উচিত।
বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪-৫ মাস হয়ে গেলে, এক মাস অন্তর সরিষার খোল পচা জল গাছে দেওয়া উচিত। সরিষার খোল ১০ দিন ভালো রূপে জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেই পচা খোলের জল হালকা ভাবে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে নিতে হবে। টবের কিছুটা মাটি ১ বছর হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। মাটি যখন বদলাতে হবে সেই সময়কাল বর্ষার শেষ ও শীতের আগে যাতে হয় তাতে খেয়াল রাখা উচিত। মাঝে মধ্যেই টবের মাটি খুঁচিয়ে উল্টে পাল্টে দেওয়া উচিত।
script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>সার প্রয়োগ (Fertilizer)
বেদানার চারা বসানোর আগেই টবে দেওয়া মাটির গর্তে সার দিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই । গর্ত করার ৮-১০ র প্রয়োগ করা উচিত, এতে গাছের ফলনের মান উন্নত হবে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে বেদনা গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গর্ত
কম্পস্টের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ১০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ গ্রাম
১ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম এবং পটাশ সার ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। ওই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে মে- জুন মাসে এবং দ্বিতীয় বারে সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ: (Harvest)
৩-৪ বছর বয়স থেকেই বেদনা গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল পাকতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি বর্ণ নিলেই ফল পেড়ে নিতে হবে। ফল গাছে বেশিদিন থাকলেই তা ফেটে যেতে পারে। বেদনার খোসা অত্যন্ত শক্ত হওয়ার জন্য এই ফল অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।
ফলন:(Yield)
চার-পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই ডালিম গাছ ফল দিতে শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো প্রথম দিকে এই গাছ ভালো ফলন দেয় না। গাছের বয়স ৮ থেকে১০ বছর হয়ে গেলেই পরিপুষ্ট ডালিম গাছে আসতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ডালিম গাছের ফলনও বেড়ে যায়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটা বেদনা গাছ কম করে ২০০ টির মতন ফল দিতে পারে। কম করে ৩০ বছর বেদনা গাছ অত্যন্ত ভালো মানের ফলন দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

পাবনায় পাঁচ মাসে ৫ কোটি টাকার শামুক বিক্রি
শীর্ষ সংবাদ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের
-
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
-
ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন