পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতিতে কাজ করছে সুসংগঠিত চক্র।
বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অপরাধের ক্ষেত্রে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করার উল্লেখ পাওয়া যায়। যা নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে রোববার(১৩ই সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। এদের মধ্যে রয়েছেন দুই জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, দুই জন দালালচক্রের সদস্য এবং একজন যিনি জাল পরিচয়পত্র তৈরি করিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ভুয়া এনআইডি তৈরি করে তারা ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের সহযোগিতা করতো।
নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে যাদের ঋণ দরকার কিন্তু আগের রেকর্ড খারাপ আছে, লোন হচ্ছে না নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের দেয়া হতো। তারা নতুন আইডি কার্ড ব্যবহার করে লোন নিতো বলে জানান মি. আলম।
এদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
গত ১১ই সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে অন্যের জমি বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এদের মধ্যে তিন জন রিমান্ডে রয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে ভুয়া করোনা প্রতিবেদন দেয়ার মামলায় গ্রেফতার জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর কাছ থেকেও একাধিক এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এর আগে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয় পত্র পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে একটি মামলা হয়।
ওই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। যাদের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কয়েক জন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের এডিসি পলাশ কান্তি নাথ বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ১৩ জনের মধ্যে তিন জন জামিনে রয়েছেন।
এদের মধ্যে চট্টগ্রামে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক দপ্তরের বেশ কয়েক জন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এনআইডি কী কাজে লাগে?
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার হয়।
মোট ২২ ধরণের কাজের ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়।
যার মধ্যে সরকারি সব অনলাইন সুবিধা, ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, পাসপোর্ট করা ও নবায়ন, সম্পত্তি কেনাবেচা, আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন প্রাপ্তি, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ই-পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাব খোলা, ব্যাংক ঋণগ্রহণ, সরকারি ভাতা উত্তোলন, সহায়তা প্রাপ্তি, বিআইএন, শেয়ার-বিও একাউন্ট, ট্রেড লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বীমা স্কিম, ই-গভর্নেন্স, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল সংযোগ, হেলথ কার্ড, ই ক্যাশ, ব্যাংক লেনদেন ও শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজ।
সম্প্রতি রেলের টিকেট কাটার জন্যও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কীভাবে কাজ করে জালিয়াত চক্র?
নকল জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি তৈরি করার পেছনে বিভিন্ন পর্যায়ে একটি সুসংগঠিত চক্র কাজ করে বলে জানায় পুলিশ।
এই চক্র যাদের এনআইডি কার্ড দরকার তাদের সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তথ্য প্রবেশ করানোর পর্যন্ত সব পর্যায়ে লোকজন রয়েছে বলে জানা যায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, এ পর্যন্ত তদন্তে তারা যা জানতে পেরেছেন তা হচ্ছে, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মাধ্যমে পুরো কাজটি করা হয়ে থাকে।
“ডাটা এন্ট্রি অপারেটর অনলাইনে এনআইডি কার্ডের ফর্ম পূরণ করে দেয়। এদের অগাধ ক্ষমতা এন্ট্রি দেয়ার। কারণ এরা যা এন্ট্রি দেয় সেটাই ফাইনাল।”
তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নির্বাচন কমিশনে আউটসোর্সিংয়ের কাজে নিয়োজিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মী। ফলে এ কাজটি তাদের জন্য কোন সমস্যাই নয়।
একই ব্যক্তির একাধিক এনআইডি থাকলে সেটির নোটিফিকেশন আসতে একবছরের মতো সময় লাগে। এই এক বছরের মধ্যে জালিয়াত চক্রের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যায় বলে জানান মি. আলম।
“যদি ডাবল এন্ট্রির কারণে ভবিষ্যতে কোন নোটিফিকেশন আসে তো সেটি ঝুলে থাকে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত আসতে এক বছর লাগে। সেক্ষেত্রে কোনটি বাতিল হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেক সময় বাতিলও করা হয় না।”
তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়ারা জানিয়েছেন, এই এক বছরের মধ্যে তারা কয়েক’শ নকল এনআইডি বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার টার্গেটে ছিল। এর পর তারা ডাটা এন্ট্রির চাকরি ছেড়ে দিতো যাতে কেউ ধরতে না পারে।
পুলিশ জানায়, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মাধ্যমে এনআইডি জালিয়াতির কাজটি করা হয়ে থাকে।
জাল এনআইডি তৈরির চক্রের বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের এডিসি পলাশ কান্তি নাথ বলেন, “এই চক্রটি কিভাবে কাজ করে সেটা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্ত থেকে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, তারা স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য প্রথম যে উপকরণ সেটি হচ্ছে জন্ম সনদ, সেটি আগে সংগ্রহ করে।”
এই কাজের জন্য তাদের আলাদা চ্যানেল বা সোর্স থাকে। যাদের মাধ্যমে এনআইডি কার্ড তৈরির কাজগুলো তারা পেয়ে থাকে বলে জানানো হয়।
“এর পর চক্রের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের ফর্ম পূরণ করে সেই তথ্য সার্ভারে আপলোড করে। এর পর যাচাই বাছাইয়ের পর চক্রটি ঠিক ঠাক কাজ করতে পারলে এনআইডি কার্ড পেয়ে যেতো।”
মি. নাথ বলেন, চট্টগ্রাম থেকে যে চক্রটি গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করে এমন সদস্যও রয়েছে। তারাই সার্ভারে তথ্য আপলোড দেয়ার কাজ করতো।
তবে এ ধরণের ঘটনা শুধু চট্টগ্রামে নয় বরং ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে বলেও জানান তি. নাথ।
তিনি বলেন, “গতকাল বা পরশু ঢাকা থেকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ চিটাগাং-ঢাকা মিলে একটা চক্র তো আছেই।”
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন?
এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের জালিয়াতি রুখতে এ সপ্তাহের শেষ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সাড়াশি অভিযান। এ-তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা একটা সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছি যাতে বিভিন্ন দিক থেকে যেমন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, দালালচক্র বা কমিশনের কেউ থাকলে তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা যায়, সেজন্য বড় ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।”
এর জন্য সারা দেশে অঞ্চল ভিত্তিক ১০টি টিম গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
কোন ধরণের অনিয়ম পেলে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এটি এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলে পরিকল্পনাটি চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে শুরু হবে বলে জানান মি. ইসলাম।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখ করে মি. ইসলাম বলেন, দুই জনের গ্রেফতারের বিষয়টি দেখেছেন। তাই একাজে যেই জড়িত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, “ওই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান এনআইডি কার্ড তৈরিতে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করে থাকে তাদেরকেও নোটিশ দেয়া হয়েছে যে তারা কেন তাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।”
পুলিশ জানায়, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মাধ্যমে এনআইডি জালিয়াতির কাজটি করা হয়ে থাকে।
পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতিতে কাজ করছে সুসংগঠিত চক্র।
মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।
ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।
এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।
নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন। গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।
সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’
তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।
চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।
এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।
টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –
এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –
আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –
ফিল্টার পেপার –
এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চা পাতা –
আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।
বিভিন্ন প্রকারের চা –
সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি
চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –
চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।
চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –
আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।
ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন