দৈনন্দিন
উভলিঙ্গদের কাহিনি: ‘আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন’ মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
লেখক
বিবিসি বাংলা
ইরিনা কুযেমকো, লিয়া আর অলগা অনিপকো- এরা জন্মেছিলেন উভলিঙ্গ শিশু হিসাবে। তাদের প্রত্যেকের সমস্যা ছিল আলাদা।
“আমার যখন ২২বছর বয়স, তখন জানতে পারি আমি উভলিঙ্গ। জানার পর কিন্তু আমার দারুণ স্বস্তিবোধ হয়েছিল, মন থেকে একটা বিশাল ভার নেমে গিয়েছিল,” বলছেন ইরিনা কুযেমকো।
বিশ্বে ইরিনার মত অনেক শিশু জন্ম নেয়, যারা প্রাকৃতিক নিয়মে ছেলে বা মেয়ে হয়ে জন্মায় না। শিশু অবস্থায় তাদের লিঙ্গ ঠিক করে দেয়া হয় বিতর্কিত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।
এই ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ মানুষ একইসাথে নারী ও পুরুষের শারীরিক বিশেষত্ব বা অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে চল্লিশটিরও বেশি ধরনের মিশ্র বিশেষত্বের খোঁজ পেয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
কারো হরমোনের মাত্রায় তারতম্য থাকে, ফলে হরমোনের মাত্রা ভেদে সে পুরুষ না নারী সেটা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে না। কারো আবার শরীরের ভেতরে হয়ত নারীর প্রজনন অঙ্গগুলো থাকে, কিন্তু শরীরের বাইরে থাকে পুরুষের যৌনাঙ্গ।
এধরনের উভলিঙ্গ মানুষ মানসিকভাবে খুবই বিপর্যয়ের মধ্যে থাকেন, কারণ তারা প্রাকৃতিক নিয়মে তাদের আসল পরিচয় কী, সেটা খোঁজা তাদের জন্য খুবই কষ্টের একটা প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে। দেখা গেছে শিশু বয়সে অস্ত্রোপচার করে তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেবার পর প্রাপ্ত বয়সে এসে সে হয়ত বিশাল দোটানায় ভুগছে যে আসলে তার লিঙ্গ সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছিল কীনা।
চিকিৎসকরা বলছেন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে কারো লিঙ্গ নির্ধারণ করার বিষয়টাকে তারা কখনই হালকাভাবে নেন না। তারা শিশুর জেনেটিক পরীক্ষা করেন। তারপর একাধিক চিকিৎসক ও জেনেটিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং বাপমায়ের সাথে আলোচনার ভিত্তিতেই এসব অপরাশেন করা হয়ে থাকে।
তবে উভলিঙ্গদের নিয়ে যারা কাজ করেন তারা মনে করেন, শিশু বয়সে শারীরিক কারণে প্রয়োজন না হলে এধরনের অস্ত্রোপচার না করানোই উচিত। কারণ ঐ শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর সে নিজে কী হতে চায় সে সম্পর্কে সে যদি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তার মানসিক বিপর্যয় হয়ত কিছুটা কম হতে পারে।
উভলিঙ্গ শিশু হয়ে জন্মানো ও পরে নারী হিসাবে বড় হয়ে ওঠা তিনজন বিবিসিকে বলেছেন তাদের কঠিন মানসিক লড়াই আর কীভাবে তারা বিষয়টা মানিয়ে নিয়েছিলেন তার কাহিনি।

ইরিনা কুযেমকো, ২৭, ইন্টারসেক্স অধিকার কর্মী
বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনর আগে পর্যন্ত আমি মেয়ে হিসাবেই বড় হয়েছি। আমার বান্ধবীদের সবার মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হলেও আমার হয়নি। ক্লাসের সব মেয়ে যেভাবে বেড়ে উঠেছে, আমি উঠিনি। ক্লাসে আমিই ছিলাম একমাত্র মেয়ে যার স্তন গড়ে ওঠেনি।
একদিন শিক্ষিকা আমাদের ক্লাসে মেয়েদের বেড়ে ওঠা নিয়ে একটা ভিডিও দেখাচ্ছিলেন। আমার জন্য সেটা খুবই কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল। ছবিতে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল সবাই সেভাবে বেড়ে উঠেছে। আমি ছাড়া।

ইরিনা যখন বড় হয়ে উঠছেন তিনি জানতেন না তিনি উভলিঙ্গ। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে।
কিন্তু আমি যে আর পাঁচটা মেয়ের মত নই তা নিয়ে আমার মা এবং নানীর কোন মাথাব্যথা ছিল না। তারা বলতেন: “ওটা কোন সমস্যা নয়- সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আমার বয়স যখন ১৪ হল, আমি একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য তাদের জোর করতে লাগলাম।
ডাক্তার বললেন আমার ডিম্বাশয়গুলো কাজ করছে না। তিনি কিছু চিকিৎসা দিলেন। বেশ কয়েকমাস গেল- চিকিৎসায় কাজ হল না। আমার মনের ওপর চাপ বাড়তে লাগল।
আমার ১৫ বছর হলে বাবা আমাকে ডাক্তার দেখাতে মস্কোয় নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা আমাকে কিছুই বললেন না। শুধু বাবা বললেন আমাকে একটা কি দুটো ছোট অপারেশন করাতে হবে। স্কুলে বান্ধবীরা অনেক প্রশ্ন করেছিল। আমিও কিছুই জানতাম না- কিছুই বলতে পারিনি।
পরে আরও বড় হয়ে বাবাকে একবার যখন কথা প্রসঙ্গে বললাম, ডাক্তারের উচিত ছিল আমার শরীরের ভেতর থেকে অকেজো অঙ্গগুলো বাদ দেয়া, বাবা উত্তর দিলেন: “তোমার শরীর থেকে সবই তো কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে।” আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ আর ঘৃণা তৈরি হল। ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে জানলাম আমার মত কাহিনি আরও মানুষের আছে। আমরা উভলিঙ্গ- ইন্টারসেক্স। আমি আমার চিকিৎসার কাগজপত্র খুঁজে বের করে মস্কোর এক ডাক্তারকে ফোন করলাম। আমার মা পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। আমার ভয় করছিল – কী শুনব!
সেই ২২ বছর বয়সে এসে আমি প্রথম জানতে পারলাম, সাত বছর আগে আমার কী ঘটেছিল। আমার শরীরে অণ্ডকোষ ছিল, সেটা কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। ডিম্বাশয়ের অংশও ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি তখন থেকে হরমোন খাচ্ছি।

ইরিনার মনে হয়, তার চিকিৎসক এবং তার বাবা বিষয়টা তাকে খুলে বললে ভাল হতো
আরও জানলাম আমার শরীরে একই সাথে পুরুষ ও নারীর বৈশিষ্ট্যবাহী ক্রোমোজোম ছিল। আমার জরায়ু ছিল।
আমি বাবাকে গিয়ে সোজাসুজি বললাম আমাকে কিছু বলোনি কেন? বাবা বললেন দুজন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে তিনি কথা বলেছিলেন। তারা আমাকে কিছু না জানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বাবার ধারণা তিনি কোন ভুল করেননি। আমি তারপর থেকে বাবার সাথে আর কথা বলিনি।
আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কীভাবে বেঁচে থাকব সেকথা ভাবতাম। কিন্তু পরে খুব দ্রুত ব্যাপারটা মেনে নিতে পেরেছিলাম, যখন জানলাম আমার মত উভলিঙ্গ মানুষ আরও আছে।
আগে মনে হতো সমস্যাটা আমার একার। পরে জানলাম একই শরীরে নারী ও পুরুষ অঙ্গ নিয়ে অনেক মানুষ শান্তিতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। তখন থেকে আমার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেল।
তখন থেকে আমি ঠিক করলাম আমি আমার মত শিশু কিশোরদের পাশে দাঁড়াব। আমার যেভাবে দু:সহ শৈশব ও কৈশোর কেটেছে, অন্যদের যাতে একই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে না হয় সেটা আমি করব।

চিকিৎসকের মতামত: জুলিয়া সিদোরোভা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
“আমার মতে শিশুর অস্ত্রোপচার তখনই করা উচিত যখন এটা তার জীবন সংশয়ের কারণ হয়। বাইরে থেকে কী দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়েই মানুষের মধ্যে বেশি উদ্বেগ দেখা যায়, ফলে শিশু বয়সে যৌনাঙ্গে অস্ত্রেপচারের একটা প্রবণতা থাকে।
এধরনের একটা মেয়ে বাচ্চার যৌনাঙ্গ পুরুষের মত হলেই অপারেশনের একটা তাগিদ অনুভব করেন শিশুর বাবামা। এটা সামাজিকভাবে উদ্বেগের বা লজ্জার বিষয় হতে পারে, কিন্তু শিশুর প্রাণ সংশয়ের কোন কারণ এতে থাকে না।
কিন্তু যদি এর ফলে শিশুর প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই অপারেশন করানো যুক্তিসঙ্গত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা জরুরি হবে।”

অস্ত্রোপচারের বিষয়টার জন্য অপেক্ষা করা অনেকসময়ই ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুর সাথে লুকোচুরি না করে তাকে খোলামেলা সবকিছু জানিয়ে তার মতামত নিয়ে অপারেশন করালে সেটা তাকে ভবিষ্যতে মানসিক যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি দিতে পারে।
অপারেশনের পর অনেক সময়ই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। স্পর্শের অনুভূতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বন্ধ্যাত্ব তৈরি হতে পারে, সবসময় ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘদিন হরমোন চিকিৎসায় ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।
একটা জিনিস মনে রাখা কিন্তু জরুরি। উভলিঙ্গদের সাথে যৌন অভিরুচির বিষয়টা গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তারা সাধারণ মানুষের মতই। তাদের নির্দিষ্ট কোন যৌন পরিচয় নেই। তারা প্রত্যেকে আলাদা।
এদের অনেকেরই পরিবার আছে, সংসার আছে, সন্তান আছে। তবে অনেকের হয়ত ক্রোমোজোমের তারতম্যের কারণে সন্তান হতে পারে না।
এদের প্রত্যেকের সমস্যা আলাদা হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে জন্মের সময় দেখা যায় তার শরীরে নারী ও পুরুষের অঙ্গ বা বৈশিষ্ট্য মেশানো আছে।
আবার অনেকে পুরো স্বাভাবিকভাবে জন্মানোর পর সে যে উভলিঙ্গের সেটা বয়ঃসন্ধির সময় প্রকাশ পায়।

ইরিনা মনে করেন উভলিঙ্গ মানুষদের প্রতি বৈষম্য বন্ধ হওয়া উচিত।
এখন আমার সহপাঠী, শিক্ষক ও বন্ধুরা কিন্তু আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। মানুষও আমাকে ভিন্ন চোখে দেখে না। ভালবাসে।
আমিও বিষয়টা বোঝার এবং মেনে নেবার পর থেকে মানসিকভাবে অনেক স্বস্তি ও সুখী বোধ করেছি।


লিয়া (নাম বদলে দেয়া হয়েছে)
আমার কাহিনির শুরু মেটারনিটি হাসপাতালে। ডাক্তাররা আমার মাকে বলেছিলেন আমার যৌনাঙ্গ অপরিণত। নারী বা পুরুষ কোনটার মতই দেখতে নয়।
“আপনি ছেলের না মেয়ের জন্ম দিয়েছেন- কী মনে হচ্ছে আপনার?” আমার মাকে ওরা জিজ্ঞেস করেছিল।
মা ঠিক করলেন আমাকে মেয়ে সন্তান হিসাবে রেজিস্ট্রিভুক্ত করবেন। ডাক্তারদের এটা ছিল প্রথম ভুল। তাদের উচিত হয়নি পুরো দায়িত্বটা আমার মায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া।
ফলে আমি বড় হচ্ছিলাম মেয়ে হিসাবে।
স্কুলে ভর্তি হবার আগে মা আমাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেলেন। শিশু ক্লিনিকের ডাক্তার মাকে বললেন: “আপনি কি পাগল? এতো আপনার ছেলে শিশু!”
অন্য ডাক্তাররাও নিশ্চিত করলেন আমি ছেলে। নথিপত্রে আমার নাম বদলানো হল।
আমি ছেলে হিসাবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। কিন্তু আমাদের কিন্ডারগার্টেনের বেশ কিছু বাচ্চা ওই ক্লাসে ছিল যারা জানতো আমি মেয়ে। ফলে মা স্কুল বদলে আমাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করলেন।
তখনও পর্যন্ত আমার কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু দেখলাম বড়রা আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তখন থেকে আমার কিছুটা মানসিক সমস্যা শুরু হলো।

নিজের পরিচয় নিয়ে লিসাকে বছরের পর বছর লড়াই করতে হয়েছে
আমি আমার লম্বা চুল কাটতে চাইতাম না। কিন্তু প্যান্ট আর ঢোলা জামা পরতাম হুডিদের মত। আমি এখন বুঝতে পারি কেন তারা আমার লিঙ্গ বেছে নেয়ার দায়িত্ব আমাকে দেননি। আমি বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলাম।
কিন্তু আমি যখন ১৩, আমার একটা দুর্ঘটনা ঘটল। আমি একটা ঘোড়ার ধাক্কায় পড়ে গেলাম। হাসপাতালে যখন জ্ঞান এল, জানলাম আমার শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে।
কৃত্রিমভাবে প্রস্রাব করানোর জন্য নার্স আমার মূত্রনালীতে ক্যাথেটার পরানোর সময় আমার যৌনাঙ্গ দেখে মস্করা শুরু করলেন আমি কি ছেলে না মেয়ে তা নিয়ে।
ভাবুন ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এধরনের ব্যঙ্গবিদ্রূপ শুনছি!
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর এক বছর বাসায় আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে। আমার মা, আমার নানী ও বোন সারাদিন কাজ করতো, বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমাকে দেখাশোনা করার কেউ ছিল না।
একদিন প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আমি একটা কাঁচি নিয়ে নিজেকে আহত করলাম- এর পর থেকেই যন্ত্রণার উপশম পেতে আমি নিজেকে আঘাত করতে শুরু করলাম। মা কখনও টের পাননি।
ডাক্তাররা আমার আবার সুস্থ হয়ে উঠে দাঁড়ানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু একদিন আমি সেরে উঠলাম।
লিয়া বলছেন শিশুকালে তার লিঙ্গ ঠিক করে দেবার কারণে একটা অপরাধ বোধে ভুগছেন তার মা
সেরে উঠে আমি প্রথমেই স্কুল যেতে চাইলাম। স্কুল আমার বাসা থেকে মাত্র বিশ মিনিটের পথ, কিন্তু আমার হেঁটে স্কুলে যেতে লাগল দুঘন্টা।
আমার অক্ষমতা দেখে স্কুলে অন্য শিক্ষার্থীরা আমাকে হয়রানি শুরু করল। তারা আমার ব্যাগ টয়লেটে ছুঁড়ে ফেলে দিত। তারা জানত আমি ছুটে সেখানে যেতে পারব না।
এরপর আমি যখন ১৬, তখন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বিছানায় রক্ত।
আমাকে হাসপাতালে নেয়া হল, পরীক্ষা করা হল, ডাক্তার আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার ফল দেখে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন: “আরে ওর তো জরায়ু রয়েছে!” আমি যে শুনতে পাচ্ছি সে দিকে ওনার ভ্রূক্ষেপ ছিল না।
এভাবেই আমি জেনেছিলাম আমার শরীরে নারীর অঙ্গ আছে। তাই আমি ছেলে হয়েও আমার পিরিয়ড হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আমার শরীরের ভেতর যে অঙ্গ আমি দেখতে পাচ্ছি না- তা ফেলে দেয়া হোক।
কিন্তু ডাক্তার আমাদের বোঝালেন আমার শরীরের ভেতরের নারী অঙ্গগুলো পুরো কাজ করছে, সেগুলো ফেলে দেয়া ঠিক হবে না।
ফলে দুবছরে আমাকে চারবার অপারেশন করানো হল, আমি নারী হলাম।

চিকিৎসকের মতামত: জুলিয়া সিদোরোভা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
“ভাবুন ১৪ বছরের একজনকে এরকম নিষ্ঠুরভাবে জানানো হচ্ছে তার যৌনাঙ্গের সমস্যার কথা। তার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে!
এধরনের শিশুদের বাবামাকে প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকতে হয়। অনেকে মাকে এমন প্রশ্নও করে অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় কি ধূমপান করতে? মদ খেতে?
কিন্তু একটা শিশু এধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মাবে কিনা সেটা কেউ বলতে পারে না। এটা ঠেকানোর কোন জানা কারণও নেই। আপনার পরিচিত মহলেও এরকম উভলিঙ্গ শিশু হয়ত আছে- আপনি জানেন না।”
(জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৭%এর মধ্যে উভলিঙ্গের যে চল্লিশটিরও বেশি লক্ষণের কথা জানা যায়, তা কমবেশি থেকে থাকতে পারে। ডাক্তাররা অবশ্য বলেন এই হার ১.৭%এর অনেক কম।)

এখন আমার দুটি সন্তান – একটি ছেলে একটি মেয়ে।
আমার ছেলে যখন জন্মায় আমার বয়স ছিল ২০। আমার মধ্যে কোনরকম মাতৃত্বের অনুভূতি তৈরি হয়নি। তবে আমার ছেলে আর আমি ভাল বন্ধু।
আমার মেয়ে আমার সাথে থাকে না। ওর বাবা আর আমি আলাদা হয়ে গিয়েছি। মেয়ে যখন বাচ্চা ওকে নিয়ে একদিন স্কুলে গিয়েছি, সেখান থেকে ওর বাবা ওকে তুলে নিয়ে অন্য শহরে চলে গিয়েছে। আমার মেয়েটাকে এক অর্থে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।
জীবনে অনেক পুরুষ ও নারীর সঙ্গে আমার ভাব হয়েছে। আমি মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। পুরুষকে দেখে আমার কোন আবেগ হয় না।
আমার চারবার বিয়ে হয়েছে। আমি কিছুদিনের মধ্যে পঞ্চমবার বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমি যাকে ভালবাসি সে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ।
একেক সময় মনে হয় ডাক্তারের পরামর্শ আমার জন্য সঠিক ছিল কিনা। কেন আমি এখনও আমার সঠিক পরিচিতি খুঁজে বেড়াচ্ছি, কেন চারবার বিয়ে করেছি, কেন সন্তানদের নিয়ে সমস্যা…
আমার মা পাশে থেকেছেন সবসময়। মনে হয় তার ভেতরে একটা অপরাধ বোধ আছে- এত বছর ধরে তিনি সেই অপরাধ বোধ বয়ে বেড়াচ্ছেন।
তার তো কোন দোষ নেই। এই অপরাধ বোধ তার ঝেড়ে ফেলা উচিত।

অলগা অনিপকো, ৩৫, ইন্টারসেক্স অধিকার কর্মী
আমাকে সবসময় মেয়েদের মত দেখতে ছিল, আমার শরীরের ভেতরেও ছিল সবরকম নারী অঙ্গ।
কিন্তু আমি যখন কিশোরী, আমার হঠাৎ ওজন বাড়তে শুরু করল। আমাকে অন্যরা ঠাট্টাবিদ্রূপ করত, হেনস্থা করত। আমি দিনে রাতে জগিং করতাম, ডায়েট করতাম, খেতাম কম। কিন্তু ওজন বাড়তেই লাগল।
আমার বয়স যখন ২৪, আমি হরমোন পরীক্ষা করলাম। দেখা গেল আমার হরমোনের নানা সমস্যা। কিন্তু আমি জানতেই পারিনি আমি উভলিঙ্গ।

বহু বছর ধরে পরীক্ষা ও ডাক্তারদের কাছে ধর্না দেবার পর অলগা জেনেছিলেন তার শরীরে ক্রোমোজোমের সংখ্যাই তার সমস্যার করণ।
হরমোন বিশেষজ্ঞ আমার হরমোনে ভারসাম্য আনার জন্য চিকিৎসা দিলেন। কিন্তু কিছুদিন ওপর আমার ঠোঁটের ওপর এবং ঘাড়ে চুল গজাতে শুরু করল। ভাবুন ২৫বছরের একটা মেয়ের জন্য এটা কতটা বিব্রতকর।
আমি হরমোন খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আমার হাতে অর্থ থাকলে এবং উৎসাহ পেলে আরও ডাক্তার দেখাতাম।
একজন ডাক্তার বললেন তিনি আমার ক্রোমোজোম পরীক্ষা করাবেন। ভাগ্যিস করলেন। চার বছর আগে আমি জানতে পারলাম আমার শরীরে পুরুষের ক্রোমোজোম রয়েছে, যার অর্থ আমি উভলিঙ্গ অর্থাৎ আমার শরীরে একইসঙ্গে নারী ও পুরুষ দুটো বৈশিষ্ট্যই রয়েছে।
২৪ বছর বয়সে আমি বুঝতে পারি আমি সমকামী।
আমার তরুণ বয়সে আমি যথেষ্ট তন্বী নই বলে দুর্ভাবনায় থাকতাম। এরপর বুঝলাম আমি সমকামী। আর তারপরে জানলাম আমি পুরোপুরি নারী নই। তাহলে আমি কী?
আমার ভাই বিষয়টা নিয়ে জানতে আগ্রহ দেখাল। আমার বড় বোনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। আমার বাবামা আমাকে মেনে নিলেন। তাদের ভালবাসা একইরকম রইল। কিন্তু তারা এটা নিয়ে কথা বলতে চাইতেন না।
আমার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সমাজে আমাদের মত যারা সাধারণের বাইরে তাদের ব্যাপারে অসহিষ্ণু মনোভাব।
অনেকের মত হল উভলিঙ্গ শিশুদের বাচ্চা বয়সে অপারেশন করিয়ে তার লিঙ্গ ঠিক করে দেয়াটা পরবর্তীকালে তাদের মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা যখন সেটা জানতে পারে, ডাক্তার বা বাবামায়ের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
কিন্তু কেউ আলাদা হলে সমাজও তাদের অমানবিক দৃষ্টিতে দেখে।
স্বাভাবিকভাবে তাদের যখন জন্ম হচ্ছে, তখন প্রকৃতি যেভাবে তাদের পৃথিবীতে নিয়ে আসছে, সেভাবেই তাদের মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠা দরকার।

সেরহি কিরিলিউক, মনস্তত্ব ও মনোরোগ বিষয়ে সহাকারী অধ্যাপক
“মনোরোগ চিকিৎসক হিসাবে আমি এরকম অনেক রোগীকে দেখেছি।
আমি শুনেছি উভলিঙ্গ মানুষ যখন জানতে পারে, শিশুকালে তাকে অস্ত্রোপচার করে তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তারা খুব রেগে যায়।
মূল কথা হল, মনের গভীরে সেই রাগটা পুষে না রাখা। আপনাকে তো বাঁচতে হবে। জীবনে এগিয়ে যেতে হবে।
ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গরা যখন ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে, যখন নিজেকে বোঝাতে পারে তারা একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ, তার মত আরও অনেকে একই সমস্যা নিয়ে জন্মেছে, তখন তারা জীবনে সুখ খুঁজে পায়। এই উপলব্ধি যাদের হয়েছে তাদের মুখ আমি উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে দেখেছি।”

এই প্রতিবেদনে সহায়তা করেছেন বিবিসির গ্লোবাল আইডেনটিটি বিষয়ক সংবাদদাতা মেঘা মোহান
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের
-
উভলিঙ্গদের কাহিনি: 'আমি ছেলে, কিন্তু আমার পিরিয়ড হয় কেন' মানসিক যন্ত্রণা ও পরিচয় খোঁজার লড়াই যাদের

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যে কারণে ফল গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করবেন
-
যেভাবে সুতি কাপড়ের যত্ন নিলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে
-
টাক মাথায় চুল গজাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার!
-
কালো চা দূর করবে মুখের কালচে দাগ
-
তামার পাত্রে পানি পানের উপকারিতা
-
কী আছে এই সোনার হোটেলে?
-
যে কারণে চায়ের সাথে আদা খাবেন
-
বিকলাঙ্গ হয়েও পান না প্রতিবন্ধী ভাতা, থাকছেন ভাঙা ঘরে
-
ফেসবুকে স্ট্যাটাস : খাট-লেপ-তোশক-খাবার পেলেন বৃদ্ধা
-
তিন মেয়েকে নিয়ে ভাঙা ঘরে রাত কাটে ফাতেমার

আরামদায়ক পোশাক পরতে হলে সুতি কাপড়ের বিকল্প নেই। কারণ সুতি হলো প্রাকৃতিক ফেব্রিক। তুলা থেকে তৈরি হয় সুতা। এরপর ওই সুতা থেকে তৈরি হয় সুতির পোশাক। তাই এই ফেব্রিকের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।
সুতি কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে ভাঁজ করা পর্যন্ত নিয়ম মানা জরুরি। না হলে কাপড়ের আয়ু কমে যায়। এটির বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক সুতি কাপড়ের যত্ন নেবেন কীভাবে?

সুতি কাপড় ধোয়ার উপায়
>> সুতি কাপড়ের ফেব্রিক খুব সহজেই ছিঁড়ে যায়। তাই ঘঁষে ঘঁষে সুতির পোশাক না ধোয়াই ভালো।
>> প্রচণ্ড গরম পানিতেও কখনো ভেজাবেন না সুতির পোশাক। এতে পোশাকের রং নষ্ট হয়ে যাবে।
>> একটি সুতি কাপড় পরিধান করার একমাস পর ধোবেন না। পরার পরপরই ধুয়ে শুকিয়ে ভালোভাবে রেখে দিন।

>> যদি একবার পরেই কাচতে না চান, তবে তাকে রোদে দিতে হবে অবশ্যই। অন্তত এক ঘণ্টা রোদে দেবেন।
>> যদি সুতির পোশাকে কোনো দাগ হয়ে যায়, তবে আগে তা আলাদা করে তুলে নিন। তারপর সম্পূর্ণ জামাটি পরিষ্কার করুন।
>> সুতির পোশাকে আপনি মাড় দিতেই পারেন। তবে মাড় দেওয়ার পরই পানি ঝরিয়ে নিন।

শুকানোর সময় যা করবেন
>> খুব টানটান করে সুতির পোশাক মেলবেন না।
>> পানি ঝরিয়ে নিয়ে সুতির পোশাক মেলুন।
>> চড়া রোদে সুতির পোশাক দেবেন না। হালকা রোদে বা ছায়ায় সুতির পোশাক মেলবেন।
ইস্ত্রি করার সময় করণীয়
>> প্রথমে পোশাক উল্টে নিয়ে ইস্ত্রি করে তারপর সোজা পিঠে করুন।

আলমারিতে রাখার সময় করণীয়
>> পরিধান করার পর ভালোভাবে রোদে না শুকিয়ে বা ধুয়ে সুতির পোশাক কখনো ভাঁজ করে আলমারিতে রাখবেন না।
>> সুতির কাপড় আলমারিতে রাখার পর ওই স্থানে কিছু কালোজিরা দিয়ে রাখবেন। এতে পোশাক ভালো থাকবে। পোকা-মাকড় কাপড়ের ধারে-কাছে আসবে না।

অকালে চুল পড়ে যাওয়া ঠেকাতে অনেকেই এটা-সেটা ব্যবহার করেন। এসব করেও মাথায় নতুন চুল গজাচ্ছে না। এমন অবস্থায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েন। মাথায় যাদের চুল কম বা টাক পড়ে গেছে; এমন মানুষেরা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন।
চুল পড়ার রয়েছে অনেক কারণ। অনিয়মিত জীবন-যাপন, বংশগতভাবে টাক, কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার ইত্যাদি কারণে চুল পড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কারণেও চুল পড়ার সমস্যাটি বেড়ে যেতে পারে।

এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগে অতিরিক্ত চুল পড়ায় মাথায় টাক পড়তে পারে। তবে চিন্তিত না হয়ে কার্যকরী উপায়ে চুল গজানোর জন্য প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে ভরসা রাখুন।
তেমনই একটি উপাদান হলো পেয়ারা পাতা। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! পেয়ারা পাতায় আবার কীভাবে চুল গজাবে? প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় পেয়ারা পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলোয় ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স রয়েছে। যা চুল পড়া ঠেকাতে পারে। একই সঙ্গে এটি চুল গজাতেও সাহায্য করে।

তাই জেনে নিন পেয়ারা পাতা দিয়ে চুল গজানোর সহজ উপায়-
প্রথমে কিছু পেয়ারা পাতা একটি পাত্রে নিয়ে পানিতে সেদ্ধ করে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে পানি ঠান্ডা হতে দিন। এবার আপনার মাথার ত্বকে পেয়ারা পাতা সেদ্ধ পানীয় ম্যাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এ উপায় অনুসরণ করলে ফলাফল কিছুদিনের মধ্যে টের পাবেন।

যদিও অনেক কারণে চুল পড়ে মাথা টাক হতে পারে। তাই দীর্ঘদিন ধরে যদি চুল পড়তে থাকে আর মাথা টাক হওয়া শুরু হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি এ টোটকা মেনে চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করুন।

শারীরিক সুস্থতায় কালো চা পানের বিকল্প নেই। কালো চা আমরা সাধারণত লিকার হিসেবে (রং চা) অথবা দুধ-চিনি মিশিয়ে পান করে থাকি। তবে রং চায়ে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া নিয়মিত কালো পান করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। এমনকি যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান; তাদের জন্যও রং চা অনেক কার্যকরী। শুধু শারীরিক সুস্থতা নয় বরং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে পারে চা।
কালো চায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। চায়ের পলিফেনল হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার যম। যেকোনো জীবাণু ধ্বংসে কাজ করে কালো চায়ে থাকা উপাদানসমূহ। ত্বক ও চুলের যত্নে কালো চা ব্যবহারেই দেখবেন ম্যাজিকের মতো ফলাফল। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক রূপচর্চায় কালো চায়ের ব্যবহার-

>> চোখের নিচের বলিরেখা ও কালচে দাগ দূর করতে ব্ল্যাক টি’র ব্যবহৃত ঠান্ডা ব্যাগ চোখের উপর দিয়ে রাখুন।
>> চুলের ঝলমলে ভাব আনতে শ্যাম্পু শেষে ব্ল্যাক টি লিকার দিয়ে ধুয়ে নিন।
>> মেহেদির সঙ্গে কালো চায়ের লিকার মিশিয়ে চুলে লাগালে রঙিন আভা চলে আসবে।
>> ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে ঠান্ডা টি ব্যাগ চেপে চেপে লাগান।

>> চুল লম্বা করতেও কালো চায়ের বিকল্প নেই! এজন্য কয়েকটি কালো চায়ের টি ব্যাগ এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন শ্যাম্পু শেষে চুলের গোড়ায় স্প্রে করুন। ১৫ মিনিট চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখুন। এরপর চুল শুকিয়ে নিন।
প্রাচীনকাল থেকে উপমহাদেশের মানুষ তামার তৈজসপত্র ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে পানি পানের জন্য তামার পাত্র প্রায় সব পরিবারেই ব্যবহার করা হত। তামায় আছে একাধিক গুণ, প্রতিদিন তামার পাত্রে পানি পান কীভাবে সুস্থ রাখে শরীর তা জেনে নিন।
হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে: তামার পাত্রে খাবার খাওয়া, তামার গ্লাসে বা বোতলে পানি পানের ফলে হজমের সমস্যা দূর হতে পারে। কারণ তামা হজমে সাহায্য করে। এতে থাকা উপাদান ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে, পেটের সমস্যা দূর করে, মেটাবলিজম ঠিক রাখে। তবে, মনে রাখতে হবে, লেবুর পানি বা গরম পানি যেন তামার পাত্রে না রাখা হয়। আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা কমায়: তামা আর্থ্রাইটিস কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমায়।তামার পাত্রে পানি জমা করে রাখা বা পানি পান প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ও চোখধাঁধানো ডিজাইনের বোতল পাওয়া যাচ্ছে বলে, অনেকেই সেই বোতলে পানি রাখা বা পানের অভ্যাস চালু করেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, মানুষ আবারও পুরনো অভ্যাসে ফিরছে। এর একাধিক ভালো দিকের কথা মাথায় রেখে, আবারও তামার পাত্রে খাওয়া বা তামার গ্লাস, বোতলে পানি পান শুরু হয়েছে। তামায় অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস ও অ্যান্টি-কারসিনোজেনিক থাকে। যা শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। তামা পানিতে আয়রনও সঞ্চার করে। পাশাপাশি এর অন্যান্য উপাদানও শরীরের একাধিক উপকার করে। অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তামা পানিতে আয়রন সঞ্চার করে, ফলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়তে পারে। তাই তামার বোতলে পানি পানে অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমতে পারে। এর পাশাপাশি, আয়রন কম থাকলে শ্বেত রক্তকণিকাও কমতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজে ভারসাম্য বজায় রাখে: শরীরে সঠিক মাত্রায় তামা থাকলে তা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ আটকাতে সহায়তা করে। এবং এর কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করে: শরীরে তামার পরিমাণ কম থাকলে তা রক্তচাপে তারতম্য ঘটায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এবং তামা কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সব মিলিয়ে হাইপারটেনশন রোধ করতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলে শরীরে তামার পরিমাণ ঠিক রাখতে তামার পাত্রে পানি পান করা যেতে পারে আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা কমায়: তামা আর্থ্রাইটিস কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমায়। হার্টের জন্য ভালো: ধমনীতে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে তামা। আর রক্ত চলাচল ঠিক থাকলে হার্টেও সমস্যা হয় না। ফলে হার্ট ভালো থাকে। ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে: তামায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস থাকে, যা নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। ফলে বলিরেখা পড়ে না। ত্বকও ভালো থাকে।
এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে এই সোনার হোটেলটি নিয়ে। কী আছে এই সোনার হোটেলে? দুবাইয়ের ‘বুর্জ আল আরব’ নামের এ হোটেলটি সম্পর্কে জানা যাক।
এই হোটেলটি বাণিজ্যিকভাবে উদ্বোধনের আগে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক ঘুরতে এসেছিলেন। তিনি সবকিছু দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, এই হোটেল বিশ্বের অন্য সব হোটেলের তুলনায় এগিয়ে। তাই এটা ‘সেভেন স্টার হোটেল’। তারপর থেকে দুবাইয়ের ‘বুর্জ আল আরব’-এর গায়ে সাতটি তারার বাতি সংযুক্ত করা হয়। ছবি: সংগৃহীত ‘বুর্জ’ কথার অর্থ মিনার। ‘বুর্জ আল আরব’ হলো আরব দেশের মিনার। দুবাইয়ে পারস্য উপসাগরের উপকূলে ‘জুমেইরাহ’ হলো সাদা বালির সৈকত। সেখানে একটি কৃত্রিম দ্বীপে দাঁড়িয়ে আছে এই হোটেল। পালতোলা নৌকার মতো দেখতে এই অতিথিশালা বিশ্বের উচ্চতম হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ৫ বছর ধরে নির্মাণের পরে ১৯৯৯ সালে খুলে দেয়া হয় বুর্জ আল আরবের দরজা। কৃত্রিম দ্বীপের উপর তৈরি করা হয়েছে বলেই সম্পূর্ণ নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ হতে এত সময় লেগে যায়। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এর যোগাযোগ হচ্ছে একটি সেতুর মাধ্যমে। তবে বিলাসবহুল হোটেলের নিজস্ব এই সেতু ব্যবহার করতে পারেন শুধুমাত্র হোটেলের কর্মী ও অতিথিরা ৬৮৯ ফুট উচ্চতার এই হোটেলের ছাদের কাছে আছে নিজস্ব হেলিপ্যাড। দুবাই বিমানবন্দর থেকে অতিথিদের হেলিকপ্টারে উড়িয়ে আনেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। যদি কেউ সড়কপথে আসতে চান, তা হলে পাঠিয়ে দেয়া হয় রোলস রয়েস হোটেলের ভিতের পা রাখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় সোনার ছটায়। অন্দরসজ্জা, ঝাড়বাতি থেকে আসবাবপত্র— সব কিছুতেই খাঁটি সোনার উজ্জ্বল উপস্থিতি। হোটেলের সাজসজ্জার মধ্যে ২২ হাজার বর্গফুটেরও বেশি জায়গা জুড়ে সোনার হাজিরা। আয়নার ফ্রেম থেকে টেলিভিশনের বর্ডার মুখ ঢেকেছে ২৪ ক্যারেট সোনার প্রলেপে হোটেলে বিলাসবহুল স্যুট ২০২টি। এরমধ্যে কয়েকটি থেকে পর্যটকরা দেখতে পাবেন ‘পাম জুমেইরা’-র দৃশ্য। খেজুর গাছের মতো ‘পাম জুমেইরা’ হলো কিছু কৃত্রিম দ্বীপের সমষ্টি। বিলাসবহুল হোটেল, শপিং কমপ্লেক্সসহ এই অংশ হলো দুবাই তথা বিশ্বের বিত্তবানদের অন্যতম ঠিকানা তিটা স্যুইটের জন্য থাকেন একজন করে নির্দিষ্ট বাটলার। ওই স্যুইটের বাসিন্দাদের জন্য তিনি নিযুক্ত হন। অতিথিদের অভিবাদন জানিয়ে তিনি তাদের হোটেলের দরজা থেকে নিয়ে যান স্যুইট অবধি। এই হোটেলের সাজসজ্জা ও রীতিনীতিতে মরু সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট। তবে হোটেল নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিক স্থাপত্যও। আগুন, বাতাস, মাটি এবং পানি- প্রকৃতির এই মূল উপাদানের প্রভাব রয়েছে স্যুইটগুলোর ভিতরের রঙে। সবচেয়ে ছোট স্যুইটের আয়তনও ১,৮৩০ বর্গফুট। একটা স্যুইট সম্পূর্ণ ঘুরে দেখতেও সময় লাগে অন্তত ৩০ মিনিট। হোটেলের রয়্যাল স্যুটগুলো তৈরি হয়েছে একটি আস্ত ফ্লোর জুড়ে। এরকম একটি স্যুইটের আয়তন প্রায় ৮ হাজার ৪০০ বর্গফুট। রাজকীয় এই স্যুইটের মাঝে থাকে বিশাল পালঙ্ক। খাঁটি মিশরীয় সুতির চাদর বিছিয়ে থাকা পালঙ্কের উপর সিলিং জুড়ে রয়েছে বিশাল আয়না। অতিথির আরামদায়ক ঘুমের জন্য হোটেল থেকে দেয়া হয় ১৭ রকমের বালিশ। হোটেলের ১৮তম তলায় আছে স্পা। পারস্য উপসাগরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সেখানে বুঁদ হয়ে থাকা যায় স্পা-এর আরামে। পাশাপাশি হোটেলে আছে একাধিক ইন্ডোর ও আউটডোর সুইমিং পুল। শুধুমাত্র মহিলা ও শিশুদের জন্য আছে আলাদা সুইমিং পুল। যুগলদের জন্য নির্দিষ্ট ইন্ডোর সুইমিং পুলে আছে চাঁদের আলোয় সাঁতার কাটার ব্যবস্থা। যদি এতেও মন না ভরে, তবে এর জন্য রয়েছে হোটেলের ব্যক্তিগত সৈকত। সেখানেও পর্যটকের জন্য হাজির হরেক বিলাস। এই হোটেলের ৬টি রেস্তোরাঁয় সাজানো আছে বিশ্বের নানা প্রান্তের খাবার। সেগুলোর মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় হল ‘গোল্ড অন ২৭’। ‘বুর্জ আল আরব’-এর ২৭তম ফ্লোরে বার সোনা দিয়ে সাজানো। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বারটেন্ডাররা তৈরি করেন বিশেষ পানীয়, যার রেসিপি গোপন রাখা হয়। বিশেষ রকমের পানীয় তৈরিতে আঙুর রসের সঙ্গে মেশানো হয় সোনার গুঁড়োও। বুর্জ আল আরব-এর রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হরো ‘আল মুনটাহা’ এবং ‘আল মাহারা’। বিভিন্ন নামি পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকে হলিউডের সিনেমায় জায়গা করে নিয়েছে ‘বুর্জ আল আরব’ আমেরিকার এক সংবাদসংস্থার তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম ১৫টি দামি হোটেলের মধ্যে বুর্জ আল আরব আছে ১২ নম্বরে। এই হোটেলে দু’জনের এক রাত কাটানোর ন্যূনতম খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা। ডুপ্লেক্স স্যুইটগুলোতে ১ রাত কাটানোর খরচ ৮ লাখ টাকারও বেশি।

যে কারণে ফল গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করবেন

যেভাবে সুতি কাপড়ের যত্ন নিলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে

টাক মাথায় চুল গজাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার!

কালো চা দূর করবে মুখের কালচে দাগ

তামার পাত্রে পানি পানের উপকারিতা

কী আছে এই সোনার হোটেলে?

যে কারণে চায়ের সাথে আদা খাবেন

বিকলাঙ্গ হয়েও পান না প্রতিবন্ধী ভাতা, থাকছেন ভাঙা ঘরে

ফেসবুকে স্ট্যাটাস : খাট-লেপ-তোশক-খাবার পেলেন বৃদ্ধা

তিন মেয়েকে নিয়ে ভাঙা ঘরে রাত কাটে ফাতেমার

বিস্ময় কিশোর রাব্বির সমুদ্রজয়ের গল্প

‘কালো সোনা’ চাষে ব্যস্ত ফরিদপুরের চাষিরা, বাম্পার ফলনের আশা

পাটকাঠির ছাইয়ের কেজি ৬০ টাকা, আশা দেখছেন কৃষকরা

৬ বছর ধরে পাখির বাসা তৈরি করছেন তারা

ঝাঁকে ঝাঁকে গমবীজ খেতে এসে মারা গেল ১৯৩টি পোষা কবুতর

মাটি ছাড়াই চারা উৎপাদন

শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি আছে বুঝবেন যেভাবে

আপনার সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার ৭টি উপায়

গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বছরব্যাপী টমেটো চাষ

মাওয়ায় ৩৪ হাজার টাকায় বিক্রি হলো ‘বিরল’ বাঘাইড়

বিকলাঙ্গ হয়েও পান না প্রতিবন্ধী ভাতা, থাকছেন ভাঙা ঘরে

ছাগলের দৌড় প্রতিযোগিতা, প্রথম পুরস্কার মোবাইল

হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বন্যপাখি

কার্পজাতীয় মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

৪৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের টাইম স্কেলের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

অনলাইনে নারীদের কৃষিপণ্য

শ্বাসযন্ত্রের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ ফুসফুস ক্যানসার

গলাব্যথা কেন হয়

পিঠ ও কোমরব্যথার কারণ ও প্রতিকার

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন