করোনা সংক্রমণের মধ্যেই এখন সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করছেন। এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কিছু ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ট্রেস এলিমেন্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব উপাদান সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এতে করোনা মোকাবিলা করা তুলনামুলকভাবে সহজ হবে।
ভিটামিন সি-র অত্যন্ত ভালো উৎস হচ্ছে আমলকি। সম্ভব হলে এই সময় প্রত্যেক দিন এক টুকরা করে আমলকি খাওয়া উচিত। এ ছাড়া ঢেঁড়শ, পটল, মিষ্টি কুমড়া, শিম, গাজর, উচ্ছে, বাঁধাকপি, কলমি শাক, ক্যাপসিকাম, বরবটি, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ সব কিছুতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকতে হয় বলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। তা না হলে বাড়তি ক্যালরি ওজন বাড়িয়ে দেবে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন- ভাত, রুটি, মুড়ি, চিঁড়ে, সুজি, ওটস পরিমাণে কম খাওয়া উচিত। এর পরিবর্তে সালাদ,ফল, স্যুপ, ছোলা, মুগ ডাল, বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
এসব ছাড়াও করোনাকালে দৈনন্দিন খাবার তালিকায় আরও কিছু খাবার যোগ করতে পারেন। করোনা হোক বা না হোক, এগুলি খেলে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। যেমন- গুলঞ্চ : গুলঞ্চ একটি দীর্ঘ লতানো উদ্ভিদ। সাধারণত অন্য গাছকে অবলম্বন করে এরা বেড়ে উঠে। কিন্তু এর গুণ অনেক। শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে গুলঞ্চের কাঁচা পাতার রস খেতে পারেন। জন্ডিস, হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, বহুমূত্র ইত্যাদি সমস্যার জন্য গুলঞ্চের কাঁচা পাতা ও কাণ্ড দুটোই ব্যবহার করা যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, করোনা মোকাবেলায় গুলঞ্চ এবং অশ্বগন্ধা- এই দুটি ঔষধি গাছ বেশ উপকারী।
চীনাবাদাম : চীনাবাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে ফাইবার থাকায় এটি খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা অনুভূত হয়। এছাড়া শরীরে অল্প যেটুকু ফ্যাট প্রয়োজন হয়, তার অনেকটাই পূরণ হয় এই বাদাম খেলে। চীনাবাদামে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম হলেও প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ যথেষ্ট থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বাদাম হৃদরোগের জন্যও উপকারী।
হলুদ : রান্নার জন্য হলুদ অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি ও কারকিউমিন নামক রাসায়নিক থাকে যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে ত্বকের যে শুধু উজ্জ্বলতা বাড়ে তা নয়, এতে খাবার ঠিকমতো হজমও হয়।
রসুন : সুস্থ থাকতে নিয়মিত এক কোয়া করে কাঁচা রসুন খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেতে হবে এমন নয়। বিকেল-দুপুর বা রাতেও খাওয়া যেতে পারে। তবে খেতে হবে কাঁচা৷ সাধারণ রসুনেরই একটা কোয়া খেতে পারেন। তবে উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে দিনে ৩ থেকে ৪ কোয়া রসুন খেতে পারেন। কিন্তু এজন্য ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি হৃদরোগীদের জন্যও উপকারী। যেসব হৃদরোগী নিয়মিত রসুন খান, তারা অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন৷
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন