আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

এডিটার’স মেইলবক্স: ভাস্কর্য, প্রশাসন আর রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকায় বিজয় দিবস উদযাপন, ১৬-১২-২০২০।
ছবির ক্যাপশান,ভাস্কর্য, মুজিব আর স্বাধীনতা: বাংলাদেশে বিতর্ক এখন বহুমুখী।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্কে সম্প্রতি মতামত রেখেছেন দেশের প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা, যা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন সন্দ্বীপের ওসমানীয়া থেকে মুহাম্মদ শামিমুল হক মামুন:

”বারোই ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার প্রবাহের প্রধান খবরে বাংলাদেশে সরকারি আমলাদের ২৯টি ক্যাডার এর নজিরবিহীন এক সমাবেশ থেকে পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজির আহমেদ বলেন, আমার দেশের স্বাধীনতা,আমার দেশের সংবিধান, আমার রাষ্ট্র, আমার রাষ্ট্রের জনক, নো বডি কেন টাচ দেম।

আমি মনে করি আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশ সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। বিচারকদের চেতনা হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। নাগরিক সমাজে বিবদমান নানা পক্ষের মানুষ বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালত ও প্রশাসনেরই শরণাপন্ন হয়। তারাই যদি কোন এক পক্ষ নিয়ে এ’জাতীয় সমাবেশ করে তাহলে অন্য পক্ষের কথা কে শুনবে ?

দেশে কোন নাগরিক সংবিধান বিরোধী কাজ করলে, সংবিধান সমুন্নত রাখতে তাদের আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সেটি না করে কী দাবি নিয়ে তারা সমাবেশ করলেন? উনত্রিশটি ক্যাডার কর্মকর্তাকার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন? তারা কার কাছে দাবি জানালেন? কাকে হুমকি দিলেন? কাকে প্রতিপক্ষ বানালেন?”

ঢাকায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট
ছবির ক্যাপশান,ঢাকায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট: ভাস্কর্য বিরোধীরা কি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন?

সরকারি কর্মকর্তাদের সভা নিয়ে আপনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সে সব প্রশ্ন অবশ্যই তোলা যায় মি. হক, কিন্তু সেগুলোর উত্তর যে আমার কাছে আছে তা আমি বলবো না। তবে এটুকু বলা যায়, তারা শেখ মুজিবের ভাস্কর্য সরানোর দাবিটাকেই রাষ্ট্রর আদর্শের পরিপন্থী বলে গণ্য করছেন, এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে তার বিরুদ্ধে মতামত তুলে ধরাকে তাদের দায়িত্ব মনে করছেন। আপনি এখানে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু আমার মনে হয় তারা সেভাবেই বিষয়টি দেখছেন।

যারা ভাস্কর্য সরানোর দাবি করছেন, তারা আদালত বা প্রশাসনের শরণাপন্ন হবেন বলে আমার মনে হয় না, কারণ তারা তাদের দাবির পক্ষে ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলছেন। অন্যদিকে যারা এই দাবির বিরোধিতা করছে, তারা বাঙালি জাতীর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যর পাশাপাশি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের কথা বলছেন। তবে এটা ঠিক, গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর, এবং সম্ভবত ২৯টি ক্যাডারের সদস্যরা ভাস্কর্য বিরোধীদের একটি সতর্ক বার্তা দিতে চেয়েছেন।

তুরস্কের ইস্তানবুলে ভাস্কর্য
ছবির ক্যাপশান,তুরস্কের ইস্তানবুলে ভাস্কর্য

প্রশাসনের সেরকম একটি ভূমিকা আশা করে লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:

”যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন তারা কি জানেন না বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। যেমন- তুরস্ক, ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ইত্যাদি। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে ভাস্কর্য থাকলে, বাংলাদেশে থাকবে না কে? কেনই বা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক উঠবে?

আমার মতে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ক্ষত-বিক্ষত করার এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। আশা করছি, ভাস্কর্য-বিরোধী অপতৎপরতা প্রতিহত করতে প্রশাসনের জোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি এখানকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনও সোচ্চার হয়ে উঠবে।”

প্রশাসন অবশ্যই সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, আইন-সম্মত ভাবে কাজ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হল ,সরকার কী ধরণের সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ঝুঁকি কতটুকু। তবে বিষয়টা শুধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নিয়েই না, মি. ইসলাম, এখানে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশনাও মিশে আছে।

ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শেষের পথে
ছবির ক্যাপশান,ঢাকার ধোলাইরপাড় এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শেষের পথে

যুক্তিসঙ্গত কারণেই সবার দৃষ্টি এখন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকে, তারা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তার দিকে। সেখানে একটি গোঁজামিলের আভাস পাচ্ছেন ঢাকার শামীম উদ্দিন শ্যামল:

”বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে হেফাজতের আলোচনা হয়ে গেল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন সংবিধান পরিপন্থী কোন দাবি মানা হবে না এবং ধর্মকেও অবমাননা করা হবে না। অথচ, হেফাজতের প্রধান দাবি ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না, আর ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলাম ধর্ম বিরোধী।

তাহলে কি সরকার হাই কোর্ট চত্বরের গ্রীক দেবীর ভাস্কর্যের ন্যায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ অন্যত্র করে তাদের দাবি অনুযায়ী মুজিব মিনার তৈরি করে দিবেন? সরকারকে মনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করে একমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভে হেফাজতের সাথে আপোষ, কোন মঙ্গল বয়ে আনবে না।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাস্কর্য বিষয়ে হেফাজতের সাথে আলোচনার কথা বলেছে ঠিকই মি. শামীম উদ্দিন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ই ডিসেম্বর তার ভাষণে এ’বিষয়ে কোন আপোষের বিন্দুমাত্র আভাস দেননি। তাহলে সরকার কোন দিকে যাচ্ছে তা বলা সহজ না। সরকার অনড় হলে হেফাজতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে ব্যাপারে তারাও কোন কথা বলছেন না। দেখে মনে হচ্ছে, দু’পক্ষই অপেক্ষা করছে অন্য পক্ষ কী করে, সেটা দেখার।

ধোলাইরপাড় চত্বরে ভাস্কর্য তৈরির বিপক্ষে ইসলামপন্থী দলগুলো ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছে।
ছবির ক্যাপশান,ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো কি সরকারের ‘পাতা ফাঁদে’ পা দিয়েছে?

তবে রংপুরের পার্বতীপুর দোলাপাড়া থেকে মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলছেন, পুরো জিনিসটাই একটি সরকারি ফাঁদ:

”যেহেতু বাংলাদেশে এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে, ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বর্তমান সরকারকে গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। আমার মনে হয়, একারণে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে।

বাংলাদেশের আলেম ওলামাকে উসকে দিয়েছে যাতে তারা বিদেশী দূতাবাসকে বোঝাতে সক্ষম হয় তারা যদি গণতন্ত্র বা মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয় তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হতে পারে। আর বাংলাদেশে কিছু আলেম আছে যারা রাজনীতি একটু কম বোঝে। তারা কী করলো? তারা সরকারের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসলো। সরকারও এখানে জিতে গেল।”

আপনার কথা কিছুটা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মত শোনাচ্ছে মি. আলী। হেফাজতে ইসলামীর নেতারাই কিন্তু শেখ মুজিবের ভাস্কর্যকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। সরকারও নিশ্চয়ই জানে যে, এখানে আপোষ করার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশের ভাস্কর্যসহ গোটা চারুকলা শিল্পে মুক্ত চিন্তা বিকাশের ক্ষেত্র মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। কাজেই এই বিতর্ক কোন ষড়যন্ত্রের অংশ, একথা প্রমাণ ছাড়া বলা ঠিক হবে না।

শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য
ছবির ক্যাপশান,কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন এই ভাস্কর্যের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।

ভাস্কর্য নিয়ে বিবিসি বাংলার রিপোর্টিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে লিখেছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, তবে তিনি কোথা লিখছেন তা জানান নি:

”বর্তমানে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সহ সারাদেশ সরগরম। তবে বিবিসি তথাকথিত কিছু সচেতন মানুষ নিয়ে ভাস্কর্যর পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। তবে বিবিসির উচিত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের দাবি একটিবার হলেও সেটা বিবেচনা করা উচিত। বিবিসি যেসব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থাকে তাদের ধর্ম সম্বন্ধে বিশেষ কোনো ধারণা নেই। তাদের পাশাপাশি একজন ইসলামী বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত।”

আমাদের সব রিপোর্টেই ইসলামী সংগঠনগুলোর বক্তব্য তুলে ধরা হয় মি. আলম। কিন্তু মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর সাথে তাদের বক্তব্যর জন্য বহু চেষ্টা করেও কেউ কথা বলতে রাজি হন নি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ওপর ইসলামী সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া চেয়েও কেউ কথা বলতে চান নি। তবে আমরা কোন কোন বিশেষজ্ঞর সাক্ষাৎকার নেই যাদের ইসলামী জ্ঞান হয়তো নেই, কিন্তু তাদেরকে এই বিতর্কের রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।

মানসিক রোগ
ছবির ক্যাপশান,মানসিক রোগ বা যন্ত্রণার জন্য কোন সেবা আদৌ আছে কি?

এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। একটি মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে লিখেছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ:

”হবিগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানকে পাবার মামলায় হেরে যাবার পর আদালত প্রাঙ্গণে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম। যেহেতু স্ত্রী তার স্বামীর সাথে না গিয়ে বাবা মায়ের সাথে যেতে চেয়েছেন, আদালত সেভাবেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কি শুধুমাত্র আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হওয়া যুক্তিসঙ্গত, নাকি কাউন্সেলিংএর মত পথও বিবেচনায় আনা যেতে পারে? তাছাড়া এমন বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে আরো সংবেদনশীল হওয়ার সুযোগ আছে কি?”

এটা খুবই জটিল বিষয় মি. সাঈদ। বাংলাদেশে মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা নিয়ে অনেক মানুষই ভোগেন কিন্তু তাদের চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায় না বলেই মনে হয়। পারিবারিক অশান্তি বা সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার মত ঘটনা প্রতিরোধে পেশাদারী কোন কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা বা সেবা আছে কি না, তাও আমি জানি না। তবে ডিভোর্স বা বাচ্চা কার সাথে থাকবে, এসব বিতর্কর মীমাংসা করতে আদালতে যাওয়া বিরল ঘটনা না। বিরল হচ্ছে আত্মহত্যার ঘটনাটি।

বিজেপির সিনিয়র এমপি সুবরামানিয়াম সোয়ামি
ছবির ক্যাপশান,বিজেপির সিনিয়র এমপি সুবরামানিয়াম সোয়ামি

ভারতের একটি প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:

”সম্প্রতি ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্য দাবি তোলা হয়েছে। বাংলাদেশেও মাঝে-মধ্যে এমন দাবি ওঠে। রবি ঠাকুরের লেখা গান বলেই হয়তো বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলেন কেউ কেউ। কিন্তু ভারতে এমন দাবি কেন তোলা হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারি না। বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে দেশের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার দাবি হাস্যকর বলেই মনে হয়। তারচেয়েও বড় কথা “জন গন মন” গানের চেয়ে খুব প্রাসঙ্গিক গান আর কী হতে পারে ভারতের জাতীয় সংগীত?”

ভাল বিষয়ের অবতারণা করেছেন মি. সরদার, তবে বাংলাদেশের জন্য হয়তো খুব একটা প্রাসঙ্গিক না। যাই হোক, ‘জনগনমন’ নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভারতে একটি বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন, গানটি ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জকে বন্দনা করে লেখা, যে কারণে তারা সেই গানকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্রর জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে উপযুক্ত মনে করেন না। তবে অনেকেই সেই ধারণা সঠিক নয় বলে দাবি করে বলেছেন, ১৯১১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের যে সভায় গানটি প্রথমে ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ হিসেবে গাওয়া হয়, সেই সভায় ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছিল এবং তার বন্দনা করে অন্য একটি গান গাওয়া হয়।

বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে, পরের দিন কয়েকটি পত্রিকা ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’কেই বন্দনাসূচক গান বলে অভিহিত করেছিল। তবে বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম সোয়ামি গানটি বদলাতে বলছেন না, তিনি গানের কয়েকটি লাইনে পরিবর্তন আনতে চাইছেন যেটা আরো বিস্ময়কর একটি দাবি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছবির ক্যাপশান,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: তাঁর লেখা গান ভারত এবং বাংলাদেশ নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয়।

আর বাংলাদেশে যারা জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তন চান তারা কিন্তু অন্য যুক্তি দেখান। তাদের মতে রবীন্দ্রনাথ গানটি ১৯০৫ সালে লিখেছিলেন ব্রিটিশদের বঙ্গ ভঙ্গ নীতির প্রতিবাদে। তখন বঙ্গ ভঙ্গের ফলে পশ্চিম এবং পূর্ব বঙ্গ আলাদা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ যেহেতু সেই পূর্ব বঙ্গের ওপর ভিত্তি করেই গঠন করা হয়েছে, তাই তারা মনে করেন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ উপযুক্ত না। কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবি বাংলাদেশে খুব একটা সুবিধা করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

তবে আমার মনে হয়, যখন একটি ঐতিহাসিক গান, যেটা একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল, সেটাকে আধুনিক স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তখন মতবিরোধ বা বিতর্ক হতেই পারে। সেই মতবিরোধ মুক্তচিন্তা এবং বাক স্বাধীনতার আলোকেই মূল্যায়ন করা উচিত।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং নারীদের সেফ হোমগুলো কি নিরাপদ?
ছবির ক্যাপশান,শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং নারীদের সেফ হোমগুলো কি নিরাপদ?

এবারে ভিন্ন বিষয়ে যাই। সরকারি হেফাজত থেকে তরুণদের পলায়ন নিয়ে লিখেছেন সাভার সরকারি কলেজ থেকে মনিরুল হক রনি:

”সম্প্রতি যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে আট জন কিশোরের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পূর্বে এ কেন্দ্র থেকে কিশোরদের পালানোর নজিরও রয়েছে। চলতি বছরের অগাস্ট মাসে এ কেন্দ্রে কর্মচারীদের নির্যাতনে ৩ জন কিশোরের মৃত্যুর মতো জঘন্য ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে।

অন্যদিকে গত ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেফ হোম থেকে ৭ জন তরুণী পালানোর ঘটনাও গণমাধ্যমে এসেছে। আবার কারাগারের মতো সুরক্ষিত জায়গা থেকে কয়েদি পালানোর ঘটনাও ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। এভাবে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এ সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়কে কি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে না?”

আপনি নিশ্চয়ই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রর সাথে কারাগারের তুলনা করছেন না মি. হক? কারাগারে কঠোর নিরাপত্তা থাকাই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু একই কথা কি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য প্রযোজ্য? আর একটি সেফ হোম থেকে যখন তরুণী পালিয়ে যায়, তখন আমাদেরকে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করতে হবে, কী হচ্ছিল ওখানে, যা তরুণীদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে? আমার মনে হয় এখানে নিরাপত্তার চেয়ে কেন্দ্রগুলি পরিচালনার ধরনটা তদন্ত করা দরকার।

শীতকালে স্কটল্যান্ডে বরফে ঢাকা একটি মহাসড়ক
ছবির ক্যাপশান,শীতকালে স্কটল্যান্ডে বরফে ঢাকা একটি মহাসড়ক

এবারে একটি মৌসুমি চিঠি। শীতের মৌসুমে সড়ক-মহাসড়কে ঝুঁকি যে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন রংপুরের কাউনিয়া থেকে বিলকিছ আক্তার: 

”প্রতি বছর শীতকালে নানা ধরনের ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় জনসাধারণকে। শীতকালে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে চারপাশ। কখনও কখনও স্বল্প দূরত্বে থাকা কোনো কিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। কিছু কিছু সড়কে বাতি জ্বালানো থাকলেও সেগুলো খুব বেশি কাজে আসে না। ফলে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এ ছাড়া শীতে সড়কে চুরি-ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধকর্মও বেড়ে যায়। উভয় ক্ষেত্রে চালকদের অধিক সচেতন থাকা দরকার। এর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এবং অপরাধ দমনে সড়ক-মহাসড়কে প্রশাসনিক টহল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন মিস আক্তার। বিশ্বের সব দেশেই শীতের সময় সড়ক বিপজ্জনক হয়ে উঠে – কোথাও কুয়াশার কারণে, আবার কোথায় বরফ-এর কারণে। সেখানে অবশ্যই উচিত যানবাহনের গতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং গাড়ির লাইট, ব্রেক সব ঠিক আছে কি না সেটা নিয়মিত চেক করা। তবে, এখানে বড় অংকের জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিলের শাস্তি না থাকলে অনেকেই নিয়মের তোয়াক্কা করবে না।

আমাদের নিজস্ব পরিবেশনার একটি দিক নিয়ে লিখেছেন খুলনার বয়রা আবাসিক এলাকা থেকে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম:

”বিবিসি এখন শুধু শুনি না,দেখি ,পড়ি উপভোগ করি। প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আসল ছবি তো থাকছেই, তাছাড়া ইমাজিনারী আইটেমগুলোকেও অদ্ভুত সব প্রতীকী ছবি দিয়ে স্পষ্ট করে তোলা হয়। তবে কখনো কখনো এশীয় কালচারের ভাব-ব্যঞ্জনায় ইউরোপীয় ছবি দেওয়া হয়। যুতসই ছবি সংযোজন কী প্রতিবেদকের নিজস্ব কৃতিত্ব না সম্পাদকীয় বিভাগের?”

ওয়েবসাইটে ছবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আমরা চেষ্টা করি প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছবি ব্যবহার করতে। কিন্তু আপনি যেমন বলছেন, অনেক সময় সেটা হয়ে উঠে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ছবি প্রাথমিক ভাবে প্রতিবেদকই বাছাই করেন কিন্তু পরবর্তীতে যিনি পাতা প্রকাশ করেন, সে ছবি বদলানোর ক্ষমতা তার থাকে।

সব শেষে আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে আরেকটি চিঠি, লিখেছেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে দীপক চক্রবর্তী: 

“বিবিসি যে বুধবারে ফোন ইন অনুষ্ঠানটি বন্ধ করলো,কেন যে বুঝলাম না,করোনা কি পৃথিবী থেকে কি গেছেতাহলে বিবিসি থেকে যে ফোন ইন অনুষ্ঠান গুলো হয়, গ্রামের মানুষ অনেক কিছু জানতে পারছে।বর্তমানে সোমবারে ও বুধবারে ফোন ইন অনুষ্ঠান দুইটি ছিল খুব গুরুত্বর্পূণ।”

আমি আপনার সাথে একমত মি. চক্রবর্তী যে, ফোন-ইন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খেলা-ধুলার একটি ফিচার আমাদের ফিরিয়ে আনতেই হল। তাছাড়া, সোমবারের ফোন-ইন বাদ পড়ছে না, কাজেই সবাই করোনাভাইরাস বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তাদের প্রশ্ন আমাদের অতিথির কাছে করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।

চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।

এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।

টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –

এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –

আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –

ফিল্টার পেপার –

এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চা পাতা –

আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।

বিভিন্ন প্রকারের চা –

সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি

চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –

চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –

আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ছাদকৃষি

সহজ পদ্ধতিতে টবে করুন কদবেল চাষ

ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।

টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)

মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।

মাটি তৈরি (Land Preparation)

হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।

ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।

ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)

কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@theagronews.com, theagronewsbd@gmail.com